এইভাবে মৃত্যু আমাদের কারো কাম্য নয়

মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি।

মন আর দেহ একে অপরের পরিপূরক। দুইটাই যখন ঠিক থাকে তখন সব ঠিক আর একটু দিক বিদিক হলেই আমাদের ঠেলা বের হয়ে যায়। শরীর একটু বিদিক হলে শরীরের ডাক্তারের কাছে দৌড়াই। মনের অসুখ হলে অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মনের অসুখ এমনি জিনিস যে তা লুকাতে ব্যাস্ত আমরা অষ্ট প্রহর।

মনের অসুখ মনে থাকুক। ফ্রয়েড সাহেব তুমি আপাতত ঘুমাও। আমি ভয়ানক মানসিক রোগী হয়েও সমাজে সুস্থ ব্যাক্তির মতো অনায়াসে ঘুরে বেড়াতে পারবো, ফুলের রেণু বাতাসে উড়িয়ে দিতে পারবো, রিকশা ভাড়া দিয়ে রিকশাওয়ালার সাথে কেচাল করতে পারবো, সুন্দরী নিতম্বিনী আর উন্নতবক্ষা কে দেখে সিটি বাজিয়ে উঠতে পারবো, বন্ধুদের সাথে গাজায় দম দিয়ে বিগত জন্মের কোন এক বেদেনীর চুলের ঘ্রাণ নিতে পারবো, বৃষ্টির দিনে পুকুরে নেমে যেতে পারবো প্রেমিকার হাত ধরে।

কিন্তু শরীরের অসুখ! ওরে তোরে লুকাই কি করে রে! আমারে যে যেতেই হবে বৈদ্যর কাছে।

ঘটনা ১ 9237_10201156757695720_937235698_n

ভবিষ্যতে কেউ যদি ঢাকা এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তাহলে দয়া করে একটু ভেবে চিন্তে আসবেন। এই হাসপাতাল হাসপাতাল না, এটা চিকিৎসার নামে একটা সম্পূর্ণ অনৈতিক, বাণিজ্যিক ধান্দা বাজির একটা বিশাল দালান। আমার স্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে, ভয় পাইয়ে দিয়ে তারা আমার সম্পূর্ণ সুস্থ শিশুকে এক মাস আগে জন্ম দেয়ালো কোনো কারণ ছাড়াই। বলল বাচ্চার ওজন অনেক বেশি, আর আগে জন্ম হলে তাদের জন্য ম্যানেজ করা সহজ হবে। জন্মের পর দেখা গেল বাচ্চার ওজন অনেক কম এবং তাকে ইনকিউবেটরে রাখতে হবে। পরে বুঝলাম “ম্যানেজ” মানে হল শুধু মাত্র বিল বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে আগে বাচ্চা জন্ম দেয়ালো। একদিনের ভুমিষ্ট বাচ্চাকে এন্টিবায়োটিক, অক্সিজেন ইত্যাদি দিয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করল, বলল ইনফেকশন হতে পারে, ব্লাড কালচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৭২ ঘণ্টা, পুরা সময় বাচ্চা ইন্টেন্সিভ কেয়ারে থাকবে। ৭২ ঘন্টা পর রিপোর্ট আসলো কোনো ইনফেকশন নাই। কেন একদিনের বাচ্চাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে তিনদিন আইসিউ তে রাখা হল? কোনো উত্তর নাই। ফাইল দেখতে চাইলে বলল রিলিজের আগে দেখানোর নিয়ম নাই। পুরো নাটকটি তাদের সাজানো। তারাই প্রথমে আমাদেরকে আগাম ডেলিভারী দিতে বাধ্য করল এই বলে বাচ্চার ওজন অতিরিক্ত, যাতে করে কিছু পয়সা অতিরিক্ত খসাতে পারে। কেনো তারা একটা বাচ্চার জীবন বিষিয়ে তুলে এই কাজটা করল? একবার ভাবলাম আমি ভুল করছি। পরে মেটারনীটি ডিপার্টমেন্টে দেখলাম তারা এই কাজ শতকরা ৬০% রোগীকে করাচ্ছে। যেই ডিপার্টমেন্ট সবচেয়ে হাসি খুশির জায়গা হওয়ার কথা সেখানে বিরাজ করছে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। প্রত্যেক নতুন বাবা মার চোখে ব্যপক আতংক। অন্য একজনের সাথে পরিচিত হলাম, বল্লেন তার ভাইকে অস্ত্রপচার করতে প্রাথমিক ভাবে অসফল হয় হাসপাতাল, পরে ভুল স্বীকার করে আবার করে। কিন্তু বিল ঠিকই ডাবল করছে। এখানে এমনও অভিযোগ আছে মৃত রোগি আনলে তারা তাকে দুইদিন ইন্টেন্সিভ কেয়ারে রেখে দেয়, এবং এর প্রমানও পাওয়া গেছে। পরে একটু অনুসন্ধান করতে বার্ষিক রিটার্ণ দেখলাম, চক্ষু চড়ক গাছ। তারা ২০১১ সালেই মুনাফা করে ২৬ কোটি টাকা! আয়ের শতকরা ৪০% আসে গাইনি ও অবস্ট্রেট্রিকস ডিপার্টমেন্ট থেকে! সুতরাং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এপোলো হাসপাতালে যারা আসবেন তারা দয়া করে ভেবেচিন্তে আসবেন। এই কসাইখানা ব্যবসা চট্টগ্রামে যাওয়ার পায়তারা করছে এবং স্বল্প মূল্যে সিডিএ থেকে জমিও কিনেছে মানবিক প্রতিষ্ঠান নাম করে। এই এপোলো হাসপাতাল হল ব্যবসায়ী এম পি টিপু মুন্সি, শান্তা গ্রুপের মালিক, আর লংকা বাংলা ফাইনান্সের যৌথ প্রযোজনার এক ধান্দা বাজির দোকান যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম এস টি এস হোল্ডিং লিঃ তারা ভারতের তৃতীয় শ্রেনীর কিছু ডাক্তার এপোলো গ্রুপের সাথে যৌথ চুক্তির আওতায় এনে জনগণের সাথে ভাওতাবাজির এক ব্যাপক আয়োজন করেছে। ভারতে এই ডাক্তারগুলোকে কেউ চেনা দুরে থাক চাকরি ও দেবেনা। দূর্ভাগ্যের বিষয়,এই ব্যপক লূটতরাজ দেখার, নিয়ন্ত্রন করার সংস্থা (বিএমডিসি, ডীজি হেলথ) একেবারই নিস্ক্রিয়। তাই ঢাকা এপোলো হাসপাতালে আসার আগে সুচিন্তিত স্বিদ্ধান্ত নিন। – চৌধুরী মুহিবুল হাসান।


