মা, নেই

IMG_3153

ভালো গান শুনলে কাঁদি।
ভালো কবিতা শুনলে কাঁদি।
মানুষের দুঃখে কাঁদি।
মা মারা গেছে, চোখে পানি আসছে না।

আমার মনে পড়ে মায়ের দুঃখে কেদেছি, মায়ের চোখে পানি দেখে কেদেছি।
মার ক্যান্সার যখন ধরা পড়লো ২০০৫ এ সেই খবর ফোনে পেয়ে কেদেছি।
২০০৯ এ আব্বা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লো। বাচে কি মরে এই অবস্থা।
পাসপোর্ট তখন হোম অফিসে। মনের দুঃখে কাজে গেলাম না সপ্তাহ খানেক।

মা মারা গেছে, চোখে পানি আসছে না।

কেমন মানুষ ছিলেন আমার মা?
আমার খেয়াল আছে যখন কালিয়াকৈরে ছিলাম (মায়ের চাকুরি সূত্রে) একবার এক পিকনিকে মায়ের নাম দেয়া হয় গোল আলু। তিনি মোটা বা স্বাস্থ্য ভালো বলে নন তাকে সব খানেই পাওয়া যায় বলে, সব তরকারিতেই তাকে দেয়া যায় বলে।
আম্মা খুব হাসি খুশি ও একই সাথে কর্মযোগী মহিলা ছিলেন।
জন্মেছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার দূর্গাপুর ইউনিয়নের খোশ মাহমুদ হাজীর কনিষ্ঠ সন্তান ঈশা (ইছা) তালুকদারের ঔরসে ; ৩য় স্ত্রী শাহজাদী (শহর জাদে) বেগমের গর্ভে ১ম সন্তান তিনি। ১ম পক্ষের হেনা মামা আর মাজেদা খালা যে আমার সৎ মামা-খালা এইটা জানার জন্য আমার অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। আমার জন্মের আগেই হেনা মামাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কে বা কারা মেরে ফেলেন। আম্মা প্রায়ই হেনা মামার কথা বলতেন। আম্মাকে তার এই বড়ভাই খুবই আদর করতেন। আম্মার প্রিয় হারমোনিয়ামটিও ছিলো হেনা মামার কিনে দেয়া উপহার।
মা পরিবারের মতামতের অমতে গিয়ে, বলা ভালো মতের চেষ্টা না করেই বাবার হাত ধরে বরিশাল চলে যান। মা তখন রোকেয়া হলে থাকতেন কি! আব্বার সাথে ভালোবাসাবাসির ব্যাপারটা জানাজানি হলে টাঙ্গাইল শহরের বাসা থেকে সরাসরি নারায়ানগঞ্জে নানার পাটের গদীতে গিয়ে হেনা মামার কাছ থেকে ৫০০০ টাকা নিয়ে আব্বার হাত ধরে ভো বরিশাল।

IMG_2687
আমাদের বাসায় মার ছোটবেলার একটা স্মৃতি ছিলো, ছোট্ট একটা পিতলের বদনা, টি পটের বেশ ক্ষুদ্রাকার সংস্করণ বলা যেতে পারে। ওটায় করে মা ছোটবেলায় দুধ খেতেন। অন্য কোন স্মৃতি নেই ক্যানো এর উত্তর পেয়েছিলাম আরো পরে। মা নিজ ইচ্ছায় আব্বাকে বিয়ে করার কারণে নানা বাড়িতে মার সব স্মৃতি পুড়িয়ে ফেলেন।

৭৫ এর দিকে মিটমাট হয় যতদূর জানি। কারণ ১৫ ই আগষ্ট আমার মুক্তিযোদ্ধা ছোটমামা বরিশালে আমার দাদী বাড়িতে ছিলেন। আব্বা-আম্মার বিয়ের পর এই মামাই স্টেনগান নিয়ে আব্বাকে মারতে যান। আমার এবং আমার ছোটভাই দুইজনের জন্মই নানা বাড়িতে।

