আমার ডায়েরীর মলাটে লুকানো তুমি

আমার ডায়েরীর মলাটে লুকানো তুমি
————– ড. রমিত আজাদ

তখন আমরা স্কুল পড়ুয়া,
তোমার ভাই আর আমি সতীর্থ ছিলাম,
পড়ালেখায় দুর্দান্ত শত্রু ছিলাম আমরা দুজন!
কে কাকে হারিয়ে ফার্স্ট হবো,
এই নিয়ে চলতো প্রবল প্রতিযোগিতা।
এভাবে ঝগড়া করতে করতে,
হঠাৎ একদিন আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম।

তোমার ভাই বললো,
“চল তোকে আমাদের বাড়ী নিয়ে যাই।
আমার মায়ের হাতের রান্না খাবি।
আমার মা কিন্তু পায়েশ রাঁধে বেশ।
আর আমার ছোট বোনটা জানিস, ফার্স্টক্লাস চা বানায়।”
“তোর ছোট বোন আছে বুঝি?”
ও বললো, “হ্যাঁ, আছেতো। গেলেই দেখবি।”

শত্রু থেকে বন্ধু হয়ে যাওয়া দোস্তটির
বাড়িতে গেলাম ঐ দিনই,
তবে ওর মা বাড়ীতে না থাকায়,
পায়েশ আর ঐ দিন খাওয়া হলোনা,
কিন্তু তুমি চাটা বানিয়েছিলে বেশ!
মনে হয়েছিলো যেন, পরীর হাতের ছোঁয়ার
অমৃত নামছে আমার ঠোট ছুঁয়ে, গলা বেয়ে।

প্রথম দর্শনে,
জাগিলো তব প্রেম মম প্রসুনের পাঁপড়িতে!
পেন্সিলে আঁকা পরীটির প্রথম আঁচড় পড়লো,
আমার আনকোড়া সাদা খাতায়।
ব্যাস! আমি শেষ!

আমার একটি ডায়েরী ছিলো,
চামড়ার মলাটে বাঁধা,
ঐ মলাটের নীচে, খুব সাবধানে
লুকিয়ে রেখেছিলাম তোমার ছবি,
ঐ যে, যেটা তুমি উপহার দিয়েছিলে,
হাত ছুঁয়ে পরম আদরে।
ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে,
মলাট তুলে তুলে,
চুরি চুরি করে দেখতাম,
তোমার ছবি, তোমার মধুর হাসি,
কয়েক সেকেন্ডের জন্য,
আবার ঢেকে দিতাম,
কেউ যাতে দেখতে না পারে।
কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি,
প্রথম প্রেমের প্রতিজ্ঞায়।

তোমাকে বধু করে আনতে পারিনি আমার ঘরে,
স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো,
ঘুম ভেঙে গেলে,
যে স্বপ্নে আর ফেরা যায়না কখনো,
ঠিক তেমনি!
এখন তুমি অন্য ঘরের গৃহিনী,
তোমাকে অবাধে দেখার
সামাজিক অনুমতি মেলেনি আমার!
তাই সেই লুকিয়ে তোমাকে দেখা
আজও শেষ হলোনা আমার !

You are hidden inside my diary cover
—————————— Dr. Ramit Azad

৯৩৬ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “আমার ডায়েরীর মলাটে লুকানো তুমি”

  1. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    সম্ভবত ডায়েরিই হলো মানুষের একমাত্র বন্ধু যাকে সে অকপটে অন্তরের কথা বলে। তোমার ডায়েরিতে তেমনই প্রতিফলন চোখে ভাসল।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    স্পষ্ট কথা বলিঃ
    শেষ স্তবকের আগ পর্যন্ত তরতরিয়ে এগোচ্ছিলাম।শেষ স্তবকে কেমন যেন একটা ব্যাপার হয়েছে, ভাষার পরিবর্তন না ভাবের বিবর্তন বুঝতে পারছিনা।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।