ঘটনা ২ 602067_10201193936465166_457277766_n

দিনকয়েক আগে এপোলো হাসপাতাল নিয়ে পোষ্ট শেয়ার করেছিলাম। পোষ্ট টির শেয়ার সংখা আর লাইক, কমেন্ট দেখে সত্যি হতবাক হয়েছিলাম।
আট বছর যাবৎ দেশের বাইরে থাকি। বিভিন্ন কারণে দেশে যাওয়া হয়নি এর মধ্যে। তথাকথিত হোম সিক নই কারণ বুকের মাঝে থাকে অদৃশ্য লাল-সবুজ পতাকা।

দেশের ভালো কিছু হলে আশান্বিত হই, খারাপ কিছুতে দুঃখিত হই। ফেসবুকে স্ট্যাটাস আর ব্লগ লিখে সেই ভালো লাগা মন্দ লাগা জানাই যতজনকে পারি।

ছোটভাই মাশরুফ পুলিশে আছে এ এস পি। ফেসবুকে পেইজ খুলেছে উত্তরা পুলিশ কমিশনার নামে যাতে যে কেউ চাইলেই তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন। অলরেডি নিউজ চ্যানেলেও দেখেছেন হয়তো।
কিছু হলেই আমরা পুলিশকে কষে দুটা গালি দিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করি। কিন্তু নিজেদের কি প্রশ্ন করে দেখেছি আমরা নিজেরা কতোটা সৎ?

এই ডাক্তারদের কথাই বলি না কেনো!
শিক্ষক আমাদের শিক্ষা দিবেন, সেই সাথে নীতি।
আমি নিশ্চিত পরিমল এর ঘটনার পর অনেক শিক্ষকই ঐ রাতে ঠিকমতো খেতে পারেননি।
আমি নিজে আমার অনেক শিক্ষককে দেখি দেবতা হিসাবে।

একই ভাবে ডাক্তার চিকিৎসা করবেন, জীবন দিবেন।
আমি হয়তো খুবই ভাগ্যবান। এখন পর্যন্ত কোন বাজে ডাক্তার, শিক্ষক, পুলিশের সাথে মোকাবেলা করতে হয়নি।

আমার পরিচিত ডাক্তাররা ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক করছেন। গরীবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করছেন। দিনকয়েক আগে ছোটভাই আতিকের কাহিনী শুনলাম। আতিক পেশায় ডাক্তার। বদলি হয়ে নতুন জায়গায় এসেছে। এখনো তার পুরানো জায়গা থেকে রোগীদের ফোন আসছে। তারা এখনো ওর উপর ভরসা করে।

কিন্তু আজকে পেলাম একটু ভিন্ন খবর। শিওর নই শেয়ার করা ঠিক হবে কিনা???
কেননা রোগী এখনো হাসপাতালে।
ডাক্তারদের কসাই ভাবতে খারাপ লাগে, কারণ তারা কাটাকুটি করেন আমাদের সুস্থ্য করে তোলার জন্য। তবু বলা যায় না কি না আবার করে ফেলে রোগীকে???
ভরসা একটাই – আপনারা। হ্যা, সত্যি বলছি আপনারা। শেয়ার করুন এমন ভাবে যাতে দোষী ব্যাক্তিদের পরিবার পরিজন এটা দেখে। এরপর তাদের মুখের উপর বলে,
“ছি।”

ভাই, আমার এক চাচাতো বোন, বক্ষ ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি আছে। 
ওর টি বি এবং ফুসফুসে পানির সমস্যা। ভর্তির পর পরই ডাক্তার একবার ও টি তে নিয়ে ওপেন এর পর জানালো যে ভিতরে পর্দা পড়েছে, এখন অপারেশন করা যাবে না, আমি জানিনা তারা আগেই কেন ভালভাবে diagnosis না করে এই কাজটা করতে গেল।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমার এই চাচা চাচী দুজনেই মারা গেছেন। এই বোনটা বরিশাল orphanage এ থাকে।

এখানে হসপিটালে ভর্তির পর এখানকার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের লোক তাকে সব সময় তিরস্কার করে যে,
“তুই এতিম মেয়ে এত ভাল ভাবে থাকিস কেন? এতিমের মত থাকবি।”
আমাদের বলে কিছু টেস্ট এর বিল আপনারা দেন, যখন বলা হল যে বিল তো প্রথম আমরাই দেই, আপনারা পরে অধিদপ্তরে বিল করেন।
তখন এরা ক্ষেপে যায়, ডাক্তার নার্স এরা বলে,
“তুই কেমন এতিম, তোর অবস্থা তো অনেক ভালো,
তোর চিকিৎসা হবেনা, তুই এখানে ধুকে ধুকে মরবি।”

ভাই, নার্স আর সমাজসেবা কর্মীদের ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম তাই বলে ডাক্তাররাও?

