চায়ের দোকান

বট গাছ তলার বকশীর চায়ের দোকান টা বট গাছের মত পুরান না হলেও বয়স কিন্তু একদম কম না। তাই এর ইতিহাসও কম না। আজমল যেমন বলে ওর মা কে নাকি ওর বাবা জীবনে প্রথম দেখেছিল এই দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া বালিকা স্কুলের রাস্তার ওপর। বকশীর ছেলে যেমন আমজাদ চেয়ারম্যান কে দেখিয়ে বলে- চেয়ারম্যান হইলে কি হইব! ভাল কইরাই তো চিনি, আগে কেমন পোংটা আছিল। এই দোকানে বইয়াই তো মাইয়া দেখত। ঠিক তেমনি করে মাইয়া দেখতে আমরা বসে থাকি যেন আমাদের পোলাপাইনরা তাদের পোলাপাইনদের দাদা দাদীর দারুন এক হিস্ট্রি বলতে পারে। আর সাথে জোরে জোরে বলি ঐ পিচ্চি চা লাগা, ফ্রেশ পাত্তি।

ফ্রেশ পাত্তি লাগান চা আসে বারবার আর আমাদের আড্ডাও তুমুল বেগে চলতে থাকে সকাল টু সন্ধ্যা। দুনিয়ার যত রাজা উজির আছে তাদের এইখানে মারতে মারতে আমরা খালি সকাল ১০টা আর বিকেল ৩টার সময় তাদের রেহাই দিই। সেই সময় অন্য আর কোন কিছুর জন্যই আমাদের টাইম নাই কারন সকাল ১০টায় বালিকা স্কুল শুরু আর বিকেল ৩টায় ছুটি। সেই সময় টায় আমরা খালি রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমাদের কেও কেও অবশ্য মাঝে মাঝে ছুটে সামনে যায়। কিছু হয়ত বলার চেষ্টা করে, আবার কিছু হয়ত বলেও ফেলে। আর বকশীর ছেলে এইসব দেখে খালি মাথে দুলিয়ে হাসে। কারন সময় আর বালক বালিকা সবি পরিবর্তন হয় কিন্তু বকশীর ছেলে ঠিকি ক্যাশ বাক্সের পিছনে বসে থাকে।

সারাদিন বসে থাকা ছাড়া আমাদের আর কোন কাজ নাই তাই গুজব শুনা আর নতুন গুজব তৈরি করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায়ও নাই। আমাদের কার চিঠির উত্তরে কোন মেয়ে হাসি দিল, কার দিল নতুন করে কে পুড়ল, নতুন কোন সুন্দরী কে রাস্তায় দেখা গেল অথবা তার পিছনে কে লাইন দিল এই সব ব্যাপারে নতুন নতুন সব খোজ খবর করাই ছিল আমাদের কাজ।

গুজবের কি আর মা-বাপ আছে। এই দোকানে বসলে যে কত নতুন খবর শুনা যায় তার ঠিক ঠিকানা নাই। ঐযে বালিকা স্কুলের নতুন সুন্দর মত ঢাকা থেকে আসা মাস্টার আছে না, তারে নিয়াই তো কত আজব কথা শুনা গেল। ইংরেজীর মাস্টার তাই এলাকার যত পোলাপাইন আছে সব তো তারই কাছে প্রাইভেট পড়ে আর এইদিকে আমাদের দিল পুড়ে। একবার হঠাৎ করে মাস্টার সাব উধাও, উধাও মানে পুরা উধাও। তারে স্কুলে,গ্রামে বা হাটে কোন খানে দেখা যায় না। এইসময় মফিজের বাচ্চা আইসা একদিন বলে সে না কি শুনছে যে, মাস্টাররে মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে স্কুল কমিটি তাড়ায়ে দিছে। রসাল খবরের মজাই আলাদা তাই আমাদের এইটা বিশ্বাস করতে কোন বাধাই রইল না, তার উপর ব্যাটা প্রতিদিন বিকেল বেলায় এত এত সুন্দরীদের মাঝে বসে থাকে তাই এরকম কিছু হওয়া অসম্ভব না। কিন্তু বাগড়া দিল রাইসুল। শালা আসলেই বেশী কথা বলে, বলে কিনা- মফিজ তুই এইটা জানলি কেমনে? তোরে কি মাস্টার আইসা নিজে নিজে বইলা গেছে? আমরা এইবার রাইসুলের প্রতি বিরক্ত হয়ে একটু মফিজের দিকে তাকাতেই দেখি ব্যাটা দাঁত কেলায়ে হাসতে হাসতে বলতাছে- আরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারী আমার চাচা না। এরপর তো আমাদের আর কোন সন্দেহ থাকে না।

