স্মৃতিকথন (টুকরো বিনোদন দ্বিতীয় পত্র)

১/ তখন ক্লাস এইটে। ২২৬ নাম্বার রুমে থাকি আমি,নাহিদ আর রিয়াজ। তো নাহিদ হইলো সেই লেভেলের নিশাচর প্রানী, কাজেই ওর একটা অভ্যাস আছিল বিশেষ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘুমানো নইলে অন্যান্য দিন হলে প্রেপের পরেই এসে ঘুমানো আর লাইটস অফের পরে উঠে সারা রাত জেগে পড়া (সাথে বাকি সব কিছু ফ্রি, ওইটা না বলি)। আমার কাজ ছিল লাইটস অফের সময় ঘুমানোর আগে ওকে ডেকে দেয়া। এদিকে আমার আর রিয়াজের অভ্যাস ছিল যে আমরা মশারীর নিচে ঘুমাইতে পারতাম না কাজেই লাইটস অফের সময় শুধু কোনার বেডের জানালার পাশের মশারী ঝুলত আর আমি মশারি খুলেই ঘুমাতাম। একদিন এইরকম নাহিদ ঘুমাচ্ছে আর রিয়াজ লকারের সামনে কিছু একটা কাজ করছিল। রিয়াজ এবং আমি ২ জনই তখন সাদা হাফ প্যান্ট পড়া। আমি মশারি খুলতে খুলতে নাহিদকে ডাকলাম উঠার জন্য। নাহিদ হটাত এক লাফে উইঠা দেখি পিটি সু পরা শুরু করছে আর বলতেছে এতো দেরী করলি ক্যান আরো আগে ডাকবি না, আজকেও পিটিতে লেট করুম নাকি?
২/ নাহিদ আমার দেখা মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শি কারো মধ্যে সেরা। ওকে যে কোন বই দিলে কিছু না বুঝেও হুবুহু মুখস্থ করে ফেলার ক্ষমতা ওর ছিল।কিন্তু বেচারার একটাই কষ্ট আছিল যে সে অংক বুঝে না, এই কস্টে সে ক্লাস নাইনে সাইন্স পেয়েও আর্টস পড়লো। ওর মুখস্থ বিদ্যার কিছু নমুনা দেই। ও আমাকে ভুগোল বই ধরিয়ে দিয়ে বলত যে তুই দেখতে থাক আমি মুখস্থ বলি এবং প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম শব্দ থেকে বইয়ের শেষ শব্দ পর্যন্ত হুবুহু মুখস্থ বলতে পারত। কিন্তু কিছু পিকুলিয়ারিটিও আছিল ওর মধ্যে। এই যেমন কোন প্যারাগ্রাফের মাঝ পথে যদি ওকে থামিয়ে দেয়া যায় তাহলে আবার ওই প্যারাগ্রাফের একদম শুরু থেকে আবার রিস্টার্ট করতে হবে, যেখানে থামিয়েছি ওখান থেকে না। 😛
নাহিদের আরেকটা নমুনা দেই মুখস্থ বিদ্যার। এস এস সি পরিক্ষার আগেই ইভেন ও টেস্ট পেপার মুখস্থ করে ফেলেছিল।বিশেষ করে ম্যাথের। ওকে যদি কোন অংক আমি পড়ে শুনাতাম ও বলা শুরু করত এভাবে, “ এটা টেস্ট পেপারের ** নাম্বার পৃষ্ঠায় আছে। এই অংক যশোর বোর্ডে আসছিল **** সালে, রাজশাহী বোর্ডে **** সালে —-( এভাবে বোর্ডের বর্ননা ) , টেস্টে এটা রাজউকে আসছে ,ভিকারুন্নেসায় আসছে , ইস্পাহানী তে আসছে —- ( এভাবে কোন কোণ স্কুলে টেস্টে আসছে তার বর্ননা) ———- (এর পর মুখস্থ বলবে পুরো অংক ) ,রেজাল্ট এই অংকের হল **** , অমুক স্কুলে এই ফিগারের জায়গায় এই ফিগার বসাইছিল তাই রেজাল্ট হবে এতো ইত্যাদি সকল ভেরিয়েশন সহ। কিন্তু দুঃখজনক হইলো ওই সেইম অংকই যদি অন্য কোন ফিগার দিয়ে দেয়া যায় তাইলেই সারছে। =D
৩/ এটাও ক্লাস এইটের কাহিনী। তখন জেপি ১৮ তম ব্যাচের রবিন ভাই আর বারী ভাই। একদিন সকালে হটাত ঘুম ভাইঙ্গা দেখি চারপাশ চুপচাপ পাশের বেডে নাহিদ ও ঘুমায় আর রিয়াজ বেডে নাই। মনে মনে চিন্তা করলাম সম্ভবত বেশি আগে উঠে গেছি। কিন্তু চারপাশ এতো পরিস্কার কেন? সিউর হওয়ার জন্য পাশের রুমে গেলাম, গিয়ে বুঝলাম কাহিনী ঘটাইয়া ফেলছি আমরা ২ জন পিটিতে Absent. তারাতারি আইসা নাহিদ রে ডাকলাম, যে আমরা তো পিটিতে এবসেন্ট কি করুম এখন? ও কুইক বুদ্ধি দিল, যা করার কইরা ফেলছি আগে চল দেখি পিটি গ্রাউন্ডের কি অবস্থা। আমাদের রুম থেকে দেখা যেত না গ্রাউন্ড, তাই হামাগুড়ি মারলাম জুনিয়র ব্লকের দিকে। ২৩০ নাম্বার রুমের সামনে গিয়া একটা ক্লিয়ার ভিউ পাওয়া যায় গ্রাউন্ডের। ওইখানে গিয়ে দেখি , হাউজ অলরেডি দৌড় শুরু করে দিসে। বুঝলাম বাইচা গেছি ধরা খাই নাই , নইলে এতোক্ষনে কেউ ডাকতে আইত। আসল কাহিনী হইলো, আমাদের ২ জেপি ই তখন ICC বাস্কেট টিমের প্লেয়ার, তারা তো প্র্যাক্টিসে চইলা যায় কেউ আর থাকে না কাউন্ট করার। আর স্টাফদের মাথায় বোধহয় চিন্তাও আসে নাই যে ক্লাস এইট এবসেন্ট থাকতে পারে। এইতো শুরু হইয়া গেল ক্লাস এইটের মজা , যত দিন এই বাস্কেটবল টিম আছে আমাদের ধরার কেউ নাই , কাজেই ঠিক হল যে By rotation প্রতিদিন ২ জন করে পিটিতে আসবে না। হাউজ ডিউটি ক্যাডেট একই সাথে এই রোস্টার ও মেন্টেইন করত যে ওই দিন কে কে যাবে না যাতে একই দিনে ২ এর বেশি এবসেন্ট না থাকে কারন ২ এর বেশি থাকলে চোখে পরে যাবে। (অবশ্য ভদ্র কিছু পোলাপাইন কখনো এই খারাপ কাজ করে নাই 😛 )। আর এক সময় পোলাপাইন ঘুমাইত বেডের নিচে, দরজার ঠিক পাশের বেডে যাতে সহজে চোখে না পড়ে। তো এমনি এক দিনে আমাদের আওলাদ গ্যাপ মেরে ঘুমাচ্ছে বেড এর নিচে, হটাত টের পেল যে কেউ একজন রুমে ঢুকেছে। বেচারা ভয়ে টাইট ভয়ে ভয়ে উকি দিলো বেডের নিচ থেকে। দেখে রুমে প্রবেশ করেছে হাউজ বেয়ারা হক ভাই। প্রথমেই লকার খুলল। খুলে আওলাদের ক্রিম নিয়ে মুখে মাখলো , এর পর আন্টির দেয়া আচারের কৌটা থেকে আচার খেল এবং সব শেষে এক প্যাকেট ডাইজেস্টিভ বিস্কুট নিয়া চলিয়া গেল। আর বেচারা আওলাদ বেডের নিচে শুয়ে শুয়ে সব দেখলো কিন্তু না পারতেছিল কিছু কইতে আর না পারতেছিল সইতে। 😛
আজকে এই পর্যন্তই,আরো কিছু কাহিনী মনে পরতেছে আবার পরে লিখুম। আপাতত (চলবে) লিখে শেষ করিলাম।
বি দ্রঃ নাহিদ এবং আওলাদ দোস্ত, তোদের অনুমতি নাই নিয়াই তোদের কাহিনী লিখলাম। মাফ করে দিস। 😛
(চলবে)