নিজেকে খুবই অসহায় মনে হচ্ছে, এরা কি জীবনে প্রফেশনাল স্টাডির বাইরে আর ভালো কিছু শেখেনি? নাকি এদের পরিবারে শেখানোর মতো কেউ ছিলোনা ?
আমার বোনের চেয়েও তো তাহলে বড় এতিম ওরা, এবং সেটা অনেক আগে থেকেই, এটা ওরা কবে বুঝবে ?
ভাই, আপনার পরিচিত কেউ এদিকে থাকলে একটু দেখবেন ? (জনৈক বড়ভাই)

——————

আমরা অনেকেই হয়তো ভুলে গেছি আমাদের নবী এতীম ছিলেন!!!
(ফেবু পোষ্ট লিঙ্ক )

ঘটনা ৩ 1377298_10201234909889476_1946454058_n

আমার মার ৭/৮ বছর ধরে ক্যান্সার। মায়ের চিকিৎসা করতে বাংলাদেশের ৪/৫ তারকা মানের হাসপাতালগুলোও বাদ যায়নি, সব হাসপাতালই আমার ঘোরা হয়ে গেছে।
অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতালের একটা কাহিনী শেয়ার করি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ভারতীয় ডাক্তার শান্তনু চৌধুরী বললেন, মায়ের ফুসফুসে পানি জমেছে। ছোটখাটো একটা অপারেশনের মতো লাগবে। ঠিক অপারেশন নয়, সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে ফ্লুইড বের করা হবে। একদিনের মামলা। হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে একদিনের জন্য।
পরদিন মাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করালাম। ভাবলাম, একদিনের মামলা যেহেতু, একটু আরামদায়ক একটি কেবিনই নেই। একদিনের ভাড়া ৭ হাজার টাকা। একটা টিভি আছে। আছে নার্সদের দৌড়াদৌড়ি। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ আর এশিয়ার বড় শহরগুলো ঘুরে বেড়ানো মা রুমটা দেখে বললেন, আসলেইতো ফাইভ স্টার ফ্যাসিলিটি।
এরপর শুরু হলো আমাদের অপারেশনের জন্য অপেক্ষা। দুপুর ১২টায় অপারেশন হওয়ার কথা। বিকেল ৩টার দিকে ডাক্তার এলেন। পিঠ দিয়ে সূচ ঢুকানোর ব্যাথা মা সহ্য করতে পারছেন না, তাই প্রক্রিয়া স্থগিত করলেন। এক তরুণী ডাক্তার আমাকে ডেকে বললেন, আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার যন্ত্রটি দিয়ে দেখে দেখে সূচ দিতে হবে। মেশিনটা আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টাও দেখি মেশিনের খবর নাই। রাত ৮টার দিকে জানালো, আজ মেশিন আনা যাচ্ছে না, দোতলায় অনেক প্যাশেন্ট। কাল দুপুরে অপারেশন হবে। স্মার্ট তরুণী ডাক্তার জানালেন, তারা রোগীর সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন, তাই দেরি হচ্ছে। 
বুঝলাম বহুজাতিক ফাপড়ে পড়েছি। মানে আগামীকালের জন্য আরো ৭ হাজার টাকা কেবিনভাড়া গুনতে হবে। পাশের কেবিনের রোগীর অ্যাটেন্ডেন্টরা জানালেন, তারা ৪ দিন ধরে আছেন। একই কেস, একদিনের কথা বলে ৪ দিন। 
৯টার দিকে ছোটভাইকে মায়ের কাছে রেখে বাসায় যাওয়ার আগে মাথায় একটু বুদ্ধি এলো। ডিউটি ডক্টরের রূমে ঢুকলাম। ওই তরুণী ডাক্তারকে আমার ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললাম, কাল যদি অপারেশন না হয়, তাহলে আমি মাকে নিয়ে যাবো। আগামীকালের কেবিনভাড়াতো দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আরেকটা কথা, কাল আমি ক্যামেরাসহ আসছি। জীবনে প্রথম ও শেষবারের মতো ক্যারিয়ারের ক্ষমতা প্রয়োগ করলাম।
বাসায় পৌছানোর আগেই মা ফোন দিলো, কি করছিস তুই? জিগাইলাম, কেন? বলল, হাসপাতালের সব বড় কর্মকর্তারা কেবিনে হাজির। ক্ষমাপ্রার্থনার বন্য বইছে। তারা বলছে, যে করেই হোক কাল সকাল ১০টার মধ্যেই সব হয়ে যাবে। রাতে, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে আমাকে ফোন দিলেন এক কর্মকর্তা। ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেন। ক্যামেরা না আনার জন্য অনুরোধ করলেন।
পরদিন দুপুর ১২টার দিকে মাকে নিয়ে বিজয়ীর বেশে বাড়ি ফিরলাম। পাশের কেবিনের অ্যাটেন্ডেন্টরা তখনও ঘুরছেন। তাদের অপারেশন সেদিনও হয়নি। – সা ই রফিক

(ফেবু পোষ্ট লিঙ্ক )

ঘটনা ৪ 1380533_10201287084553810_644983657_n

চিকিৎসাসেবায় অবহেলা আর কত?

