“খুকি, সব্যসাচী ও একজন গুরুর গল্প”

মৃত্যুশয্যায় আজম খান

আজকে টিভিতে দেখলাম লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের গুরু আজম খানকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু নাকি তার মস্তিষ্ক কাজ করছে।
হয়তো সাপোর্টও খুলে নেওয়া হবে।

ধরে নেওয়াই যেতে পারে এই মহান শিল্পী আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। কিন্তু তার সৃষ্টি থাকবে।Screen Shot 2015-10-14 at 13.36.20

আমার প্রিয় ব্যান্ড শিল্পীদের মাঝে আজম খান সর্বত অগ্রে থাকবেন। এই যুগে ছেলেপেলেরা নতুন ধারার গান শোনে; ব্যান্ডগুলোর নামও সব জানিনা। আসলে ওইভাবে গানও শোনা হয়না অনেকদিন। আইপডে গান চলে যতক্ষণ পথ চলি; কিন্তু সেইভাবে আসলে শোনা হয়না। বাসায় যতক্ষণ থাকি মেয়ে টিভিতে কার্টুন দ্যাখে; আমিও দেখি। এখানে বাচ্চাদের জন্য খুব জনপ্রিয় একটা চ্যানেল আছে, সিবেবিস, বিবিসির, খুবই ভালো একটা চ্যানেল বাচ্চাদের মেন্টাল, ফিজিক্যাল গ্রোথের জন্য।

হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনবো, মেয়ে এসে হেডফোনের দখল নেয়। এইযে লিখছি মেয়ে এসে কিবোর্ড চাপছে; কাঁধে তুলে রেহাই পেলাম। বসে বসে সে নাচছে, আরেক ল্যাপটপে চলছে তার প্রিয় বি মুভি। আমার ধারণা মুভি দেখার ব্যাপারে সে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে ফেলেছে। এক বি মুভিই সে দেখেছে ১০০০ বারের বেশি। ভাবছি রেকর্ডওয়ালাদের সাথে যোগাযোগ করেই ফেলবো কিনা!

কোনও এক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নাকি ছিলেন সব্যসাচী; দুহাত দিয়েই লিখতে পারতেন একসাথে। আমার মেয়ে কি করে বলি; সে টিভিতে কার্টুন বা নাচ (বলিউডের অশ্লীল নাচই; তার প্রিয় নায়ক শাহরুখ খান, শহিদ কাপুর) এরা দুইজনেই আমার দুই চক্ষের বিষ। তবে শহিদ কাপুর যেভাবে শাহরুখ খানকে নকল করতে পারেন, শাহরুখ নিজেও হয়তো তা পারেনা। কয়েকদিন আগে মেয়েকে কোনোভাবে বাগে আনতে পারছিনা; হঠাৎ বললাম, শীলাকি জওয়ানি দেখবে মা? সে তো লাফানো শুরু করলো শিলা শিলা বলে। এখন তো আর টিভি খুললেই এই গান দেখা যায়না, কি আর করা ইউ টিউব থেকে দেখানো হল মেয়েকে, মুন্নি ও দেখালাম।

একসাথে সে ল্যাপটপে বি মুভি দ্যাখে।বির নায়ক ব্যারি তার খুব ভালো বন্ধুও বটে। যাদের ঘরে বাচ্চা আছে তাদেরকে এই মুভিটা (BEE MOVIE)বাচ্চাদেরকে দেখানোর জন্য বলবো। বাচ্চাদের জন্য অসাধারণ।

