কোয়ার্টার ফাইনালের পথে (প্রথম পর্ব)

আরেকটা পর্ব লেখা শুরু করলাম। আমার আগের লেখাগুলা দেখলেই বুঝবেন আমি প্রতিবারই চেস্টা করি একটা সিরিয়াল ধরে লেখার, কিন্তু প্রতিবারই প্রথম পর্ব লেখার পর লেখার কোয়ালিটি দেখে আর লেখার ইচ্ছা করে না (অভ্র চালালেই ঘুম আসে এটা একটা কারন)। তাই দ্বিতীয় পর্ব না পেলে ধরে নিতে হবে এটাই নিয়ম।

এবারের টাইটেল কোয়ার্টার ফাইনালের পথে দেয়ার কারন হল দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচগুলার একটা প্রিভিউ দেয়া। ম্যাচ বাই ম্যাচ করে আজকে প্রথম চারটা ম্যাচ দিয়ে দেখি কি কাহিনী আছে এগুলার মধ্যে।

উরুগুয়ে – কোরিয়াঃ

এখানে ফেভারিট উরুগুয়ে, এদের যে রকম কঠিন ডিফেন্স, কোরিয়া তা ভাংতে পারবে বলে মনে হয় না। বরং ফোরলানকেই মনেহয় কোরিয়ান ডিফেন্সকে বেশ একটা টাফ টাইম দিতে পারবে। কোরিয়ান কাউকেই তেমন চিনি না বলে ডিটেইলস লেখা সম্ভব না আমার পক্ষে, কিন্তু ওদের সেটপীস গুলা অনেক দুর্দান্ত। যদিও এটা জানি যে কোরিয়ানরা অনেক দ্রুত পাস খেলে আক্রমনে উঠে, কিন্তু সেগুলা ঠেকানোর মত মানুষ উরুগুয়ে তে আছে। প্রেডিকশনঃ ১-০।

ইউ এস এ – ঘানাঃ

ঘানা, যারা ফিল্ড গোল করতে পারে না তাদের আসলে এই রাউন্ডে উঠা উচিত হয় নাই। উঠে যেহেতু গেছেই, এর পরে কি আর যাওয়ার সামর্থ আছে তাদের? মনে হয় না। পেনাল্টি না খেলে, ইউএসএ ঘানার কাছে গোল খাবে না, কিন্তু আবার ঘানা কে গোল দিয়ে আসতে পারবে, স্লোভেনিয়ার সাথেই দেখা গেছে সেটা। এর সাথে, শারিরীক সামর্থেও ইউএসএ ঘানার সাথে পাল্লা দিতে পারবে (আল্টিডোর আছে না)। এই ম্যাচে গোল ব্যাবধান কত হবে সেটা বলতে পারছি না, কিন্তু ইউএসএ জিতবে সেটা কনফার্ম।

জার্মানী – ইংল্যান্ডঃ

সবাই যেরকম আশা নিয়ে আছে এই ম্যাচ নিয়ে, হিউজ একটা ম্যাচ হবে নাকি, আমার কিন্তু মনে হয় একটু স্লো আর এলোমেলো খেলা দেখার চেয়ে বেশী কিছু আশা করা এখানে ঠিক হবে না। কারন, এই দু দলের কেউই মনেহয় না ঠিকমত নিজেদের কে গুছিয়ে নিতে পেরেছে, সর্বশেষ ম্যাচেও ভালো কিছু দেখি নাই। জার্মানরা প্রথম ম্যাচে ভালো খেললেও পরের দু ম্যাচে সেরকম খেলতে পারে নাই। আর ইংল্যান্ডের সাথেও পারবে না কারন কোল-মুলার, টেরি-ওজিল, ব্যারি-খাদিয়া – এই ধরনের ছোট ছোট ব্যাটেলে ইংল্যান্ডই এগিয়ে থাকবে।

আরও কিছু কারন আছে, দুদলের জন্যই ক্রিটিকাল হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন, জার্মানীর ডিফেন্সের বেশ বাজে অবস্থা দেখা গেছে ঘানার সাথে ম্যাচে, ঘানার প্লেয়াররা অনেকবার জার্মান ডিফেন্স ভেঙ্গে কীপারের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান সিচুয়েশনে চলে গিয়েছিল। ঘানা বলেই সেগুলা মিস হয়েছে, ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড কিংবা রুনি সেগুলা মিস করার মত না। রুনি হয়ত এখনো সেরকম খেলা দেখায় নাই, আশা করি জার্মানীর সাথে ফাটাবে, কিন্তু সামনে একটা ডিফো নিয়ে কতখানি স্পেস পাবে আমার সন্দেহ আছে।

