ফ্রী-নাইটঃ নাটক বিষয়ে অহেতুক সংলাপ

০।
কলেজের স্বাদ এখনও মুখ থেকে যায় নায় তাই বৃহস্পতিবার মানেই আমার কাছে এখনো ফ্রী নাইট, যেই দিন পড়াশুনা ছাড়া আর যে কোন কিছু করা জায়েয। তাই প্রতি বহস্পতিবার আসলেই সন্ধ্যার পর ঘরে থাকা দায় কারণ আড্ডা ছাড়া মানুষ বাঁচে নাকি? এই আড্ডায় ক্লাস, হাসাহাসি, খোঁচাখুঁচি, প্রেম সব চলে সমান তালে সাথে মাঝে মাঝে চলে অহেতুক দেশ উদ্ধার। আজকে এমন এক দেশ উদ্ধার করতে গিয়েই একটা কথা মাথায় ঘুরছে, ঘুরছে তো খালি ঘুরছেই।

সেলিম ব্যাটা আজকে বলে হলে এখন বাংলা নাটক দেখার দারুন চল হয়েছে। হলের প্রতিটা কম্পিউটারে অন্তত ৫ গিগা করে নাটক তো আছেই। আমরা সবাই সেই কথায় সাই দিয়ে মাথা নাড়াই আসলেই আজকাল নাটক দেখার ভীষণ চল। এরপর সেলিম নাটকের একথা সেকথা করে নানা কথা বলে আমরাও সেই সব বিষয়ে একমত হয়ে মাথা নাড়াই কিন্তু হঠাৎ করে সেলিম বলে- আজকাল নাটক গুলার একটা খারাপ দিকও আছে। এইসব নাটকের কারণে হলে পোলাপাইন্দের ভাষার এক শেষ। তারউপর নাটকগুলোতে বিভিন্ন বিষয় যেই ভাবে উপস্থাপন করা হয় সেইটা অনেক সময় বাবা-মার সামনে দেখা একটু কষ্টকর তাই এইসব নাট্য নির্মাতাদের আরেকটু রেস্ট্রিকটেড হওয়া উচিত বিষয় নির্বাচন আর বিষয় উপস্থাপনে। এই একটা বিষয়ে আর মাথা নাড়াতে পারি না।

০১।
প্রথমত, আজকাল ছেলেপেলেরা যে বাংলা নাটক দেখছে এইটাই একটা আশ্চার্য ব্যাপার। হিন্দি কিংবা ইংলিশ মুভির সাথে সাথেও ছেলেপেলেরা এইসব নাটক দেখার জন্য টাইম দিচ্ছে অর্থাত সামান্য পাল্লাও হলেও ছেলেপেলেরা দেশীয় জিনিসের প্রতি আকৃ্ষ্ট হচ্ছে। এখন যেই টাইমে একটা ছেলে বা মেয়ে এই নাটক গুলো দেখছে সেই টাইমে তাহলে সে তাহলে একটা নাচ-গান ভরপুর হিন্দি বা এ্যাকশন ইংলিশ অথবা নিদেনপক্ষে একটা অতিরিক্ত সামাজিক সিনেমা (দুষ্ট সিনেমা) 😀 দেখবে। তারমানে নাটকের কারনে ছেলে-মেয়ে গুলো বিনোদিত হবে তবে দেশীয় মাধ্যমে।

০২।
এই নাটকগুলোর বিরুদ্ধে আরেকটা অভিযোগ হল বিষয়ের খোলামেলা উপস্থাপন। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে- পরকীয়া, প্রেম, বাটপারি ইত্যাদি জিনিসের নগ্ন উপস্থাপন। কিন্তু এইখানে কথা হল এই জিনিস গুলো কি বাস্তবে ঘটে না? যদি ঘটে তাহলে কেন উপস্থাপন করা হবে না? নাটক কি দেশ-জাতি-সমাজ বিবর্জিত? প্রত্যেক নাট্য নির্মাতা একজন সামাজিক মানুষ তাই স্বাভাবিক ভাবেই সমাজের চলমান ঘটনাবলী তাকে স্পর্শ করবেই। সারাদিন বাদাম খেয়ে পুতুপুতু কথা বলে প্রেম করে এমন নাটকের চাইতে বরং এইসব সত্যের নগ্ন উপস্থাপন ভাল।