সম্প্রতি আমার একজন খুব কাছের মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তাকে দ্রুত একটি দামি হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি সংজ্ঞা হারান। যখন তাকে আইসিইউতে নেয়া হলো, তখন তার নাড়ির স্পন্দন (হার্টবিট) পাওয়া যাচ্ছিল না। চিকিৎসকরা তার বুকে সিপিআর দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনেন। তবে তার মস্তিষ্ক একেবারেই কাজ করছিল না; কোনো সাড়াশব্দ নেই তার। এভাবেই তিনি কুড়ি দিন কাটালেন।এর আগে পনেরো দিনের মাথায় তার পিঠে একটা বড় ক্ষত দেখা দিল, যাকে ইংরেজিতে ‘বেডসোর’ বলা হয়। কেউ একইভাবে এক জায়গায় নড়াচড়াহীন শুয়ে থাকলে রক্তচলাচলের অভাবে এই বেডসোর হয়। ত্রিশ দিন পর যখন তার মস্তিষ্ক ফিরে আসার চেষ্টা করছিল, তখন তার অন্য অঙ্গগুলো- যেমন কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এক এক করে মরে যাচ্ছিল। বেডসোর থেকে যে ক্ষতের জন্ম হয়েছিল, সে কারণেই এই অঙ্গগুলো আর কাজ করছিল না। শেষ পর্যন্ত তিনি মারা গেলেন।

আর একটি ঘটনার কথা বলি। আমার এক চাচাশ্বশুরের একটি কিডনি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলার দরকার ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অস্ত্রোপচার টেবিলে। যে কিডনিতে সমস্যা ছিল, তার উল্টো দিকের কিডনি কাটা শুরু করলেন চিকিৎসক। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসক তার ভুল বুঝতে পারেন।

আমাদের দেশের চিকিৎসকদের অবহেলার বিষয়টি আশা করি এই দুটো উদাহরণ থেকে বুঝে নেয়া সম্ভব। এই জমানায় বেডসোর কঠিন কোনো সমস্যা নয়। বেডসোর ঠেকাতে এখন নানা ধরনের এয়ার-ম্যাট্রেস পাওয়া যায়। কে জানে, হয়তো এই বেডসোরটি না হলে আমার ওই কাছের মানুষটি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতেন। এটা ঠিক যে, তার মস্তিষ্কের অবস্থা খুবই সঙ্গীন ছিল। ফলে আমরা ভাগ্যকে মেনে নিই। কিন্তু যে চিকিৎসক উল্টো দিকের কিডনি কাটতে চলেছিলেন, তাকে কখনো কি মাফ করা যায়?

চিকিৎসকের ভুলের ঘটনা বাংলাদেশে যে কত, তার হিসাব মেলানো ভার। গুগলে গিয়ে শুধু লিখুন ‘চিকিৎসকের অবহেলা’, দেখবেন গণমাধ্যমে হাজার হাজার খবরের লিঙ্ক; ভূরি ভূরি খবর। এ দেশে চিকিৎসকের ভুলে এত এত মানুষ ক্ষতগ্রস্ত হয়! কিন্তু পরিতাপের বিষয়, দোষী চিকিৎসকের কিছু হয় না; কেউ তাদের কিছু বলে না; কেউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিছু বলে না। কখনো কখনো ক্ষুব্ধ স্বজনরা হয়তো হাসপাতালে চড়াও হয়; তারপর আর কিছু হয় না। দুদিন পর সবাই তা ভুলে যায়। কখনো কেউ আদালতের শরণাপন্ন হয় বটে, কিন্তু সেগুলোও খুব একটা এগোতে পারে বলে মনে হয় না। আমাদের গণমাধ্যমে এ নিয়ে কোনো ফলোআপ প্রতিবেদন পাওয়া যায় না।

ভুল চিকিৎসার শিকার বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিপূরণের কোনো অভিযোগ ছাড়াই চুপচাপ বাড়ি ফিরে যান। কোনো ছাত্রছাত্রী ভুল চিকিৎসায় মারা গেলে তাদের বন্ধুবান্ধব হাসপাতালে কিছু বিক্ষোভ করেন, তারপর সব চুপ। এ ছাড়া, ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে এ দেশে কোনো অনুসন্ধান হয় না, অভিযোগ হয় না, ক্ষতিপূরণের নজির খুব একটা নেই।

আসলে ‘মেডিকেল ম্যালপ্রাকটিস’ বা ‘চিকিৎসায় অবহেলা’র বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ সচেতন বা সোচ্চার নয়। এর কারণ, তারা চিকিৎসায় অবহেলা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন বলছে, “স্বাস্থ্যসেবাদানকারী যখন রুগীকে চিকিৎসা দেয়ার সময় চিকিৎসার সাধারণ মাপকাঠি থেকে সরে যান, তখনই অবহেলার ঘটনা ঘটে। স্বাভাবিক চিকিৎসা না দিলে বুঝতে হবে অবহেলা হয়েছে।”

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কথা বিবেচনা করলে এটা বলতে দ্বিধা হয় না, আমাদের হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা অহরহ ভুল কিংবা অবহেলা করছেন। আবার এটাও বোঝা যায়, অবহেলা করাটা যে অপরাধ, তা আমলেই নেন না তারা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে, চিকিৎসাসেবা দিয়ে– মানুষ মরুক আর বাঁচুক– তারা অনেক বড় উপকার করছেন; চিকিৎসায় ভুল হলে তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। দেশের চিকিৎসকরা রুগীদের কাছ থেকে কত টাকা নিতে পারেন, সেটাই যেন মুখ্য; কত ওষুধ দিতে পারেন, তারই যেন প্রতিযোগিতা চলে; হাসপাতালগুলো মৃত মানুষকে লাইফ সাপোর্টে রেখে মৃতের পরিবারকে কত বড় বিল ধরিয়ে দিতে পারেন, তা-ই যেন প্রাধান্য পায়।

