ইতিহাস প্রসঙ্গ: সত্য ও মিথ্যার মাপকাঠি -পর্ব ২

ইতিহাস প্রসঙ্গ: সত্য ও মিথ্যার মাপকাঠি -পর্ব ২
————- ড. রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন স্কুলজীবনে লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন না। তদুপরি পরিণত বয়সে তিনি হয়ে ওঠেন এক অনন্যসাধারণ প্রতিভা। তাই একবার এক সাংবাদিক উনাকে প্রশ্ন করেছিলো, “আপনি তো স্কুলজীবনে লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন না, অথচ আজ আপনি জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী। এখন আপনি কি মনে করেন যে বিদ্যালয় শিক্ষার কোন প্রয়িজন নাই?” জবাবে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, “অবশ্যই নয়। বিদ্যালয় শিক্ষা মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়, এটার প্রয়োজন রয়েছে।” হ্যাঁ, এই বিদ্যালয় শিক্ষাই মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়, তাই বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত বাধ্যতামূলক সাবজেক্টগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ইতিহাসগ্রন্থগুলিতে যা লেখা থাকে সেটাই শিক্ষার্থীদের মনে দাগ কেটে থাকে। অবচেতন মনে সেটাকেই সত্য বলে মেনে নেয়। এখন কথা হলো, সেই পাঠ্যক্রম কারা ঠিক করে? নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতাসীনরা।
রাজনীতির ধ্রুপদী উদ্দেশ্য হলো, ‘ক্ষমতা দখল’। তাই যে ব্যাক্তি, দল বা গোষ্ঠিই রাজনীতি করুক না কেন তারা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করে থাকে (ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন)। এবং ক্ষমতা পাওয়ার পর তারা রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে তাদের সেই উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করে। এখন কথা হলো এই যে, তারা বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে কি এমন কোন কিছু অন্তর্ভুক্ত করবে যা তাদের এই উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে? সেখানেই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ইতিহাসের নিরপেক্ষতা ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করবার অবকাশ থেকে যায়।

