বাংলাদেশ, তোমার গায়ে ছেড়া কাপড়

কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে এক বন্ধুর ছবি দেখলাম। হাতে সনদ আর যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট পতাকা হাতে ছবি, ছবির ক্যাপশন প্রাউড সিটিজেন অফ ইউএস।
হঠাৎ করেই মোকাব্বিরের পোষ্টটার কথা মনে এলো।
না ওর লেখার প্রতি কোন অনুযোগ নেই। খুব সুন্দর বর্ণনা ছোট্ট শহরটির।
ওর লেখাটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম বাইরের দেশের ছাত্ররা মোকাব্বিরের মতো এমনি করে বাংলাদেশে আসবে, তার দেশের বা গোত্রের কোন এক ব্লগে এমনি সুন্দর করে বাংলাদেশের কথা লিখবে।
আজকে ফেবু বন্ধুর সেই গর্বিত ইউ এস এর সিটিজেন হবার গৌরবে আমারো ইচ্ছা করলো চিৎকার করে বলি, উল্লাস।

আমার কথাই বলি। দেশের বাইরে ৮ বছরের কিছু বেশি।
একটা অপসন রয়েছে পাকাপাকি এদেশে থেকে যাবার। যদি এদেশে না হয় তবে হয়তো অন্য কোথাও, হয়তো কানাডা বা —-।

আচ্ছা দেশে স্থায়ী হবো না এর মধ্যে কি কোন আত্মশ্লাঘা রয়েছে? আমি কি আনন্দিত? আমি কি হাতে লাল পাসপোর্ট নিয়ে উল্লাস বলে চেচিয়ে উঠবো?

তবে বলি গত আট বছরে আমি কয়বার দেশে গেছি জানেন? এক বারো না। আমার এক বন্ধুর অবশ্য ১২ বছর হতে চলল এখনো দেশে যায়নি।
তবে কি আমরা আমাদের বুকের ভেতর বাংলাদেশকে লালন করি না!
আমাদের বুকের ভেতর কি মুজিব নেই! রবীন্দ্রনাথ নেই!

একসময় চিরসবুজ, শহীদের রক্তে ভেজা গরীব বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্টের ভার বইবে না আমার পকেট ভাবতে গেলে দুচোখ শুণ্য হয়ে আসে। কোন কোন পাঠক হয়তো এটুকু পড়ে হাসছেন। হাসেন ভাই হাসেন। চাদনী রাতে বোতল খুলে বসে পান করুন চাদকে সঙ্গী করে আর বলুন উল্লাস।

দেশকে নিয়ে ভাবি, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে কচকচি করি বলে প্রায়ই শুনতে হয়, বাইরে থেকে হাতি ঘোড়া না মেরে একটু দেশে গিয়ে যেনো কাজ করি। দেশের বাইরে নিরাপদে থেকে আর কতো!

আসলেই তো আর কতো!
তবুও সান্ত্বনা দেই নিজেকে যে দেশে গিয়ে কিছুই করতে পারবো না। আপনারা যারা কাজ করছেন তারা প্রণম্য। আমি নিজে খুব সাধারণ। জ্যাক হয়েই থাকতে হবে আজীবন। কদিন আগে এক বন্ধু ফোন করে বলেছিলো, তুই যে এতোবড় বড় ডায়লগ দিস তার যোগ্যতা কি? বলা বাহুল্য সে কোন প্রকার তাচ্ছিল্য নিয়ে প্রশ্নটি বা প্রশ্নমালা আমার দিকে ছুড়ে দেয় নি। আসলেই জানতে চেয়েছে। ধর্ম নিয়ে যত সহজে আমি মনের কথা বলে ফেলি ততটা সহজে সে পারে না। খুব বেশী ঈশ্বর বিশ্বাস তার নেই, কিন্তু ধর্মাচারের শক্তি অনেক, চাইলেই ছুড়ে ফেলে দেয়া যায় না, বিশেষ করে যেই অঞ্চলে জাকির ভাই নবীরূপে বিরাজমান, যেইখানে জাকির ভাইকে নিয়ে কিছু বললে অনেকের শূল বেদনা শুরু হয় সেখানে ভিন্নভাবে ভাবাটা বেশ কষ্টকর এবং বিপদজনক।
বন্ধুরে বললাম দোস্ত আমি হইলাম জ্যাক। সিরিয়াস আলোচনায় জ্যাক ঢুকে যাওয়ায় বুদ্ধিমান বন্ধুটি কিঞ্ছিত খেই হারিয়ে ফেলে। তখন তাকে বললাম, দোস্ত, আমি হইলাম জ্যাক অব অল ট্রেডস, বাট মাষ্টার অফ নান। আর আমি যদি মোক্ষ লাভ করিই, মানে ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস করার যেই অত্থেই হোক না ক্যানো তা তো তুই আর মানবি না। এতো আর ডক্টরেট নয় যে ঐ বিষয়ে আমার অথরিটি পুরাটাই!
বিধাতা পাগলের সাথে সাপলুডু খেলতে থাক।
এক মুখ দাড়ি গোফ 
অনেক কালের কালো ছোপ ছোপ
জট পরা চুল এ তার উকুনের পরিপাটি সংসার 
বিছুটি চোখের কোনে দৃষ্টি বিস্মরণে মগ্ন 
বাবু হয়ে ফুটপাথে একা একা দিন রাত রঙ্গে 
পাগল পাগল , সাপলুডু খেলছে বিধাতার সঙ্গে 

