করি বাংলায় চিৎকার

১…

আমি বাংলাতেই কথা বলি। কারণ, হতে পারে আমি বিদেশীদের মতো শিক্ষিত নই- তাদের সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই ফটফট ইংরেজি বলে। আমার বাবা- মা বিদেশী না। আমি তাই বাংলায় কথা বলি- একদম ফটফট করে।

আমি অন্য কোনো ভাষায় লিখতে পারি না। লিখতে গেলে আমি কী লিখতে চাই সেটা ভুলে আমাকে ব্যকরণ নিয়ে গবেষণা করতে হয়। আমি তাই বাংলায় লিখি। আমি বাংলায় চিৎকার করি, ঝগড়া করি, প্রেমিকাকে মোবাইলে চুমু ছুঁড়ে দেই।

বাংলা আমার মায়ের ভাষা। আমার মায়ের ভাষা যদি উর্দূ, হিন্দি, পশতু কিংবা আরবি হতো, তাহলে আমি সেই সেই ভাষাতেই কথা বলতাম, সেই ভাষাতেই কবিতা লিখতাম, সেই ভাষা দিয়েই আমার ছোট্ট চিলেকোঠায় আপন ঘর সাজাতাম। পৃথিবীর সব মানুষের জন্যই কথাটা সত্য। সবাই তার মায়ের ভাষায় কথা বলতে চায়।

কিন্ত বিপদে পড়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষেরা। শুওরের বাচ্চা ফাকিংস্তান সরকার তাদের মায়ের ভাষার উপর বিজাতীয় উর্দূভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেই, চাকরির জন্য পরীক্ষা দেই, পরীক্ষা দেই কখনও সৃষ্টিকর্তার প্রশ্নে। কিন্তু আমাদের সেই পূর্বপুরুষদের পাকিস্তান সরকার সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সামনে দাঁড় করে দিয়েছিল। তারা কী করবে?

সেই পরীক্ষায় তারা ফেল করেনি। কম্পিউটার গেমে নয়, একদম সামনা সামনি তারা অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল বুক চিতিয়ে। তাদের মরে যাবার আশংকা ছিল, হয়তো তারা মরে যেতেই চেয়েছিল, কারণ মায়ের ভাষা কেড়ে নেবার মতো ঘটনা দেখার চেয়ে মরে যাওয়া বেশ ভালো। হ্যাঁ!! তাদের মধ্যে কয়েকজন সত্যি সত্যি মরে গিয়েছিল।

পৃথিবীর সবমানুষের মায়ের ভাষার প্রতি যে ভালোবাসা, তা প্রমান করেছিল পিচ ঢালা রাস্তায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্ত।

২…

আইইউটিতে কখনও দেখলাম না স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি এইসব বিশেষ দিন পালন করা হয়। প্রশসন তো করেই না, পোলাপানও না। এইবার ভাবলাম একটা কিছু করা দরকার। কী করা যায়, সেটা ভাবতেই এসে গেলো দেওয়াল পত্রিকার প্ল্যান। কলেজে কোনোদিন কেউ আমাকে দিয়ে দেওয়াল পত্রিকার কাজ করাতে পারে নাই- এইবার স্বেচ্ছায় সেই দায়িত্ব তুলে নিলাম।

আমাদের ব্যাচ ক্যাডেট ভরপুর। দুই একজনকে ওয়াল ম্যাগাজিনের কথা জানাতেই তারা ব্যাপক আগ্রহ দেখালো। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হলো কাজ। পোলাপান লেখা দিলো, সেই লেখা বাছাই করা হলো। একি সাথে চলতে থাকলো অঙ্গসজ্জার কাজ।

সবার মারাত্মক খাটনিতে কাজটা শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছিল বিশ তারিখ রাতেই। তারপর আমরা সবাই মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করলাম, দেশাত্মবোধক গান গাইলাম। সেই রাতের কিছু ছবি শেয়ার করি।

কাজ চলিতেছে

৭৭ টি মন্তব্য : “করি বাংলায় চিৎকার”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    এরেই বোধহয় বলে, 'তুমি কার কে তোমার বলে জীব...' :-B
    ধ্যাৎ, এইটা না... :bash:
    পাইছি... B-)
    'নদীর এপাড় বলে ছাড়িয়া নিশ্বাস...' 😀

    আইইউটি পার্টি আফসোস করে 'সেই রকম ক্যাম্পাস' পেল না বলে...আর আজকে এই ছবি দেখে আমার আফসোস হচ্ছে 'কলেজ থেকে বের হবার পরও এদের মতন কলেজ ফ্লেভার যদি পাইতাম...' :((


