আজকের কালপুরুষ

আজকের কালপুরুষ
———– ড: রমিত আজাদ

কোটি জনতার আর্ত ওস্ঠধর বারংবার হচ্ছে কম্পিত ,
আসুরিক শক্তির কাছে নতজানু হয়ে বড় বেশী উৎকন্ঠিত।
আমাদের চিৎকার নিরেট দেয়ালে ঠেকে,
বার বার ফিরে আসে আমাদেরই কানে,
বেদনার পংক্তিমালা দুখিনী কবিতা হয়ে,
বেজে ওঠে বিষন্ন কোন অসন্তোষের গানে।

প্রতি বছরই একবার করে সুর্যকে প্রদক্ষীন করে পৃথিবী,
আর আমরা যেখানে ছিলাম ঠিক সেখানেই থেমে থাকি।
স্থবিরতা ঘোষণা করে ভারী হয়ে থাকা গুমোট বাতাস,
মৃম্ময়ী ফাল্গুনী হাওয়ার সতেজতা পায়না, দুমুঠো আকাশ।

গোরস্থানে শুয়ে থাকা জীবন্ত মানুষগুলো সহসা শবদেহ হলো,
অস্বাভাবিক এতসব মৃত্যু কি আমাদের কাম্য ছিল?
অসহায়ত্বের গ্লানিতে, জাতি আজ লজ্জ্বিত,
নিরুপায় জনতা আর কত হবে প্রতারিত?

জনতার শেষ আশা, রুদ্র বোশেখীর ঝড় হয়ে
নেমে আসবে এক স্বপ্নের কালপুরুষ,
ব্যঘ্র হুংকারে, তীব্র ঝাঁকুনিতে,
ফেরাবে জাতির হুশ।

তুমি নেমে এস কালপুরুষ,

এদেশের মাটিতে মাটিতে , ক্ষেতের ফসলে কৃষক তোমাকে খোঁজে,

কলে-কারখানার যন্ত্রের খাঁজে খাঁজে শ্রমিক তোমাকে খোঁজে,

সংবাদপত্রের কলামে কলামে, পত্রিকার সাংবাদিক তোমাকে খোঁজে,

চর্যাপদের, অগ্নিবীণার মরমে মরমে কবিতার কবিরা তোমাকে খোঁজে,

উপন্যাসের কাহিনী ঘুরে, কথাশিল্পের কথক তোমাকে খোঁজে,

পথ হারিয়ে পথের মাঝে পথিক  তোমাকে খোঁজে,

নাট্যশালার মন্চ কাঁপিয়ে, নাট্যশিল্পের নায়ক তোমাকে খোঁজে,

ব্যন্ডশিল্পের আসর মাতিয়ে, কন্ঠশিল্পের গায়ক তোমাকে খোঁজে,

মানুষ গড়ার কারিগর আদর্শ শিক্ষক তোমাকে খোঁজে,

নির্ভীক নিবিষ্ট মনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সৈনিক তোমাকে খোঁজে,

রং-তুলির আঁচরে কাঁটা বিচিত্র চিত্রের চিত্রকর তোমাকে খোঁজে,

কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মাত্র ক্যম্পাসে আসা ছাত্র  তোমাকে খোঁজে।

তুমি ভাষা শহীদের নিথর দেহের শেষ আঁকুতির রত্ন,
তুমি শহীদ সৈনিকের জীবন্ত চোখের অনেক আশার স্বপ্ন।
তুমি নেমে এসে একটিবার বজ্রে বাজাও বাঁশী,
নেকড়েগুলোর আত্মা কাঁপিয়ে উঠুক সর্বনাশী।

তুমি নেমে এসো কালপুরুষ,

চোখ ধাঁধানো আলোয় তোমাকে দেখব,

দেবদূতের পোষাকে সজ্জিত উজ্জ্বল রঙ্গনের বাহারে তোমাকে দেখব,

যেমন দেখেছি নীলের জলে ভেসে যাওয়া সিন্দুকে আলোর ঝর্না,

যেমন শুনেছি বেথেলহামে এক শিশুর কান্না।

তুমি নেমে এসো কালপুরুষ,

এ’দেশের এখানে-সেখানে, আঁনাচে-কাঁনাচে,

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেবশিশুদের জড়ো করো,

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে,

দাও এক নতুন মন্ত্রের প্রেরণা,

শেষ হোক সেই অসমাপ্ত গানের বেদনা।

 

বিদ্রোহী কবির অগ্নিবীণা আরেকবার ঝংকৃত হোক,

আকাশ থেকে বজ্র হয়ে ঝরুক অগ্নিরাগ,

কথার ফুলঝুড়িতে বানিয়ে মিথ্যে বলা

ঐ জিভগুলোকে টেনে ছিড়ে ফেলে,

বক্তৃতা দাও সত্যবাদির স্পষ্ট ভাষণে,

 

মার চোখ খুঁজে ফেরে কালপুরুষের ছায়া,

যিনি চিৎকার করে বলবেন,

আমার আকাশ, আমার বাতাস,

আমার মাটি, আমার জল,

আমার দেশ , আমার জনতা,

আমি তোমাদের ভালোবাসি।

(পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, যখনই কোন দেশ বা সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে, তখনই সেখানে নেমে এসেছে ভয়াবহ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভুত হয়েছেন কোন মহামানব যিনি নিজ নেতৃত্বের গুনে সেই দেশ বা সমাজে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা ভয়াবহ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কামনা করিনা, আমরা কেবল প্রার্থনা করি, আসুক কোন মহামানব যিনি আমাদের একটি সুন্দর সমাজ উপহার দেবেন)

৬১৭ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “আজকের কালপুরুষ”

  1. এহসান (৮৯-৯৫)

    "আমি বৃষ্টির গান শুনেছি"... এই নামে আপনার কোনো কবিতা আছে? অনেক আগে ১০ম ব্যাচের মশিউর ভাই এর কাছ থেকে পেয়েছিলাম।

    এই কবিতার মত আশাবাদী কথা শুনতে ভালো লাগে।

    জবাব দিন
  2. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    সামুতে পড়েছি। কবিতা একটু কম বুঝি আমি। কিন্তু এই কবিতায় একটা ঝাঁজ ছিল। আমাকে যেটা খুব টেনেছে।
    ভালো থাকবেন।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।