চালচুলো নেই তার, নেই তার চেনা বা অচেনা 
আদমশুমারি হলে তার মাথা কেউ গুনবেনা 
তার ভোট চাইবে না গণতান্ত্রিক কোনো প্রার্থী
সরকারে দরকার নেই তাই নিজের সুরঙ্গে 
পাগল পাগল , সাপলুডু খেলছে বিধাতার সঙ্গে 

বটতলা চুম্বন পদ্ধতি পেটমোটা ব্যাকরণ বই 
ধর্ম বা রাজনীতি ঠাকুরের ছবি ফিকে হরি বল খই 
সারিবাদী শাল্সাবা ভোগীর লালসা আর অভোগিতে গান 
হটাৎ হাসপাতাল এ অকারণে ফাকতালে মহা প্রয়ান 
ভিডিও কাসেটে আর নীল সোফা সেট এ বসে মিঠে খুনসুটি 
লক-আউট কারখানায় তামাদি মজুরি আর কেড়ে নেয়া রুটি 

জগতে যা কিসু আছে কিছু নেই তার অনুসঙ্গে 
পাগল পাগল , সাপলুডু খেলছে বিধাতার সঙ্গে 
পাগল পাগল , সাপলুডু খেলছে বিধাতার সঙ্গে)


আমি ফেরত যাই আমার লাইনে।

নিজেকে প্রবোধ দিই যে আমি তো আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যাঙ্কার নই যে দেশের ব্রেইন বাইরে চলে যাচ্ছে, বরং একজন লোক দেশের অন্ন কম ধ্বংস করছে। শুধু কি আমি একা, সাথে বাংলাদেশ থেকে আসা বউ আছে। এদেশে জন্ম নেয়া দুই মেয়ে আছে। দেশে থাকলে আমাদের চারজনের ভারটা তো নিতে হতো আমার গরীব দেশটাকে। কি সুন্দর চারজনের ভর, বাতাস, সব মৌলিক চাহিদার খরচ বাচিয়ে দিলাম দেশের।  কিছুই দেয়ার ক্ষমতা নেই তাই না নিয়ে বড়াই করছি কি!

বারেক ভাই আমাদের জিএসপি বাতিল করে দিয়েছেন। কেউ কেউ একে চক্রান্ত বলছেন, নির্দিষ্ট করে কারো কারো কথা বলছেন।

হে বাঙলাদেশ, হে শহীদের পবিত্র দেশ,
তুমি কি ঘুরে দাঁড়াবে না
তোমার কি লজ্জা হবে না,
তোমার উরু বেড়িয়ে পড়ছে,
তোমার পাছা দেখা যাচ্ছে,
তোমার করুণ হাত, বাহুমূল,
শীর্ণ স্তন, নাভি সব দেখা যাচ্ছে।

তোমাকে এমনকি ধর্ষণ  করার জন্য ও কেউ হাত বাড়ায় না।
তোমার আজ কিছুই নেই।
তোমার জানু চেপে কেউ আর উল্লাস করে না।
সবাই থু থু করে, সুশীলেরা রুমাল চাপা দেয় নাকে।

আমি রাত জেগে এই বিলাতে তবু স্বপ্ন দেখি

আমার দেশে আবার সোনা সোনা ফসল ফলবে।
গাভীর দুধে ভেসে যাবে গ্রাম বন্দর জনপদ।
চাদের আলোয় প্রেমিক জড়িয়ে ধরবে প্রেমিকাকে।
ভালোবাসায়, প্রেমে, কামে জন্ম নেবে শিশু।
মায়ের ভড়ন্ত স্তন আকড়ে থাকবে পুষ্ট শিশু।

এমনো দিন আসবে
সাদা, কালো, বাদামী, হলদে সবাই তোমার দেশে প্রবেশ করার সুযোগ পেলে
সবুজ পাসপোর্ট আর লাল-সবুজ ছোট্ট পাতাকা হাতে নিয়ে চিৎকার করে
বিয়ারে চুমুক দিয়ে বলে উঠবে, উল্লাস।

শেষকথাঃ বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির নিচে পাঁচ জন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন। (১৪১, প্রবচনগুচ্ছ; হুমায়ুন আজাদ)

এই বাঙলাদেশ কি করে হেরে যাবে!

