একজন সেনাসদস্যের কিছু অর্থহীন প্রলাপ

গত কয়েকদিন ধরে আমাদের একটা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে।অনেক সাজানো গুছানো এই ক্যাম্পটার প্রতি কেমন যেন একটা মায়া অনুভব করি।গত সাত মাস ধরে এই ক্যাম্পটাই ছিল আমাদের ঠিকানা,নিরাপদ আশ্রয়।আমাদের পাশের নাইজেরিয়ান ব্যাটালিয়ানের সাতজনের মৃত্যু,কিংবা সাম্প্রতিক আশংকাজনক পরিস্থিতিতে যখন নিয়মিত টহল করে ফেরত এসেছি – ক্যাম্পের ভেতর এসে ঘরে ফেরার একটা স্বস্তি অনুভব করেছি।ক্যাম্পটুকুই আমাদের কাছে ছিল এক টুকরো বাংলাদেশ,ঠিক যেন নিজের ঘর। ইউ এন এর বেসামরিক ইঞ্জিনিয়ার আর আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা ইঞ্জিনিয়ার দল মিলে তিন দিনের ভিতর ক্যাম্পসাইটটাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। চতুর্থ দিন প্যাক আপ করে সবাই চলে যাবে।ইউএন গাড়ি দিতে না পারায় তা আর হল না।তবে ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ সবাই চলে গেছে।ইউএন এর বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমি ছোট্ট একটা দল নিয়ে পড়ে রইলাম পরিত্যক্ত ক্যাম্পটায়।ডিউটি পোস্ট,কাটাতারের বেড়া,সার্চলাইট ইত্যাদি বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।তিনটা তাঁবুর ভিতর সবাই কোনোমতে মাথা গুঁজে পড়ে আছি।আর দিন গুনছি কবে ইউএন ট্রান্সপোর্ট সেকশন গাড়ী দিতে পারবে……।পাহাড়ের ঢালে আমার বর্তমান অবস্থানটা আক্ষরিক অর্থেই খোলা প্রান্তর।সেদিন রাতে রাজধানী আবিদজানের দুটি সুরক্ষিত ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক হামলার খবর মনের মাঝে ঠিকই একটা ভয়ের দোলা দিয়ে যায়।আমার কোম্পানির মূল দল ঠিক এই মুহূর্তে আশি মাইল দূরে সবচে কাছের ক্যাম্পটায় নিজেদের জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত।
অফিসার হবার সুবাদে পোস্টে ডিউটী কিংবা দৈনন্দিন জীবনের কায়িক শ্রমটা আমার করা লাগেনা।একি ব্যাপার জেসিও দের বেলায়ও প্রযোজ্য।কাজেই এই অস্থায়ী ক্যাম্পে আমি অনেকটা রিলাক্সড।শুধু যখন মনে পড়ে আমি এই ক্ষুদ্র দলটার অধিনায়ক-আপদকালীন মুহূর্তে আমার নেয়া ডিসিশনের উপর নির্ভর করবে ৩৮টা জীবনের নিরাপত্তা,তখন কাঁধটাকে একটু বেশিই ভারি মনে হয়।তবে নিজের সে চাপটুকু যেন বাকিরা টের না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়।সন্ধ্যা মিলিয়ে না যেতেই পোস্টে থাকা কয়েকজন সেন্ট্রির ভরসায় সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও আমার চোখে ঘুম আসেনা।রাতের আঁধারে চারপাশের জংগলের ভেতর দিয়ে ২০ হাতের ভেতর কেউ চলে আসলেও টের পাবার উপায় নেই।কোন অঘটনের জন্য(আল্লাহ না করুক) বড় অনুকূল সময়।তাই সাধের রাতের ঘুমকে না বলে জেগে থাকি(ক্যাডেট কলেজ কিংবা বিএমএ তে আমি স্লিপিং কাউ নামটাকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলাম)।কখনও ওয়াকিটকি সেটে কিংবা কখনও সরাসরি পোস্টে গিয়ে কথা বলে তদারকি করি ডিউটির সতর্কতা।বেহায়া ঘুম বারবার হানা দেয় দুচোখে,তাই ফেসবুকে খুজে বেড়াই জেগে থাকা কোন বন্ধুকে।তেমনি কাল রাতে এক কলেজ ভাই এর সাথে কথা হল।আলোচনাটা হুবুহু তুলে দিলাম,প্রথম মেসেজটা সেই পাঠিয়েছেঃ