আর একসাথে আমার দুইটা আই ফোন অপারেট করে। চার্জ শেষ হয়ে গেলে বলে, আব্বু চার্জ, চার্জ।
সব্যসাচী আরেকজন আছেন; সৈয়দ শামসুল হক। তার নামের আগে বলা হয়ে থাকে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। গেরিলা দেখার পর ছেলেপেলেরা হয়তো তার সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহী হবে। যদিও সবাই প্রথমেই পড়বে খেলারাম খেলে যা। বা নিষিদ্ধ লোবান।
উনি যা লিখেছেন তাতেই সোনা ফলিয়েছেন; কাব্য নাটক
জাগো বাহে কোনঠে সবাই।
সিনেমার গান,
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস 
আর কবিতা,
কে আমার উঠানে নিলামের ঢোলে বাড়ি দেয়।
কিংবা
সুরঙ্গ খুড়ি স্বর্গের।
কিংবা
নীলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগনীত
আর নিচে গ্রাম-গঞ্জ, জনপদ আছে ৬৯ হাজার,
ধবল দুধের মতন জোছনা তার ঢালিতেছে চাঁদ পূর্ণিমার

ছোটগল্প,
বড়গল্প,
উপন্যাস।
খেলারামের বাবর আলী তো ইতিহাস।
কলাম;
হৃৎকলমের টানে।
আমাদের পরানের গহীন ভিতর নামটাওতো তার সনেটগুচ্ছ পরানের গহীন ভিতর থেকে নেওয়া।
আমার তো মনে হয় রূপসী বাংলার পর এরকম সার্থক সনেট এই বাংলায় আর কেউ লিখেছেন কিনা।
রবীন্দ্রনাথের পর বুদ্ধদেব, আর এরপর সৈয়দ হক।
ভালো কথা হক শিল্পীও বটে।
যতদূর মনে পরে বৈশাখে রচিত পংতিমালা, পরানের গহীন ভিতরের প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ তার নিজের করা।
কিন্তু এই সৈয়দ শামসুল হককে নিয়ে বলতে গেলে তেমন কোনও হইচই ই বাংলাদেশে হয়নি। কেন এটাই বিশাল বিস্ময়।

যাই হোক আমার আজম খানে ফেরত যাই। আমাদের প্রিয় আজম খান মুক্তিযোদ্ধাও বটে।
কমলাপুরের বৌদ্ধমন্দিরের ওইদিকে বাসা ছিল, বাসার সামনে হাফপ্যান্ট পরে বসে থাকতেন।
ক্রিকেট খেলেছেন (প্রতিযোগিতামূলক)
কিন্তু মহান এই শিল্পী বেচে থাকবেন তার অবিস্মরণীয় গানগুলোর মাঝে।

রেল লাইনের ঐ বস্তিতে জন্মেছিল একটি ছেলে
মা তার কাঁদে ছেলেটি মরে গেছে
বাংলাদেশ, হায় আমার বাংলাদেশ।

চানখারপুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ি;
আলাল যদি ডালে থাকে, দুলাল থাকে চালে।
তাদের বাবা হাজী জান।

চুপচুপ চুপ অনামিকা চুপ
কথা বলো না, তুমি আমি এখানে কেউ জানেনা।

প্রেম, চিরদিন দূরে দূরে এক হয়ে থাক না।
মিললেই তো ফুরিয়ে যাবে।

আমি যারে চাইরে, সে থাকে মোর ই অন্তরে। 
আমি তারে পেয়েও হারাইরে। 

আসি আসি বলে তুমি আর এলেনা।
সেই দিন থেকে জীবনের সাথে শুরু সাধনা।

অভিমানী, তুমি কোথায় হারিয়ে গেছো,
তুমি তো মানাবে, তুমি তো বোঝাবে।

এই রকম আরও কতো। গুরু তুমি ভালো থেকো, যেখানেই থাকো।

ওরে সালেকা, ওরে মালেকা, ওরে ফুলবানু তোরা পারলিনা কেউ তারে বাঁচাতে।

৪০ টি মন্তব্য : ““খুকি, সব্যসাচী ও একজন গুরুর গল্প””

  1. নাজমুল (০২-০৮)

    আমরা সেদিন বাসায় আজম খানের গান শুনসি সারারাত।
    যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

    রায়াতো অনেক কথা বলে তাহলে। সোমবার আপনার কাজ না থাকলে রবিবার আসতে পারি। 🙂

    জবাব দিন
  2. আন্দালিব (৯৬-০২)

