সুলতানের স্কেচ বুক

sm-sultan-5

এস এম সুলতান বা লাল মিয়া আমাদের সমাজের আর দশজনের চোখে পাগল ছিলেন বলা যায়। মেয়েদের মতো শাড়ি পড়তেন, কখনো বাঁশি বাজাতে বাজাতে ছুটতেন অজানায়, কখনো ঢাকার বুড়িগঙ্গার দিকে। ছোট চুলের কোন ছবি দেখি নি সুলতানের। হয়তো একই সাথে তিনি ছিলেন কৃষ্ণ আবার রাঁধা। স্যুট কোট, ক্যাডিলাক, পশ্চিমের আরাম-আয়েশ ছেড়ে অজ পাড়া গায়ে গিয়ে থাকা সহজ ব্যাপার নয়। সুলতান হয়তো পেরেছিলেন কারণ তিনি এই মাটিরই সন্তান ছিলেন।

সুলতান - না আ মামুন  (উপরের ছবিটি খুব সম্ভবত নাসির আলী মামুনের তোলা)

২০ বছরের বেশি হলো শিল্পী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। হারিয়ে গেছে তার অনেক কাজ। তার পরো তার যেসব কাজ মানুষ দেখতে পেয়েছে তাতেই এক জাত শিল্পীকে আমরা চিনেছি। সত্যি বলতে কি সুলতানের জীবনটাই একটা চিত্রকল্প। তার লম্বা কালো চুল, কালো আলখেল্লা, হাতের বাশি, কাধের ঝোলা, তাতে কখনো সাপ ও থাকতো, আবার কখনো পড়তেন কালো বা গেরুয়া শাড়ি, নাচতেন পায়ে ঘুঙুর পড়ে-শাড়ি গায়ে, চোখের দৃষ্টি অদ্ভুত । গাজাও খেতেন তীব্র মাত্রায়। আহমদ ছফার এক লেখায় পড়েছিলাম, শিলপ্পীকে ঢাকায় নিয়ে আসলে তার পিছনে দৈনিক ৫০০ টাকার গাজা লাগতো। এটা নব্বই এর দশকের হিসাব। (গাঁজার গন্ধ আমার অসহ্য লাগে। তবে দুএকবারের অভিজ্ঞতায় জানি ঐ জিনিস অন্য জগতে নিয়ে যায়)
অন্তত দুই জনের লেখনিতে পেয়েছি চাদনি রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখেছেন সুলতানের বুকের উপর ফণা তুলে বসে আছে সাপ। অনেকে বলেন সুলতানের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ছিলো।
আমার কাছে সুলতানের মূল ক্ষমতা তার ভিশন। এবং শিল্পীর এই ভিশনের মূল উপজীব্য হচ্ছে মানুষ। এবং যেই সেই মানুষ না ; গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। কিন্তু তারা শারিরীক ভাবে সবল।

২০১৩ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর থেকে ১১ ই অক্টোবর পর্জন্ত বেঙ্গল গ্যালারি অফ ফাইন আর্টস এ সুলতানের ড্রইং র একটি এক্সজিবিশন হয়। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত ছবিগুলি এর আগে সাধারণ মানুষ দেখেনি।

সুলতান, আবুল কাশেম জোয়ারদার পঞ্চাশ দশকে নড়াইলে জরাজীর্ণ রাজবাড়িতে শিল্পী এস এম সুলতান (শাড়ি পরিহিত) পিছনে, সামনে মাঝে অধ্যাপক আবুল কাশেম জোয়ারদার

সুলতানের সাথে আবুল কাশেম জোয়ারদারের পরিচয় ১৯৫০-৫১ সালের দিকে যশোরে, তখন তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজের ভূগোলের শিক্ষক। যদিও তিনি তাকে দেশ ভাগের আগে কলকাতায় দেখেছিলেন। দুজন একসময় আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠেন। সেই সময়েই সুলতানকে একটি ড্রইং এর খাতা উপহার দেন। সুলতান সেই খাতায় চারকোল দিয়ে ফিগার এঁকেছেন। তবে দানবীয় করে নয়।
সৈয়দ আমিনুল হক কায়সার, মইনুদ্দীন খালেদ, সুবীর চৌধুরী এদের কারণে আজ আমরা সুলতানের সেইসব ড্রইং দেখার সুযোগ পেয়েছি। জানা যায় জোয়ারদার সাহেবের কাছে সুলতানের আরো অনেক ড্রইং আর ছবি ছিলো। তার কাছ থেকে অনেকে নিয়ে আর সেগুলো ফেরত দেন নি।

সুলতানের তিনটি ভিডিও পেয়েছিলাম। এখানে সংযুক্ত করে দিলাম।

০১। সুলতানের কিছু ভাবনা 

০২। সুলতানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

০৩। আদম সুরত – তারেক মাসুদ (অংশ বিশেষ)   

এস এম সুলতান কে নিয়ে পূর্বের লেখার লিঙ্ক। আমাদের লাল মিয়া। 

 

 

সূত্রঃ
০১ Great Master SM Sultan – বেঙ্গল গ্যালারি অফ ফাইন আর্টস
০২ আদম সুরত – তারেক মাসুদ
০৩ ইন্টার্নেট
০৪ নাসির আলী মামুন

১৯ টি মন্তব্য : “সুলতানের স্কেচ বুক”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    এস এম সুলতানের মত এমন নির্মোহ জীবনাচরণ একজন সত্যিকারের শিল্পীর পক্ষেই সম্ভব।
    আদম সুরত এক কথায় অসাধারণ! কী চমৎকার তাঁর বাচনভঙ্গি আর উচ্চারনশৈলী!

    সুলতানের নিজের জীবনটাই আমার মনে হয় ছবির মত (নাকি স্বপ্নের মতো বলা উচিত?)।
    এমন জীবনের কথা আমরা অনেকেই কল্পনা করি কিন্তু যাপনে বড় ভয় 🙁

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    উনার ছবির কারণে উনাকে যতটা পছন্দ করছি তারচেয়ে বেশী ভাল লাগছে উনার স্বাধীন পাগলাটে জীবনযাপন নিয়ে জানতে পেরে। শাড়ি পড়তেন বলে কটু কথা শুনেছেন কারণ আমরা ট্রানভেস্টাইট স্বভাবের মানুষ দেখে অভ্যস্ত নই।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    দারুণ একটি কাজ হল, রাজীব ভাই। :clap:
    এস এম সুলতান সম্পর্কে আগ্রহীরা সহজেই অনেক তথ্য একখানে পাবে... :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      ধন্যবাদ জুনায়েদ।
      সে কারণেই দিলাম।
      আমার নিজের ছবি আঁকার হাত নাই।
      কিন্তু ছবি, ভাষ্কর্য ভালো লাগে।
      আমার শ্যালিকা সিরামিকস এ পড়ছে এই জন্য আমার দুঃখের শেষ নাই।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।