বাঙলায় এম এ পাশ মা চাকুরি শুরু করেন বরিশালের ব্যাপ্টিষ্ট মিশন স্কুলে। ঐ স্কুলে আম্মাই প্রথম মুসলিম শিক্ষক ছিলেন। আমার জন্মের পর আম্মা বি আর ডি বি তে জয়েন করেন, তখন এর নাম ছিলো আই আর ডি বি। ২০০৫ এ ক্যান্সার আক্রান্ত হবার পর ২০০৬ এ অবসরে যান। চাকুরিতে অবদান রাখায় একবার জাতীয় পুরষ্কার ও পান। ৮৯ এ মনে হয় দিন দশেকের জন্য ফিলিপাইন গেলেন চাকুরি সুবাদে। কয় টাকাই বা পেয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু সেই টাকায় কালিয়াকৈর এর থানা কাউন্সিলের প্রতিটা পরিবারের জন্য কিছু না কিছু আনেন।
IMG_2688
৯০ থেকে ৯৬ ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারণে পরিবার থেকে দূরে ছিলাম। বন্ধনটা ক্যামন জেনো আলগা হয়ে গেলো। মনে আছে ছোটবেলায় মার শাড়ি জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম। আরেকটু বড় হলে কাথা। যেহেতু মা চাকুরি করতেন তাই রাতের পড়া শাড়ি বা পুরানো পড়া শাড়ি আমার জন্য রেখে যেতেন। মায়ের গায়ের গন্ধ মাখানো শাড়ি জড়িয়ে আমি নিবিড় ঘুম ঘুমাতাম।
কলেজে ৬ বছরে বাবা-মার জন্য কাদিঁনি।

আমি যখন গর্ভে ছিলাম তখন মা শিক্ষকতা করতেন বলে নাকি বাবা প্রচুর বই পড়তেন বলে আমিও কেমন করে জেনো পড়ুয়া হয়ে গেলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে পড়ার বই পড়ে তো আর কেউ পড়ুয়া হয় না হয় অদরকারে পড়া বই পড়ে। স্বভাবতই আব্বা-আম্মা এটা পছন্দ করতেন না। কারণ আগে পড়াশুনায় ভালো হলেও ক্যাডেট কলেজে গিয়ে কোনভাবেই ভালো করতে পারছিলাম না। সত্যি বলতে কি ক্যাডেট কলেজ আমার জন্য ছিলো না। বাবা-মা আমাকে ক্যাডেট কলেজে দিয়ে ভীষণ ভুল করেন। আমার ছোটভাই ছিলো দুষ্ট প্রকৃতির। বাবা-মার উচিত ছিলো আমার বদলে আমার ভাইকে দিয়ে ক্যাডেট কলেজে ট্রাই করা। আব্বার হাইট কম ছিলো বলে আর্মিতে পরীক্ষা দিতে পারেন নি। তাই নিজের ব্যার্থতা আমাকে দিয়ে চেষ্টা করলেন। কিন্তু নরম মনের আমাকে দিয়ে যে সামরিক বাহিনীর ওফিসার হওয়া সম্ভব নয় এটা তারা বুঝলেন না।

আর্মিতে চান্স না পাওয়ায় আব্বা-আম্মা দুঃখ পান।
২০০৯ এ এসে বিডিআর বিদ্রোহ হবার পর আম্মার দুঃখ ঘোচে। তার ধারণা হয় আমি যেহেতু বোকা সোকা ধরণের তাই আর্মিতে গেলে ২০০৯ এ আমি পিলখানাতেই থাকতাম। আর নির্মমভাবে মারা যেতাম।

১লা নভেম্বর সকাল ২ টা ১০ মিনিটের দিকে আম্মা মারা গেলেন।
ছোটভাই পাশেই ছিলো। আম্মার শরীরের অবনতি হতে থাকায় সে সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়া থেকে বাঙলাদেশে চলে যায়।
আমার যাওয়া হলো না।
ফুপা (চাচা) মেসেজ দিয়ে জানালেন মা মারা গেছেন। ছোটভাই ফোন দিলো।