না, বাঙলাদেশ হারতে পারে না।
হাল ছেড়োনা

bangla3 bangladesh-flag bd 2

২,১১১ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “বাংলাদেশ, তোমার গায়ে ছেড়া কাপড়”

  1. ফারহান ( ২০০৪-২০১০ )

    বাসার সামনে হাঁটু সমান পানি । আর ওদিকে সিটি কর্পোরেশন এর লোকেদের চোখে ঘুম নেই । সামনে ঈদ।। ছেলেমেয়েদের জন্য ঈদের কাপড় কেনা লাগবে না?? তাই এই বর্ষা তেও তাদের উন্নয়ন(!) কর্মের বিরাম নেই । আর আমার দেশপ্রেম মাইনকার চিপায় x-( x-( x-( x-(

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      হারবে না।

      মিররে লেখাটা দেখছিস?
      সরকার কি করে?
      http://www.mirror.co.uk/news/world-news/bangladesh-clothes-factory-disaster-miracle-2011161
      ঐ সাংবাদিক রাইটের অন্য লেখা দেখছিস?
      কারে সাথে নিয়া গেছিলো আবার দেখ।
      আমার দেশের সাংবাদিক।
      সাদাদের বিশ্বাস করাতে পারবে না তাই সাঈদীরে যে চাদে দেখা গেছে এইটা সে রাইটরে বলে নাই।
      যদি নাটক হয় তবে আর্মি জড়িত।
      আর মেয়েটার পায়ের নখ এট লিষ্ট বড় থাকবে, যেইটা সিএমইচে ডাক্তারদের দেখার কথা।
      ১০০০ এর উপর মানুষ মারা গেছে। অনেক মানুষ উদ্ধার হইছে। আর রেশমা উদ্ধার হওয়াটা কোন মিরাকল বা কেরামতি না।
      বিল্ডিং ভাঙ্গার জন্য যেমন সরকার দায়ী না, তেমনি রেশমা বেচে থাকার পিছনে সরকারের কোন কেরামতি নাই।
      কিন্তু প্রথম থেকেই জামাত-বিএনপি এবং এন্টি আওয়ামী মনারা এইটারে নাটক হিসাবে নিছে।
      আর সত্যি সত্যি দেশে যদি মিথ্যার রাজত্ব চলে তবে ডুবে যাক দেশ।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  2. হুমায়ুন (২০০২-০৮)

    এমনো দিন আসবে
    সাদা, কালো, বাদামী, হলদে সবাই তোমার দেশে প্রবেশ করার সুযোগ পেলে
    সবুজ পাসপোর্ট আর লাল-সবুজ ছোট্ট পাতাকা হাতে নিয়ে চিৎকার করে
    বিয়ারে চুমুক দিয়ে বলে উঠবে, উল্লাস। ::salute::


    তুমি গেছো
    স্পর্ধা গেছে
    বিনয় এসেছে।

    জবাব দিন
  3. সুশান্ত (০৩-০৯)

    ভাই এতো ইমোশনাল কথা বলে লাভ নাই। তারাতারি দেশের কোন চেঞ্জ দেখি না। আগে ভাবসিলাম যে বুড়া গুলো মরলে হয় তো চেঞ্জ আসবে, কিন্তু নতুন কাঁঠালপাতা খাদক তো আমার কাছে সংখ্যায় ওই বুড়া গুলোর চেয়ে কম মনে হয় না।

    আমরা চেঞ্জ এর জন্য দু'দিন পর পর রাজপথে নামবো আর গর্জন করব আর ওরা মুচকি হাসবে যে করতে থাকুক বাৎচিত ওদের দৌড় তো ওই টুকু ই। ওরা হাসবে আর আমরা চেঞ্জ এর অপেক্ষায় বসে থাকব, চেঞ্জ আর হবে না। আক্ষেপ নিয়ে ই কাটাতে হবে সারা জীবন।

    আপনার লেখাটা খুব ভালো লেগেছে। 🙂 🙂 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  4. মামুন (৯০-৯৬)

    রাজিব বাবা রাইট হারামজাদার পূর্বপুরুষ কিন্তু একই কাম করছিলো এবং এখনও তা ইতিহাস থেকে শুধরানো হয় নাই ।

    http://asianhistory.about.com/od/asianhistoryfaqs/f/BlackHoleFAQ.htm


    একটাই তো জীবন , তাই জীবন যেখানে যেমন -- Life is Beautiful .

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।