ওদিকে যারা দেশ চালান, রাজনীতিবিদরা, সরকারেই থাকুন আর বিরোধী দলেই থাকুন, তারা ব্যস্ত থাকেন কীভাবে চিকিৎসকদের রাজনীতিতে ঢুকিয়ে তাদের আসল কাজ ভুলিয়ে দেয়া যায়। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা সে কারণেই তাদের কাজ রেখে দুই দলে বিভক্ত। মাঝে মাঝে অবশ্য সরকারি কর্মকর্তারা ভুয়া ডাক্তার ও লাইসেন্সবিহীন ডায়াগনসিস সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। কিছু ভুয়া ডাক্তার ধরেন, অসাধু ব্যবসায়ী ধরেন। কিন্তু সনদধারী চিকিৎসকরা যে তাদের কাজে অবহেলা করছেন, তা চোখে দেখেন না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ‘মেডিকেল ম্যালপ্রাকটিস’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, ‘মেডিকেল ম্যালপ্রাকটিস’ আইন আছে। সেখানে চিকিৎসক ও হাসপাতালের প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হয়। কারণ, চিকিৎসক ও হাসপাতালগুলোর দায়িত্বের ওপর রোগীর বাঁচামরা নির্ভর করে। অবহেলাজনিত কারণে তাদের সনদ বাতিল হয়ে যায়।

শুধু এ দেশেই বোধ হয় ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই। মামলা করতে হলে ফৌজদারি আইনে করতে হয়। বাংলাদেশে ‘মেডিকেল ম্যালপ্রাকটিস’ বা ‘চিকিৎসায় অবহেলা’র সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না হলে এসব বন্ধ হবে না; চিকিৎসক বা হাসপাতালগুলো তাদের কাজে সব সময়ই অবহেলা করবে। – ইকরাম কবীর

(ফেবু পোষ্ট লিঙ্ক )

 

ঘটনা ৫ 1380576_10201240383186305_1479679193_n

২০০৫ সালে ক্যাডেট কলেজ থেকে আসার ৫ দিন পর আমার বড় ভাই মারা যায়। নষ্ট দুটো কিডনি নিয়ে প্রায় বছর দেড়েক বেচে ছিল ডায়ালাইসিস করে। অনেক আশা নিয়ে বলত, বিদেশে মানুষ ডায়ালাইসিস করে বিশ ত্রিশ বছর বাচতে পারলে আমি পারব না কেন? কিডনি রিপ্লেসের টাকা জোগাড় করার জন্য লিটারেলি দ্বারে দ্বারে ঘুরে একরকম ভিক্ষাই করেছিল আম্মা।
ডায়ালাইসিস করানো হত কমফোর্ট হাসপাতালে। তবুও অবস্থার ধীরে ধীরে অবনতি হয়ে মরেই গেল। তার কয়েকদিন পর ভেজাল বিরোধী অভিযানে কমফোর্ট থেকে ভেজাল বাইকার্বনেট ডায়ালাইসিস সলিউশন জব্দ করল মোবাইল কোর্ট। টিভিতে খবরটা দেখার পর বাসায় আবার কান্নার রোল পড়ে যায়। এবার আর আম্মাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা ছিল না আমার।

আজ ২০১৩ সালে এসে দেখছি ভেজাল ওষুধ বিক্রি করতে দেয়ার দাবীতে সারাদেশে ধর্মঘট করছে ওষুধ বিক্রেতারা। খবরটা শুনে খুবই ভাল্লাগলো,বাহ বাহ, সবাই মইরা সাফ হয়া যাক।এমন দেশে বাইচা থাকনের কোন দরকার নাই। – আর তুহিন

কেনো জানি ছবিটা দেখে জাফর ইকবালের মিথ্যা বলার অধিকারের কথা মনে পড়ে গেলো।
আরেকটা ব্যাপার এই ভেজাল ঔষুধ জব্দ করার অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিসিসির এক্স ক্যাডেট ফরহাদ ভাই (১৯৮৭-৯৩)

(ফেবু পোষ্ট লিঙ্ক )