-বস

আমি খেয়াল করিনি।একটু পর জবাব দিলাম- সরি বাচ্চু,আমি খেয়াল করি নাই

– ভাই সেনাপতিরে খেয়াল না করলে তো যুদ্ধে হাইরা যাবেন(কলেজে ওর নিকনেম দিছিলাম সেনাপতি)

-আরে আমি ফেসবুকে ছিলাম না।বাট লগ ইন করা ছিল।তবে কথা সইত্য।কেমন আছস??

-ভাল ভাই,আপনি??
-আমিও ভাল।আরামেই আছি।

-জানি ভাই,আর্মি অফিসার মানুষ। আমাগ কি আর এত আরাম আছে? ভাই কইলেই সব হাজির,আর কি লাগে??

-হ ভাল কইছস।হাহাহাআহহাহা(বলে চুপচাপ খেমা দেয়াটাই শ্রেয় মনে করলাম)

 

 

 

আচ্ছা সবাই আর্মিকে নিয়ে এরকম না জেনে মন্তব্য করে কেন??সবার কথা বাদ দিলাম-তাই বলে একজন এক্স ক্যাডেট এরকম না জেনে কমেন্ট করবে!!বাসে,ট্রেনে চলার সময় এধরনের আলোচনা অনেক শুনেছি।এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিয়েছি।তবে এক্স ক্যাডেটদের কাছ থেকে এ ধরনের কথা শুনে কেন জানি খুব কষ্ট লাগে(আগেও শুনেছি তো…),অভিমান হয়।মনে হয় বুকের ভেতর কে যেন একটা ছুরি গেথে দিয়েছে। আমি দেশের মানুষের দেয়া প্রতিটী গালি প্রাপ্য বলে মনে করি।বন্যা,সিডর,নির্বাচন,এনটিভি কিংবা বসুন্ধরা সিটিতে আগুন,ভোটার আইডি,সাফ গেমস,ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ,মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইত্যাদি কাজে সরকার আমাদের মোতায়েন করে সে জন্য একটুও প্রশংসা দাবি করব না।বরং নিজের  এখতিয়ারের বাইরে নাক গলানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।শান্তিকালিন সময়ে দেশব্যাপী মোতায়েনকালে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন আমাকেও বিব্রত করে।সাধারণ মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত সে ভূমিকাকে জাস্টিফাই করার ধৃষ্টতা আমার নেই।তবে এক্স ক্যাডেট হিসাবে এক্স ক্যাডেটদের কাছে আমার কিছু অনুরোধ আছে।আগে আর্মিকে জানুন,তারপর জেনেশুনে ঠান্ডা মাথায় আমাকে আমার প্রাপ্য গালি বুঝিয়ে দেন। প্রতিটা কলেজের প্রায় সব ব্যাচ থেকেই পাস করা ক্যাডেট আর্মিতে আছে।বেতন,গাড়ি,বাড়ী,রেশন,চিকিৎসা,বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা কোন ব্যাপার না।

 

 