কিন্তু কিসের কী? হঠাৎ যেমনে উধাও হইছিল তেমনে হঠাৎ করে নতুন বিয়ে করা বউ নিয়ে হাজির হয় মাস্টার। আসলে নাকি বিয়ের জন্য ছুটিতে ছিল দুই সাপ্তাহ। এইদিকে আমরা হালায় কত কথা বানায়ে ফেললাম। ব্যাটাতো আর মানুষ খারাপ না, বিয়ে করছে তাই খারাপ নজর তো আর দিতে পারবে না। বলেন এতসবের পর কি কোন খোজ খবর না নিয়ে আর কোন গুজবে বিশ্বাস করা যায়।

মাঝে কয়েকদিন বকশীর দোকানে যাওয়া হয় নি তাই দোকানে ঢুকেই ক্যাশ বাক্সের সামনের প্লাস্টিকের জার থেকে দুইটা বিস্কুট বের করে যখন হাক দিলাম ঐ পিচ্চি চা লাগা ঠিক তখন বকশীর ছেলে বলল- কি মিঞা, দেখা যায় না আজকাল। থাক কই? বিস্কুটে কামড় দিতে দিতে বললাম- এইতো ছিলাম আরকি একটু ব্যস্ত। এইবার মুচকি হাসি দিয়ে বকশীর ছেলে বলে- কেন আজকাল স্টেশনে বেশি যাওয়া হয় নাকি। সেকেন্ড বিস্কুটটা চা তে চুবাতে চবাতে বললাম- কেন স্টেশনে কি রঙ্গের মেলা বসছে নাকি? বকশীর ছেলে বলে- আর মিঞা ধর ব্যাপারটা ঐরকম আরকি। আমি বললাম- কেন কি হইছে? ব্যাটা বলে- শুন নাই নতুন স্টেশন মাস্টার আসছে। এতে এত খুশির কি আছে না বুঝে বললাম- ঠিক আছে বাকি কাহিনী কালকে শুনব। বিল টা লিইখা রাইখেন।

পরের দিন দোকানে যাইতেই ব্যাপারটা ফঁকফঁকা হয়ে গেল। ঘটনা নতুন স্টেশন মাস্টার না ঘটনা হইল তার মেয়ে। দোকানের এত চেচামেচির মাঝে ভাল করে সব বুঝা না গেলেও এইটা বুঝা গেল মেয়ে দারুন সুন্দরী। মফিজ তো নিশ্চয়তা দিয়ে বলল এইরকম মেয়ে এই এলাকায় আর নাই। মফিজ সব সময় একটু বেশি বেশি বললেও এইবার রাইসুলের কারণে ব্যাটা কে অবিশ্বাস করা গেল না। কারণ ওর বোন নাকি এই মেয়ের সাথে একি ক্লাসে পড়ে আর খবরের সত্যতা নাকি ওর বোনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। এদিকে আমাদের উত্তেজনা দেখে বকশীর ছেলে ক্যাশ বাক্সের পিছন থেকে হাসতে থাকে। হাসারই কথা কারণ এই রকম নতুন খবর মানেই এখন সকাল বিকাল আবার বকশীর দোকানে আমাদের ভীড়। আর ভীড় মানেই গল্প, বিস্কুট আর ফ্রেশ পাত্তি লাগান চা।

মফিজের কথায় প্রথমে আমরা তেমন একটা পাত্তা না দিলেও কথা যে মিথ্যা বলে নাই সেইটা বুঝা গেল দোকানে ভীড় দেখে। এখন প্রতিদিন সকাল দশটা আর বিকেল তিনটার দিকে উত্তর পাড়ার কলেজ আর হাইস্কুলের পোলাপাইনদের যে পরিমাণ ভীড় বেড়ে গেল এরপর আর মফিজের কথা কে পাত্তা না দিয়ে উপায় ছিল না। তবে পোলাপাইন সব ঝিমায়ে পড়তে পাঁচ ছয় দিনের বেশি সময় লাগল না। কারণ যে জিনিস দেখা যায় না খালি শুনা যায় সেই জিনিসের প্রতি উৎসাহ ধরে রাখা কঠিন। আমরাও ব্যাপারটায় বেশ খানিকটা টাশকি খেলাম।