ঘটনা ৬ 1379468_10201336793636506_777736816_n

আবারো ইউনাইটেড।
এইসব হত্যাপুরিগুলোকে বন্ধ করবো কি করে আমরা???
—————–পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে আমি একজন কবিতাপ্রেমী মানুষ হিসেবে চিনি। একবার এক অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে ‘প্রিয় কবি’ সম্বোধন করে মুগ্ধ করেছিলেন। বুকে কবিতা আছে বলে তার মুখের বচনও কবিতার মতো স্বচ্ছ। দীপু মনির কথা শুনলে যুক্তরাষ্ট্রের একদা-প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একটি রাজনৈতিক উপলব্ধির কথা মনে পড়ে যায়— ‘ক্ষমতা যখন মানুষকে উদ্ধত করে তোলে, কবিতা তাকে তার সীমাবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেয়। ক্ষমতা যখন মানুষের আত্মপরিধিকে সংকুচিত করে, কবিতা তাকে তার অস্তিত্বের বৈভব ও বিস্তারের কথা মনে করিয়ে দেয়। ক্ষমতা যখন দুর্নীতিকলুষিত হয়ে পড়ে, কবিতা তাকে ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন রাখে (When power leads man towards arrogance, poetry reminds him of his limitations. When power narrows the areas of man’s concern, poetry reminds the richness and diversity of his existence. When power corrupts, poetry cleanses.)।’
কদিন আগে দীপু মনির একটি ক্ষুদেবার্তা পেয়ে মনে হয়েছে, ক্ষমতাকে কবিতার পরিচর্যা দিতে জানেন তিনি। তা-ই যদি না হবে, ব্যস্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরও কেন তিনি এক মুমূর্ষু মায়ের খোঁজ নিতে তার বেদনা-নীল ছেলেকে ফোন করবেন; আর ফোনে না-পেয়ে কেনই বা লিখতে যাবেন— ‘ফোন করেছিলাম। আপনার মা কেমন আছেন? পরে আবার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ। দীপু মনি।’ উল্লেখ্য, এর দুদিন আগে ইউনাইটেড হাসপাতালে সংজ্ঞাহীন শুয়ে-থাকা মাকে দেখতে গিয়ে দীপু মনির সঙ্গে আমার দেখা ও কুশলবিনিময় হয়েছিল।
ক্ষুদেবার্তাটি পেয়ে প্রথমেই যে-কথা ভেবেছিলাম— পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরও দীপু মনি ভুলে যাননি যে, তিনি একজন চিকিত্সক এবং কেউ একবার চিকিত্সক হলে আমৃত্যুই তাকে এই পরিচয়টিকে সযত্নে বহন করতে হয়।
দীপু মনির ক্ষুদেবার্তার জবাবে এক বাক্যে মায়ের সর্বশেষ অবস্থার কথা জানিয়েছিলাম— ‘মা আছেন, মা নেই।’ এর বেশি জানানোর মতো মনের অবস্থা তখন ছিল না, আর থাকলেও একজন ব্যস্ত মন্ত্রীকে তা জানানো যায় না। তারপরও, ইউনাইটেডের মতো হাসপাতালে মায়েরা কেমন থাকেন, পাঠককে তা জানাতেই এই লেখা।
দুই.
হাসপাতাল নামের কসাইখানায় মায়েরা কেমন থাকেন, আমার আগে কবি ও সংবাদকর্মী সাঈফ ইবনে রফিকই তা জানিয়ে রেখেছেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে। আমি ভাগ্যবান— সাঈফের স্ট্যাটাসটি ঠিক সময়ে আমার নজর কেড়েছিল। নইলে হয়তো মা আমার এতদিনে কবরে চলে যেতেন। সাঈফের স্ট্যাটাস পড়লে ইউনাইটেডকে হাসপাতাল নয়, কসাইখানাই মনে হবে। চিকিত্সা না দিয়ে কীভাবে রোগীর স্বজনদের পকেট কাটে ইউনাইটেডের মতো ইমারতসর্বস্ব বেসরকারি হাসপাতালগুলো, সাঈফের স্ট্যাটাসে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ আছে। স্ট্যাটাসটি পড়েই আমি সতর্ক হই এবং স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কসাইখানা থেকে মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেকথা জানাতেও এই লেখা। সাঈফের স্ট্যাটাস যেমন আমাকে, আমার লেখাও যদি একইভাবে অন্য কাউকে সতর্ক করে, তাহলেই এ লেখা সার্থক। একে আমি আমার সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি। এ প্রকার দায়িত্বপালনে আমরা হেলাফেলা করি বলেই অনাচার তার ডালপালা বিস্তারের সুযোগ পায়।তিন.
ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির পর-পরই সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে আমার মায়ের একটা বড় ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, যার চিকিত্সাশাস্ত্রীয় নাম— ‘ব্রেইনস্টেম হেমোরেজ’। এ রোগে রোগীকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য। ইউনাইটেড হাসপাতালের লোকজন মাকে নিয়ে গেল নিবিড় পরিচর্যা বিভাগ বা আইসিইউতে। নামেই ‘নিবিড় পরিচর্যা’, পুরো একদিন মাকে কোনও চিকিত্সাই দেওয়া হল না। যেটুকুও বা দেওয়া হল, তার তদারকির ভার পড়ল এমন সব নার্সের ওপর, যারা কিনা ক’মাস আগেও শিক্ষার্থী ছিলেন। নবিশ ওই নার্সরা রোগীর শরীরে সুই ফোটাতেও অনভিজ্ঞ। পরীক্ষার জন্য রক্ত নিতে কিংবা রোগীর শরীরে স্যালাইন দিতে গিয়ে তারা হাসতে-হাসতে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটান। যেহেতু বিকালের একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া রোগীর কোনও স্বজনের আইসিইউতে প্রবেশাধিকার নেই, জানার উপায়ও নেই চিকিত্সার নামে অচেতন রোগীদের ওপর কী পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় ইউনাইটেড হাসপাতালের রুদ্ধদ্বার বিভাগগুলোয়। তবে একথা ঠিক, জানার ইচ্ছে থাকলে সবটাই জানা যায়। সেভাবেই জানলাম, অর্ধেকেরও বেশি অভিজ্ঞ নার্স সরকারি চাকরি পেয়ে একযোগে চলে যাওয়ায় ইউনাইটেড হাসপাতাল এখন নবিশ নার্সদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং রোগীরা সেখানে গিনিপিগ। তাতে অবশ্য হাসপাতালটির কিছু যায় আসে না। অনভিজ্ঞ নার্সদের কারণে কোনও রোগীর অবস্থা মরণাপন্ন হলেই তাদের লাভ— রোগীকে লাইফ সাপোর্ট দাও আর মুফতে কামিয়ে নাও কয়েক লাখ টাকা। লেখা বাহুল্য, রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে সে-অনুমতি আগেই নিয়ে রাখা হয়। ভেন্টিলেশনের নামে মৃত রোগীকে দু-একদিন মিথ্যা-মিথ্যি বাঁচিয়ে রেখে অতিরিক্ত বিল আদায়েরও অভিযোগ আছে হাসপাতাল নামের এই কসাইখানাগুলোর বিরুদ্ধে। আর এসব অমানবিক কাজকে বৈধতা দিতে কসাইখানাগুলোর আছে মোটা বেতনের কিছু গৃহপালিত ডাক্তার, ডাক্তারির মতো মহান পেশাকে যারা প্রতিদিন বলাত্কার করেন।
চার.
কয়েক বছর আগে চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুকে ঘিরে ইউনাইটেড হাসপাতাল নিয়ে ব্যাপক হইচই হয়েছিল গণমাধ্যমে। মান্নার স্বজন-সহকর্মীরা তখন এই বলে অভিযোগ করেছিলেন, ডাক্তার-নার্সদের অবহেলাই ছিল মৃত্যুর কারণ। কেউ-কেউ ‘হত্যাকাণ্ড’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন মান্নার মৃত্যুকে। একুশে পদকপ্রাপ্ত ক্রীড়া ভাষ্যকার আবদুল হামিদের মৃত্যুর পরও একইরকম গুঞ্জন উঠেছিল গত বছর। সেই সময় শোনা গিয়েছিল, অতিরিক্ত বিল আদায় করতে মৃত্যুর একদিন পর আবদুল হামিদকে মৃত ঘোষণা করে ইউনাইটেড হাসপাতাল। তখন গুরুত্ব না-দিলেও এখন মনে হচ্ছে, গুঞ্জনটিতে কিছুটা হলেও সত্যতা ছিল। হয়তো সে কারণেই হাসপাতাল মৃত্যু-সনদ দেওয়ার আগের দিনই কয়েকটি বৈদ্যুতিক মিডিয়ায় আবদুল হামিদের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। গত বছর এই ইউনাইটেড হাসপাতালই আমার বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করে। হুইলচেয়ার ছাড়াই নিজের পায়ে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকা একজন মানুষ এক মাস যেতে না যেতেই লাশ হয়ে ফিরেছিলেন। সাঈফের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পড়ার পর এ-ও মনে হয়েছে, লাইফ সাপোর্ট দেওয়াই কাল হয়েছিল আমার বাবার। এর জন্য বাবার লাশ নিয়ে আসার সময় কয়েক লাখ টাকার বিলও গুনতে হয়েছিল আমাদের। তাহলে কি টাকা দিয়ে সেদিন বাবার মৃত্যু কিনেছিলাম ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে? 
পাঁচ.
না, আমরা ভাইবোন মায়ের জন্যও একই মৃত্যু কিনতে রাজি হইনি। ইউনাইটেড হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা যেদিন মাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিল, তার পরদিনই তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। যদিও সংজ্ঞাহীন, এক সপ্তাহ হতে চলল, ছেলেমেয়েদের পরিচর্যায় মা আমার হাসপাতালের চেয়ে অনেকগুণ ভালো আছেন। নবিশ নার্সদের অনভিজ্ঞ সুইয়ের খোঁচাখুঁচিতে মায়ের হাতে-পেটে রীতিমতো ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল। সন্তানদের শুশ্রূষায় সেই অবহেলাজনিত ক্ষতও মিলিয়ে গেছে। মাকে লাইফ সাপোর্ট না-দেওয়া এবং ইউনাইটেড থেকে বাসায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমার মেজ বোনের স্বামী অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কার্ডিওলজিস্ট ডা. মনোয়ার হোসেন। তার কাছ থেকে জেনেছি, উন্নত দেশের হাসপাতালগুলো বেশি বয়সী মুমূর্ষু রোগীদের পারতপক্ষে লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন দিতে চায় না। দিলেও রোগীর স্বজনদের জানানো হয় যে, এসব প্রযুক্তি মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখার অতিসাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। বরং প্রাকৃতিক পরিবেশে এ প্রকার মুমূর্ষু রোগীর সুস্থ হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকে; অনেক রোগী প্রকৃতির কৃপায় বেঁচেও যান। 
পাদটীকা
পাঠককে বলছি, টাকা দিয়ে প্রিয়জনের মৃত্যু কিনবেন না। ইউনাইটেড হাসপাতালের মতো কসাইখানাগুলোকে ‘না’ বলুন।
 – আবু হাসান শাহরিয়ার
(ফেবু পোষ্ট লিঙ্ক )
উপরের সব ঘটনা গুলো একত্রে শেয়ার করার উদ্দেশ্য একটাই এইভাবে মৃত্যু আমাদের কাম্য নয়।
হে দেবতা তুমি জাগো
Asklepios.3
* ছবিগুলো নেট থেকে প্রাপ্ত।
* যাদের ঘটনা তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