মানুষের আলোচনা থেকে খুব কমন যে ব্যাপার গুলি সম্বন্ধে শুনেছি তা হলঃ

উঁচু বেতন,ফ্রি বাড়ি-গাড়ি,ফ্রি খাওয়া প্লাস রেশন,বিলাসি জীবন,মানুষ পেটানো,দেশকে কি  দেয়,অফিসারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা,দুরনীতি ইত্যাদি। বেতন,বাড়ি-গাড়ি-রেশন,বিলাসী জীবন,শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি সম্বন্ধে নিজের ক্লাশমেটকে প্রশ্ন করলেই ক্লীয়ার হয়ে যাবে।মানুষ পিটানো যদি আমাদের প্রিয় কাজ হত তবে প্রতি বছর গ্রীস্ম+শীতকালীন এক্সারসাইজের দুই মাস তাই প্র্যাকটিস করানো হত।আর আর্মি তো মংগল গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন না,যাকে পেটাবো সে আমারি বাপ,ভাই,আত্মীয় কিংবা বন্ধু।দুর্নীতি আছে এবং থাকবে-তবে যাচাই করে দেখুন তার বিপক্ষে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়।দেশকে  কি দেই-প্রশ্নটা আগে নিজেকে করুন।আর আমি কি দিতে পারব তার প্রমাণ করতে হলে কাউকে ধরে এনে যুদ্ধ করা লাগবে,নয়ত বিদেশে গিয়া যুদ্ধ করা লাগবে।দ্বিতীয় অপশনে খারাপ হলে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে HIGHEST TROOPS CONTRIBUTING COUNTRY হতে পারত না।

আর বর্তমানে আইভরি কোস্টে মিশনে আছি।এটা জানার পর একটা কমন কথা-তাইলে তো মেলা টাকা কামাই করতাছ।ঘটনা সত্য।তবে যুদ্ধ চলছে এরকম সংঘাতময় একটা দেশে সেনাবাহিনীকে(জনবল,অস্ত্র এবং সরঞ্জাম) ভাড়া দিয়ে দেশ কত টাকা পায় আর তার কতটুকু সেনাসদস্যরা পায় জানার পর কথাটা বললে একটু কম বিব্রত লাগত এই আর কি।মোদ্দাকথা ভাই গালি দেন মানা বা প্রতিবাদ করছিনা,স্পেসিফিক্যালি জেনে গালি দেন।জানতে গিয়ে হয়তো দেখবেন এতদিন যা গালি দিছেন সেটা অনেক কম হয়ে গেছে।তখন না হয় বাকিটা পুষিয়ে দিবেন…………

৩,১১৬ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “একজন সেনাসদস্যের কিছু অর্থহীন প্রলাপ”

  1. শেখ সাদী (০৬-১২)

    লেখা চ্রম হইসে !!!!!!!! :boss: :boss: :thumbup: :thumbup:
    এইগুলা যারা বলে তাগোরে :gulli2: :gulli: :gulti: :duel: :chup: 😡
    সুন্দর লেখার জন্য এক কাপ গ্রম গ্রম সিলোটি :teacup:


    \"why does the weasel go pop? does it matter?
    if life is enjoyable, does it have to make sense?\"

    জবাব দিন
    • ভাই, এখানে কেউ অন্য কাউকে দেখে হিংসায় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নাই, আল্লাহর রহমতে আমরা যারা আর্মীতে আছি তারা আসলেই আপনাদের অনেকের থেকে ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ । সমস্যাটা হচ্ছে, কতটুকু ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকার করার পরে আমরা ভালো আছি সেটা যদি একটু জানার চেষ্টা করতেন তবে খুব ভালো লাগতো । আপনাদেরই টাকায় পালিত আপনাদেরই সেনাবাহিনী, একটু আগ্রহ নিয়ে খোঁজ খবর করে দেখেন আমরা কি করি, কেন করি, কতটুকু করি আর বিনিময়ে কতটুকু যত্নের সাথে আপনারা আমাদের লালন পালন করেন । এইটুকুই শুধু দাবী । না, কোন দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্য আমরা আর্মীতে আসি নাই, তাই যদি ইচ্ছা থাকতো তবে এতো অল্প বয়সে জীবন বাজী রাখার সাহস পেতাম না ।