    শামসুল হককে নিয়ে আলোচনা হয়, তবে গড়পড়তা মানুষ (যাদের পাঠ্যের পরে বই পড়ার দৌড় হুমায়ুন আহমেদ বা জাফর ইকবাল) শামসুল হক পড়ে নাই কারণ তার লেখা ঠিক চটকদার না। শুরুতেই পাঠককে হুকড করে না। পড়তে পড়তে একটা সময়ে এসে আর ছাড়া যায় না। আমি নিজেও শামসুল হক পড়েছি অনেক দেরিতে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে। অবশ্য এতে ভালো হয়েছে। কিছু কিছু লেখা একটু বয়স হইলে পড়া ভাল। 🙂

    আরেকটা কারণ মনে হয় যারা অনেক বই পড়েন বা সাহিত্য পড়েন তারা আলোচনায় শামসুল হককে আনেন না কারণ তারা কনফিউজড হয়ে যান। এই লোক একাধারে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ লিখেছেন। আবার প্রতিটা ক্ষেত্রেই নতুন নতুন ধারা ও উপধারা তৈরি করেছেন। ক্লাসিক ঘরানার ফরম্যাট ভেঙে নতুন ফরম্যাটে লিখেছেন কবিতা ও উপন্যাস, নাটক ও গল্প। এ'কারণে অনেক আলোচক/পাঠক কনফিউজড যে তাকে কী হিসেবে আলোচনা করবেন। এর যে কোন একটা ফিল্ডে থাকলে তিনি অনেক গুণগ্রাহী আলোচনা ও ভূয়সী প্রশংসা ও ফ্যানগ্রুপ বানিয়ে ফেলতে পারতেন। সবার সব আগ্রহের জায়গায় ঢুকে পড়েছেন বলে কেউই আপন ভাবে না তারে! 🙁

    জবাব দিন
    • আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

      ভাই, খেলারাম খেলে যা দিয়েই শুরু করেছিলাম, বিশেষ বিষয়ের জন্যই 😉 , কিন্তু শেষ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম। তারপর পুরো সমগ্র একটানে। মানুষ না পইড়াই সমালোচনা করে।
      আর গুরু...............
      কলেজে বৃহঃ বার রাতের আসরে আরেফিন অরে সালেকা অরে মালেকা বলে যেই টান টা দিত, মাথা খারাপ হয়ে যেত।
      খুব খারাপ লাগতেসে এই লোকটার জন্য।


      মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
      অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

      জবাব দিন
      • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

        আরিফ,
        শামসুল হক সম্পর্কে ভালো বলেছিস। তার সমগ্র বের হওয়ায় বেশ সুবিধা হইছে। আমার তো অনেক ঝামেলা কইরা তার বই ম্যানেজ করতে হইতো।

        আজম খান তো আজম খানই। গুরুর কোনো বিকল্প নাই।

        আমরাও


        এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

        জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      আন্দালিব,
      ভালো বলেছিস।
      আমার বাবা হুমায়ুন আহমেদের খুব ভক্ত।
      বইমেলা থেকে আমার পছন্দের বই কিনে নিয়ে গেলে আব্বা বিরক্ত হতেন। খোঁজ করতেন হুমায়ুন আহমেদের বই এনেছি কিনা? বলতাম, না।
      জিজ্ঞাসা করতাম, যাদের বই আনি তাদেরটা পড়ো, সমস্যা কি? আব্বা উত্তর দিতো, জীবনে অনেক ভারী বই পড়েছি, এখন (হালকা) আনন্দের জন্য পড়তে চাই।
      বাধ্য হয়ে হুমায়ুন আহমেদের বই আনতে হোতো।
      আমার যে হুমায়ুন আহমেদ খারাপ লাগে তা নয়। হয়তো হাতে গোনা অল্প কয়েকটা বই বাদ গেছে পড়ার তালিকা থেকে।
      হুমায়ুন আহমেদের সিরিজগুলা তো আছেই, আমার পছন্দ তার ছোটগল্পগুলো।
      যাইহোক আমার প্রিয় হোলো সৈয়দ শামসুল হক, আর হুমায়ুন আজাদ। যদিও দুজনের মাঝে সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিল। প্রবচনগুচ্ছের ভুমিকা পড়েছিস?
      কিন্তু তারা একে অপরের প্রতিভার কদর করেছেন।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
      • আন্দালিব (৯৬-০২)