১৩ টি মন্তব্য : “এইভাবে মৃত্যু আমাদের কারো কাম্য নয়”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    রাজীব ভাই, লিস্ট করলে উপরের লেখা কখনো শেষই হবে না বোধহয়...স্কয়ার, ল্যাব এইড, ইবনে সিনা, এমনকি সি এম এইচ এ-ও অবহেলার কারনে মারা যাবার ঘটনা কম নয়! এই নিয়েই আমরা আছি। আমরা সামান্য কারনে ডাক্তার, নার্সদের কর্মবিরতি করতে দেখি-ওদিকে রোগীরা ধুঁকে ধুঁকে মরে!

    ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী- সবখানে সবাই দুই দলে বিভক্ত। এদের মাঝে পড়ে আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত। দেখার বা সমাধান দেবার কেউ নেই।

    তবে আশার কথা হচ্ছে কিছুটা হলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে। এরকম অনলাইন ও অফলাইন লেখা-লিখি/ক্যাম্পেইন জারি থাকুক। দেশের সবাই জানুক অসুস্থ হলে কাদের হাতে আমরা আমাদের ও আমাদের স্বজনদের জীবন সঁপে দেই।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বাংলাদেশের স্বাস্থ্য-সমস্যার কোন সমাধান সুদূরপরাহত।
    ফুলস্টপ।
    দলবাজি সব পেশাজীবীদেরই থামানো দরকার। বলে কি লাভ আছে এসব?
    আর পুরো সমাজটাই যদি চোর-ছ্যাঁচড়ের সমাজ হয় -- ডাক্তাররাও, পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাও তেমন হবে বৈ কি। এতে অবাক হবার কিছু নেই।