০৩।
অনেকের মতে আজকালকার এইসব নাটক থেকে আসলে শিখার কিছু নাই, খালি আজাইরা প্যাচাল। কিন্তু আমার মতে আছে। ছোট্ট একটা উদাহারণ দিই পরিষ্কার হবে। মোশারফ করিমের একটা নাটক আছে ঠুয়া। সেই নাটকে মোশারফ করিম মোটামুটি বদমেজাজী একটা ছেলে। একদিন তার কাছে ভিক্ষা চাইতে আসা এক ছোট্ট বাচ্চার মাথায় সে একটা চাটি বা ঠুয়া দেয়। তারপর থেকে শুরু আসল ঘটনা মোশারফ করিম যেইখানেই যায় তার মনে হয় কে যেন তাকে মাথায় ঠুয়া দিচ্ছে। না প্রেম না বাসা কোন খানেই শান্তি নেই এমন কি হেলমেট পরেও নিস্তার নেই। তারপর নানা ঘটন-অঘটনের পর মোশারফ করিমের মুক্তি মিলে সেই টোকাই ছেলেটাকে খুজে বের করে মাফ চাওয়ার পর। অতিসাধারণ একটা নাটক কিন্তু বাস্তবে এর ফল কিন্তু আমার দেখায় দারুন। আমাদের ইউনীতে কোন জায়গায় বসলেই পিচ্চি টোকাইয়ের দল এসে ঘিরে ধরে- স্যার চকলেট নেন, আফা ফুল নেন, সবাই বিরক্ত হয়। আমরাও হই তাই আমার নিজের বন্ধুদের মাঝে অনেকেই অনেক সময় এদের তাড়ানোর জন্য অনেক খারাপ ব্যবহার করত এমন কি অনেকেই যে চড়-থাপ্পড় মারেনা তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। এরকম ব্যবহার করা একজন কে আজকাল দেখি এদের সাথে অনেক ভদ্র ভাবে সরে যেতে বলছে, তাই একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞস করতেই বলল- আরে ব্যাটা ঠুয়া নাটক দেখস নাই, ঐরকম ঠুয়া খাওয়ার ইচ্ছা আমার নাই। আমার মতে এই ব্যাপারটা আসলে নাটক দেখে অতি বোকার মত প্রভাবিত হওয়ার কাহিনি। কিন্তু মূল ব্যাপার হল প্রভাবিত হওয়ার ঘটনা এইখানে ভালর দিকে।

০৪।
এই নাটক গুলোর ভাষার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী অভিযোগ। ভাষা নাকি পুরোই শেষ হয়ে গেল। এই ব্যাপারে আসলে আগেও অনেক কথা হয়েছে তাই বেশী কথা নাই বলি। আমার মতে একটা জাতির ভাষা তার স্বকীয়তার পরিচায়ক। এই ভাষার গঠনের সাথে সেই জাতির সমাজ কাঠামো, সংষ্কৃতি, ধর্ম, অর্থনীতি সব জড়িত। তাই শুধু মাত্র নাটকের মাধ্যমে সেই ভাষার পুরো কাঠামো পরিবর্তনের ভয় নিদারুন হাস্যকর।

০০।
আমার মতে আমাদের ভিডিও মাধ্যম আসলে একটা সময়ে বড় বেশী সরলরৈখিক হয়ে গিয়েছিল। আর সেইখানে পরিবর্তনের জন্য দরকার ছিল একটা ধাক্কার। আর ভিডিও মাধ্যমে একঝাক নতুন নির্মাতা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার সূচনা করতে পেরেছেন। আর প্রত্যেক প্রথা বিরোধী নতুন জিনিস কেই তার সমসাময়িক প্রথাগত রীতির সাথে পাল্লা দিতে একটু উদ্ধত হতে হয় যা কিনা সময়ের সাথে সাথে আর পরিণত হয়ে একসময় নিজেই পরিণত হয় প্রথায়। আমার মতে তাই চলুক না ভিডিও মাধ্যমের এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোন রকম রেস্ট্রিকসেন ছাড়া।

বিঃদ্রঃ- এই লেখাটা আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের দেখা অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে রচিত। তাই সবার সাথে এই মতের মিল নাও হতে পারে। আশা করি সবাই এইখানে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে লেখাটাকে আর সমৃদ্ধ করবেন।

১,৭২৫ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “ফ্রী-নাইটঃ নাটক বিষয়ে অহেতুক সংলাপ”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    হুমম, আজকাল কার নাটকে খালি মাস্ফ্যুর কাহিনি......