আর একটা জিনিষ হল, গত ম্যাচেই দেখলাম ল্যাম্পার্ড আর জেরার্ড দুজনেই ভালো খেলেছে। ক্যাপেলো যদি আসলেই এই দুজনকে একসাথে ভালো খেলানোর একটা ফর্মুলা বের করে ফেলতে পারেন, তাহলে ইংল্যান্ডের সামনের ম্যাচগুলাতে অপোনেন্টদের আসলেই খবর আছে।

প্রেডিকশন করে পারছি না এখানে, চামে চিকনে ইংল্যান্ড জিতে যেতে পারে কারন ক্যাপেলো হল আরেকটা মরিনহো। (হঠাত মনে হল, মরিনহো যদি পর্তুগালের দায়িত্ব নেয়, তাহলে কি পর্তুগাল চ্যাম্পিয়ন হবে?)

আর্জেন্টিনা – মেক্সিকোঃ

আর্জেন্টিনা তো হট ফেভারিট, সবাই এটাই লিখতে লিখতে কীবোর্ডের ধুয়া তুলে ফেলছে অলরেডি। আমার মনে হয়, মেক্সিকোর সাথে এই ম্যাচটা অনেক ট্রিকী হবে, আর এই পর্যায়ে আর্জেন্টিনাকে টেস্ট করার মত মেক্সিকোই পারফেক্ট টিম। কারন হল, আর্জেন্টিনার যেটা উইক সাইড, সেটাই আবার মেক্সিকোর স্ট্রং সাইড।

প্রথমত, আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের অবস্থা খুব একটা ভালো না, গ্রীসের সামারাস একাই যেরকম নাচাইছে সেদিন বেটা একটু ভালো ফিনিসার হলে অথবা একটু পায়ের কাজ জানলে গোল বের করে নিয়ে আসতে পারত। এখানে ডস স্যান্টোস আছে, দুর্দান্ত শট নেয় আর পায়ের কাজ দেখলে রোনালদিনহোর ছোট ভাই। দ্বিতীয়ত, মেক্সিকো যেভাবে লম্বা থ্রু বল দিয়ে কাউন্টার এটাকে যায়, এটা আর্জেন্টিনার জন্য বেশ ঝামেলার হবে। দুই পাশে হেইঞ্জ কিংবা গুতিয়ারেজ কেউই ডিফেন্ডার হিসেবে নাম কামায় নাই, ডেমিকেলিস তো শুনেছিলাম ভালো খেলে কিন্তু এই বিশ্বকাপে সেরকম কিছু মনে হয় নাই এখনো। তৃতীয়ত, আর্জেন্টিনা গ্রুপে যাদের সাথে খেলে আসছে, গ্রীসের ডিফেন্সই একমাত্র কিছুটা হলেও মেক্সিকোর কাছাকাছি মানের।

আমার প্রেডিকশন হল ৩-১ এ আর্জেন্টিনা জিতবে, কিন্তু মেক্সিকান কাউন্টার এটাক বেশি হলে (অথবা আর্জেন্টাইনরা বেশী এটাকে গিয়ে বল মিস করলে) এই এক গোলের চেয়েও বেশী হতে পারে।

এই চার গ্রুপ থেকে যারা টা টা বাই বাই বলে দিছে তাদের কে নিয়েও কিছু বলা দরকার।

গ্রুপ এ তে ভালো খেলা দল দুটাই উঠছে, কোন সমস্যা নাই। গ্রুপ বি তে নাইজেরিয়া এতো গোল মিস না করলে কোরিয়ার জায়গায় ওরাই উঠতে পারতো। গ্রুপ সি তে ইউএসএ ছাড়া বাকি সব দলই সমান খেলছে, তাই ইংল্যান্ড উঠলেও যা বলতাম আলজেরিয়া উঠলেও তাই বলতাম। গ্রুপ ডই তে ঘানার উঠা ঠিক হয় নাই, বরং অস্ট্রেলিয়া অনেক যোগ্য দল ছিল এখানে। তারা ঘানার মত গোল মিসও করে না। অনেকেই বলছে প্রথম ম্যাচে ৪ গোল খাওয়াটাই নাকি সর্বনাশ করে দিছে, কিন্তু আমার মতে দ্বিতীয় ম্যাচে কিউয়েলের ওই হাস্যকর রেফারির ভুলে লাল কার্ড আর ঘানার পেনাল্টিটাই সব হিসেব ঘুরিয়ে দিয়েছে। ওই পেনাল্টি না হলে ঘানার সাধ্য ছিলো না অস্ট্রেলিয়ার জিতা ম্যাচটা ড্র করে আসা।