    জবাব দিন
  3. সিরাজ(১৯৯১-১৯৯৭)

    একদিন মনে হয় কোন কমেন্টে বলেছিলাম আমি ঢাকার এক বিখ্যাত ডাক্তার আর আমার বাবার ভুল চিকিৎসার কথা। ভাগ্য ভাল শেষ পর্যন্ত ভারতে নিয়ে যেয়ে সঠিক ট্রিটমেন্ট দিতে পেরেছিলাম ১বছর ভালই ছিল। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি কারন সেটা কমন অসুখ ছিল না।

    এ বিষয়ে আমার কিছু জিনিস খুব জানতে ইচ্ছা করে।
    ভারতে দুজন খুব নাম করা কারডিওলজিস্ট বা হার্ট সার্জন আছে। একজনের নাম ড:অশোক শেঠ যিনি দিল্লিতে থাকেন এবং অন্যজন ডঃদেবি শেঠি যিনি ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। বাংলাদেশে অনেকেই পরের জনের নাম জানেন।ওনার বিশাল বড় একটা হসপিটাল আছে ব্যাঙ্গালোরে শুধু তাই না। সারা ভারতেই হসপিটালের শাখা আছে।আর ব্যাঙ্গালোরে যেটা আছে সেটাকে বলে হেলথ সিটি। সেখানে হার্ট থেকে শুরু করে ক্যান্সার সব ধরণের রোগের চিকিৎসা বিশ্বমানের এমন কি আমেরিকাতে ওপেন হার্ট বা বাইপাস সার্জারির খরচ অনেক বেশি বলে ওখান থেকেও রোগী এসে এখানে অপারেশন করে যায়।নিচে কয়েকটা ছবি দিলাম ওই হসপিটাল এবং পাশের ক্যান্সার হসপিটালের।
    http://www.healthcitycaymanislands.com/photo-gallery/narayana-hrudayalaya-hospitals-0
    যিনি এই হাসপাটালের ডাক্তার তার কাছে আমি আমার এক রিলেটিভ কে নিয়ে গিয়েছিলাম ২০০৪ সালে তখন তার ভিসিট ছিল ২০০রুপি এবং এখন তার ভিসিট ৫০০রুপি। বাংলাদেশে কনভার্ট করলে ৬০০টাকা। এবং এই টাকা দিয়ে আপনি ৭দিন পর্যন্ত দেখাতে পারবেন।যতবার যান না কেন বা রিপোর্ট দেখান না কেন।আমার প্রশ্ন হল তিনি কিভাবে চলেন যিনি এত বড় একজন হসপিটাল গ্রুপের মালিক এবং ভারতের অন্যতম বিখ্যাত ডাক্তার।আপনি হয়তো বলবেন যে টেস্ট বা অপারেশনের মাধ্যমে পুষিয়ে নেন।আচ্ছা তাহলে বলি ভারতিয় রুপিতে ওখানে বাইপাস সার্জারি করাতে প্যাকেজ খরচ ১৪০০০০রুপি মানে বাংলাদেশি টাকায় ১৯০০০০টাকা।আপনারা মিলিয়ে দেখুন বাংলাদেশে যেসব হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা হয় সেখানে কেমন খরচ। ওখানে একবার রুগীকে ঢুকিয়ে দিলে সব কিছু তাদের দায়িত্ব আপনাকে শুধু সকাল বিকাল অতিথি হিসাবে রুগীকে দেখতে যেতে হতে।আর চিকিতসার মান বিশ্বমানের আগেই বলেছি।তাহলে ঐ ডাক্তারের হাসপাতাল তো সরকারি না। ওরা টিকে আছে কিভাবে?কিভাবে ব্যাবসা করে খাচ্ছে?বাংলাদেশে ভাল ডাক্তারের ভিসিট ৮০০টাকা আবার রিপোর্ট দেখাতে গেলে আরো ৪০০ টাকা দিতে হয়।মোট ১২০০টাকা। তাহলে ব্যাঙ্গালোরের দেবি শেঠির কিভাবে ৬০০টাকা নিয়ে পোষায়?ওনার কোয়ালিটি অনুযায়ী তো মিনিমাম ২০০০টাকা ভিসিট হওয়া উচিৎ।


    যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি

    জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    বাংলাদেশে শুধু না পৃথিবীর সব দেশেই ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটে। শুধু বাংলাদেশের ডাক্তারগনের দোষ দিয়ে লাভ নাই।
    আমিও যে কখনো কখনো ভুল চিকিতসার স্বীকার হই নাই তা না, তবে এটাও ঠিক যে কোন চিকিৎসক জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীর ভুল চিকিৎসা করেন না। কখনো তা হয় পরিস্থিতির কারনে আবার কখনো অজ্ঞতার কারনে। যে কারনটা সবচেয়ে খারাপ তা হলো ইগোর কারনে। এদেশের ডাক্তারগন নিজের ক্ষেত্রের রোগি না হলেও চিকিৎসা চালিয়ে যান সেটার জন্য কতকটা তাঁরা দায়ী আর কতকটা আমরাও দায়ী।
    আমরা কেন দায়ী? কারন একজন চিকিৎসক রোগীকে অন্যত্র রেফার করলে এদেশের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, "ডাক্তারটা মুর্খ। সাধারন একটা রোগ ধরার মুরোদ নাই, চেম্বার খুলে বসে আছে। দেখো আবার ফি ও চায়?"
    মানসিকতার পরিবর্তন, তথ্য আদান-প্রদান এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো ছাড়া এই অবস্থা থেকে উন্নয়নের কোন সুযোগ দেখি না।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।