১ তারিখেই জুম্মার পর নানীর পাশে তার বড় মেয়ের কবর দেয়া হলো।
রাতে আব্বাকে ফোন দিলাম। বললেন, চিরুনি খুঁজে পাচ্ছেন না। কবরে নাকি দুটা পিপড়া ছিলো। মাকে কামড়াবে তাই সজীব (ছোটভাই) পিপড়া মারতে গেলে নাকি পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।
আমার খারাপ লাগছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করলেন বাবা। তারপর নিজেই সিদ্ধান্তে পৌছঁলেন যে আমার খারাপ লাগছে না।
নানা বাড়ির কাছেই মাদ্রাসা। ঐখানে কয়বার কোরান খতম দেয়া হইছে বললেন। সাথে এও বললেন, তুই তো নাস্তিক।

আসলেই তো আমি নাস্তিক।
মানুষ মারা যায়। ফেসবুকে জানি। জেনে ইন্না লিল্লাহ বলি।
কবর দেখলে বলি, আসসালামু আলাইকা ইয়া আহলাল কুবুরে (মিনাল মুসলেমিন)

২০০২ এ দাদীর কবরের সামনে দাড়িয়ে দাদীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি।
২০০৫ এ আমার স্ত্রীর সেজ ভাই মারা গেলে তাকে দাফন করতে নরসিংদি শ্রীনগর গেলাম। কবর দিয়ে এসে মাথা গরম হয়ে গেলো। একটা ছেলেকে ডেকে বললাম কল চাপতে, আমি কলের নিচে মাথা দিয়ে রাখলাম মিনিট পাচেক।

আমার জীবনে প্রথম মৃত্যু অনুভব করি চার বছর বয়সে। নানাবাড়িতে ছিলাম তখন। এক লোক কে ড্যাগার বিদ্ধ করে মারা হয়। মধ্যের দুয়ারের জব্বার মামার উঠানে লাশ এনে রাখা হয় রাতের বেলায়। দেখ্তে যেতে চাইলেও বাবা নিয়ে যান নি ভয় পাবো বলে।
এরপর ছয় বছর বয়সে ছোট দাদী (দাদীর ছোটবোন আর দাদার ছোটভাইএর স্ত্রী, এই দাদা যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যান।) চলে গেলেন। দাদী সম্পর্কে এইটা মনে আছে যে তিনি আমাদের দুই ভাইকে খুব আদর করতেন। কদম গাছের নিচে দাদীর কবর দেখলাম।
আমার আট নয় বছর বয়সে নানা মারা যান। তখন বন্যা। আম্মা ঢাকায় ছিলেন। আব্বা বরিশাল গেছেন। আম্মা সন্ধ্যায় আসার পর জানানো হলো নানার শরীর খুব খারাপ, ফোন এসেছিলো। ছোট ফুফু, আমাদের দুই কে নিয়ে আম্মা রওয়ানা হলেন টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে। মির্জাপুর না কোন পর্যন্ত গিয়ে রাস্তা ভাঙ্গা বা ডুবে গেছে। সেখান থেকে নৌকায় যাওয়া হলো। পথে একবার নৌকা ডোবে ডোবে অবস্থা। আম্মা আমাদের দুই ভাইএর একজনকে নিলেন আর আরেকজনকে ছোটফুফু। নৌকারোহীদের চিৎকারে আশ্পাশের দ্বীপের মতো জেগে থাকা বাড়ি থেকে আলো জ্বলে উঠলো। না, সে যাত্রা ডুবিনি। টাঙ্গাইল শহরের শিবনাথপাড়া পৌছতেই আম্মা আগরবাতির গন্ধ পেয়ে কেদে দৌড় দিলেন। দীর্ঘদেহী নানাকে একটা সিঙ্গেল খাটে শুইয়ে রাখা হয়েছে। আমি কিছুক্ষণ পর পর নানার মুখ দেখে আসছিলাম। নানাকে আমি আল্লাহ ভাবতাম। আমি দেখলাম আমার আল্লাহ নিথর শুয়ে আছেন। পরদিন সকালে গোসল দেয়ার সময় আমার মামাতো বোন সীমু আপা কাঁদলেন কারণ ঐখানে তার বাগান আর সেই বাগানের ফুল নষ্ট হচ্ছে।
নানা মারা যাবার আগে নাকি আমাদের দুই ভাইএর কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
আমার মাও নাকি মারা যাবার আগে আমার দুই মেয়ের কথা বলেছেন।