আবার জাতীয় গৌরব (national pride) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশেও কখনো কখনো সৃষ্টি করা হয়েছে মিথ। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান রাজনীতিক ও কলাম লেখকের একটি লেখায় আমি একটি ঘটনা পড়েছিলাম, তিনি যেভাবে লিখেছিলেন আমি অবিকল সেভাবেই তুলে ধরছি –
‘এ প্রসঙ্গে একটি ইংরেজি ছবির কথা বলব। ছবিটির নাম মনে করতে পারছি না। ৮০ সালে ছবিটি দেখার সুযোগ হয়েছিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সৌজন্যে। পল্টন মোড়ের কাছে আমেরিকান বাইসেন্টেনিয়াল হলে এই ছবিটার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। গুটিকতক দর্শক। ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী তন্মধ্যে প্রধান। কাহিনীর সবটুকু মনে নেই, তবে তার নির্যাস ভুলে যাওয়ার নয়। তা নিম্নরূপ :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ভাইস প্রেসিডেন্ট দীর্ঘকাল পর তার নির্বাচনী এলাকায় এসেছেন। এসেছেন এক অতি নগণ্য ব্যক্তির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। এই ব্যক্তিটি সারা জীবন নানা অপকর্ম করেছেন। মূলত গুণ্ডা হিসেবেই তার পরিচিতি। এমন এক ব্যক্তির শেষকৃত্যে সুদূর ওয়াশিংটন থেকে ছুটে এসেছেন রাষ্ট্রের মহামান্য ভাইস প্রেসিডেন্ট!
ওই ছোট্ট শহরের একটি ছোট্ট পত্রিকার তরুণ সম্পাদক এর রহস্য ভেদ করতে মনস্থ করলেন। তার পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যায় সেটি মোক্ষম হেডলাইন করবেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টকে তার পত্রিকা অফিস দেখাতে নিয়ে গেলেন। তারপর তাকে একান্তে পেয়ে ধরে বসলেন : মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, কী কারণে এই লোকটার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আপনি এতদূর ছুটে এসেছেন? তার সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক?
ভাইস প্রেসিডেন্ট একটু বিব্রত হলেন। কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, তাহলে শোন।
অতঃপর তিনি এই শহরে তার জীবনের শুরুটা বর্ণনা করেন। কীভাবে তিনি কপর্দকহীন অবস্থায় এখানে আসেন। তারপর একসময় শহরের এক সুন্দরী তরুণীর প্রতি আকৃষ্ট হলেন। দুজনের মধ্যে ভাব হয়ে গেল। কিন্তু ওই মেয়েটির প্রতি নজর ছিল এই শহরেরই এক ভয়ংকর গুণ্ডার। লোকটি ছিল শহরের ত্রাস। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সবাই। তার শিকারের প্রতি হতভাগা ছোকরা হাত বাড়িয়েছে। গুণ্ডাটি মহাক্ষিপ্ত। ছেলেটাকে নানাভাবে নাজেহাল করতে থাকল। শেষতক ডুয়েল লড়ার আহ্বান জানিয়ে বসল। তখনকার দিনের সামাজিক রীতিতে প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ডুয়েল লড়ার চ্যালেঞ্জ দেয়া হলে তা গ্রহণ না করা ছিল ভয়ংকর কাপুরুষতা। লড়তে অস্বীকার করলে মেয়েটিকে ছাড়তে হবে। লড়াই হলে যে জিতবে সে মেয়েটিকে পাবে। এ লড়াইয়ে কেউ যদি প্রাণ হারায় সেজন্য কেউ দায়ী থাকবে না।
ডুয়েলের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। নির্দিষ্ট দিনে গোটা শহরের লোক এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। দুইজনের হাতে দুটি গুলিভরা পিস্তল তুলে দেয়া হল। দুজনকে দুদিকে বিপরীতমুখী করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। রেফারি এক দুই তিন বলতেই দুজনে ঘুরে গিয়ে পরস্পরকে গুলি করবে। শহরের লোকজন সবাই আফসোস করছে। এই অসহায় ছেলেটি তো নির্ঘাত মারা যাবে। মেয়েটিও একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
কিন্তু একি? গুলি ছোঁড়ার শব্দ মিলিয়ে না যেতেই দুর্ধর্ষ গুণ্ডাটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ওই নিরীহ ছেলের হাতেই সে প্রাণ হারাল! শহরের লোকজন মহাউল্লাসে ছেলেটিকে মাথায় তুলে নাচতে থাকল। ওই ভয়ংকর লোকটার মৃত্যুতে তারা যেন মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। ছেলেটি রাতারাতি হিরো হয়ে গেল।
তাকে শহরের শেরিফ বানানো হল। কিছুদিন পর জেলা গভর্নর। তারপর সিনেটর। তার নামডাক সারা দেশে ছড়িয়ে গেল। অতঃপর একদিন একেবারে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এতটুকু কাহিনী বলে ভাইস প্রেসিডেন্ট একটু দম নিলেন। তরুণ সম্পাদক বললেন, মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, আপনার এই কাহিনী তো এ অঞ্চলের সব লোকেরই জানা। ওটা শুনতে শুনতেই আমি বড় হয়েছি। আর আপনি যাকে হত্যা করেছেন, সে আমার পিতাকে হত্যা করেছিল তার বিরুদ্ধে সংবাদ ছাপার কারণে। তাকে হত্যা করে আপনি এই শহরটাকে রক্ষা করেছেন। সেজন্য আপনার নাম এ শহরের ছেলে-বুড়ো সবার মুখে মুখে। সেই বীরত্বের জন্যই আপনি ধাপে ধাপে উপরে উঠেছেন। আপনার স্থান এখানকার মানুষের হৃদয়ে। কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব তো পেলাম না। ওই গুণ্ডাটির সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক?
ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন আবার শুরু করলেন : তাহলে শোন। কথাটা বলে ফেলাই ভালো। তোমরা জান যে, ওই গুণ্ডাটিকে সেদিন আমি হত্যা করেছিলাম। কিন্তু সেটা মোটেই সত্য নয়। সেদিন সে আমার গুলিতে মারা যায়নি। তাকে হত্যা করেছিল ওই মানুষটি, যাকে একটু আগে আমরা কবর দিয়ে এলাম।
তরুণ সম্পাদকের চোখে-মুখে বিস্ময়। ভাইস প্রেসিডেন্ট বলতে থাকলেন : এই লোকটি ছিল ওই গুণ্ডার প্রতিদ্বন্দ্বী। আমার দুরবস্থা দেখে তার মায়া হয়। একটা নিরীহ ছেলেকে ও এভাবে মেরে ফেলবে! সবার অলক্ষ্যে সে আমার পেছনের দিকে একটি বাড়ির ছাদে তার বন্দুক নিয়ে অবস্থান নেয়। আমি জীবনে কখনও বন্দুক ছুঁড়িনি। আমার হাত কাঁপছিল। ট্রিগার টিপতেই ভুলে গেছি। কিন্তু এই লোকটি যথাসময়ে পেছন থেকে গুলি ছুঁড়েছে। তার গুলিতেই গুণ্ডাটি ধরাশায়ী হয়। আমার গুলিতে নয়। মানুষ আমাকে মিছেই হিরো বানিয়েছে। সব মিথ্যে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট তার কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। তরুণ সম্পাদকের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি তো সত্যটা জেনেছ। আমি চাই তুমি বিষয়টা সবিস্তারে তোমার কাগজে ছেপে দাও। লোকে সত্যটা জানুক। তাদের ভুল ধারণা দূর হোক।
তরুণ সম্পাদক এতক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট মনে নোট নিচ্ছিলেন। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালেন। তারপর ধীর গতিতে তার নোট খাতাটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়তে থাকলেন। বললেন, মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, আমি এই কাহিনী ছাপব না। কাউকে কখনোই বলব না। আপনাকে ঘিরে যে মিথ জনমনে বদ্ধমূল হয়ে আছে, সেটা একটা মূল্যবান সম্পদ। ওই মিথ মানুষকে সাহস জুগিয়েছে। আশার আলো দেখিয়েছে। আপনাকে এগিয়ে নিয়েছে। আপনার মাধ্যমে তারাও এগিয়েছে। ওটা ভেঙে দেয়া ঠিক হবে না। ওই মিথ যেখানে আছে সেখানেই থাকুক।
এই বলে তার নোট বইয়ের ছেঁড়া টুকরোগুলো একটি একটি করে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।‘