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

      এইটা একটা ভালো কথা বলছেন। আইইউটিতে পইড়া আমি একটা কারণে বিরাট হ্যাপি। কারণ এইটা একটা ক্যাডেট কলেজ, কিন্তু কোন নিয়ম কানুন নাই। একটা ক্যাডেটের জন্য এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে।

      প্রথমদিকে ভাবছিলাম ক্যাডেট পোলাপান দিয়াই কামটা করাতে হবে। পরে দেখলাম সবাই উৎসাহ নিয়ে ঝাপায়ে পড়ছে। আমি খালি হাউস কালচারাল প্রিফেক্টের মতো কমান্ড দিয়া বেড়াইছি 😛 ।

      সো ইউ নো, সেই রকম ক্যাম্পাস না থাকলেও আল্টিমেটলি আইইউটিই রক করে :-B

      জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    সাবাশ... IUT-এর পোলাপান ROCKS!!!
    IUT তে তো গান্ধা কিসু পাকিস্তানি আছে... গোসল-টোসল করেনা। আমি মাঝে একবার বাটে পইরা ছিলাম ৪ দিন।

    প্রেমিকাকে মোবাইলে চুমু ছুড়ে দেই :-* ।

    তাই নাকি?? 😡 সিরিয়াস প্রেম দেখতেসি :clap:

    জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

      মজার ব্যাপার হলো, "পাকিস্তানীরা কী মনে করবে?" এইজন্য নাকি এইখানে কোন অনুষ্ঠান হয় না। আমি জানিনা এই কথা কার। যাই হোক, এই বাক্যে থু মারার কাম, আমি মারি।

      সম্পাদকীয় লেখার সময়, আমি পাকিস্তান সরকারের জায়গায়, শুওরের বাচ্চা কথাটাই লিখছিলাম। পরে পোলাপানের দাবীর মুখে গালিটা কাটতে বাধ্য হইছি। লেখা থেকে কাটা গেলেও কথাটা আমার অন্তরে ঠিকি গাঁথা আছে।

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  3. সামীউর (৯৭-০৩)

    আসলেই অবাক হইলাম...একটা স্বাধীন দেশের ভিতরে একটা বিশ্ববিদ্যালয় (হতে পারে আন্তুর্জাতিক অথবা মুসলিম বিশ্বের অর্থায়নে পরিচালিত) যেখানে ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর মান কি শুধুই ছুটির দিন! কোন অনুষ্ঠান -উদযাপন নাই...ঠিক মাদ্রাসা গুলার মতো!

    জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

      মতো না। আসলেই মাদ্রাসা। এইটা অথোরিটির মেন্টালিটি না। অনেক ছাত্রেরও মেন্টালিটি।

      ওয়াল ম্যাগাজিনের জন্য চাঁদা দরকার। খুব বেশী না, 4th ইয়ারের একটা ডিপার্টমেন্টের সবাই যদি ৩০ টাকা করেও দেয়, তাহলেই উঠে যায়। কিন্তু এইটাকার জন্যই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

      কারণ আমাদের ব্যাচের পচুর পোলাপান হুজুর এবং পচুর পোলাপান হুজুর না হলেও আধা হুজুর। ওয়াল ম্যাগাজিনের কথা শুনে তারা ফতোয়া দিলো, অনুষ্ঠান তাদের পছন্দ না, তারা কেউ টাকা দিবে না। অনুষ্ঠানের কোন পার্টটা তাদের পছন্দ না, এইটা জানতে চাইলে বললো- এই যে, ফুল টুল দিয়ে অনুষ্ঠান করা।

      আমাদের পরিকল্পনায় ফুল টুলের ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ওদের এই কথা শুনে মনে হলো দেয়াল পত্রিকার সাথে সাথে একটা শহীদ মিনারও বানাবো, সেখানে ফুল দিবো। কিন্তু টাকা পয়সা ও পর্যাপ্ত সময়ের কারণে সেটা করা গেলো না। 🙁

      তবে দিন বদল তো একদিন হবেই, তাই না? সেই আশাতেই আছি।

      জবাব দিন
  4. রহমান (৯২-৯৮)

    সাবাশ রায়হান :clap: । খুব ভাল লাগল ছবিগুলো দেখে 🙂 । প্রশংসনীয় উদ্যোগ :thumbup:

    প্রথম ছবিতে মাথা নিচু করে সবুজ রঙ দিয়ে যে স্প্রে করছে, সেটা কি তুমি নাকি?

    জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    ছবিগুলা দেখে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এত সুন্দর!!!! আমি ওয়াল ম্যাগাজিনটা দেখছি দিনের বেলায়। দিনের বেলা দেখেও মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু ছবি দেখে পুরা টাস্কি।
    তোরে এই অসামান্য কাজের জন্য কোটি কোটি অভিনন্দন। আর আমারে ধিক্কার। কিসব কুটতর্ক আর হেজেমনির জন্য গত এক সপ্তাহে তোদের কোন হেল্পই করতে পারি নাই। উদ্বোধনের সময়ও যাই নাই। 🙁
    অনন্যসাধারণ কাজ। মুক্তিযুদ্ধের নাটকের প্ল্যানটা তো আরও বস। তোকে দিয়ে হবে, লিইখা দিলাম।
    রায়হান তুমি এগিয়ে চল...
    আমরা আছি তোমার পিছে......

    জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

      *

      আকাশ থেকে পড়ার কিচ্ছু নাই। একটু এডিট করছি। ফ্ল্যাশের কারণে ছবিটা ভালো আসছিল না। তবে জিনিসটা সুন্দর হইছে। আমার ভীষণ ভাল্লাগছে।

      *

      আমারে অভিনন্দন দেওয়ার কিচ্ছু নাই। ইমনরে দে। তারপর রোকন, মোতাহার, সানি ভাই। আমি তো কিছুই করি নাই। খালি ম্যানেজ 😀

      *

      তর্কাতর্কি একটু হবেই। আমার জ্ঞান থাকলে আমিও করতাম। এইজন্য মন খ্রাপের কিচ্ছু নাই।

      *

      নাটকের ব্যাপারটা মাথায় আছে। কলেজে আমরা একটা নাটক করছিলাম। আমি অভিনয় করি নাই যদিও তবে পুরা ব্যাপারটা মাথায় আছে। সেইটা কাজে লাগাইলেই হবে। অভিনয় করার মতো মানুষ অনেক আছে।

      জবাব দিন
  6. সামিয়া (৯৯-০৫)

    চরম কাজ, খুব খুব সুন্দর। আমার তো লিখাগুলা পড়তে ইচ্ছা করতেছে। লিখাগুলার ছবি তুলে দিয়ে দেয়া যায় না? আমরা জুম করে পড়ে নিলাম?
    মোমবাতির আইডিয়াটা খুবই সুন্দর। মোমবাতি নিজেই সুন্দর জিনিস, অন্যকেও সুন্দর করে ফেলে।

    জবাব দিন
  7. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    ফুল-টুলের চেয়ে দেয়াল পত্রিকার আয়োজনটাই যথার্থ হয়েছে। একটা ক্রিয়েটিভ জিনিশ হয়েছে। ফুলের ব্যবস্থা করলে পরদিন আবার সেটা সেই ফেলেই দেয়া হত। ওটার চেয়ে এই সংস্কৃতি-সাহিত্যচর্চাটা আরো বেশী ইফেক্টিভ বলে আমার মনে হয়।

    “পাকিস্তানীরা কী মনে করবে?”

    বেল আছে???? :gulli: আমগর দ্যাশ, আমগর দিন, আমগর উৎসব; হেগো কি????? :thumbdown:

    জবাব দিন
  8. তানভীর (৯৪-০০)

    লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগল। :thumbup: :thumbup:
    ছবিগুলা মনে হয় ফেসবুকের লিঙ্ক, অফিসে ব্লক করা, তাই দেখতে পারলাম না। তবে সবার মন্তব্য পড়ার আগেও বুঝে নিতে সমস্যা হয়নি যে ক্যাডেটদের করা দেয়াল পত্রিকা সুন্দর হবেই। 🙂

    জবাব দিন
  9. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আগেও মনে হয় কইছিলাম, আবার কই, "এই পোলাটা একটা মাল, আমি এইটারে খুব ভালা পাই, সিসিবি কত্ত বস পোলাপাইনে ভইরা গ্যাছে, কিন্তু রায়হান মালই রয়ে গ্যাছে"

    গুড জব বাচ্চু


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  10. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    প্রেমিকাকে মোবাইলে চুমু ছুড়ে দেই।

    মোবাইল চু*র 'শাক' দিয়ে প্রাকটিক্যাল চু*র 'মাছ' ঢাকার জন্য রায়হানের ব্যান চাই :chup:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রকিব (২০০১-২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।