একজন নার্সের স্মৃতিচারণ

একজন নার্সের স্মৃতিচারণ
– ড: রমিত আজাদ

প্রসব ওয়ার্ডে আমার প্রথম কর্মদিবসে,
দুরু দুরু হৃদয়ে, সেবিকার পরশে।
ভয়ে আধমরা হয়েছিলাম শিশুটিকে গ্রহন করতে,
একটি ছোট্ট শরীর পিছলে পড়েছিল আমার হাতে।
আমি তার কানে কানে মৃদুস্বরে বললাম,
“সোনামনি, এই সুন্দর পৃথিবীতে স্বাগতম”।
সময় গড়িয়ে গেল ধীরে ধীরে কতকাল,
ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে কেটে গেল কত সাল।
দেখে দেখে কত শত যাতনার দৃশ্য,
কেটে গেছে কত ঋতু, কত শীত-গ্রীস্ম।
কেউ এসেছিল গুরুতর আহত,
কেউ এসেছিল ক্যান্সারে ব্যথিত,
কেউ এসেছিল বয়সের ভারে ক্ষয়ে যাওয়া,
কেউ এসেছিল দূরারোগ্য ব্যাধিতে পাওয়া।
আমি নার্স সেবাটুকু, দিয়ে যাই ততটুকু,
যার লাগে যতটুকু, ঠিক ঠিক অতটুকু।

ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে ট্রান্সফার চলে চলে,
পেলাম দায়িত্ব রিট্রো ভাইরালে।
চোখ ভরা জল নিয়ে মায়াময় তরুণটি,
অবশেষে আমাকে দিলো স্বিকোরোক্তি,
“ঠিক ঠিক জানিনা, হয়ে গেল কেমনে,
তবে দোষ আমি জানি আমারই কারণে,
ড্রাগ নেয়া সিরিন্জটি ছিল কিবা দূষিত,
অথবা গার্ল ফ্রেন্ড, অবাধে যে মিশিত।”
শেষ পর্যায়ে রোগে জরুরীতে ভর্তি,
দেখেছি তার চোখে সকরুণ আর্তি।
পিতা-মাতা ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনা,
বন্ধু-বান্ধব এমনকি প্রিয়তমা,
সকলেই ছেড়ে গেল অসুস্থ ছেলেটিকে,
আমি নার্স পাশে থাকি শিয়রের টুলটিতে।
বসে বসে দিন গুনি আর বাকি অল্প,
একদিন শেষ হলো, ছেলেটির গল্প।
আমি তার কানে কানে মৃদুস্বরে বললাম,
“ছেড়ে গেলে সোনামনি ভয়াবহ ধরাধাম”!
আমি নার্স সেবাটুকু, দিয়ে যাই ততটুকু,
যার লাগে যতটুকু, ঠিক ঠিক অতটুকু।
হাসিমুখে একদিন শুরু হয় জঠরে,
চোখ ভরা জল নিয়ে শেষ হয় কবরে।

(একটি ইংরেজী কবিতার ভাবানুবাদ)

৫৪২ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “একজন নার্সের স্মৃতিচারণ”

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।