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    নাটক যদিও কম দেখা হয়, তবে মাঝে মাঝে যেগুলো দেখা হয় ভালোই লাগে। নাটক বা গল্প - উপন্যাসে রিয়েলিটির ছাপ থাকলে সেটা বেশী গ্রহনযোগ্য হয়।

    তবে (ব্যক্তিগত মত), নাট্যকারেরা বাস্তবতা, যেমন মাস্তানি বা পরকীয়া এইগুলো দেখানোর পাশাপাশি, এই ব্যাপারগুলো সমাজে কি রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সেই দিকেও দর্শকদের মনোযোগী করলে ভালো হবে।

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    নাটকের ভাষা নিয়ে আমারও অভিযোগ আছে।নাটকের মাধ্যমেই ভাষা শেষ হয়ে যাবে সেটা বলছিনা কিন্তু অন্ততঃ টিভি অনুষ্ঠান,নাটক,রেডিও অনুষ্ঠান এগুলোতে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা উচিৎ।এফ এম রেডিওর তথাতথিত ডিজে সম্প্রদায়ের কুপ্রভাব আমরা আশে পাশেই দেখি- নাটকে জগাখিচুড়ি ভাষার প্রভাব সেটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়া বই কমাবে না।এ ধরণের নাটকের নির্মাতাদের যুক্তি হচ্ছে-"আমরা তো সত্যিকারে কেউ প্রমিত বাংলা ভাষায় কথা বলিনা,দৈনন্দিন জীবনে যেভাবে কথা বলি সেটা নাটকে বা রেডিওতে আনতে দোষ কোথায়?"
    এক্ষেত্রে আমার মতে,দৈনন্দিন জীবনে করসি খাইসি,খাপো ইত্যাদি দেখার জন্য নাটকের শরণাপন্ন না হয়ে দৈনন্দিন জীবনে একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে শুনে অনুশীলণ করাটা টিভি,রেডিওর চাইতে কার্যকর উপায় বলেই তো মনে হয়।নাটক,খবর,রেডিও অনুষ্ঠান এখানে যদি এই ভাষার প্রয়োগ চলতে থাকে তাহলে প্রমিত ভাষার অস্তিত্বটা থাকবে কোথায়?দৈনন্দিন জীবনে খাপো-খাপো টাইপ ভাষা ব্যবহার করই কিন্তু টিভি রেডিওতে টনি ডায়েসের শুদ্ধ বাংলা শুনে ও দেখে আমরা শিখি যে মূল উচ্চারণ কি হবে-আর এর ফলে আমাদের "বেসিক" টা ঠিক থাকে-যতই খাপো-করপো করি না কেন।টিভি রেডিওতে যখন প্রমিত বাংলার বদলে এই করসি-খাইসি-খাপো-লাইক-ইউ-নো জাতীয় ভশষা স্থান নেবে-তখন প্রমিত উচ্চারণ যাবে হারিয়ে-আর আমরা গর্বিত(??!)অধিকারী হব করসিলাম-খাইসিলাম-হান্দাইছি-সাঁটাইছি জাতীয় নিতান্তই কথ্য ভাষার পূজক এমন একটা জাতি যাদের ভাষার কোন শুদ্ধ রূপ থাকবেনা।

    অন্যদের কথা জানিনা তবে ইংরেজী অক্ষরে Kothin vaab,Jotil pochano জাতীয় জারজ ভাষার তোড়ে শুদ্ধ বাংলা হারিয়ে যাওয়ার সেই দিন দেখার আগে এ মুল্লুক ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমানোর বুদ্ধিটা অন্ততঃ এ মুহূর্তে আমার কাছে খুব একটা খারাপ লাগছেনা।

    জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    ভাষার ব্যাপারে দুইভাইবেই বলা যায়। মাস্ফু যা বলেছে তার বিরোধিতা আমি করছিনা। আবার এটাও ঠিক, আঞ্চলিক ভাষার নাটকে কোন একটা অঞ্চলকে ফুটিয়ে তুলতে সেই অঞ্চলের ভাষাকেই ব্যবহার করতে হবে। সেখানে শুদ্ধ উচ্চারণ মানানসই হবেনা। তেমনি, নাটকে সাধারণ সমাজের সাধারণ জীবনধারা দেখাতে গিয়ে এবং ব্যাপারগুলোকে সত্যিকারের জীবনের খুব কাছাকাছি নিয়ে যাবার জন্য কথ্য ভাষাকে সংলাপ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।

    নাটকের সংলাপের সনাতন এবং চিরাচরিত প্রথা ভেঙ্গে যখন এভাবে নতুন আঙ্গিকে সংলাপ এলো, দর্শক সেটিকে ভালোভাবেই গ্রহন করলো। আর আমাদের সব কিছুর পিছনেই যেহেতু বাণিজ্যিক মনোভাবটা খুব বেশী কাজ করে, তাই একজনের দেখাদেখি বাকী সবাই বাণিজ্যিকভাবে হিট হবার জন্য লেগে গেল... আর তাই এখন অনেক নাটকেই কথ্য ভাষার প্রচলন খুব বেশী।