        আমারও এঁরা দুজনেই প্রিয় লেখকদের অন্যতম। দুইজনেই বহুমাত্রিক লেখক। তবে খারাপ সম্পর্ক ছিল এটা পুরোপুরি ঠিক না। প্রবচনগুচ্ছের ভূমিকা লেখার সময়ে খারাপ ছিল। তাও লেখা-সম্পর্কিত কারণে। শামসুল হক সম্ভবত হুমায়ুন আজাদের "নিঃসঙ্গ শেরপা" বইটা নিয়ে বলেছিলেন যে এটা গুণমুগ্ধ কবিতা পাঠকের রচনা হয়েছে। এতে আজাদ একটু খেপে গিয়েছিলেন মনে হয়। তারপর প্রবচনগুচ্ছের ভূমিকা! 😛

        আমি অনেক পরে তাদের এক সাথে টিভি অনুষ্ঠানে দেখেছি, খুব স্বাভাবিক সম্পর্ক। 🙂

        জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    রাজীব,

    আযম খান এখন অনেক ভালো। তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। আরো অনেকদিন বেঁচে থাকুন সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠা এই মানুষটা।

    সৈয়দ হক নিয়ে যাই বলো কম বলা হবে। আমাদের যৌবন তিনি মুগ্ধ করে রেখেছিলেন "বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা", "পরানের গহীন ভিতর"- এমনসব কাজ দিয়ে। আন্দার বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      সানাউল্লাহ ভাই,
      টিভিতে তাই দেখলাম, আজম খান আগের চাইতে একটু ভালো।
      গাঞ্জা খাইয়া শরীরের তো কিছু নাই।
      তার উপর ক্যান্সার।

      আমার তারুণ্যে ভরা দিনগুলো গিয়েছে।
      শিমুল মুস্তাফার পরানের গহিন ভিতরের কাজটা খুব ভালো হয়েছিলো।
      তবে কবিতাটাই আগে পড়েছিলাম।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    রাজীব,
    নষ্টালজিক করে দিলে। আজম খানের গান, সৈয়দ হকের কবিতা আর হুমায়ূন আজাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল একটানে পেরিয়ে বেড়িয়ে এলাম।পনের-কুড়ি বছরের ঘোরলাগা মুহুর্তগুলো এখনো কি সতেজ এঁদের সৃষ্টিশীলতার স্বাদ নিয়ে।
    'সাপে নেউলে' সম্পর্ক যে ছিলো হকের সংগে আজাদের এটি মোটামুটি সর্বজনবিদিত।
    খুব কাছ থেকে দেখেছেন এমন লোকের থেকেও শুনেছি।

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      নূপুর ভাই
      ভুলে গেছি সৈয়দ হকের প্রথম কোন লেখাটা পড়েছিলাম; হয়তো ছোটগল্প সংগ্রহ, কলেজে থাকতে।
      তবে হুমায়ুন আজাদের প্রথম লেখা পড়েছিলাম প্রবচনগুচ্ছ, কলেজে।
      বের হয়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। এরশাদরে আর কেউ এতো গালি দিছে কিনা সন্দেহ।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
        • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

