কিছু এক্স ক্যাডেট এর সাক্ষাৎকার

গত দুই/আড়াই মাস ধরে সিসিবির সাথে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয়। সেই সাথে এরই মধ্যে আশেপাশের হাতে গোনা ক’জন এক্স ক্যাডেট এর সাথে সিসিবিকে নিয়ে হয়েছে আমার কিছু কথপোকথন। তারই কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ে আমার আজকের এই পোষ্ট…

আরিফ ভাই (সিসিসি, ৯০-৯৬ ব্যাচ)

প্রশ্নঃ স্যার, আপনি কি ক্যাডেট কলেজ ব্লগের মেম্বার?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আমি তো ওখানে নিয়মিত যেতাম। কেন, তুই মেম্বার না? (আরিফ ভাই আমাকে তুই করেই বলে)
– হ্যাঁ স্যার, আমি তো এখন রেগুলার মেম্বার
– কি বলিস? তাই নাকি? ও হ্যাঁ, তুইতো এতদিন ঢাকাতেই ছিলি? কিন্তু তোকে তো একদিনও ওখানে যেতে দেখলাম না।
– স্যার, আমি মেম্বার হয়েছি মাত্র দেড় মাস হলো
– মানে? পাগল নাকি তুই? এখানে থেকে কিভাবে মেম্বার হয়েছিস? তুই চিনিসই না তাহলে। আরে, ওটাতো গুলশানে। আমি নিয়মিত টেনিস খেলতে যেতাম, আমাদের কলেজের আরো অনেকে আসত …
(আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম)
– স্যার, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব নাতো, ওটাতো আমিও চিনি। আমাদের কোর্সের একটা গেট টুগেদারও করিয়েছি ওখানে। আমি এখন বলছিলাম ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, মানে সিসিবির কথা।
– ও হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওটার কথাও অনেক শুনেছি। আমাকে …
(আবারো থামিয়ে দিয়ে বললাম)
– স্যার, আপনি মেম্বার কিনা আগে বলেন
– না
– আপনাকে মেম্বার বানিয়ে দিব, আপনি একবার মেম্বার হলে দেখবেন আর অন্য কিছু করবেন না, সারাদিন নেটেই বসে থাকবেন।
– ও তার মানে এটা নেটে বসে থাকার জিনিস!!! 😐 ভাই, আমার আসলে এত টাইম নাই, ধৈর্য্যও নাই
– একবার মেম্বার হয়ে দেখেন
– ভাই, তুই আমাকে বল ব্যাডমিন্টন খেলতে, আমি সারাদিন খেলব; বল কার্ড খেলতে, তাও খেলব; অথবা বল টেবিল টেনিস খেলতে, তাও রাজী; কিন্তু নেটে বসে থাকতে বলিস না।
– স্যার, আপনি সব খেলা পারেন?
– তুই কি বললি এটা? কলেজে কি ঘুমিয়ে ছিলি নাকি? আর তুই তো জানিস, আমার বাপও আর্মিতে ছিল, সবাই একনামে চিনে। আমার বাপও ছিল জাত খেলোয়াড়…
– তাই নাকি স্যার? আংকেল কত বিএমএ লং এর?
– বিএমএ ??? !!! বল পিএমএ। আমার বাপ পাকিস্তান আমলের, বুঝলি? আমার বাপকে চিনেনা এমন লোক আর্মিতে নাই। যাই হোক, যেটা বলছিলাম… ছোটবেলা থেকেই আমি সব খেলা খেলি, বুঝলি? আমি পারিনা এমন কোন খেলাই নাই।
– স্যার, তাহলে আপনি কলেজ গেমস প্রিফেক্ট হলেন না কেন?
– পাগল বলে কি? আমি তো কলেজ গেমস প্রিফেক্টই হতাম, আবার এদিকে যে কালচারালেও ভাল, সব স্যাররাতো আমাকে কলেজ কালচারাল প্রিফেক্টই বানাতে চেয়েছিল
– কিন্তু স্যার, আপনি তো ছিলেন এসিস্ট্যান্ট হাউস প্রিফেক্ট
– আরে ওটাতো আমি ইচ্ছে করেই হয়েছি, কারন…
(আবারো থামিয়ে দিয়ে বললাম)
– স্যার, আপনি তাহলে সিসিবির মেম্বার হচ্ছেন না?
– ভাই, একবার তো তোকে বললামই, আমার টাইম নাই। তুই এক কাজ করিস। এবার ছুটিতে চলে আসিস ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে, টেনিস খেলব। আর…
– স্যার, আমাকে মাফ করে দেন। আপনার সিসিবির মেম্বার হওয়া লাগবে না। আমার এখন সিও’স কনফারেন্স আছে, আরেকদিন শুনব আপনার এই গল্প, এখন যাই স্যার
(কোনমতে ঐ মূহূর্তে আরিফ ভাইয়ের সামনে থেকে ভাগলাম 😛 )

রিসাদ (সিসিআর, ৯২-৯৮ ব্যাচ)