      জবাব দিন
      • ভাই নয়ন, আমিও ঠিক হিংসা কথাটা বুঝাতে চাইনি।
        আসলে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে বিচার করলে দেখা যায় সবাই কোন না কোন কষ্ট নিয়ে আছে। একেক জনের কষ্টটা একেক রকম। আপনারা সাধারন আম জনতার গালি খেয়ে কষ্টে আছেন। আমজনতা আপনাদের ঠেলা খেয়ে কষ্টে আছে। আপনারা অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েও আবদ্ধ জীবন নিয়ে কষ্টে আছেন। আমরা স্বাধীন থেকেও সুযোগ সুবিধার কমতিতে বড়ই কষ্টে আছি।
        কষ্ট, সুখ সবই আপেক্ষিক। তবে হ্যা, আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি। সেটা হল সুযোগ (Opportunity)। না এটাকে ভাগ্যের সাথে মিলাবেন না। আপনারা সুযোগ পেয়েছেন দেশকে সরাসরি সাহায্য করার, আপনাদের কাছ থেকে আমরা সেটাই আশা করছি।
        আমার নেতা, পথপ্রদর্শক কিংবা বয়োজষ্ঠ্য একটু সুবিধা পাবে এটা আমি কখনই খারাপ চোখে দেখব না। কারন, সে এটার যোগ্য। কিন্তু ওনারা যদি আমাকে জুলুম করে,আমার সাথে অন্যায় আচরন করে, অন্যায্য অধিকার খাটায় তা কিন্তু মানা সম্ভব নয়।
        আপনারা যতটুকু কাজের সুযোগ পাচ্ছেন এবং কাজ করছেন ও তার প্রতিফল রুপে সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন সেই সুযোগের তুলনায় আমদের বেশীর ভাগ অংশ অনেক অনেক পিছিয়ে আছে। তাই আক্ষেপটা থেকেই যায়।
        তবে আপনারা নিরবে ভালো কাজ করতে থাকেন, দেশের মঙ্গলে কাজ করেন দেখবেন এক সময় মানুষ আপনাদের কথাই বলবে। যেমন, আমি বলি।

        জবাব দিন
        • রাকিব(৯৮-০৪,মকক)
          আপনারা অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েও আবদ্ধ জীবন নিয়ে কষ্টে আছেন। আমরা স্বাধীন থেকেও সুযোগ সুবিধার কমতিতে বড়ই কষ্টে আছি।

          মহিউদ্দীন ভাই,আপনার ক্লাশমেটরা এখন সেনাবাহিনীতে মেজর র‍্যাংকে আছেন।ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স অনুসারে সরকারের উপসচিব, প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার চেয়ারম্যান(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন পৌরসভায়), উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন উপজেলায়), সিভিল সার্জন (তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়),পুলিশের এস পি(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়), সশস্ত্রবাহিনীর মেজর ও তার সমতুল্য পদবী।প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে একবার খোঁজ নিয়েই দেখুন না.........।

          জবাব দিন
  2. রাকিব(৯৮-০৪,মকক)

    আমিন ভাইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই।আমি ভাল আছি।আলুচনা না করাই ভাল,ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  3. সন্ধি (১৯৯৯-২০০৫)

    অন্যান্য ব্যাপারে কথা না বলে, শুধু একটা বিষয়েই বলতে চাই। শান্তিরক্ষায় এসে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা শুধু নিজের পকেট ভারী করেন, এরকম একটা ধারণা সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের বেতন ব্যতিরেকেই দেশ যে এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে তা সাধারণের জানার বাইরে। এমনকি মজার বিষয় হল, সেনাবাহিনীতে কর্মরত অনেকেরই এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা নেই। এক্ষেত্রে সরকার বা সেনাবাহিনীর মিডিয়া সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ সাধারণের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারেন। তবেই আশা করি এই সংশয় এবং এ সংশ্লিষ্ট বিদ্বেষ অনেকাংশে দূরীভূত হবে।

