ওমর খৈয়াম ০১

love-of-omar-khayyam-and-saqi-BI59_l
সুরা, সাকী, পদ্য এই তিন মিলে ওমর খৈয়াম।
তবে সবার উপরে প্রেম।
যে নিজেকে না ভালোবাসে সে অপরকে কিরূপে ভালোবাসিতে পারে!

ওমর খৈয়াম ওমর খৈয়াম এর সংক্ষিপ্ত বিবরণী
গিয়াদ আল‌-দিন আবুল‌-ফাত্তাহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-নিশাবুরী খৈয়াম (জ. মে ৩১ ১০৪৮ – মৃ. ডিসেম্বর ৪, ১১৩১) একজন ইরানের কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করার পর যুবা বয়সে তিনি সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এর পর [বুখারা]তে নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ “Treatise on Demonstration of Problems of Algebra“ গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ওমর ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে।
তিনি তার কবিতা সমগ্র, যা ওমর খৈয়ামের রূবাইয়াত নামে পরিচিত, তার জন্য বিখ্যাত। তার কাব্য প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। ধারণা করব হয়রনে দেকার্তের আগে তিনি বিশ্লেষনী জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান তিনিই প্রথম করেন। বহুমুখী প্রতিভার দৃষ্টান্ত দিতে বলা হলে বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন ওমর খৈয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয়।
দর্শন ও শিক্ষকতায় ওমরের কাজ তার কবিতা ও বৈজ্ঞানিক কাজের আড়ালে অনেকখানি চাপা পড়েছে বলে মনে করা হয়।মধ্যযুগের মুসলিম মনীষা জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে “বিশ্ব দার্শনিক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেক সূত্রে জানা গেছে তিনি নিশাপুরে তিনি দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন।
ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসাবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাই এর অনুবাদ এবং তার প্রচারের কারণে।ইংরেজীভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজ মনিষী টমাস হাইড প্রথম অপারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমর কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন। সুত্রঃ উইকি। আরেকটু বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন।

ওমরা খৈয়াম - স্কট ফিটজেরল্ড

ঐদিন হঠাৎ করেই ওমর খৈয়ামের একটা সংকলন হাতে আসলো। নিচে কিছু অনুবাদ দিলাম। পাঠপূর্ব সতর্কতাঃ নিচের কবিতাগুলোতে রুবাই এর বৈশিষ্ঠ্য না খোঁজার অনুরোধ থাকলো। 

০১

যদিওবা আমি সুদর্শন এবং আমার গাত্রবর্ণ ও উজ্জল-
যদিওবা আমার থুতনি টিউলিপের ন্যায়-
আমার গড়ন সাইপ্রেসের ন্যায়-
তবুও আমি ঠাহর করে উঠতে পারি না
হে অনন্ত সৌন্দর্য্য পিয়াসী স্বামী
ঃ তুমি কেনো আমায় এই ঝড়-ঝঞ্ঝা পূর্ণ
পৃথিবীতে পাঠালে???

০২

তুমি তো জেনেশুনেই আমার সৃজিলে
তবু ক্যানো পথে পথে আমার এতো অন্ধকার???

তুমি তো নিশ্চিত জেনেই আমা থেকে পৃথক হলে
তবু আমি আজো জানি না
ঃ কেনো আমার জন্ম?
ঃ কেনো আমার অস্তিত্ব?
ঃ কোথায়ই বা আমার শেষ?

০৩

ওগো স্বর্গ, আমায় পেয়ে তুমি কি পাবে?
আর আমিই বা তোমায় পেয়ে কি করবো?

আমার চক্ষু-কর্ণ কিছুই দেখিলো না, শুনিলো না।
হায়।
কেনোই বা এই আসা, কেনোই বা এই যাওয়া…

০৪

হে হৃদয় তুমি তো ভেদিবে না সেই মায়াজাল-
তুমি তো সেই লক্ষ্যে পৌঁছিবে না
– যা অভিষ্ঠ জ্ঞানীদের।
তার চাইতে এসে বসো সুরাপাত্র হাতে এই অধমের সাথে।
কে জানে, সে আসিবে, না আসিবে না——

০৫

হৃদয়, তুমি যদি আজ জানিতে জীবনের ভেদ-
মরণে অবশ্য তুমি জানিবে খোদা রহস্য।
কিন্তু
আজিকে তুমি তোমার মালিক ; যদিও জানো না তুমি কিছুই।
ওরে মূর্খ! কাল যখন তুই নিজকে ছেড়ে চলে যাবি
কি করে জানবি রে তুই জীবনের ভেদ???

ওমর খৈয়াম তোমায় সালাম কবি।

২,৩৬৩ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “ওমর খৈয়াম ০১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লাগলো রাজীব ভাই। ওমর খৈয়াম এর কিছুই পড়া হয় নি। হুমায়ুন আহমেদের কোন একটা বইতে মনে হয় এই লাইনগুলো পড়েছিলাম শুধু

    এই খানে এই তরুর তলে
    তোমায় আমায় কৌতুহলে
    যে কটা দিন কাটিয়ে যাবো প্রিয়ে,
    সংগে রবে সূরার পাত্র
    অল্প কিছু আহার মাত্র
    আর একখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে নিয়ে


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।