অবাক না হয়ে উপায় অবশ্য ছিল না কারণ প্রথম দুই একদিন বসে যখন আমরা কোন সুন্দরী বালিকার দেখা পেলাম না তখন খবরটা আসলে কতটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিল। আফজাল তো বলল- আরে দেখ গিয়া স্টেশন মাস্টারের কোন মাইয়াই নাই। এত বড় সন্দেহের কথায় আমাদের কপালে ভাজ পড়লেও সবচেয়ে বড় ভাজ পড়ল বকশীর ছেলের কপালে ক্যাশ বাক্সের পিছনে, কারণ হাজার হইলেও এইটা তার রুটি রুজির কথা।

এইবার অবশ্য পাক্কা খবর আনল রাইসুল, তার বোনের কাছ থেকে। স্টেশন মাস্টারের মেয়ে নাকি আছে এবং সে নাকি সত্যিই দারুন সুন্দরী। তবে খারাপ খবর হল এই মেয়ে যাওয়া আসার পথে বোরকা পড়ে। বালিকার উপস্থিতি প্রমাণ হওয়ায় মনের ভিতর টা যেমন চাগাড় দিয়ে উঠছিল পরের কথাটায় ঠিক তেমন ঝিমায়ে পড়লাম আমরা সবাই। আল্লার দুনিয়ায় সুন্দর হইল দেখার জিনিস। কিন্তু কেন যে মানুষ সেইটা ঢাইকা রাখে আল্লাই জানে। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আলীয়া মাদ্রাসায় পড়া আজিজ তো এইটা কে একটা বড় না-ইনসাফী বলে রায় দিল। এইটা যে একটা বড় সত্য খালি চায়ের কাপ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে সেই ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ রইল না।

তবে সুন্দর নিজেকে কে যতই ঢেকে রাখুন মানুষ তাকে খুজে বের করবেই। আমাদের মধ্যে এই ব্যাপারে আফজালের উৎসাহ বেশি, ব্যাটার অবশ্য কাজ-কাম তেমন একটা নাই। বাপের ডিলারশীপের ব্যাবসা আছে তাই কাল রঙের এক পালসার মোটরসাইকেলে চড়ে গায়ে হাওয়া বাতাস লাগিয়ে বেড়ায়। তাই একদিন এই ব্যাটাই বকশীর দোকানের সামনে মটোরসাইকেলের উপর বসে পা নাচাতে নাচাতে খবর দিল মেয়ের নাম চামেলী, একটা কাল রেঙের বোরকা পড়ে আসা যাওয়া করে, হরিপদ দত্তের কাছে নাকি সোম আর বুধবার বিকেল বেলা অংক করতে যায়। বাড়ীর বাইরে মেয়ের আসা যাওয়ার আর কোন খবর আফজাল আমাদের আর দিতে পারে না।

যতই এরকম কাহিনী শুনি ততই উতলা হয়ে উঠি। খালি ভাবি মেয়েটা না জানি কি রকম, নেকাব তুললে না জানি কেমন দেখা যাবে। রাতের বেলায় ঘুমের মাঝেও টের পাই স্বপ্নে কিভাবে কিভাবে যেন পৌছে গেছি বকশীর দোকানের সামনের রাস্তাটার উপর। খালি আমি না অন্যরাও আছে। সবাই অপেক্ষা করছে চামেলীর জন্য। কখন কাল বোরকা পড়ে মেয়েটা যাবে। জানি একটা চলন্ত বোরকা আর একজোড়া চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না, আর আমরাও সাহস করে কিছু বলে উঠতে পারব না কিন্তু তারপরেও আমরা অপেক্ষায় থাকি একজোড়া চোখের। আর বকশীর ছেলে দুলে দুলে হাসতে থাকে ক্যাশ বাক্সের পিছন থেকে।