যাই হোক, আমার প্রথম পর্ব শেষ এখানেই, লেখাটা ড্রাফটে ছিল বলে দিতে পারলাম। ইতালী জাতীয় একটা বাজে ঘটনার পর এই বিশ্বকাপ নিয়ে আর লেখার ইচ্ছা নাই আমার। টিম ওয়াইস, বা শুধু ইতালীকে নিয়ে আর একটা পোস্ট দিতে পারি আমি, অবশ্য পরাজিত দলকে নিয়ে কেই বা আগ্রহী!

কেউ না কেউ আশা করি এর দ্বিতীয় পর্ব লেখবে এখানে।

২০১২ ইউরোতে আবার আমার ফুটবল পোস্ট দেখা যাবে।

২,২৩০ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “কোয়ার্টার ফাইনালের পথে (প্রথম পর্ব)”

  1. এহসান (৮৯-৯৫)

    কোনো চামে চিকনে ইংল্যান্ড জিতবে... এটা আমি মানছি না। সোজা বাংলায় আজকের খেলায় ইংল্যান্ড ফেবারিট। আজকেও উইনিং কম্বিনেশন না ভাঙ্গার অজুহাতে ডেফো খেলবে, তাও ক্রাউচ কিংবা হেস্কী আজকে খেলা উচিত ছিলো। কারণ আর কিছুই না... জার্মানীর সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারগুলো অনেক লম্বা। আর সেকেন্ড বল/ নকড ডাউন বল ধরে কাজে লাগানোর প্ল্যান... মানে জেরার্ড কিংবা ল্যাম্পার্ডের গোল পেতে হলে শুরুতে লম্বা স্ট্রাইকার লাগতো।

    ফিলিপ লাম রাইট ব্যাকে যত ভালো। জার্মানীর লেফট ব্যাক এত ভালো না। তাই মিলনারের কোয়ালিটি ক্রস কিংবা শেষ ১৫ মিনিটে লেননের গতি আজকে কাজে আসতে পারে।

    আজকে পেনাল্টি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আজকে হয়তো ৯০ মিনিটেই ফলাফল আসবে। আর পেনাল্টিতে প্রেশার নেয়ার মত পরিনত খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের আছে। যদিও আমার ল্যাম্পার্ড আর ডেফো নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু ব্যারী আর জেরার্ডকে নিয়ে সন্দেহ নাই। আর টেরী আবারও পা পিছলে পরবে না। জার্মানীর অভিজ্ঞতা আর কুলনেস সব সময় নক আউট স্টেজে অতীতে ওদের সাহায্য করেছে। কিন্তু শোয়াইনশটাইগার না খেললে মিডফিল্ড নিতান্তই অনভিজ্ঞ। ওজিল কিংবা খেদিরা অনেক নবীন। তাই ক্লোজা ছাড়া বাকীরা পেনাল্টি শ্যুট আউটের চাপ নিতে পারবে... আমি সন্দিহান।ajoke runI faTabeরুনী আজকেও ফ্লপ মারবে!!! না মনে হয়। ক্যাপ্টেন হিসেবে জেরার্ডের লিভারপুল মার্কা অনুপ্রেরনা যোগানো খেলা আজকে রুনীকে তাতিয়ে দিবে। জেরার্ড আর ক্যাপেলো বাহিনী আজকে অনেক আত্মবিশ্বাসী।আজকে জার্মানী হোম টীমের মর্যাদা পাচ্ছে। তাই ইংল্যান্ড আজকে লাল স্ট্রিপে খেলার কথা। সাদা ইংল্যান্ডের চেয়ে স্লভেনিয়ার বিরুদ্ধে লাল ইংল্যান্ড অনেক শক্তিশালী ছিলো।

    ইউরোপের বাস্কিং সানের বিকেল চারটায় এক হাতে ভুভুজেলা আর আরেক হাতে বিয়ারের গ্লাস নিয়ে বার্লিনের পরিবর্তে গ্লাস্টনবারীতেই উৎসব হবে বলে মনে হচ্ছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাঈনুল (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।