আমরা আর কত প্রতারিত হব?

 

আমরা আর কত প্রতারিত হব?
———————– ডঃ রমিত আজাদ

রাত্রিময় আকাশে বিজয়ের তারকারা নিভু নিভু,
অষ্টপ্রহর প্রদক্ষিণ করা সূর্যটাও ম্লান,
বাতাবী লেবুর গাছটি নীরব সাক্ষী,
একপায়ে দাঁড়ানো তালগাছটি নীরব সাক্ষী,
বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়া বটগাছটি নীরব সাক্ষী,
আমরা আরো একবার প্রতারিত হয়েছি,
আমরা আরো একবার প্রতারিত হয়েছি,
আমরা বারংবার প্রতারিত হচ্ছি।

ছোট ছোট শয়তান শাবকেরা
আমাদের শরীরে বিধিয়েছে প্রতারনার তীর,
আকাশ থেকে কেড়ে নিয়েছে উজ্জ্বল সূর্য,
ঘোর অমাবশ্যায় মিলিয়ে দিয়েছে পূর্ণিমার চাঁদ,
অবুঝ শিশুর কান্না শোনে অপারগ মা।
পদ্মা শুকিয়ে হয়ে গেছে কাঠ,
অনেকটা খাদ্যাভাবে আমরা যেমন,
বিষন্ন অন্ধকারে ডুবে আছে ভূমি।

আর আমরা?
ফরিয়াদ জানাবো কি করে?
প্রার্থনার ভাষাও আজ থেমে গেছে।
ঝংকারহীন অগ্নিবীণায় জমেছে ধুলার স্তর,
শহীদ যোদ্ধার লাশের ঘ্রাণ
মিলিয়ে গিয়েছে সেই কবে,
দলিলে জয়ের স্বাক্ষর অনেকটাই মুছে গেছে,
আমাদের দুচোখে আজ শুধুই ভীরুতা,
অথচ এই আমরাই একসময় কেমন স্পর্ধা দেখিয়েছিলাম!

লোকাল হাইজ্যাকার থেকে
জমকালো সাহেব বনে যাওয়া
ভয়াবহ ভদ্রলোকেরা ক্রুর হাসি হাসে,
এখন তারাই প্রতীক এই সবুজ দ্বীপের।
পদ্মায় নেই অবগাহনের জল,
লেলিহান অগ্নিশিখা কেবল দগ্ধ করে আমাদের বিবেক।

তারুণ্য আজ আর তারুণ্য নেই
বার্ধক্যের ভারে ঝুঁকে পড়েছে সায়াহ্নের মত।
নিজের মত করে ভেবে নেই, ভালোই আছিতো,
যেভাবে প্রাণ চলে যায় অকপটে,
বেঁচে থাকাটাই এখন দারুন ব্যাপার!

নীরব কবিতাগূলো, আর কি সরব হবেনা?
ব্যর্থ কবির ব্যাথিত আস্ফালন!

পূর্ণিমার পর অমাবশ্যা আসে,
অমাবশ্যার পর আবার পূর্ণিমা।
কিন্তু হঠাৎ কি এক চন্দ্রভুক অমাবশ্যা এসে
পুরো চাঁদটাকেই গ্রাস করেছে।

পদ্মফুলের মাথায় আজ কেবলই বিষধর সাপেরা খেলা করে,
আকস্মিক ভুমিকম্প, সর্বনাশী ঝড়,
সাগর ফুঁসে ওঠা জলোচ্ছাস,
শ্রাবনের রুদ্র প্লাবন,
টেনে দিয়েছে আজ পূর্ণ আচ্ছাদন।

আর আমি?
শীর্ণকায় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের মত
প্রতিবাদের শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি।
তবু মনের অদম্য আকাঙ্খা থেকে বলি,
অভিমান নয়, আহাজারি নয়,
অশ্রঝরা বিলাপ ব্যকুলতা নয়,
আমি জানতে চাই,
আমি জানতে চাই,
আমি জানতে চাই,
আমরা আর কতবার প্রতারিত হব?

৪৯৪ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “আমরা আর কত প্রতারিত হব?”

  1. মোঃ সাদাত কামাল [০১-০৭]

    তারুণ্য আজ আর তারুণ্য নেই
    বার্ধক্যের ভারে ঝুঁকে পড়েছে সায়াহ্নের মত।
    নিজের মত করে ভেবে নেই, ভালোই আছিতো,
    যেভাবে প্রাণ চলে যায় অকপটে,
    বেঁচে থাকাটাই এখন দারুন ব্যাপার!

    আমাদের সমাজের বাস্তবতা। ...

    ভালো লাগলো লেখাটা।


    ভালো থাকা অনেক সহজ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।