বাসার গলির মুখে রিকসা এসে থামলো। আমি নিশি আপুর পাশে যেয়ে বসলাম। শোন, আজকে স্কুল থেকে ফেরার সময় হেঁটে আসবো… ঠিকাছে? আমি বলি এতো দূর হাটঁতে পারবোনা…আরে পারবি। দুইজন গল্প করতে করতে ঠিক চলে আসবো।
মুখে গাইগুই করলেও আনন্দে আমার বুকটা ভরে উঠলো। আমি আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আপু তখন কথা বলছেন আর মিটিমিটি হাসছেন। ওনার হাসিটা এত্তো সুন্দর। হাসলে চিবুকটা ভেতরের দিকে ডেবে যায়। এত্তো সুইটা লাগে দেখতে।
স্কুল ছুটি হবার পর আমরা রাস্তা পার হয়ে খিলগাঁও কলোনীর ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়লাম…আপু আমাকে কিছুক্ষণ আগে চাচা চৌধুরীর একটা কমিক কিনে দিয়েছেন। উনার কাছে সবসময় টাকা থাকে। এইটা নিয়ে আমাকে কিনে দেওয়া চাচা চৌধুরীর সংখ্যা ৩০ ছাড়ালো। নিশি আপু না থাকলে আমার জীবনেও কমিক পড়া হতোনা…তর সইতে না পেরে আমি হাঁটতেই কমিক পড়া শুরু করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আপু আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললেন, ওই এখন পড়িস কেন? তুই যদি কথাই না বলিস তাহলে আর হেঁটে এসে লাভ কি হলো…
আচ্ছা, ঠিকাছে। পড়বোনা। নিশি আপু, চলো আজকে রেলগেটের ব্রীজের উপর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি…
শখ কতো…দেরী করে গেলে আম্মু পিটাবে…
এইসব টুকিটাকি কথা বলতে বলতে আমরা ব্রীজের উপর উঠে পড়লাম। ঠিক মাঝেখানে এসে নিশি আপু দাঁড়িয়ে গেলেন। কি সুন্দর বাতাস। আমি মাথা থেকে স্কুল ড্রেসের টুপি খুলে ফেললাম…একটু পর ঝন ঝন শব্দে ট্রেন যাওয়া শুরু করলো। ব্রীজের উপর থেকে আমি আর নিশিপু ট্রেনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
:আচ্ছা আপু, তুমি কখনও ট্রেনে চড়েছ।
::নারে…
:আমি ও চড়িনাই…
::তাহলে চল, একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দুইজন একটা ট্রেনে উঠে পড়ি।
:ঈসসস…
…………………………………………….
সেই সময়টাতে জুমার নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে যে দুই ঘন্টা সময় পেতাম তা কাজে লাগতো নিশি আপুর বাসায় যাবার বিভিন্ন “পথ আবিষ্কারের”পেছনে। কত উপায়ে সেই নির্দিষ্ট বাসায় যাওয়া যায় সেইটা বের করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। একের সপ্তাহে একেক রাস্তায় আপুদের বাসা পর্যন্ত যেতাম। ওনাদের বাসার একটু সামনে বিশাল একটা দিঘীর মতো ছিল। সেখানে পৌঁছে একা একা চুপচাপ বসে থাকতাম। সময় হলে আবার বাসায় ফিরে যেতাম…
অবশ্য মাঝে মাঝে বিকেলে বাসায় ভেতরে ঢোকাও হতো। আন্টি আমাকে খুব আদর করতেন। নিশি আপুদের বাসার পেছন দিকে একটা ছোট খাটো দোলনা ছিল। আমরা দুইজন মিলে সেই দোলনায় দোল খেতাম। দোল খেতে ভালো না লাগলে দুই মিলে সাপ লুডু খেলতাম…নিশি আপু হেসে গড়াগড়ি খেতেন…আমি চুপটি করে বসে তার চিবুকের দিকে তাকিয়ে থাকতাম…
…………………………………………………
ক্লাস ফোরের পর আমরা বাসাবো থেকে মিরপুরে চলে আসি…যাবার আগের দিন নিশি আপু আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, শোন, স্কুল থেকে আমার বাসায় চলে আসবি…মিরপুরে যাবার দরকার নেই। যতবার আসবি ততবার একটা করে চাচা চৌধুরী পাবি…আমি কথা দিয়ে ফিরে আসি…
গত দশ বছরে সেই কথা রাখা হয়নি একবারো…মাঝে মাঝেই রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে নিশির আপুর কথা মনে হয়। এতোদিন পর ওনার চেহারা আর খেয়াল নেই…শুধু মনে আছে হাসলে ওনার চিবুকটা ভেতরের দিকে ডেবে যেত…সেই হাসিটাকে আসলেই ভোলা যায় না…
গত ছুটিতে হঠাৎ করে নিশি আপুর সাথে দেখা করার শখ হলো। আপু নিশ্চই এতোদিনে অনেক বড় হয়ে গেছেন, বড় হয়ে গেছি আমিও…
বাসাবোতে যাবার পর হাঁটা শুরু করলার নিশিপুর বাসার উদ্দেশ্যে…দশ বছর তো কি হয়েছে…পথ ভোলার কোন সম্ভাবনাই নেই…সেই বাসায় যাবার কয়েক হাজার পথ আমি চিনি…
অলি গলি পার হওয়া শুরু করলাম। কিন্তু কোন দিশা খুঁজে পাইনা…কোন কিছুই পরিচিত লাগে না…একটা গলি দিয়ে আগাই আর ভাবি এই আরেকটু আগালেই এই গলির শেষ মাথা। সেখানে থেকে বিশাল খালি জায়গা শুরু…খালি জায়গা দিয়ে কিছুদূর এগোলেই নিশি আপুদের একতলা বাসা…লাল রঙ্গের স্টিলের গেট…
কিন্তু গলির শেষ মাথা আর আসেনা…অনেকক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে আমি আশা ছেড়ে দিলাম…ছোট একটা নর্দমার সামনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালাম…
ঢাকা শহরের গজে ওঠা হাজারো অট্টালিকার ভীড়ে হারিয়ে গেছে আমার নিশি আপু……
(সচলায়তনে পূর্বপ্রকাশিত)
অসাধারন!!