এভাবে দিন যায় আর বকশীর দোকানের সামনে আড্ডা আমরা আর শক্ত ভাবে চালিয়ে যাই। আড্ডায় আমরা কথা বলি ঠিকই কিন্তু আমাদের একটা চোখ থাকে রাস্তার উপর। মাঝে মাঝে মফিজ খবর আনে, মাঝে মাঝে আনে রাইসুল আর পালসারে চড়ে সবচেয়ে বেশি খবর আনে আফজাল। আমরা সেই খবর শুনি, সেইটার সত্য মিথ্যা নিয়ে তর্ক করি আর মনে মনে প্ল্যান আটি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। তবে সাহস করে আফজাল একদিন একটা কাজ করে ফেলল। ব্যাটা একদিন চামেলী কে একটা চিঠি দিয়ে দিল হরিপদ দত্তের বাড়ি যাওয়ার রাস্তায়। এরপরে কি হল প্রশ্ন করতেই ব্যাটা বলে- এরপর কি হইল কেমনে বলব। আমি তো চিঠি দিয়াই ফুট। উত্তর কি আর আমার কাছে আছে। তাই উত্তরের উপেক্ষায় আমরা পরের দিন থেকে বসে থাকি দোকানের সামনে। কিন্তু কিছুই বুঝা যায় না। আগের মতই একটা বোরকা চলে যায়। ভিতরের চোখ জোড়া আমাদের দেখল কিনা সেইটা বুঝা যায় না। আফজাল ওর পালসারের উপর আর কুঁজো হয়ে বসে।

এদিকে আফজালের সাহসের কারণে ঐব্যাটা আমাদের মাঝে এগিয়ে গেল। এরপর থেকে আমরা চামেলী কে নিয়ে শুধু ভাবি কিন্তু আর কোন কিছুর পরিকল্পনা করি না। আফজাল তার পালসারে উঁচা হয়ে বসে আর আমাদের জন্য চায়ের অর্ডার দেয়। কিন্তু আসল খবর আসে রাইসুলের থেকে ভাল করে বললে রাইসুলের বোনের কাছ থেকে। চামেলী নাকি দারুন ক্ষেপেছে। রাইসুলের বোন কে বলছে- তোর ভাইয়ের সাথে ঘুরে না একজন। রাইসুলের বোন বলে- কোন জন? চামেলী বলে- ঐ যে মোটরসাইকেলে বসা থাকে, কাল মোটোরসাইকেলে। ব্যাটা পুরা বদমাশ। কালকে স্যারের বাসায় পড়তে যাওয়ার সময় আমাকে একটা চিঠি দিল। চিঠির মাঝে আবার ভাব ভালবাসার কথা লিখা। চোখ বড় বড় করে মফিজ বলে- এরপরে কি কইল তোর বোন? চোখমুখ শুকনা হয়ে যাওয়া আফজালের দিকে একবার তাকিয়ে রাইসুল চায়ের ভিতর বিস্কুট চুবাতে চুবাতে বলে- না কি আর বলবে। বলল আমি দাদারে বলুম যেন ব্যাপারটা দেখে। এইকথা শুনে যদিও আমরা সবাই বললাম- চিন্তা করিস না আফজাল, প্রথম প্রথম এমন একটু করবই। পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মনের ভিতর সবাই একটা হাসি দিলাম, তৃপ্তির হাসি।

যতই তৃপ্তির হাসি দেই না কেন কয়েকদিন পর আর সেই হাসি থাকল না। রাইসুল খবর দিল চামেলীর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে, পাত্র বিদেশী। কুয়েত থাকে। তারপর পাত্রের নাম যখন শুনলাম মনটাই তিতা হয়ে গেল। পাত্র হল ব্যাপারী পাড়ার সোলায়মান ভাই। সেই সোলায়মান ভাই যে কিনা আমাদের থেকে কমপক্ষে চৌদ্দ পনের বছরের বড় আর সেইখানে চামেলী কম করে হলেও আমাদের থেকে চার পাঁচ বছরের ছোট। এইরকম একটা বুড়া ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে কেমনে সম্ভব। সব শুনে বকশীর ছেলে ক্যাশ বাক্সের পিছন থেকে বলল- টাকা, সবই টাকার খেলা। বুঝলা কিছু।

