খেলবনা…আড়ি…

মিড শেষ। এই শেষের চিন্তা করে গত কয়েকদিন কত প্ল্যান করেছি ইয়েত্তা নাই। সিরিয়াল জমা পড়ে অনেকগুলা। 4400, Private Practice… কিন্তু পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথে আর কিছু করতে ইচ্ছা হয় না। সারাদিন নেটে পইড়া থাকি…ব্লগ পড়ি, কমেন্ট দেই। বেশীর ভাগ পোলাপাইন বাসায় চলে গেছে। আমার সেই বাসাতেও যেতে ইচ্ছা করেনা। কেমন যেন একটা কুয়াশা জমে আছে মাথায়…

যেদিন পরীক্ষা শেষ হয়েছে তারপর দিন থেকেই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তাও করতে ইচ্ছা করেনা। আজকে সাদ বলল, চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি। লং ড্রাইভ টাইপ…আমাদের লং ড্রাইভ মানেই আইইউটি থেকে বের হয়ে বামে মোড়। তারপর যতদুর যাওয়া যায়…আজকে প্ল্যান ছিল একেবারে যমুনা পর্যন্ত যাব।
যমুনা নদীটা নিয়ে আমার বেশ কিছু স্মৃতি আছে। মেট্রেকের ছুটিতে একবার বাসা থেকে পালিয়ে টাঙ্গাঈলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেই সময় আমি, মাসুদ আর ফিরোজ মিলে একদিন ঠিক করলাম সাইকেল এ করে যমুনা দেখে আসব। মাথায় ক্যাড়া উঠলে আর কি করা…সেদিন বিকেলেই রওনা দিলাম। যাচ্ছি তো যাচ্ছিই… পথের যেন শেষ হয়না…টানা ত্রিশ কিলোমিটার। ওখানে যেয়ে যখন পৌছালাম ততক্ষণে রাত আটটার মতো বাজে। কিন্তু যাইয়া শুনি ক্যাম্নে কী? সাইকেল নিয়ে ব্রীজের উপর ওঠা যায়না…আমাদের মাথায় বাঁজ। পাশে আর্মি ক্যাম্প। ভাবলাম ওদের ক্যান্টিনে যেয়ে একটা বিড়ি খেয়ে মাথাটা ঠান্ডা করা দরকার। ক্যান্টিনে ভেতর দাঁড়াইছি…এমন সময় দেখি আমাদের হাউসের এক ভাই আর্মি ড্রেস পড়ে ওখানে আসছে। আমি বুভুক্ষের মতো ওনার দিকে তাকাই আছি। আশা যদি চিনতে পারে। উনি চিনতে পারলেন না…মাসুদ তখন লাজ লজ্জা ভুলে গিয়ে বলল, ভাইয়া ভাল আছেন? এতো আপন ভাবে কলেজ ভাই ছাড়া আর কেউ ডাকতে পারেনা…উনি তাও চিনতে পারলেন না। সাথে আরেক ক্যাপ্টেন ছিল তারে নিয়া আবার বের হয়ে গেলেন। যাবার পর তো শুরু হয়ে গেল গালির বন্যা। হায় হায় এমন এক্সক্যাডেট…কলেজ ভাই গোরে চিনবার পারেনা…
একটু পর উনি ফিরে আসলেন। এসেই আরে রায়হান…ভাই কেমন আছ…আমি তো তখন তোমারে চিন্তেই পারি নাই। আসলে দশমাইল দৌড়াইয়া আসলাম। সব হাঁটুতে নেমে গেছে। পাশের ক্যাপ্টেনরে দেখাই বলল, স্যার আমারে বললেন যে তোমরা আমার কলেজের ক্যাডেট হতে পার। তাই আবার দেখতে আসলাম…

তোমরা এখানে কেন? –
ভাইয়া ব্রীজ দেখতে আসছি। কিন্তু সাইকেল নিয়া ওঠা যাচ্ছেনা…
এইটুকুই…বাকি কাজ উনি সেরে দিলেন। ক্যাম্প থেকে গাড়ি বাইর করলেন…যমুনা ঘুরাইলেন। ব্রীজের নীচে যাইয়া স্মৃতিচারণ করলেন…মায়াময় সেই রাতে আরেকবার ক্যাডেট হবার জন্য গর্ব হয়েছিল আমার…

এরপরের টা একটু অশ্লীল। এইবারও আমরা আগের পার্টি…তবে সাথে আরও কিছু আছে। সাইকেলের পর এইবারের বাহন মাইক্রো। সেইদিন যমুনার পাড়ে যেয়ে সবার মাথা খারাপ। কেউ কাপড় চোপড় নিয়া আসেনাই। কিন্তু তাদের গোসল করা চাই। একজন কইল লজ্জা কিসের। জামা কাপড় রেখে টুপটাপ নেমে পড়ল সবাই। আমি নামি নাই, কারণ সাঁতার জানি না…নাজমুল নামেনাই কারণ সে মায়ের এক ছেলে…মায়ের এক ছেলেকে নাকি নদী টানে… 😀

