এমনি করে সবাই যাবে…

গানটি ছিল এরকম

এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে,
দেহের মাপের মাটির ঘরে শুতে হবে,
কেউ রবে না তখন সাথে যারাই ছিলো দিনে-রাতে;
চোখের আলোর ঝাড়বাতিটা নিভিয়ে দেবে, নিভিয়ে দেবে। ……

ফিডব্যাকের ১৪০০ বঙ্গাব্দ এ্যালবামের গান। এরকম জটিল এ্যালবাম বাংলাদেশে আর বের হয়েছে কিনা জানিনা। মাকসুদ ও আর ফিডব্যাকে নেই। ফিডব্যাক ও আর ফিডব্যাক নেই, মাকসুদ ও আর ম্যাক নেই।

যাই হোক এদের কথা রাখি। আমার কথা, আমাদের কথা বলি। দিন কয়েক আগের কথা বলি। সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। ঘুম ভেঙ্গেই প্রথমে বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখি কি কি মেইল আসলো; বা ফেসবুকে কিছু আসলো কিনা। দুইটা মেইল দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

রাজশাহীর ২০০১ ব্যাচের জিকো বাবা নেই। ফোন দিলাম। বেচারা মানিক নামক এমন এক ভদ্রলোকের চিপায় আছে যে এই মুহূর্তে দেশেও যেতে পারছে না। সমবেদনা ছাড়া আর কিছুই জানাতে পারলাম না। দেশের বাইরে যারা থাকে কত বড় পাথর বুকে চেপে যে তারা থাকে তা আর কি বলবো; যারা আছে তারাই জানে।

দ্বিতীয় মেইলটা এসেছে আমাদের বিসিসির ১১তম ব্যাচের সোহরাওয়ারদি হাউসের সায়েম ভাইয়ের কাছ থেকে; ৮৮-৯৪।

সাজ্জাদ ভাই অসুস্থ।

মাঝারি গড়নের, সদা হাসি-খুশি। আমাদের ১৩তম ব্যাচের সাথে ১১তম ব্যাচের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। দেখা হলেই হাসিমুখে কি কেমন আছিস? তারপর ৯৬এ পাশ করে বের হবার পর এখানে সেখানে ঘুরি। ছেলেপেলেরা অনেকে আর্মিতে চলে গেলো, মাহবুব নেভিতে। আর বাকিরা ভার্সিটিতে; কেউ কলা, কেউ বাণিজ্য, কেউ কার্জনে। অতি ভাগ্যবানেরা মেডিক্যাল নয়তো বুয়েটে। আমাদের সময় বুয়েটের ছেলেপেলেদের পকেট খুব গরম থাকতো টিউশনির বাজারে এদের খুব কদর থাকায়। ভালো খাবার দাবারের লোভে প্রায়ই বুয়েটে যেতাম। প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে পেয়ে যেতাম। পকেট গরমের সাথে সাথে এদের মনটাও খুব উদার ছিল। দরাজ হস্তে আমাদের জন্য খরচ করতো। তবুও সবার মধ্যে আলাদা ভাবে ফারুকের কথা বলতে হয়। ও রীতিমত জোর করে খাওয়াত। এরকম একদিন সন্ধ্যার পর ফারুক খাওয়াচ্ছে; পিছন থেকে কাঁধে হাত, কিরে কেমন আছিস? সেই কলেজের সেই ডাক। পিছন ফিরে দেখি কালোপানা মুখে ঝকঝকে হাসিতে সাজ্জাদ ভাই; জড়িয়ে ধরলাম।

এখনো আমি সাজ্জাদ ভাইয়ের সেই হাসি দেখতে পাই। আচ্ছা সাজ্জাদ ভাই কি চশমা পড়তেন? কেনো জানি মনে হচ্ছে পড়তেন। সাজ্জাদ ভাইও ছাড়লেন না, আবার খাওয়া। সাজ্জাদ ভাইয়ের গলার স্বর কেমন যেনো ক্যানক্যানে ছিলো; কিন্তু ভালোবাসার কোনো খামতি ছিলো না। সেই সদা হাসিখুশি মানুষটি আজ অসুস্থ।

জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য এই যে একদিন আমরা কেউ থাকবোনা।

তবুওতো গলিত- স্থবির ব্যাঙ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে, অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।

কিন্তু চাইলেই কি আর মৃত্যুকে কালিদহে, বেনোজলে পার করে দেয়া যায়???
না যায় না, তবুওতো মানুষের চেষ্টার শেষ নেই। আমি একজন চরম আশাবাদী মানুষ। হয়তো মানুষ একদিন মৃত্যুকে সত্যি সত্যি জয় করবে; আমি হয়তো সেদিন থাকবো না। কিন্তু একসময় সেইদিন আসবেই।

২০০৫ সালে আমার মার ক্যান্সার ধরা পড়ে; এখনো যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

২০০৯ সালে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন; চলে যাবেন এইরকম অবস্থা। আত্মীয়-স্বজনরা ফোন করে বললেন যদি শেষ দেখা দেখতে চাও তবে চলে এসো। এখনো বেঁচে আছেন বহাল তবিয়তে। এই যে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা, হাল না ছেড়ে দেওয়া এর নামই তো জীবনযুদ্ধ। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী। মানবের জয়ই তো এইখানে। আমার বাবা-মার সেই চরম দুর্দিনে এগিয়ে এসেছিলো আমার আত্মীয় স্বজন, আর বন্ধুবান্ধব; অর্থ, জনবল দুইভাবেই তারা সাহায্য করেছে। আমরা দুই ভাই এদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ (আমি বড় লন্ডনে, ছোটজন সিডনীতে; কোনো বোন নেই)। একান্ত পারিবারিক বলেই তাদের নাম আর এইখানে উল্লেখ করলাম না।

জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন আমার কাছে ভালো লাগে না। তবুও করতে হয়। ভালো লাগাটাই কি সব! গতকাল ৮ তারিখ ছিলো আমার বড় মেয়ের জন্মদিন। স্কুলে কেক কেটে এসে বাসায় স্ত্রীকে রাতের পার্টির জন্য রান্নায় হেল্প করে, মেয়েকে পাশে দাঁড় করিয়ে থালা-বাসন ধুচ্ছি বুকে হাল্কা ব্যাথা করে উঠলো। মনে মনে প্রার্থনা করলাম (বা সেইরকম কিছু) অন্তত মেয়েদের জন্মদিনে যাতে মারা না যাই। মেয়েরা সারাজীবন তাদের জন্মদিনে আনন্দ করতে পারবে না। বাপকা বেটি বলে একটা কথা আছে না, আমার দুই মেয়ে ঠিক তাই। তাদের মা তাদের জন্য কতকিছু করে যে বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমার জন্য এরা পাগল হয়ে থাকে। আমি এদের বকা ঝকাও করে থাকি। কিন্তু বাদরের মতো আমার গায়ে ঝুলে থাকে।

এইযে এতো কথা বললাম উদ্দেশ্য একটাই; সাজ্জাদ ভাই। হাঁ আমরা পারি। আমরা অবশ্যই পারি। এবং আমাদের করে দেখাতে হবে।

http://www.ankur-international.org/sazzad_mostofa_94_cncr.htm

Dhaka:

Monirul (Murad) – 01711505253
Masum – 01729292925

Sydney, Australia
Razu – (02) 8814 8801 Mob: 0414901137
Fazle Rabbi – (02)-87 899 317 Mobile: 0430-120-357

North America –
Mahbub – (651) 845-4062
Sayeem – (408) 480-6760

লন্ডন রাজীব ০০৪৪০৭৮৭৭০৭৭৪২৭
ঐ যে বললাম আমরা পারবো। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমরা পারবো। আমাদের অন্তরায় টাকা নয়; সময়। আমাদের যা করার এখনই করতে হবে।
আমি আবারো সেই হাসিমুখ দেখতে চাই, আমাকে পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরবে, ক্যানক্যানে গলায় বলবে, কিরে কেমন আছিস?

চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, আর লিখতে পারছিনা।

 

৩,৯০১ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “এমনি করে সবাই যাবে…”

    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      কোলন ক্যান্সার। সায়েম ভাইয়ের করা মেইলের অংশবিশেষ

      As many of you may already know, Sazzad (11th batch, SUH, cadet no 528) has been diagnosed with colon cancer which has turned metastatic. It has spread to his bone and liver as well. He is Alhamdulillah doing fine otherwise mentally and physically at least externally. Sazzad is currently residing in Atlanta, GA, USA. His treatment will start on 30th November in Tampa, Florida.

      Although we, his classmates from Cadet Colleges and BUET, are supporting him in all means, we need additional assistance financially for his treatment. A fund-raising initiative has been initiated for this purpose. Please find the link below for details:
      http://www.ankur-international.org/sazzad_mostofa_94_cncr.htm

      It is strongly requested not to overwhelm him with phone calls/mails. Please use your discretion wisely and pray for his quick recovery.


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  1. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    ১১তম ব্যাচের সাজ্জাদ ভাইয়ের কথা সম্ভবত মনে আছে । শরীয়তুল্লাহ হাউস । চুপচাপ থাকেন,চশমা পড়েন । আমরা কি কিছুই করতে পারি না ? কোলন ক্যান্সার তো আমার জানা মতে অনেক টাকার ব্যাপার । হুমায়ুন আহমেদের মতো লোক যদি অর্ধেক টাকা যোগাড় করে বাকীটার জন্য হা হুতাশ করতে হয় তাহলে তো.................... আমরা সবাই মিলে কিছু ১টা করি । ১টা কনসার্ট বা অন্য কিছু । সেটা তো আবার বোধ হয় সাজ্জাদ ভাই পছন্দ করেন না , তাহলে ?


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      রুম্মান আমরা কতদূর করতে পারি সেইটা দেখি। এতটা বড় করে দেখিস না।
      মাসুম ভাই, মুরাদ ভাই ১১ দের সাথে কথা বলে দেখ কি করা যায়।
      সেই পুরান একটা কথা আছে না। দশের লাঠি একের বোঝা।
      আবার ধর জাহাজ কিন্তু এক কাপ্তেন চালায় না; হাজারজনে চালায়। আমরা আমাদের নিজেরটা করে যাই।
      একটা উদাহরণ দেই ই সি এফে ৫০০০ এর উপর মেম্বার আছে। সবাই ১০০০ করে দিলে ৫০,০০,০০০। ] বলছিনা যে এভাবেই হবে। কিন্তু ক্যাডেটদের পক্ষে কিন্তু অসম্ভব না; ভাইয়া আবার বুয়েটেও পড়েছেন।
      আমাদের কাজ শুধু খবরটা ছড়িয়ে দেওয়া। তাতেই দেখবি কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    সাজ্জাদ ভাইয়ের ব্যাপারটা কানাডার এক্স ক্যাডেটদের মেইল গ্রুপ থেকে শুনলাম।
    ভাইয়া তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন এই কামনা থাকলো। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো উনার পাশে দাঁড়াবার।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. সন্ধি (১৯৯৯-২০০৫)

    শেষ কয়েক দিনে, ক্যাডেট কলেজ সম্পর্কিত খারাপ খবরই বেশি পাচ্ছি, মনে হচ্ছে। প্রথমে দেলোয়ার হোসেন স্যার, তারপর রোকিমুন্নেছা ম্যাডাম, এখন আর একজন ভাইয়ার অসুখ। সবার জন্যই দোয়া করি...ভাইয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ১ তারা, ২ তারা আমাকে ভাবিত করে না।
    একবার নূপুর ভাই আমার এক লেখায় ১ তারা দিছেন। আমি মাইনা নিছি উনার ব্যাখ্যা।
    কিন্তু এই লেখায় ১ তারা কি কইরা আসে?
    আমার জানতে সাধ কোন ছাগল এই কাম করছে?
    জুনিওর হইলে চটকানা মাইরা দাত ফেলাইয়া দিমু।
    আর সিনিওর হইলে কমু কামডা কি ঠিক হইলো!


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাব্বির (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।