    তবে হ্যা, বাংলা নাটক অনেককেই নাটক দেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে, এবং ব্যাপারটা খুবই আশাব্যঞ্জক।

    রাশেদ,
    ধন্যবাদ সুন্দর করে ভাবার জন্য এবং সুন্দর একটি লেখার জন্য।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আহসান ভাই,বরিশাল বা নোয়াখালি অঞ্চলের কোন কাহিনী দেখাতে গিয়ে পাত্র-পাত্রীরা যদি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে তাহলে সেটাই বরং বেমানান হবে।আমার আপত্তিটা আসলে সে যায়গায় নয়,আমার আপত্তি হল ফারুকী সাহেব এবং তার দেখাদেখি লোকজনের নাটকে জগাখিচুড়ি এক অসহ্য ভাষার ব্যবহার এবং তা "সবাই বলে" বলে জায়েজ করার চেষ্টা।সত্যি কথা হচ্ছে, ওই জগাখিচুড়ি ভাষা সবাই বলেনা-আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে,নর্থ সাউথের মত কুখ্যাত ইয়ো জায়গাতেও এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা কোনভাবেই শতকরা ১০ ভাগের বেশি নয়।ওখানে ছেলেপেলে হয় পু্রোপুরি ইংরেজি বলে অথবা সাধারণ করসি খাইসি বলে।স্মার্টনেস প্রদর্শন করতে যেসব চিড়িয়া দুটো মিলিয়ে ডিজুস ভাষায় কথা বলে ওইগুলাকে আমজনতা খুব নীচু চোখেই দেখে-যদিও এটা ঠিক যে ওদের এই ভাষাটা সাধারণ ভাষার চেয়ে বেখাপ্পা বলে চোখে বাজে বেশি(সার্কাসের জোকারের মত অনেকটা)।

      দুঃখের বিষয় হচ্ছে,বহু নাটক নির্মাতা এই ভাষাটাকে স্টান্টবাজি হিসেবে ব্যবহার করে-এমন একটা ভাব যেন সবাই এই ডিজুস ভাষাতেই কথা বলে আর এটাই স্বাভাবিক।এটা তৃতীয় শ্রেণীর হিপোক্রিসি এবং দর্শক টানার অতি সস্তা কৌশল।স্বীকার করছি যে হিন্দি সিরিয়াল দেখার চেয়ে এগুলো দেখলে(আমি কিন্তু সব নাটকের কথা বলছিনা-ভাল ভাল অনেক নাটক নিশ্চয়ই হচ্ছে)আমাদের মননশীলতা আর রুচির কতটা উন্নতি হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে বইকি।

      অফ টপিক-আচ্ছা,পটুয়াখালির ভাষায় "আমার কমান্ডো বড় ভাই খুব শিগ্রি ডাবল হবেন" এইটার অনুবাদ কি?(ফ্রন্ট্রোল)

      জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    সুন্দর ভাবে ফোটাতে পারলে ভাল না লাগার কোন কারণ নাই । ভাষার চেয়ে বড় মনে হয় নাটকের বিষয়বস্তু । ফারুকীর লাস্ট নাটক দেখলাম ডেটিং । এরকম বিখাউস নাটক পুরাটা শেষ করতে পারিনাই । এখন শুধু কথ্য ভাষায় কথা বললেই তো আর ভালো নাটক হয়না । অভিনেতা/অভিনেত্রীদের অভিনয় জানতে হয় । ইদানিং ফারুকীর নাটক দেখে মনে হয় তাকে হুমায়ূনের ভূত ধরেছে ।

    জবাব দিন
  6. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    ভালো লাগলো :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  7. মহিব (৯৯-০৫)

    ঠুয়া নাটকটা ভালো লাগছে।
    নাটকের ভাষা নিয়ে মাস্রুফ ভাইয়ের সাথে একমত।

    আর বাংলা নাটকে বর্তমানে সবচে ভাল্লাগে অমিতাভ রেজার নাটক। "একটি ননফিকশন আর কয়েকটি ফিকশন" না দেখলে দেখিস। ভালো একটা ছোটগল্প পড়ার মত অনুভূতি হয়।

    আর সবমিলায়ে তেমন একটা নাটক দেখা হয়না। শুধু প্রভা কোন নাটকে থাকলে দেখি। 😀

    জবাব দিন
  8. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    রাশেদ
    লেখাটা বেশ ভালো হয়েছে। তোর দেখার ভঙ্গিটাও ভালো লেগেছে।