    জবাব দিন
    • রায়হান (১৯৯৮-২০০৪)

      সন্ধি যখন টাকা র কথা তুলল তখন বলেই ফেলি......সন্ধি যেহেতু সেনাবাহিনীতে না থেকেও সম্প্রতি দোভাষী হিসেবে মিশনে দায়িত্ব পালন করতে অনেক কিছুই জেনেছে তাই ও কিছুটা জানে
      আর এই বিষয়ে কাজ করতে এসে এ সম্পর্কে আমার কিছুটা ধারনা হলেও হয়েছে......

      একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রতি মাসে সরকারের জন্য কত টাকা প্রতি বছর উপারজন করে তার একটা ক্ষুদ্র হিসাব দেই(Detail হিসাব নিয়ে একটা লেখা দেয়ার ইচ্ছা আছে,দেখা যাক)

      ১। ৭৫০ জনের একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন মিশনে এলে সরকার প্রতি জনবলের জন্য প্রতি মাসে পায় ১৪০৪ ইউ এস ডলার। সে হিসেবে প্রতিমাসে সর্বমোট আসে (১৪০৪X৭৫০)=১০৫৩০০০ ডলার

      ২। মূল সরঞ্জাম তথা Major Equipment (গাড়ি, অস্ত্র, এ পি সি , জেনারেটর , ইত্যাদি) র জন্য সর্বমোট মাসিক আয় = ৩১০০৯৮ ডলার

      ৩। নিজ ব্যাটালিয়ন হিসেবে সয়ং সম্পূর্ণ থাকার জন্য Self Sustainment (ক্যাটারিং, ইন্টারনেট, Communication, ধুবি , বারবার , Welfare , Fire Fighting , Fire Alarm , Cleanliness , Minor Engineering ইত্যাদি) খাতে মাসিক সর্বমোট আয় = ২৪০৫২৭ ডলার

      কাজেই সর্বমোট মাসিক আয় = ১৬০৩৬২৫ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১২৯৮৯৩৬২৫ তাকা(১ মার্কিন দলার=৮১ টাকা হিসেবে)

      এই হিসেবে একটি ব্যাটালিয়ন থেকেই সরকারের বাৎসরিক আয় হয় = ১৯২৪৩৫০০ মার্কিন ডলার বা ১৫৫৮৭২৩৫০০ টাকা।

      এ রকম প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ১০-১২ টি ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে।

      আশা করি উপরের তথ্য গুলো যারা শুধু মনে করেন আর্মি মিশন করে নিজেদের উপকার করছে এতে দেশের কোনই লাভ নেই, আশা করি তাদের জন্য সহায়ক হবে।

      সুযোগ পেলে বিস্তারিত হিসেব সহ একটি লেখা দিলে আশা করি সবার কাছে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে।


      একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার

      জবাব দিন
  4. জুলফিকার (২০০০-২০০৬)

    ::salute:: ভাই ::salute::
    জীবনে বেচে থাকলে টাকা এমনিতেই আসবে। কিন্তু যারা জাতিসংঘ মিশনে যায় তাদের জীবনটাই তো দোলাচালে থাকে।
    আপনার অভিমানের কারণ যারা তাদের ধিক্কার জানাই :gulli2: :gulli2:

    জবাব দিন
  5. রিয়াজ (৯৮-০৪)

