হে শান্তিরক্ষী ……… নিজের পরিবারের শান্তি নিশ্চিত করার জন্য হলেও ফিরে এসো

বাংলাদেশে সারা বিশ্বের মধ্যে যে কয়টা বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে , তার মধ্যে অন্যতম হল শান্তিরক্ষী হিসেবে পুরো পৃথিবীর কাছে অর্জিত সুনাম। সঠিক তারিখ না বলতে পারলেও এইটুকু বলতে পারছি ৯০ এর দশকের গোঁড়ার দিকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনা প্রেরন শুরু করে। অবিশ্বাস্য হলেও  সত্য , দেশের মানুষের কাছ থেকে অধিকাংশ সময় প্রাপ্য সন্মান না পেলেও কেন জানি এই সংঘাতময় দেশের মানুষগুলো সব সময় ই এই সেনাদের খুব বেশিই আপন করে নিয়েছে। না কোন বিশেষ দেশে নয়, যে দেশেই গিয়েছে সেখানেই।

 

তাইতো আজ সিয়েরালিওন বাংলা ভাষাকে দিয়েছে মাতৃভাষার মর্যাদা। আইভরি কোস্টে যখন এলাম , এসে দেখলাম একটা গ্রামের নাম “রূপসী বাংলা” চিন্তা করে দেখুন কতটা ভালো লেগেছিল। এর পরে যেদিন সিকুইরিটি গার্ড এর মুখে শুনলাম বাংলা গান, ” ও পাষাণী বলে যাও ক্যানও ভালবাসনি……” সত্যিই মনটা ভরে গিয়েছিল।বিদেশের মানুষের মুখে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের গুনগান শুনতে শুনতে গর্বে বুকটা ভরে উঠে। আর এই সকল প্রশংসা দেশের জন্য কুরিয়ে আনতে কতটা কষ্ট, কতটা শ্রম , কতটা ত্যাগ যে সহ্য করে বাংলাদেশের বীর শান্তিরক্ষীরা তা কি কেউ একবারও ভেবে দেখেছেন?

আমি জানি অনেকেই দেখেন নি, আবার  অনেকেই ভেবেছেন এবং ভাবেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রাপ্য সন্মান টুকু এই শান্তিরক্ষীরা কখনোই  পায় না। যাই হোক আজ এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের কাছে আমি অন্য কিছুই না , আপনারা সন্মান  না দেখান , কিন্তু যদি সম্ভব হয় আপনাদের কাছে একটু দোয়া চাইছি এই লেখার মাধ্যমে।

 

দেশ থেকে দূরে থাকার কষ্ট  শুধু তারাই বুঝবে যারা অন্তত একবারের জন্য হলেও দেশের বাইরে গিয়েছে।পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশের মাটিতে এসে থাকতে হয় শান্তি রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে। সত্যি বলতে কি এই জায়গায় ঠিক কতটা প্রতিকুল পরিবেশে কাজ করতে হয় তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত  জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয় , তবুও ক্লান্তিহীন এ  ছুটে চলা। এর পাশাপাশি যে কোন উপকারে ঝাপিয়ে পরা।আগুন লাগা , সড়ক  দুর্ঘটনা , যে কোন দুর্যোগ সবার আগে এগিয়ে আসে এই শান্তিরক্ষীর দল। এ ছাড়াও  ফ্রি চিকিৎসা , খাবার পানি বিতরন ইত্যাদি তো আছেই। এভাবেই দিন এগিয়েই চলে। কারন শান্তিরক্ষা কাজের সাথে সাথে সব সময় মনে থাকে আরেকটি কথা ” দেশের সুনাম”।

 

আজ আমি কিভাবে দিন  কাটাচ্ছি তা শুধু আমি ই জানি।হয়ত বাসায় ফোনে সব  সময় ই বলি বা সবাইই বলে খুব ভালো আছি , কোনই সমস্যা নেই।কিন্তু এর ই মধ্যে চলতে থাকে জীবন বাজি রেখে টহল কাজ চালিয়ে যাওয়া।

 

এমন ই একটি টহল আজ বেরিয়েছিল আমাদের একটি ক্যাম্প থেকে। ১০-১৫ মিনিট দূরে যাওয়ার পরেই ঘটে যায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।১৮ চাকার বড় একটি ট্রাক এসে সজোরে আঘাত করে একটি পিক আপে। গাড়িতে থাকা ৩ জন গুরুতর আহত হন।দ্রুত নিয়ে আশা হয় লেভেল-১ হাসপাতালে।আঘাত গুরুতর থাকায় হেলিকপ্টারে করে পাঠানো হয় আবিদজানে লেভেল-৩ হাসপাতালে। ৩ জন ই এখন চিকিৎসাধীন আছেন , ২/১ দিন  না গেলে হয়ত নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যাবে না।

 

 

 

এই ৩ টি পরিবারের কথা এক বার চিন্তা করুন।এখন ও হয়ত তারা খবর পায় নি। খবর পেলে তাদের মানসিক  অবস্থাটা চিন্তা করুন। আমি জানি এগুলো চিন্তা করা বা না করাতে কিছু আসে যায় না।কিন্তু যে লোকগুলো নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছে , আরেকটি দেশেরে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে , তাদের প্রাপ্য সন্মান সব সময় না দিতে পারলেও , বিপদের সময় তাদের সমবাথি কি আমরা হতে পারি না?

 

আপনারা সবাই দোয়া করবেন, ওই ৩ জন যেন সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসে। ইনশাল্লাহ তারা ফিরে আসবে।তোমাদের আসতেই  হবে । তোমাদের পরিবারের জন্য হলেও তোমাদের আসতে  হবে। ভিন্ন দেশের মানুষের শান্তিরক্ষা করেছ , কিন্তু তুমি চলে গেলে তোমার ঘরের শান্তিরক্ষা করবে কে??????????

 

এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য হলেও তোমাদের ফিরে আসতে হবে।উত্তর দিতে তোমরা ফিরে আসবে এই আশায় রইলাম।

 

 

১,১২৭ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “হে শান্তিরক্ষী ……… নিজের পরিবারের শান্তি নিশ্চিত করার জন্য হলেও ফিরে এসো”

মওন্তব্য করুন : সাইফুর রহমান

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।