বিয়ের গুজব শুনতে শুনতেই একদিন আমরা টের পেলাম চামেলী আর স্কুল যায় না। আজিজ বলে- আহারে মেয়েটা মাত্র টেনে পড়ে। আরেকটা বছর পরে বিয়ে হইলে এমন কি ক্ষতি হইত? মেট্রিকটা অন্তত দিতে পারত। শরীফ বলে- আরে আজকাল কার বাপ গুলা টাকার গন্ধ পাইলে আর দাড়াইতে চায় না। এদিকে রাইসুলের কাছ থেকেই প্রতিদিন খবর পাই বিয়ের আর বেশিদিন বাকি নাই। কিন্তু কিছুই আর করার নাই তাই বকশীর দোকানে খালি চা খাই আর কি করলে কি হইতে পারত তা নিয়ে কথা বলি।আফজাল দোকানে আসা কমায়ে দেয়, মফিজ খালি বলে আহারে সামনের দশ তারিখ মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে। আমরা খালি মাথা নাড়াই কিন্তু কিছুই করি না।

আমরা এতগুলা ছেলে থাকতে চামেলীর বিয়ে হয়ে যাবে কোন কুয়েত থেকে আসা সোলায়মানের সাথে আমরা এইটা মেনে নিতে পারি না। তাই বিয়ের দুইদিন আগে থেকে বকশীর দোকানে আমরা আসা যাওয়া বন্ধ করে দিই। আমরা বুঝতে পারি চামেলী ছিল আমাদের সবার কাছে সিনেমার নায়িকার মত। যাকে ভালবেসে না পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সোলায়মানের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। কিন্তু আমরা কিছুতেই কিছু করতে পারি না তাই বিয়ের দিন বাড়িতে বসে থাকি। আর ভাবি একটা কাল বোরকার কথা, বোরকার নিচে একজোড়া চোখের কথা।

বিয়ের পরের দিন যখন আমরা কয়েকজন পা টানতে টানতে অভ্যেস বসত সকালে বকশীর দোকানে হাজির হই। দোকানে কোন কাস্টমার না দেখে তেমন একটা অবাক হই না। দোকানে সকাল বেলার চা না নিয়ে চুপচাপ আমাদের বসে থাকতে দেখে বকশীর ছেলেও অবাক হয় না। এমন সময় হঠাত উত্তর পাড়ার আবুল চাচা দোকানে ঢুকে। ঢুকেই বকশীর ছেলে কে বলে- খবর শুনছ নাকি মিঞা। বকশীর ছেলে বলে- কি খবর? আবুল চাচা বলে- আরে স্টেশন মাস্টারের বেটি তো পালাইছে। এইবার আমরা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠি। বকশীর ছেলে বলে- আসল খবর কও মিঞা। আবুল চাচা বলে- আরে বর যাত্রী যাওয়ার একটূ আগেই পালাইছে মেয়ে। মফিজ বলে- চাচা কার সাথে পালাইল মাইয়াটা? চাচা বলে- এতশত জানি না বাপ। তয় শুনছি মাস্টারের পাশের বাড়ির মমিনা নাকি মাইয়াটারে কাল এক মোটরসাইকেলে পালাইতে দেখছে। মফিজ বলে- কি রঙের মোটরসাইকেল চাচা? চাচা উত্তর দেয়- কালই তো শুনলাম মনে হয়। এইবার আজিজ আমার দিকে তাকায়ে একটা হাসি দেয় আর আমি জোরে হাঁক দিই- ঐ পিচ্চি চা লাগা, ফ্রেশ পাত্তি।

৫,৬৬৭ বার দেখা হয়েছে

৯১ টি মন্তব্য : “চায়ের দোকান”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আমি ঠিক করেছি পুরনো লেখা যতোই ভালো হউক, প্রশংসা করবো না।

    শুধু পড়ে চলে যাবো। :grr:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    পড়লাম এবং পরিশেষে একটাই অনুভূতি, আপনি কোন দোকানের চাল খান দাদা? আমাদের হাত দিয়ে কবে এসব বের হবে :boss: :boss: :boss:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    রাশেদকে যখন সামনাসামনি দেখি তখন কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। এই ছেলেটা এত্ত সুন্দর লিখে ওকে দেখলে বোঝাই যায় না।
    অনেক বড় লেখক হও ভাই।

    সাম্প্রদায়িকঃ আমার হাউসের ছেলে। B-) B-) রেড, রেড আপ, আপ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ ফয়সাল (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।