(http://www.jugantor.com/sub-editorial/2014/04/10/86950 )

পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে এ যুগের ‘মিডিয়া স্কেপটিসিজম (media skepticism)’ – বিশ্বব্যাপী মিডিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন গোষ্ঠিতন্ত্র ও রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক মহল। একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পরিবেশন, বিচার-বিশ্লেষণ, আলোচনা-সমালোচনা করছে ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়া। তারা কখনো সত্যকে গোপন করছে, কখনো সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করছে, আবার কখনো কখনো নির্লজ্জ্বভাবে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই কারণেই পাঠক-শ্রোতা-দর্শক দের মনে জন্মেছে সন্দেহবাদ (skepticism)।

ক্যাডেট কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় (১৯৮৬ সাল) একবার আমাদের শিক্ষক ও পন্ডিত লেখক রফিক কায়সার স্যারকে প্রশ্ন করেছিলাম, “স্যার রাশিয়ার সমাজব্যবস্থাটি কেমন?” আমাদের ধারণা ছিলো স্যার বামপন্থী, অতএব এর সমর্থনে কিছু বলবেন। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে স্যার উত্তর দিয়েছিলেন, “বলা মুশকিল। দেশটি বদ্ধ, নিউজ বাইরে খুব একটা আসেনা। একদলীয় শাসন থাকার কারণে কোন শাসক ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁর সমালোচনা হয়না, সমালোচনা হয় কেবল সে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর।” সেসময় দেশে চলছিলো স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামল। অসহনীয় ঐ দিনগুলিতে সরকারী মিডিয়াগুলোতে ছিলো কেবলই তার স্তুতি। একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভির নাম হয়েছিলো সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স। আর আমরা জনগণ করছিলাম কেবলই আস্ফালন।