গতবছর আমার একজন প্রিয় মানুষ মারা গেলেন। খালু, মোশাররফ হোসেন,পূবালী ব্যাংকের এজিএম ছিলেন। খুব পাকিস্থান ভক্ত ছিলেন। সারাক্ষণ পিটিভি আর অন্যান্য পাকিস্থানের চ্যানেল দেখ্তেন। ঈদে কাবুলি বানাতেন। ইচ্ছা ছিলো পাকিস্থান যাবেন। খালুর বাসাতেই আমি আইয়ুব খানের ফ্রেন্ডস, নট মাষ্টারস বইটা পড়ি, আর আবুল মনসুর আহমদের আমার রাজনীতির ৫০ বছর। তার বাসায় এক সময় কায়েদে আযমের ছবি ও ঝুলতো। একবার আমি খালুকে জিজ্ঞাসা করলাম দুজনের মধ্যে কে ভালো; বেনজির না নেওয়াজ শরীফ? খালাতো বোনেরে খিক খিক করে হেসে উঠলো, কারণ পাকিস্থানের কেউ খারাপ হতে পারে না।
অনেকের কাছে খুব অবাক লাগতে পারে কি করে আমি এরকম পাকিস্থান পছন্দ পাবলিককে পছন্দ করতে পারি। সত্যি হলো, আসলেই পারি। কারণ খালু নিপাট ভালো মানুষ ছিলেন। আমি জীবনে যতো বড় মনের মানুষ দেখেছি তাদের অন্যতম খালু। খালু আম্মাকে খুব সম্মান করতেন।

কেমন ছিলেন আম্মা? আম্মাও খুব ভালো মানুষ ছিলেন। বেশি মাত্রায় সরল ছিলেন। পীর-ফকির নামক জঘন্য জিনিসে বিশ্বাস করতেন বলে আমি খুব খোচাতাম আম্মাকে। আম্মা খুব দ্রুত হাটঁতো। আমি বলতাম এতো দ্রুত হাটো ক্যানো? আম্মা হাসতো। কিন্তু আম্মা কখনোই আস্তে হাটতে পারতো না।

বৌ বলল সূরা ইয়াসীন পড়ো।
রাতে কি মনে করে পড়লাম। বুঝলাম না এই সূরার এতো মাহাত্ম্য কিসের!
মার জন্য দোয়া করেছি আল্লাহর কাছে?
না করি নাই। যারে মানি না, যে নাই তার কাছে দোয়া কি হবে!!!

সন্ধ্যা বেলায় এক ছোটভাই ফোন দিলো। জিজ্ঞাসা করলো যাবো কিনা দেশে। বললাম উপায় নাই। জিজ্ঞাসা করলো কখন দাফন হইছে? বললাম মাগরিবের আগে। সে জানালো জুম্মার নামাযের আগে দাফন করলে নাকি গোর আজাব হয় না।

কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে মাকে ভালোবাসতাম কিনা বা ভালোবাসি কিনা, তবে কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই উত্তর দিতে পারবো, হ্যা বাসি।
কিন্তু কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করেছি না তাহলেও চিন্তাভাবনা না করেই উত্তর দিতে পারবো, না পারি নাই, করি নাই। আমার আরো বছর দশেক দরকার ছিলো। ৬৭-৬৮ বছর বয়সে মা চলে গেলেন। আমরা দুই ভাই, আত্মীয় স্বজন অনেক দুঃখ বেদনা পাচ্ছি, পাবো। কিন্তু সত্যি সত্যি একা হয়ে গেলেন বাবা।