    সেনা সদর এ কাজ করার সুবিধার্থে খুব কাছ থেকে কিছু জিনিস দেখার সুযোগ আমার হইছে...
    আমি যেই পরিদপ্তরে কাজ করি তাদের অন্যতম একটা কাজ হল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বেসামরিক প্রশাসন কে সাহায্য করা। বিভিন্ন সময় আমরা তো অনেক কাজই করছি কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে কিছু দিন আগে উত্তরায় আগুন এবং শাখারিবাজার এ দালান হেলে পরার পর কিছুখুনের মধ্যেই আমাদের কাছে ফোন আসে অই এলাকায় রেস্কিউ টিম পাঠানোর জন্য। গত বৃহঃ তে আমাদের ৪০ জনের একটা দল সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাধ এ ৩ মাস এর বেশি কাটায় আসার পর অই রাতেই রাধানগরে ১০০ জনের বেশি একটা দল পাঠানো হয় বাঁধ রক্ষার জন্য... অথচ গত শনিবার দূর্যোগ প্রশমন দিবসের অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান্মন্ত্রী অল্প একটু ছাড়া কোনো বক্তার(মন্ত্রী/সচিব)মুখে আর্মির নামই নাই। অথচ সবার আগে ডাকা হয় আমাদের কেই। আমাদের যেতে সমস্যা নাই কিন্তু অন্তত কৃতজ্ঞতা তো স্বীকার করা যায় (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)


    জানি সত্য নয়,শুধু কল্পনায়...ইচ্ছের ঘুড়ি আমরা ওড়াই...স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে তারি অপেক্ষায়

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমরা বিভিন্ন সময় আকাইম্মা, আজাইরা কথা বলে থাকি। উদাহরণ দেই
    ০১
    কারো সাথে কথাবার্তা হচ্ছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে; কেউ কারো নাম জানে না। একজন আরেকজনের নাম জানতে চায় বেশিরভাগ সময় এইভাবে,
    "ভাই আপনার নামটা জেনো কি বলেছিলেন?"
    অথচ কেউ কাউকে নাম বলেনি।

    ০২
    এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে ফোনে বা চ্যাটে
    "ভুইলা গেলি নাকি! কোন খোজ খবর নিস না!"
    অথচ সেও কিন্তু কোন খোজ নেয়নি এর আগে

    ০৩
    "আমার বাসায় আসবেন কিন্তু"
    অথচ কোন দিন তারিখ দেই না, এমনকি চাইও না শে বাসায় আসুক
    এরকম হরেক উদাহরণ দেয়া যাবে।
    একটু আগেই আমার এক আত্মীয় ফেসবুকে আমাকে নক করে দুই নম্বর দিয়েছে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        (ঘেউ) রাকিব...এই লেখা আগে পড়লাম না কেনো বুঝলাম না। যাই হোক। ভালা লিখছস। নিজের (প্রয়াত) বাপ প্রাচীন আমলের ফৌজ। গায়ে প্রচলিত "আর্মির পুলাপান" সীল পড়ার আগেই বাপজান দুনিয়ারে সালাম দিয়ে দিলো কিন্তু শ্রদ্ধাবোধটা জাগিয়ে রাখতে প্রাথমিক কৃতিত্ব আমার মায়ের এবং বাকিটা তোদের সবার। অন্যান্য যেকোন কিছুর মত ভালো মন্দ মিলিয়েই আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

        কয়েকদিন আগে আঘাত হানা হ্যারিকেন স্যান্ডির পর আমার এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে মুনতাসির (লুই) বলছিলো, "আমেরিকার এখন বাংলাদেশ আর্মিরে ভাড়া কইরা নিয়া যাওয়া উচিৎ।" কথাটা শুইনা মজা পাইছিলাম। সেই সাথে ভেবেও দেখলাম প্রযুক্তিগত সুবিধা বাদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ তৎপরতার অভিজ্ঞতায় দেশের ফৌজকে টেক্কা দেয়া মুশকিল। যদিও সিড্‌রের পর মার্কিন নৌবাহিনীর ত্রাণবাহী জাহাজের (শুনেছি ওটার পেটে ট্রোজান হর্সের মত নাকি যুদ্ধবিমান, মিসাইল ইত্যাদি লুকানো ছিলো?) বাংলাদেশে আসার বিস্তারিত কারণ আমি জানি না।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাফায়েত (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।