    টিভিতে এখন বেশকিছু ভালো কাজ হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। অনেকে বলে, এখনকার নাটকগুলি নাকি আগের মতো হচ্ছে না। আমি অবশ্য এটার সাথে একমত না। আসলে আগে চ্যানেল বলতে ছিলো শুধু বিটিভি। সেখানে নাটক দেখাতো সপ্তাহে একটা/ দুইটা। আমরা পুরো সপ্তাহে সেটার জন্যেই অপেক্ষা করে থাকতাম, ফলে যা দেখাতো তাই মনে গেঁথে আছে স্মৃতি হয়ে। এখন অনেক চ্যানেল, প্রতিদিন অনেক নাটক। সব দেখার সুযোগ নেই। সব দেখার মতোও না। কিন্তু এরমধ্যেও চমৎকার অনেক কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে নুরুল আলম আতিক, অনিমেষ আইচ, মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী, মেজবাউর রহমান সুমন, অমিতাভ রেজা, আশুতোষ সুজন এরা খুব ভালো কাজ করছেন। টিভি নাটক মানের দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

    ভাষার ব্যপারে, আমি মোটামোটি উদার। ভাষা এতো ঠুনকো ব্যপার নয় যে টিভি নাটকে কথ্য ভাষা দেখালেই সেটা পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এই ভয় অমূলক। বরং যে চরিত্র যে ভাষায় কথা বলে তাকে সেভাবে উপস্থাপন করার মধ্যেই স্বার্থকতা।

    আমরা তো সবাই বইয়ের ভাষায় কথা বলি না। টিভি নাটকে যদি সবাইকে দিয়ে প্রমিত বাংলায় কথা বলানো হয় সেটাই বরং হাস্যকর লাগবে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে ভাষা ব্যবহার করি সেটার প্রভাব টিভি নাটকে থাকবেই। এটা এড়িয়ে গিয়ে একেবারে সবাইকে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলালে বরং আরোপিত মনে হবে।

    হ্যা, ইদানিং কথ্য ভাষাটাকেও আরোপিত ভাবে ব্যবহার করা হয় মাঝে মাঝে, এটা ঠিক না।

    আমরা যে বিদেশি ভাষার ছবিগুলি দেখি, সেখানে কি তাদের প্রমিত ভাষাটাকেই সব সময় ব্যবহার করা হয়? না। ধরুন, ইংরেজি ছবি, সেখানে হর হামেশা কথ্য ইংরেজি ব্যবহার হচ্ছে। তাতে কি শুদ্ধ ইংরেজি ভাষার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে? মনে হয় না। আমার দেখা অনেক ইরানী বা অন্য ভাষার ছবিতেও কথ্য ভাষা ব্যবহার হতে দেখেছি নিয়মিতই। এতে এতো উদ্বিগ্ন হবার কিছু নাই।

    আসল কথা হচ্ছে ভাষাটা চরিত্রের সাথে মানান সই কিনা? হলে ঠিক আছে না হলে ঠিক নাই।

    আর রেডিও'র জগাখিচুড়ি বাংলিশ এবং টিভি নাটক দুইটা বোধহয় আলাদা জিনিস। রেডিও জকিরা তো কোন নাটকের চরিত্র না, সুতরাং তাদের মুখে শুদ্ধ বাংলা শুনতেই আমার ভালো লাগে (যদি না অনুষ্টানটা ইংরেজিতে হয়)।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  9. সামীউর (৯৭-০৩)

    কামরুল ভাই এর কথায় আমি অনেকটাই সহমত।ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপণ শেক্সপিয়ার যে ভাষায় নাটক রচনা করেছেন -Blow, blow, thou winter wind! Thou art not so unkind as man's ingratitud (As You Like It : Act 3 scene 7) বা আরো এমন অনেক উদাহারণ আছে, ভাষা একটা চলমান প্রক্রিয়া, সমাজের বদলের সাথে এর বদল হবেই। Googling, বা googled এখন স্বীকৃত শব্দ যা এক সময় অভিধানে ছিলো না। তবে ভাষা আরোপিত না হলেই ভালো। এফএম রেডিও র জকিদের একটা নির্দিষ্ট টোন আছে, আর দেশের প্রথম দিকের রেডিও স্টেশনের স্থাপন, কারিগরী সুবিধা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারতীয় কিছু হাউস, যার ফলে সেই ট্রেন্ডটা এখানে ঢুকে গেছে বলে আমার ধারণা। আর এই জগাখিচুড়ি ভাষা নামসর্বস্ব ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলের কিছু ডিজুস পোলাপান ছাড়া কারো মুখে শোনা যায় না।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহ্সান (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।