ক্যাডেট কলেজ ব্লগের নিয়মিত লেখক হাসান মাহমুদ-এর লেখা ‘আমার ইতিহাস ভাবনা’-য় পড়েছিলাম – ১৯১৪ সালে দক্ষিন-কলোরাডোর কয়লাখনি অঞ্চলে রকফেলারকর্তৃক হরতালরত একদল নারী+শিশুকে পুড়িয়ে মারার নির্মম কাহিনী। যা আমেরিকার ইতিহাসের যাবতীয় সিলেবাস+পাঠ্যবই এড়িয়ে গিয়েছিলো। অনুরূপভাবে ১৯৩৭-৩৮ সালে তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনের ভিনিৎসিয়া শহরে স্তালিনের শাসনামলে সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশ এন.কে.ভে.দে. কর্তৃক সাড়ে নয় হাজার এথনিক ইউক্রেণীয়দের গনহত্যার সংবাদ পৃথিবীতো দূরের কথা সেই দেশের মানুষও জানতে পারেনি। আবার ১৯৬২ সালে (১-২ জুন) তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের নভোচেরকাস্ক শহরে খাদ্য-রসদের দাবীতে ও কারখানা-ইন্ডাস্ট্রীর মানবেতর পরিবেশের উন্নয়নের দাবীতে সংঘটিত শ্রমিকদের প্রতিবাদ সভায় সোভিয়েত বাহিনীর ঝাপিয়ে পড়া ও নিদেনপক্ষে ২৬ জন শ্রমিক-কে হত্যার ঘটনাও অপ্রকাশিত ছিলো। ঘটনাটি Novocherkassk massacre নামে পরিচিত। এরকম কমপক্ষে এগারোটি ম্যাসাকার হয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নে যার সবই গোপন করা হয়েছিলো।

‘সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে’ এমন কথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু কথাটা সত্য? আমি মনে করি সত্যকে কেবল সত্যবাদীরাই ভালবাসতে পারে । যারা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত তারা কখনো সত্যবাদীকে ভালবাসতে পারে না। তাদের প্রধান শত্রুই সত্য । মিথ্যাবাদীরা পৃথিবীতে মিথ্যাকে জয়ী দেখতে চায়। বিষয়টির প্রতিফলন নিঃসন্দেহে ইতিহাসে রয়েছে।

কিছু কিছু কারণে ইতিহাস হয়েছে কলুষিত, আর এই কারণেই ইতিহাসে সত্য উদঘাটনটা খুবই জরুরী। পরবর্তি পর্বে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

(চলবে)

১,৩০৯ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “ইতিহাস প্রসঙ্গ: সত্য ও মিথ্যার মাপকাঠি -পর্ব ২”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    দুর্দান্ত লাগলো লেখাটি ।
    সত্যিই সত্যকে কলুষিত করে বর্তমানের বৈতরণী পার হয়ে যায় স্বার্থান্বেষী ক্ষমতার দখলদারেরা ।
    কিন্তু তার ফলশ্রুতি যে কোন তলানীতে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে তা সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ধারনা যদি আসলেই থাকতো তাদের, সভ্যতা বাঁচতো ।
    না জেনে সত্যের বিরোধিতা করা মুর্খতা । আর জেনেশুনে স্বার্থের সন্ধানে সত্যকে বিকৃত করাটা অমার্জনীয় অপরাধ ।
    কথা হলো বেড়ালের গলায় ঘন্টাটি বাঁধবে কে !!

    জবাব দিন
  2. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    কঠিন বিষয় ধরেছ, আর কঠিন কথাটা বলেছ। ইতহাসের নামে একচোখো কেচ্ছা কাহিনীতে বাজার সয়লাব। গবেষনা করতে দারূন ভয়- যদি ঢাকনাটা সরে যায়!
    তবে- ওইতিহাসিকবের শুনেছি কিছু মেথডলজি আছে, সেগুলির সঠিক প্রয়োগে বাজারচলতি কেচ্ছা কাহিনী ছাপিয়ে আসল কথা বের করা যেতে পারে। আমি ইতিহাসের ছাত্র নই, মাঝে সাঝে শখ করে পড়ি। ভাবার চেষ্ঠা করি- আসলেই এইমাত্র পড়া বিবরন সঠিক কিনা। প্রশ্ন গুলি মোটামুটি এরকম-
    ঘটনাটা কে দেখেছে, কে রিপোর্টইকরেছে, কখন, আসলেই এই ঘটনা ঘটা সম্ভব কিনা, বা ঘটলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি কোথায় ...
    সপ্রতি আমার এখানে ক'জনের ইতিহাস ভাবনা যেনে বেশ তাজ্জব বনে গেছি। পরে শেয়ার করব।