পুনশ্চঃ মা খুব ভালো গান করতেন। ভালো গাইতেন ভুল সবি ভুল
ভুল সবি ভুল

 

ছোটভাই পরাগ আমার মাকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছে। কপি-পেষ্ট করে দিলাম।
‘সজীব ভাইয়ার আম্মু’
————————————————
আন্টি আর নেই।
আজও তাঁর পুরো নাম আমি জানিনা; সেটার কোন প্রয়োজনও নেই। ‘আন্টি’; এই নামেই একটা মুখ আমার মনে পড়ে বেশ ভালভাবেই। গোলগাল, শ্যামলা একটু কোঁকড়া প্রকৃতির চুল, হাসি দিলে দাঁতগুলো বের হয়ে গাল দুটোকে টেনিস বলের মত গল বানিয়ে ফেলত তাঁর। এক সরল মনের মানুষ। আমার জীবনে ‘কাস্টার্ড’ নামের সুস্বাদু খাবারটি তাঁর হাতেই প্রথম খেয়েছিলাম থানাকাউন্সিল কোয়াটারে থাকাকালীন সময়ে; আমার সোনালী শৈশবে, সেই শৈশবে যখন আমি ছোট ছিলাম। তখন আন্টির নাম ছিল ‘সজীব ভাইয়ার আম্মু’। নামটা ‘রাজীব ভাইয়ার আম্মুও’ হতে পারত কিন্তু সজীব ভাইয়া ছোট ও ভীষণ দুষ্টু থাকায় সেটা হয়ে ওঠেনি। আন্টি সবসময়ই আমার ভাল চাইতেন। ক্রিকেট বেশি খেললে আমার ত্বক নষ্ট হবে, পড়ার ক্ষতি হবে এটি আমার আম্মুর পর তিনিও বুঝতেন। কত বকাও খেয়েছি আন্টির কাছে; তার ওপর আমি ছিলাম আঙ্কেলের ছাত্র। তাই আমার প্রতি খেয়াল ছিল তাঁর বরাবরই। আজ হঠাৎই শুনি …

তারপর একদিন থানাকাউন্সিল ছেড়ে গেলাম। সজীব ভাইয়া অস্ট্রেলিয়া, রাজীব ভাইয়া ইংল্যান্ড চলে গেলেন। রাজীব ভাইয়ার কাছ থেকে কবুতর কিনেছিলাম বাকিতে, দাম আজও দেয়া হয়নি। তার অনেকদিনপর আমিও অস্ট্রেলিয়ায় এলাম।একবার আম্মুর কাছ থেকে শুনলাম আন্টি অসুস্থ, তারপর সুস্থও হলেন। এরপর সজীব ভাইয়ার সাথে দেখা হলো, কথা হলো। আন্টি সজীব ভাইয়াকে আমার কথা জিজ্ঞেস করতেন কিন্তু এখন আর করবেন না কারণ ‘সজীব ভাইয়ার আম্মু’ আর নেই! আমাদের আন্টি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ছোট্ট পরাগ এখন বেশ বড়, এখনও ক্রিকেট খেলে, ভীষণ বেখেয়ালি আজও যদিও তেমন দুষ্টু আর নেই কিন্তু এই হঠাৎ বেড়ে ওঠা পরাগকে আন্টির দেখা হলনা। এই মুহূর্তে আম্মু-আব্বুর কথা ভীষণ মনে পড়ছে; মনে পড়ছে থানাকাউন্সিল, পুকুর, মসজিদ, সারিসারি কোয়াটার আর মনে পড়ছে বিডিপি অফিসের সামনে দাড়িয়ে থাকা আন্টির মুখ।
প্রকৃতির নিয়ম যদি ভেঙে দিতে পারতাম তবে বেশ হতো … তা যে হবেনা; হয়না।