          নূপুর ভাই,
          মনে করতে পারছিনা।
          পরানের গহীন ভিতর মনে আছে এর অতুলনীয় বুননশৈলীর জন্য।
          বৈশাখে রচিত পংতিমালা মনে আছে অভিনবত্বের জন্য।
          আর বেশিরভাগ কবিতাই যা পড়েছি শামসুল হকের তা ছিলো হয় সংগ্রহে অথবা সমগ্রে। তাই আলাদা করে কবিতা গ্রন্থের নাম মনে নাই।
          রুদ্রের ক্ষেত্রে ও একই ঘটনা, দুইটা সমগ্র পড়েছি; কিন্তু আলাদা করে বইয়ের নাম মনে নাই।
          শামসুর রাহমান, রফিক আজাদ কারোরেরেই দেখি কোনও বইয়ের নাম মনে আসছে না।
          গুনের প্রেমাংসুর রক্ত চাই,
          হুমায়ুন আজাদের অলৌকিক ইস্টিমার,
          বিষ্ণুদের চোরাবালি, উর্বশী ও আরটেমিস
          জীবনানন্দের সাতটি তারার তিমির, বনলতা সেন, রূপসী বাংলা
          বুদ্ধদেব বসুর একটাও মনে নাই, বন্দীর আর্তনাদ কি তার কাব্যগ্রন্থের নাম?
          সুধীন দত্তের, না মনে নাই। অর্কেস্ট্রা কি?
          না কিছুই মনে নাই।


          এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

          জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আলাল ও দুলাল ছিল মনে হয় আমার ছোট বেলার প্রথম প্রিয় গান, নাইরে নাইরে নাইরে নাই...

    গুরু সব সময়ই আমাদের মাঝে থাকবেন গুরু হয়েই...

    সৈয়দ শামসুল হকের শুধু একটাই লেখা পড়া হয়েছে... কত কিছুই পড়া হয়নি 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    লেখাটা আগে পড়ছিলাম।
    এখনকার নামটা আমার পছন্দ হইছে। সৈয়দ হকের ব্যাপারে প্রথম জানতে পারি আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনী শীর্ষক একটা বইয়ে। তার ব্যাপারে হু আজাদের ভূমিকা পড়ে অবশ্য কিছুটা বিব্রত হয়েছিলাম। অবশ্য হু আজাদ তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে শুরু করে পরে বাঁশটা দিয়েছিলেন। তাঁর লেখা পরবর্তীতে যা পড়া হয়েছে তা একেবারেই ছাড়া ছাড়া। সময় করে পড়তে হবে।

    গুরুর ব্যাপারে আসলে নতুন করে কিছু বলার নাই। বাংলাদেশে অল্প কিছু সাদাসিদে ভালো মানুষদের মধ্য তিনি একজন। গুরু ছিলেন কাঁপানো মুক্তিযোদ্ধা । অথচ অন্য অনেকের মতই সেটাকে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যভার করেননি। কিন্তু আমরা এমন এক জাতি এমন একটা লোকের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রভাইড করতে পারিনি । গুরু হয়তো থাকবেন না লৌকিক পৃথিবীতে কিন্তু তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি বেচে থাকবেন কোটি কোটি মানুষের মনে আজীবন। বিদায়বেলায় এটুকুই বলি,
    "গুরু তোমাকে সালাম"

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      আমিন,
      যাইহোক পাইছিস তো সৈয়দ শামসুল হকরে। বাকি টুকুও হয়ে যাবে।
      হুমায়ুন আজাদ তারে কিন্তু সৃকিতি ঠিকি দিছে।
      এই দুইজনেরেই সৃষ্টিশীলতা নিয়া কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত না।

      স্যার আশুতোষ রবীন্দ্রনাথের বই কোলকাতা ইউনিতে পাঠ্য করেন নাই (রবীন্দ্রনাথ রিকোয়েস্ট করেছিলো)। তাতে কি কেউ খাটো হইছে!