সেইদিনের সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারি না…

কি বলতে যেয়ে কি শুরু করলাম…যাই হোক আজকে আর যমুনা যাওয়া হয় নাই। মির্জাপুরের সামনে এসে মনে হল যাই কলেজ থেকে ঘুরে যাই। সাথে ইমন, মুহাম্মদ (ভুলে দিসি…এই শালা কোথাও যায়না), তুহিন আর মহিব। কলেজে ঢুকে কি যে ভালো লাগল… নিজের কলেজ না…তাও…স্যারদের সাথে দেখা করলাম। দূর থেকে ক্যাডেট দেখলাম…ফুটবল মাঠ দেখলাম…স্টাফ দেখলাম…আহা! আহা!! কতো সুন্দর…

দূর কি সব আউলা ঝাউলা কথা লিখছি…আর না…এই বার থামি…

শিরোনাম কৃতজ্ঞতাঃ লেখাটার কি নাম দিব খুঁজে পাচ্ছিলাম না…তাই চন্দ্রবিন্দুর অতিপ্রিয় একটা গানের লাইন দিলাম…(এই নিয়া কত ব্লগের নাম যে এইটা দিসি ঠিক নাই…)

১,২১৯ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “খেলবনা…আড়ি…”

  1. হায় হায় তোরা মির্জাপুর গেসিলি 🙁 ধুর,শালার ল্যাবটা যদি না থাকতো 😥

    লেখা জটিল হইসে দোস্ত।ব্লগিং এর সুফল ফলা স্টার্ট করসে।

    যমুনা নিয়া আমারো স্মৃতি আসে অনেকগুলা।ক্লাস এইটে থাকতে আমরা ছয় জন ২০ কিমি র মত সাইকেল চালায়া গেসিলাম ঘাটাইল থেকে।তারপর গোসল করার ইচ্ছা জাগলো।কিন্তু সাথে কিছু নাই,তোদের মতই অবস্থা।আমি অবশ্য বাপ মায়ের এক পোলাই।এক্সট্রা প্যান্ট ও নাই।তবু আল্লার নাম নিয়া নামসিলাম 😆 ক্যাম্নে নামসিলাম সেটা না হয় না বলি 😉

    জবাব দিন
  2. লেখা পড়ে খুবই ভাল লাগলো। স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম, যদিও আমার এমন ধরণের কোন স্মৃতি নাই, তবুও। কাতর হতে তো আর দোষের কিছু নাই। কলেজে যেতে পারলে ভালই হতো। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, লিংকন তো বলল, সাথে ইমন, মুহাম্মদ আর মহিব ছিল। তার মানে আমিও গেছি কলেজে। না। কাহিনী অন্যরকম। হাটে হাড়ি ভাইঙ্গা দেই:

    লিংকন পুরা গ্যাজ মারছে। মহিব আর ইমন ঠিকই গেছিল, আমি যাই নাই।

    অবশ্য লেখকদের এমন কয়েকটা গ্যাজ মাফ করে দিতে হয়। তাই মাফ করে দিলাম এবারের মত।

    জবাব দিন
  3. খুব ভাল লাগল লেখাটা পড়ে। আমি যমুনা ব্রিজ প্রথম দেখেছিলাম ৯৯ এ আই সি সি এফ এম এর জন্য রংপুর যাওয়ার পথে। তখন ব্রিজটা নতুন হয়েছে। পেছনের দরজা দিয়ে প্রায় অর্ধেক বের হয়ে গিয়েছিলাম। সেই অবস্থায় এক হাতে বাসের হ্যান্ডেল ধরে আরেক হাতে ক্যামেরা দিয়ে একটা জটিল ছবিও তুলেছিলাম। অবশ্য ফলাফল হিসেবে ক্লাশ টুয়েলভ এর কাছে ঝাড়ি(আমি তখন ক্লাশ টেনে) আর জায়গা মাইর গিয়েছিল।

    তবে রাতের যমুন ব্রিজ অনেক বেশী সুন্দর।

    জবাব দিন
  4. লেখাটা আসলে যমুনা নিয়ে ছিলনা। তাই রাতের যমুনা সেতুর বর্ণনা দেয়া হয়নি ঠিক মতো। সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম... প্রায় ১৩ কিমি দূর থেকে সেতুর লাল আলো দেখা যাচ্ছিল। মনেকে তখন স্বান্তণা দিতে হচ্ছিল...এই তো চলে আসছি...
    রাতের যমুনাব্রীজ আসলেই দারুন সুন্দর...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রায়হান আবীর

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।