আন্টি ভাল থাকবেন, আমি পরাগ; আপনাদের পরাগ; সেই দুষ্ট পরাগ…
আমার ছোটভাই মাকে নিয়ে লিখেছে। কপি-পেষ্ট করে দিলাম।

আমার আম্মাঃ আম্মা (সামছুন নাহার বিউটি) ২৮শে অক্টোবর ১৯৪৮ইং টাংগাইল জেলার পটল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বিন্দু বাসিনী গভঃ বালিকা বিদ্যালয়, টাংগাইল থেকে এস,এস,সি পাস, ১৯৬৬ সালে কুমুদিনী কলেজ টাংগাইল থেকে এইচ,এস,সি পাস ও ১৯৬৮ সালে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে মাষ্টারস ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭৪ সালে ব্যাপ্টিষ্ট মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বরিশাল) সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে এবং ১৯৭৮ পর্যন্ত সুনামের সহিত তার দ্বায়িত্ব পালন করেন। তারপর ১৯৭৯ সালে উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নায়ন অফিসার হিসাবে পল্লী উন্নায়ন বোর্ডে (তৎকালীন আই,আর,ডি,পি) যোগদান করেন। ১৯৮৯সালে বাংলাদেশের পল্লী মানুষের জীবন উন্নায়নে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রিয় পুরস্কার “জাতীয় পুরস্কার” গ্রহণ করেন। ২০০৫সালে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

আম্মা ১লা নভেম্বর ২০১৩ সালে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আম্মা অসুস্থ থাকা অবস্থা থেকে ইন্তেকাল পরবর্তী আমার আত্মীয়-সজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাংখীরা যারা সকলে আমার আম্মার জন্য দোয়া ও শুভকামনা করেছেন ও করছেন তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। অনুগ্রহ করে আমার আম্মার আত্মার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

1458525_10201270397655520_994453678_n

২,৩০৪ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “মা, নেই”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    কিছু লেখা শুধু পড়েই যেতে হয়। কিছু বলার থাকেনা। বেশখানিকটা খারাপ লাগছে। হয়তো আপনার মায়ের জন্য নয়। হয়তো মাকে ছেড়ে দূরে আছি দেখে অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে খারাপ লাগছে।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    খবরটা প্রথম দেখলাম ক্যাডেট কলেজ ব্লগ গ্রুপে।
    খুব খারাপ লাগছিল তখন থেকেই।
    রাজীব ভাই হয়তো আল্লাহ্‌- খোদায় বিশ্বাস করেন না; আপনার মা নিশ্চয়ই করতেন।
    সেই হিসেবেই দোয়া করি আল্লাহ্‌ যেন তাঁকে জান্নাত দান করেন।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. তাহমিনা শবনম (৮৪-৯০)

    মা না পৃথিবীতে না থাকলেও তোমাতে আছে।
    মায়েরা কেমন করে যেন থেকে যান।
    আমি বিশ্বাস করি।
    ভালো থেকো।


    আমি চোখ মেললুম আকাশে
    জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      ভালো কথা বলছেন আপা, মাঝে মাঝে তাই রক্তে গুহাবাসীদের টান টের পাই।

      কিন্তু আপনি তো আপা দুইটা লেখা দিয়া ডুব দিলেন। আবার ভেসে ওঠেন।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    কিছু কিছু অনুভূতি মিলে গেল অনেকাংশে। প্রার্থনা হ্যতো কেবলই সান্ত্বনার জন্য কিন্তু আমরা মানুষরা নিজেদের ক্ষুদ্রত্বের কাছে এতটাই অস হায় যে সান্তনাই সম্বল হয়ে যায় দুর্বল মুহূর্তে।

    যেখানেই থাকুন আন্টি ভালো থাকুন। ভালো থাকুন না ফেরার দেশে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।