      আর গুরু, গুরুই।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      টয় স্টোরি গুলা আমারও খুব ভালো লাগছে।
      তবে আমার মেয়ে দ্যাখে মীনা, CBEEBIES BBC . আর হিন্দি গান, ইদানিং চাঁদের কোনো আলো নাই এর সূচনা সঙ্গীত তার খুব পছন্দ।
      কিন্তু বী র কোনো গন্ধ পাইলেই তার আর খবর থাকেনা। বী বী কইরা চিল্লাইতে থাকে। তার যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া মাঝে মাঝেই তারে হুমকি দিই যে, ব্যারীকে মেরে ফেলবো।
      হা হা হা।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  7. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    শামসুল হক পড়েছিলাম অনেক আগে। উনার ভাষা আর শব্দ চয়ন আকর্ষণ করে। উনার নারী চরিত্র চিত্রণগুলো অতোটা পছন্দ হয়নি। অবশ্য এই পর্যন্ত আমার পড়া বাংলাভাষায় বাংলাদেশী লেখকদের কলমে নারী চরিত্রগুলোকে কেমন জানি ফান্টাসাইজ মনে হয়। বাস্তব মনে হয় না।
    'লাল সালু', 'পদ্মা নদীর মাঝি' এই সারিতে রাখা যায় সৈয়দ শামসুল হকের একটা উপন্যাসের নাম বলবে - সংগ্রহে রাখবো।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      ওয়াহিদা আপা,
      একটু ঝামেলায় ফালাইয়া দিলেন।
      লাল সালু আমাদের পাঠ্য না হইলে কি আমরা পড়তাম, আমরা কয়জন মূল বইটা পড়ছি, বা সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর অন্য উপন্যাস, যেমন চাঁদের অমাবস্যা।
      লোকজন ছবি বানানোর জন্য লালসালুর সঙ্গে আরো বেশি পরিচিত হইছে।
      একই কথা পদ্মা নদীর মাঝি সম্পর্কে। পাঠ্য ছিল।
      তার উপর জটিল ছবি হইছে। উৎপল দত্ত, আসাদ, রূপা গাঙ্গুলি সবার অভিনয় ভালো হইছে।
      পথের পাঁচালি সম্পর্কেও একই কথা।

      এখানে তো স্থায়ী নই। লাইব্রেরী থেকে বই এনে পড়ি।
      তবুও সংগ্রহে যা আছে বলি,
      তিনটা কোরআন,
      ২টা বাইবেল,
      স্যাটানিক ভারসেস,
      প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস; এইতো।
      আর ছোটোদের বই, আমার মেয়েদের জন্য।

      ব্যাক্তিগত ভাবে তারাশঙ্কর বেশি পছন্দ তার সময়ের যে কারো চাইতে।
      এখনকার আবুল বাশার।
      আমার কাছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই, খোয়াবনামা, ছোটগল্প সমগ্র পছন্দের।
      কি আর বলবো আপা, একেকজনের পছন্দ একেক রকমের।
      নতুন করে আরেকজনকে ভালো লাগা শুরু হয়েছে, বুদ্ধদেব গুহ।
      আর মুজতবা আলী আমার অল টাইম ফেবারিট।
      ভালো থাকবেন আপা।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
      • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

        লাল সালু আমার অল টাইম ফেভারেট। ধর্মের গোড়ামী তুলে ধরতে গিয়ে অনেকে শুধু বিতর্ক তৈরী করেছে তাতে সমাজের কোন লাভ হয় নাই উল্টা সমাজে আরো গোঁড়ামী ঢুকে গেছে। আমরা এর চাক্ষুস সাক্ষী। নব্বইয়ের আগের আর পরের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। লাল সালু এমন বুদ্ধিদীপ্ত, উচ্চমানের একটা উপন্যাস যে সরাসরি ধর্ম নিয়ে একটাও খারাপ কথা বলে নাই কিন্তু মাজা্র ব্যবসা কী জিনিষ এইটা বুঝিয়ে দিয়েছে। পদ্মা নদীর মাঝির থেকেও আমার বেশি পছন্দ পুতুল নাচের ইতিকথা। পাঠয় বইয়ের মাধ্যমেই পরিচয় কিন্তু এরপর দোকান ঘুরে ঘুরে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সব লেখা যোগার করেছি। ছোট গল্পগুলো তো অসাধারণ। ক্ল্যআসিক সাহিত্যগুলো মহাদেশের মতো। অনেকের মধ্যে তা ধারিত হয়। শেক্সপিয়ারের নাটকের ঘটনার ্ঘনঘটা আর সংলাপের গতিময়তা এখনও পাঠককে মুগ্ধ করে। তবে হ্যা, মহাদেশের বাইরেও তো কিছু কিছু দ্বীপ গড়ে উঠে।
        ফ্যআক্ট আর ফিকশনের বিভেদরেখা মুছে দিয়ে পাঠক আকৃষ্টতা আর ফিলসফি এ দুটোই যখন খুব গভীরে পৌছোতে পারে তখনই বোধহয় সাহিত্য ক্ল্যআসিক হয়ে উঠে - টিকে যায়।


