ইচ্ছে ঘুড়ি ০৬…

১…

ভালো সিনেমা কিংবা বড়সড় ভালো বই পড়লে কিছুক্ষণ কোন ভাবেই কম্পিউটারের বসা উচিত নয়। বসলেই আমার একটা পোস্ট লিখে ফেলতে ইচ্ছা হয়। কি দেখলাম বা পড়লাম তার জ্ঞানী সমালোচনা নয়, আমি লিখি জিনিসটা দেখে কিংবা পড়ে আমার অনুভূতি। আমি তাই সিনেমা দেখা কিংবা বই পড়া শেষে চট করে ঘুম দিয়ে দেই- এবং সকালে উঠে সব কিছু ভুলে যাই। কিংবা একটা দুইটা সিগ্রেট খাই, ফিজ খুলে ঠান্ডা গরুর মাংস চিবাই। অথবা নিজের মনকে বুঝিয়ে বলি- ওরে মফিজ তুই আজকে ব্লগ দিস না। গত দুই/ তিন দিন তুই ব্লগের কোন লেখা পড়স নাই- কমেন্টস তো দূরের কথা। আগে সেগুলো পড়ে শেষ কর, তারপর পোস্টের কথা ভাবিস।

এমন করে করে আমি গত বছরে দেখা সেরা সিনেমার একটা “ONCE” দেখার পর পোস্ট লিখি নাই। “INTO THE WILD” দেখে ঘোরে ছিলাম অনেকদিন। সেগুলো একদিন লিখেছিলাম ৩৬০ এর পাতাতেও। খুব সম্ভবত ঐ পোস্ট পরবর্তী গিয়ানজাম আমার জীবনের অন্যতম সেরা এবং দুঃখজনক গিয়ানজাম। সেই পোস্ট তাই হারিয়ে গেছে এখন, হারিয়ে গেছে তার আশে পাশের সকল পোস্ট…

আমার এক শরীরে দুইজনের বাস। একজন বলে এটা করা উচিত, আরেকজন বলে, কী দরকার…

২…

আইইউটির ৫১৬ নং রুমে পোলাপান দরজা টরজা বন্ধ করে স (SAW) এর পার্ট ওয়ানটা দেখছে। যারা দেখেছেন তারা জানেন সিনেমার শেষে কে ভিলেন সেটা আবিষ্কার করার পর ব্যপক একটা ধাক্কা লাগে, লাগে বিরাট মজাও। স সিনেমার মজাটাই তো শেষ অংশটুকু।

তো, সবাই যখন দেখছে দরজা টরজা চাপিয়ে- তখন হঠাৎ আমাদের এক ফ্রেন্ড ঢুকলো সেই রুমে। ঢুকে খেয়াল করলো স চলছে কম্পুয়ের পর্দায়। সাথে সাথেই উপস্থিত দর্শকের উদ্দেশ্যে- দোস্তরা ঐ যে মাটিতে যেই ব্যাটা শুয়ে আছে, সেই কিন্তু আসল ভিলেন।

পোলামানের স দেখার মজাটাই শেষ হয়ে গেলো। মুহাম্মদও আমার সাথে একই কাহিনী করলো। আমি যখন তিন/চার মাস আগে ওকে জানালাম ফাইট ক্লাব সিনেমাটার এতো নাম শুনছি, আইইউটিতে যখন নাই, ডিভিডি কিনে দেখে ফেলবো। তখন ও আমাকে একটা লাইন বলে দিলো। জাস্ট একটা লাইন।

আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কি সেই লাইন। আজকে সিনেমাটা হাতের কাছে পেয়ে দেখা শুরু করলাম- আধা ঘন্টা পর মনে হলো, এডয়ার্ড নর্টন আর ব্র্যাড পিট একই মানুষ। এই লাইনটাই মুহাম্মদের বাচ্চাটা আমকে বলেছিল। আমার মজাটাই শেষ হয়ে গেলো।