আহেম!!!
ভালো লাগছে স্মৃতিকথা।
ইয়ে মানে বুঝতেছি না রহিম রূপবান বলাটা ঠিক হবে কিনা! সিরিয়াস লেখা মনে হচ্ছে! 🙂
আমি যখন ফোরে পড়ি তখন ফাইভ না সিক্সে পড়া এক আপু ছিল। একটু পোংটা কিছিমের ছিল।
কন কি উস্তাদ!!! ব্লগর ব্লগর করিই তো একটু আধটু মজা করার জন্য। পোংটা কিসিমের আপুরে নিয়া ব্লগ টগ লেখন্নাই? শুনতে মন চায় কাহিনী। 🙂
আইচ্ছা। রহিম যখন কইছে! কি আর করা! এইগুলা সা.ইনে একবার বলছিলাম শমশের ভাই এর পোস্টে, পরে পোস্টই ডিলিট খাইছে! 😐
বুঝতার্লাম্ননা!! কি হইছিল?
হা হা! পোংটা পোংটা কথা বলছিলাম এক পোস্টে কয়েকজন মিলে। পরে মডুরাম ডিলিট করে দেয় পোস্ট যতদূর মনে পরে। 🙂
পোংটা কথা বললে ডিলিট...খাইছে।
তয় পোংটা কথা বলা ভালো না মিয়া। গুনাহ হয়।
কি করুম! মুখটাই তো সম্বল! আর কিছুর তো উপায় নাই! 😐 🙁
একটা বয়সে মনে হত সব সুন্দরী মেয়েরা কেন বয়সে আমার থেকে বড়!
আমার সেই বয়েসটা মনে হয় এখনো চলতেসে :))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
সচলায়তনেই পড়ছিলাম। তখনই বলছিলাম, চরম রোমান্টিক। এই রকম কাহিনী আরো ছিল নাকি? থাকলে লিখে ফেল।
হুম। নিশি আপুদের আমার খুব ভালো লাগে। আরো বেশি বেশি আপুদের কথা লেখ। আমার নিশি আপুদের কথা পড়তেও ভাল লাগে 😉
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমার একটা লিপি আপু ছিল। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তো। ওনার সাথে একদিন ছাদে নির্জনে আধাঘন্ট কথা বলতে বলতেই আমার ...
না থাক... ঠিকাছে
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ঠিক আছে। আর্কয়েন্না।
বলেন কি? এত কম? ডাক্তার দেখান তাড়াতাড়ি... 😉
হাসতেই আছি তো হাসতেই আছি =))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
হাঁসের বাচ্চার কয়ঘন্টা লাগে...??
aito chelepele valo golpo ber kortese...so ordhek na bole purata likhe felo brothers...zihad don't be sorry koidin pore dekhbi shob shundorir biye hoye gese or tor cheye beshi choto lolzz...
হ!!
আবার খুজতে যা। তারপর একটা লেখা দে।
ঠিক আছে।
আপুদের আমারও ভাল লাগে...
আহেম!! কোন আপুদের? বানু ম্যাডেমের মেয়ের মুনকে নাতো? 🙂
না না, মুন বাদে সবাইকে...
ক্যান মুন কি মানুষ না?
মানুষ, তবে...
মিয়া রূপ নিয়া খোটা দাও নাকি? কথায় আছে না, কালো আর ধলো বাহিরে কেবল...ভেতরে সবাই সমান রাঙ্গা।
ও মানিক কি বাত্তি লাগাইলিরে? :shy:
খ্রাপ কুপ খ্রাপ।
অফটপিকঃ আমারো একখান নিশি আপু, আরেক খান শিশি আপু ছিলো> 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..