        “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
        ― Mahatma Gandhi

        জবাব দিন
        • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

          আপু আমি একটু আপনার সাথে বক্তব্যে আমার দ্বিমত নাই তবে লালসালু এবং সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ব্যাপারে আমার নিজের কিছু মূল্যায়ন বলতে চাই। লালসালু উপন্যাসটিকে মোটা দাগে ধর্ম বা মাজার ব্যবসার সফল চিত্রায়ন বললেও এই বিষয়টি মূলত এই উপন্যাসের বাই প্রোডাক্ট। এই উপন্যাসের অন্যতম একটা মূল বিষয় হলো সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর রেখে যাওয়া অস্তিত্ববাদ বিষয়ক দার্শনিক প্রশ্ন। আমরা জানি একটা অন্যায় করছি কিন্তু সেই অন্যায় না করলে আমরা টিকে থাকতে পারবো না, এই অন্যায়টিকে ঠিক অন্যায় বলা যাবে কিনা সেটাই হলো সেই দার্শনিক প্রশ্ন। মূলত ওয়ালিউল্লাহর তিনটি উপন্যাস লালসালু , চাঁদের অমবস্যা ও কাঁদো নদী কাঁদো সিকুয়েল উপন্যাস। লালসালুর মাঝে খুঁজে যাওয়া প্রশ্ন আরো গভীরভাবে এসেছে চাঁদের অমবস্যা র মাঝে। মজিদ বিবেকের চাইতে নিজের অস্তিত্বের রক্ষাতেই বেশি মগ্ন থাকলেও চাঁদের অমবস্যার যুবক শিক্ষক আরেফ মিয়া অস্তিত্বের চাইতেও ন্যায়কে উপরে স্থান দিয়েছেন। এই ব্যাপারটা যেমন পর্যায় ক্রমিক তেমনি জমিলা আর আরেফ মিয়ার মাঝে মিল গুলাও পর্যায়ক্রমিক। জমিলা প্রতিবাদ করেছিলো কিন্তু তার প্রতিবাদ অনেকটা না বুঝে প্রতিবাদ অচেতনেই প্রতিবাদ । অথচ আরেফ মিয়ার প্রতিবাদ আমরা দেখি সচেতনতা ও বিবেক পীড়নে। তবে অচেতন সচেতন যেভাবেই হোক প্রতিবাদ করে জমিলা ও আরেফ মিয়া দুজনেই ব্যর্থ।
          এই ব্যর্থতার সফলতা ওয়ালিউল্লাহ খুঁজেছেন কাঁদো নদী কাঁদো উপন্যাসে। সেআখনে মুহম্মদ মোস্তফা আর একটি গ্রামের গল্প পাশাপাশি এসেছে। একা যুদ্ধ করে মুহম্মদ মুস্তাফা ব্যর্থ হলেও সচেতন সংগঠিত প্রতিবাদের মাধ্যমে গ্রামবাসী ঠিকই ব্যর্থতাকে জয় করেছিলো।
          চাঁদের অমবস্যা আমার পড়া সেরা উপন্যাসগুলোর মাঝে একটি। এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক এর মোহনীয় ভাষা শৈলী এবং পাঠককে মোহমুগ্ধ করা কাহিনীর প্রগ্রেস। আর বক্তব্যের কথাতো আগেই বললাম।