    ভারি সুন্দর প্রাঞ্জল গোছানো তথ্য বহুল লেখা। আরো আশা করছি।

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      খুব সুন্দর কথা বলেছেন মাহবুব ভাই। হ্যাঁ, কিছু মেথডলজি আছে যা দিয়ে ঐ সত্য-মিথ্যার বিচার/খোঁজ করা যায়। ইবনে খলদুন উনার বইয়ে বিষয়টি চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন।
      গত আড়াই শত বছর যাবত সাম্রাজ্যবাদীরা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। কলোনিয়ালিজম-এর পর এখন চলছে নিওকলোনিয়ালিজম। তারা নিজ স্বার্থে ইতিহাসকে কলুষিত করেছে। ফল স্বরূপ আমাদের মনেও অনেক ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে।
      সত্য-মিথ্যা বিচারের মেথডলজি ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তি পর্বে লেখার ইচ্ছা আছে।
      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

      জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    রাজনীতির ধ্রুপদী উদ্দেশ্য হলো, ‘ক্ষমতা দখল’।
    ক্ষমতা পাওয়ার পর তারা রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে তাদের সেই উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করে। এখন কথা হলো এই যে, তারা বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে কি এমন কোন কিছু অন্তর্ভুক্ত করবে যা তাদের এই উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে? সেখানেই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ইতিহাসের নিরপেক্ষতা ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করবার অবকাশ থেকে যায়।
    মিথ্যাবাদীরা পৃথিবীতে মিথ্যাকে জয়ী দেখতে চায়। বিষয়টির প্রতিফলন নিঃসন্দেহে ইতিহাসে রয়েছে।
    উপরোল্লিখিত তোমার এসব সত্যকথনের সাথে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ খুব একটা নেই। সাধারণতঃ ইতিহাস বিজয়ীদের বিজয়গাঁথা হয়ে থাকে। পরাজিতরা প্রায়শঃই মিথ্যা দ্বারা নিন্দিত হয়।

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      চমৎকার মন্তব্য করেছেন খায়রুল ভাই। আপনাদের মত বয়োজোষ্ঠদের অনুপ্রেরণা আমাদের সাহস যোগায়।
      কিছু মেথডলজি আছে যা দিয়ে সত্য-মিথ্যার বিচার/খোঁজ করা যায়। ইবনে খলদুন উনার বইয়ে বিষয়টি চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন।
      পরবর্তি পর্বে ঐ সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখবো।
      ভালো থাকবেন। দোয়া করবেন।

      জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    রমিত ভাই,

    লেখা ভালো লেগেছে। আরো ভালো লেগেছে এইটা দেখে যে, আপনি যে সিনেমার উল্লেখ করেছেন, ঐটা একটা ওয়েষ্টার্ণ ক্লাসিক, জন ওয়েনের। মাত্রই মাস দুয়েক আগে দেখলাম। নাম- দ্য ম্যান হু কিল্ড লিবার্ট ভ্যালেন্স। ঘটনা আপনি যেভাবে বলেছেন তা'র থেকে খানিকটা আলাদা, যদিও মূল ভাবটা ঠিকই আছে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      ধন্যবাদ মাহমুদ।
      আসলে ছবিটার উল্লেখ করেছেন অন্য একজন লেখক, তিনি একজন রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট। আমি উনার লেখা থেকে সরাসরি তুলে দিয়েছি।
      আমার যতদূর মনে পড়ে ছবিটা আমিও দেখেছি, তবে অনেক আগে, এখন কেবল আবছা মনে পড়ে। The Man Who Shot Liberty Valance (1962)।
      ২০০৯ সালে লিখিত, ইতিহাস বিষয়ক তোমার লেখাটিও আমি পড়েছি। চমৎকার লেখাটি। আমার মরহুম ফুপা ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন, 'ট্রুথ ইন হিস্ট্রী' বিষয়ে তিনিও স্কেপটিক ছিলেন।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।