মজা না পেলেও সিনেমা দেখতে খারাপ লাগে নি। পরিচালক, দর্শকদের উদ্দেশ্যে সিনেমায় কমপক্ষে ১৫ বার হিন্ট দিয়েছেন- জিনিসটা বুঝার। যদিও সেটা কাজে লাগে নাই। হিন্টগুলো শুধু বুঝা যাবে যদি আগে থেকে জানা থাকে- কিংবা দেখা থাকে।

আহামরি কোন সিনেমা না। তবে ডুয়াল পার্সোনালিটি জিনিসটা ভাবার মতো। আমাদের সবার মাঝেই এমন একটা ব্যাপার থাকে। আমরা সবাই একসময় সব কিছু ছেড়েছুড়ে লাল পাহাড়ির দেশে ভাগতে চাই, পরক্ষণে সেই আমরাই প্যান্টে শার্ট গুজে গোমরা মুখে অফিস ওয়ার্ক করি। আমরা আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই অভিনয় করে যাবো। পড়ালেখা করতে ভালো না লাগলেও নিজের মনকে প্রবোধ দিবো, আরে দারুন তো জিনিসটা। কিংবা আমদের প্রেম করতে ভালো না লাগলেও প্রেম করে যাবো- কারণ আমাদের করতেই হবে, দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে। সন্ধ্যাবেলা রিকসায় প্রমোদ ভ্রমণের মাসুল দিতে হবে সারাজীবন ধরে।

নিজেকে একটা গুলি করলে ভালো হতো। মাথায় না অবশ্য- গালে করা যেতে পারে।

২,২২১ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “ইচ্ছে ঘুড়ি ০৬…”

  1. নিজের মজা শেষ দেইখা কি অন্যের টাও শেষ করবি :(( এত অবিচার আল্লাহ সইবে না x-( এই পাক বান্দা খাস দিলে দোয়া করতাছে এর পর থেকে তুই যত সিনেমা দেখবি তার সব কাহিনি তুই আগেই জাইনা যাবি 😛

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    আমরা সবাই একসময় সব কিছু ছেড়েছুড়ে লাল পাহাড়ির দেশে ভাগতে চাই, পরক্ষণে সেই আমরাই প্যান্টে শার্ট গুজে গোমরা মুখে অফিস ওয়ার্ক করি। আমরা আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই অভিনয় করে যাবো। পড়ালেখা করতে ভালো না লাগলেও নিজের মনকে প্রবোধ দিবো, আরে দারুন তো জিনিসটা। কিংবা আমদের প্রেম করতে ভালো না লাগলেও প্রেম করে যাবো- কারণ আমাদের করতেই হবে, দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে।

    এই ব্যাপারে আমার কেবলই মনে হয় "আই এ্যাম এ রং পারসন ইন রং প্লেস"।

    নিজেকে একটা গুলি করলে ভালো হতো। মাথায় না অবশ্য- গালে করা যেতে পারে।

    তাতে কি হবে 😮 😮 ??????


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    তোর বাকি পাঁচটা ঘুড়ি কই? ফাইজলামি? :grr:

    আমগো লাল পাহাড়ের দেশে যাবার কি হৈলো? কিসু কসনা ক্যান বদমাইশ?

    গালে ক্যান? এইটা আমিও বুঝিনাই।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  4. saw তে মাঝেমধ্যে মিসলিড করছিল, হিন্ট দেওয়া দূরে থাক। টাইম পাস মুভি হিসাবে ভালো।

    আই ইউ টি-তে হ্যারি পটারের ডাম্বলডোর মইরা যাওয়ার কাহিনী একজন ল্যান-এ সবাইকে জানায়া খুব অজনপ্রিয় হয়া গেছিল। লোকজন পারলে ধইরা মাইর দেয় আরকি!

    জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    ফাইট ক্লাবের ডিরেক্টরের আরেকটা সিনেমা দেখছি: সেভেন।
    ফাইট ক্লাবে ডক্টর জেকিল আর মিস্টার হাইডের থিম খুব ভাল লাগছে। সিনেমাটারে দার্শনিক দার্শনিক মনে হইছে।
    তবে দুইটার মধ্যে তুলনা করতে বললে, আমি বোধহয় সেভেন-কেই বেশী ভালো বলমু...

    জবাব দিন
    • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

      এই টাইপ দুইটার কথা মনে হইলো
      একটা হইলো জ্যাক স্প্যারো 😛 সাহেবের সিক্রেট উইন্ডো আরেকটা জন কুস্যাক এর আইডেন্টিটি, খারাপ লাগেনাই 🙂
      আহারে মুভি দেখা টাইমগুলা মনে কইরা কান্দন আইতাছে :(( :((


      সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

      জবাব দিন
    • একমত। সেভেন অনেক বেশি ভালো।

      ডি নিরো সাহেব ডাকোটা ফ্যানিং মামনির সাথে একই থিমের একটা সিনেমা করছিল। বছরখানেক আগে। জমে নাই। দুর্বল মেকিং।

      রাইচিয়াস কিল- ওইটাও দুর্বল। পাচিনো আর ডি নিরোর করা হিটের ধারে কাছে যাইতে পারে নাই।

      জবাব দিন
  6. তৌফিক (৯৬-০২)

    ৫১৬ নম্বর রুম?? নর্থ হল না সাউথ হল??

    সাউথ হলের ৫০৭ নাম্বার রুমের ডানদিকের উইন্ডোসাইড জায়গাটা কেমন আছে? কাবার্ডের গায়ে আমার আকাঁ স্কেচ দুটো কি এখনো আছে? নাকি ঢেকে গেছে কোন উর্বশীর শরীর দিয়ে?

    নস্টালজিক বানায়া দিলা।

    অফটপিকঃ

    একজন কমান্ডোর মতোই অন্তর্জালে আমার ঘাপটি মেরে থাকার অভ্যাস। বার্তাবাহকগুলা, খোমাখাতা, এমনকি সিসিবি- সব জায়গায়ই অফলাইন না হইলে ইনভিজিবল থাকি। নতুন সর্বোচ্চ মন্তব্যকারী অপশনটা চালু করায় আমার কমান্ডোগিরি ধরা খাইছে। 🙁

    তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি, ভালো উদ্যোগ। :clap:

    জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

      সাউথ হল। ৫১৪ তে আছি। ৫০৭ এ আছে জিনিয়র পোলাপান। আপনার স্কেচ এর একটা ছবি তুলে পাঠায়ে দিবো। ১১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। 🙂

      আমি খালি জিহাদরে অনুরোধ করছিলাম। বসে কইরা দিসে। সকল প্রশংসা ওরই প্রাপ্য। ফৌজিয়ান ভাইরে টেক্কা দেওয়া টাফ আছে। 🙁

      জবাব দিন
  7. ছোটবেলার একটা কাহিনীর কথা মনে পড়ে গেল। বড় বোনের সাথে কোনো একটা বিষয়ে মনোমালিন্যের জের ধরে মাসুদ রানার একটা বইয়ের টুইস্ট বলে দিয়েছিলাম। "রিটা হ্যামিল্টন" আর "বান্না বেলাডোনা" - এই দুইটা চরিত্রের কে ভিলেন, সেটা বলে দিয়েছিলাম ওকে "কায়দা" করে, মানে- "ভিলেন একটা মেয়ে, সাত অক্ষরের নাম, তবে অমুক না" (ওই বইয়ে নারী চরিত্র ছিল ওই দুইটাই)। এর শোধ নিয়েছিল ও তিন গোয়েন্দার একটা আর মাসুদ রানার একটা বইয়ের ভিলেনের নাম বলে।

    লেখা ভাল লেগেছে। "ইনটু দ্য ওয়াইল্ড" এখনো দেখা হয়নি, এছাড়া পোস্টে ও মন্তব্যে উল্লেখ করা বাকিগুলো দেখা হয়ে গেছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।