          জবাব দিন
        • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

          পুতুল নাচের ইতিকথা আমার ফেভারিট উপন্যাসগুলোর একটা। তবে তারপরেও মানিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটির কাছে আমি বেশি কৃতজ্ঞ। সমান কৃতজ্ঞতা পথের পাঁচালী উপন্যাসটির প্রতিও সাহিত্যের প্রতি ভালো লাগা জাগিয়ে তোলার জন্য।
          পদ্মানদীর উপন্যাসটির মজার দিক হলো এটা সমান্তরাল ভাবে ধারণ করছে দুটি বক্তব্য একদিকে ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব অন্যদিকে সাম্যবাদী চেতনা। মানিক দুটো দ্বারাই ভীষণভাবে প্রভাবিত ছিলেন।
          পুতুল নাচের ইতিকথা অবশ্য মানিকের অন্য উপন্যাসগুলোর চেয়ে কমপ্লিট। তবে আমার কাছে মানিকের বিস্ময়কর সৃষ্টি মনে হয়েছে দিবারাত্রির কাব্য। এর মূল কারণ এই উপন্যাস লেখার সময় মানিকের বয়স। মাত্র একুশ বছর বয়সী একজনের ভাবনার গভীরতা এবং দেখবার ক্ষমতা আসলেই বিস্ময়কর।

          জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        রাজীব ভাই, আপনার কথাটা সত্য আমি মানি। সিনেমা না হলে হয়তো পথের পাঁচালী, পদ্মানদির মাঝি কিংবা লালসালুর পড়ার লোক কম হতো। তবে সমান ভাবে একথাও সত্য এই সিনেমাগুলোর কারণেই আমাদের আম কাঁঠাল জনতার বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে।
        লালসালু সিনেমা আমি দেখিনি। অন্য দুটি দেখেছি। সিনেমা দুটি যথেষ্ট ভালো হলেও আমার কাছে মনে হয়েছে আবেদনের দিক থেকে মূল উপন্যাসগুলোর ১০% ও কাভার করতে পারে নি।

        জবাব দিন
        • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

          আমিন,
          সিনেমা না বানাইলে সাহিত্যের কোনো উপকার হইবো বইলা আমার মনে হয় না।
          অবশ্যই সাহিত্য মহত্তর; আবার সাহিত্যের অন্যান্য ধারার চাইতে কবিতা অধিকতর মহত্তর।
          কেউ একজন বলেছিলেন, "স্বর্গে কবিরা যখন হেঁটে যাবেন, সাহিত্যের অন্য শাখার রথী, মহারথীরা তাদের পথ ছেড়ে দেবেন।"
          পজিতিভটা ভাব, সিনেমায় সাহিত্য আসায় সিনেমার মান উন্নত হচ্ছে বা হয়েছে।

          আর আবেদনের বিষয়টা একটু জটিল বটে।
          ভাষান্তরের বিষয়টা ধর।
          এখন বদলেয়ারের কবিতা বোঝার জন্য এখন কি আমি ফ্রেঞ্চ শিখবো?
          হাইনের জন্য জার্মান?
          ডক্টর জিভাগোর জন্য রাশান?
          লোরকা, মারকেজের জন্য স্প্যানিশ?
          কেনো একথা বললাম, ভাষান্তরে মূল জিনিসটা কিন্তু হারিয়ে যায়।
          যাই হোক তোর মূল বক্তব্যের সাথে দ্বিমত নাই।


          এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

          জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        তারাশঙ্করের হাঁসুলিবাঁকের উপকথা পড়েছি অল্প কদিন আগে।জমিদার বাড়ির ছেলে হয়ে সাব-অল্টার্ন মানুষদের এরকম নিখুঁত চিত্রন কিভাবে করলেন ভাবতেই অবাক লাগে।তাঁর সবচেয়ে নামকরা উপন্যাস ধাত্রীদেবতা,পঞ্চগ্রাম এখনও পড়া বাকি আছে...

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।