ক্যাডেট কলেজে ভুতের সন্ধানে – ১
লাইটস আউট হয়ে গেছে আরও একঘন্টা আগে। কিন্তু বিছানায় শুয়েও আমার ঘুম আসছে না। জানাল দিয়ে বাইরে তাকালাম। চারদিক নিস্তদ্ধ নিঝুম। ফুটফুটে জোৎস্নায় পাহাড় আর বনে ঘেরা সিলেট ক্যাডেট কলেজের এই বিশাল ক্যাম্পাস কেমন ফ্যাকাশে ও রহস্যময় মনে হচ্ছে। বিষয়টা কিছুতেই মাথা থেকে ফেলতে পারছি না। ক্লাস নাইনে ওঠার পর এই রুমটিতে এসেছি সাতদিন হয়। নতুন রূমে আসলে সবাই খুশী হয়, প্রথমতঃ ফীল করতে পারি প্রমোশন হয়ে গিয়েছে, আরেকটু সিনিয়র হলাম। দ্বিতীয়তঃ নতুন পরিবেশ। আমরাও খুশী হয়েছিলাম, কিন্তু এ কি হচ্ছে কয়েকদিন যাবৎ। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়, মাথার উপরে কে যেন আওয়াজ করতে থাকে, খট, খট, খট, খটার-খট। অল্প কিছু সময় হয় বড়জোর দু’তিন মিনিট, তারপর থেমে যায়। এটার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই, যেকোন সময়ই হয়। গেমস থেকে এসে টি ব্রেক সেরে মাগরীবের নামাজ পড়তে যাব তখন হঠাৎ শুরু হলো, দু’তিন মিনিট হয়ে আবার থেমে গেল। অথবা মাগরীবের নামাজ সেরে এসে প্রেপ ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, সে সময় হলো। প্রেপ থেকে এসে, কাপড় ছাড়ছি সে সময় হলো। গতকাল শুনলাম লাইটস আউটের পর। আমি হযরত শাহজালাল (রঃ) হাউসে। বিশাল দালানের দোতলাটা আমাদের হাউস, তিনতলায় সুরমা হাউস। সুতরাং তিনতলায় কেউ একজন এটা করতে পারে। গত পরশু দিন গিয়েছিলাম তিন তলায়। এক হাউস থেকে আরেক হাউসে যাওয়া তো আরেক ঝক্কি। হাউস লীডারের পারমিশন নাও, স্যারের পারমিশন নাও, ইত্যাদি। গত পরশু দিন বৃহষ্পতিবার ছিল হাফ বন্ধের দিন প্রেপ ক্লাশ নেই। ডিনারের আগে আগে আওয়াজটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। ঝট করে উপরে উঠে গেলাম আমি আর আসিফ (আমার রূমমেইট)। পারমিশনের আর কেয়ার করলাম না। উপরে উঠলে বোঝা যাবে কোন নচ্ছার এটা করে! সুরমা হাউসে উঠে রীতিমত হতাশ হয়ে গেলাম। সেই রূমে শিফট হয়েছে আমাদের ক্লাশের ফার্স্ট বয় ও সবচাইতে ভদ্র ছেলে কালাম সারোয়ার। তার সাথে আছে রফিক, গম্ভীর মানুষ এই সব ইতরামির মধ্যে নাই। ফিরে এলাম হতাশ হয়ে। তাহলে এটা করে কে? রাত তখন আরো গভীর। আমার মনে হলো আমি ছাড়া কলেজের আর সবাইই ঘুমি্যে পড়েছে। সাত-পাঁচ ভেবে ভেবে আমার চোখও বন্ধ হয়ে হয়ে আসবে, এমন সময় আবার শুরু হলো শব্দটা। চমকে জেগে উঠলাম। হঠাৎ চতুর্দুকে ডেকে উঠল ক্রুদ্ধ শিয়ালগুলো। সেই সারা দিনের ধকল শেষে চমকে জেগে ওঠা আমার মনে হচ্ছিল, আমার চতুর্দিকে ডেকে উঠছে হাজার হাজার শিয়াল। তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।অপর দু’জন রুমমেইট গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাদের জাগাতে চাইলাম না। জানালা দিয়ে আবার বাইরে তাকালাম। ফিনিক ফোটা জোৎস্নায় টুকরো টুকরো মেঘ উড়ছে। বাতাসের তোড়ে তারা নানা আকৃতি নিচ্ছে, আবার শিয়ালদের ভুতুড়ে ডাক। আমার মনে হলো এরকম করতে করতে হঠাৎ কোন ভয়ংকর নেকড়ের আকৃতি নিয়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়বে নেকড়ে রূপী কোন এক টুকরো মেঘ।
(চলবে)
(এটা ১৯৮৪ সালে সিকক-এ আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি। উল্লেখ্য সিলেট ক্যাডেট কলেজ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সৈন্যদের আস্তানা ও কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ছিল। কলেজের পিছনেই আছে বধ্যভূমি। ফলে অনেক ভুতুড়ে গল্প প্রচলিত ছিল, যেগুলো আমরা ক্লাস সেভেন থেকেই শুনে আসছিলাম )
অতিশীঘ্রই লেখার বাকি অংশ চাই..... কৌতুহল ঠেকাতে পারছি না :just: :hatsoff:
আমার জন্য সময় একটা বড় সমস্যা। তারপরেও বাকি অংশ দ্রুত দিযে দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।
ভাল লিখেছেন... খুবই কৌতুহল হচ্ছে পরের ঘটনা জানার জন্য। জানিনা পরে কি হবে। তবে আমার মনে হয় আপনার অতি ভদ্র ও গম্ভীর বন্ধুদ্বয় যত নষ্টের গোড়া। রাত যত গভীর হয় এই গম্ভীর বন্ধুরাই তত বদের হাড্ডি হয়ে উঠে।
কৌতুহল নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। না ওরা এর পিছনে ছিল না, এটা পরে বুঝতে পেরেছিলাম। রহস্যটা এখানেই।
বেশ গা ছমছমে বর্ণণা।
দেখা যাক কোথায় গড়ায়। 🙂
রাত জেগে লিখতে আমার নিজেরও একটু ভয় ভয় লাগছিল।
:clap:
ধন্যবাদ