২,৪৩১ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “স্মৃতিকথন (টুকরো বিনোদন দ্বিতীয় পত্র)”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    এখনো কেউ ইটা ফালায় নাই অথচ তিনটা লাইক। একটা কমেন্ট দিলে কি হয়?! x-( যাই হোক আরাম কইরা দুই থান ইটা ফালায় যাই। :brick: :brick:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. লুবজানা (২০০৫-২০১১)

    :brick: আমিও ফালায় গেলাম! 😛 ক্লাস এইটে জুনিওর আসার প্রথম সপ্তাহে আমিও পিটি মিস করছিলাম 😛 ধরা ও পড়িনাই!! 😛 :tuski:


    নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    নাহ পিটি মিস দেয়ার সৌভাগ্য হয় নাই তবে হক ভাইয়ের কবলে পড়ার দূর্ভাগ্য হইছে 😛

    মজা পাইছি লেখা পড়ে, চালায় যাও 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. প্রতীক(২০০৫-২০১১)

    চিট জালিয়াতি করে রেস্টে কাটাইছি পুরা ক্লাস নাইনের এক টার্ম।কয়েকবার ধরা খাইতে খাইতে বাইচা গেছি,ধরা খাইলে খবর ছিলো।
    😛 :awesome:


    যাহা বলিব,সত্য বলিব,সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না

    জবাব দিন
  5. সামিউল(২০০৪-১০)

    পিটিতে ফাঁকি দেই নাই, তবে একদিন গেমস টাইমে ঘুম থেকে উঠে দেখি গেমস শুরু হয়ে গেছে, আমিও তখন ক্লাস এইটে।
    আমার ক্ষেত্রেও আপনার মতই হইছে, স্টাফ ভাবেই নাই যে ক্লাস এইট গেমস মিস দিবে।

    🙂


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।