প্রশ্নঃ কিরে, তুই কি সিসিবির মেম্বার?
উত্তরঃ (দুষ্ট হাসি হেসে) কি মনে হয়?
– মনে তো হয় মেম্বারই। তাহলে লিখিস না কেন?
– আমি হলাম নীরব পাঠক।
– মানে কে কি লিখল চুপি চুপি পড়ে চলে যাস?
– (আবারো হ্যাঁ সূচক দুষ্ট হাসি ;)) )
এবার সায়েদের দিকে তাকিয়ে রিসাদ আড়চোখে আমার দিকে ইঙ্গিত করে বললঃ
– সিসিবিতে দেখলাম, কে যেন মেডেল প্যারেড নিয়ে তার প্রথম ব্লগ লিখসে
– (আমি হেসে বললাম) স্যরি দোস্ত, ওটা ছিল আমার আঠারোতম ব্লগ। তুই কি রকম নীরব পাঠক, এখনি তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম… 😕

টুশকি সায়েদ, (কলেজ ও ব্যাচ সবাই জানে, তাই বলা নিস্প্রয়োজন)

প্রশ্নঃ কিরে, ইদানীং সিসিবিতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না তোকে, ব্যাপারটা কি? বেশি ব্যস্ত নাকি?
উত্তরঃ হ্যাঁ দোস্ত, একটু ব্যস্তই
প্রশ্নঃ কই, ঠিকই তো ব্যাডমিন্টন খেলতে আসছিস নিয়মিত। তুই কেন লেখা থামিয়ে দিলি, সত্যি করে বলতো?
উত্তরঃ আসলে দোস্ত, আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম। যেই লেখাটা আমার ভিতর থেকে আসে, সেইটা ভাল হয়, সবার ভাল রেসপন্স পাওয়া যায়। আর জোর করে লিখে কোয়ান্টিটি বাড়াতে গেলে লেখার কোয়ালিটি অতটা ভাল হয়না। তাই ওয়েট করছি একটু
(কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারো বলা শুরু করল)
– সিসিবির একটা জিনিস খুব ভাল লাগে দোস্ত, পোলাপাইনের কমেন্ট। একেকটার চেয়ে একেকটা জিনিয়াস। আমি একদিন ‘স’ কে ‘ক’ বলা নিয়ে একটা ঘটনা লিখছিলাম, সাথে সাথে কমেন্ট আসল…
(আমি সায়েদকে থামিয়ে দিয়ে বললাম)
– জানি, “কাবাক! কায়েদ ভাই”
(দুজনে একসাথে হেসে উঠলাম :)) )

সিরাজ (বিসিসি, ৯৪-০০ ব্যাচ)

প্রশ্নঃ কি ব্যাপার? সিসিবিতে দেখি কমেন্ট করো কালেভদ্রে, লেখনা কেন?
উত্তরঃ স্যার, আপনারা আছেন লেখার জন্য, আমরা আছি পড়া আর কমেন্ট করার জন্য।
(পাশে বসা রিসাদকে দেখিয়ে বললাম)
– রিসাদ তো নীরব পাঠক, তুমিও কি ওর মতো নীরব পাঠক, আর সরব কমেন্টক?
– (হেসে) বলতে পারেন স্যার
– মাঝে মাঝে লিখ। তুমি যেন কোন ব্যাচের?
– স্যার ৯৪ ব্যাচ।
– মানে টিটো রহমান দের সাথের?
– হ্যাঁ, ওতো আমাদের কলেজেরই
– ওকি নাট্যকার নাকি? আর লিখেও খুব সুন্দর দেখলাম।
– হ্যাঁ স্যার, ও তো … ম্যাগাজিনে (কি একটা ম্যাগাজিনের নাম যেন বলল, এখন মনে আসছে না) নিয়মিত লিখত
– ওর ওয়াইফও তো মনে হয় রাইটার? সচলে নিয়মিত লিখে নাকি?
– কি জানি স্যার, এটা তো জানি না
– ওহ না, আমি আমাদের কলেজের তোমাদের ব্যাচের তারেকের সাথে গুলিয়ে ফেলেছি। শুনলাম তারেক আর ওর ওয়াইফ ওদের দুজনের নাকি সচলে লিখতে লিখতে পরিচয়? তারপর বিয়ে, জান নাকি?
– তাই নাকি স্যার? বেশ ইন্টারেষ্টিং কাহিনীতো তাহলে
– আমি অবশ্য শিওর না, জানার ভুলও হতে পারে
(এরপর আমাদের আলোচনা অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল)

ইমরুল (জেসিসি, ৯৫-০১ ব্যাচ)

প্রশ্নঃ ইমরুল, তুমি কি সিসিবির মেম্বার?
উত্তরঃ হ্যাঁ স্যার, কেন?
– তোমাকে তো কখনো সিসিবিতে দেখিনা
– স্যার, আমার ধৈর্য্য খুব কম, সিসিবিতে ঢোকা হয়না
– কি বল? আমার তো মনে হয় তোমার অনেক ধৈর্য্য
– কেন স্যার? গাছের কি ধৈর্য্য বেশি হয় নাকি? লেখার মতো অনেকে আছে স্যার। যারা লেখার তারা তো লেখছেই
– তোমাদের ব্যাচের জুনায়েদ তো একাই পুরা সিসিবি জমাইয়া রাখে, ওকে একটু লেখার সঙ্গ দাও
– কোন জুনায়েদ?
– জুনায়েদকে চিননা? তুমি ৯৫ ব্যাচের না? আশ্চর্য্য, 😮 তোমাদের জুনায়েদ কবীরকে চিননা???
– ও কবীর? ওতো কলেজে কবীর ছিল। হ্যাঁ, ও খুব জলি ছেলে
– হুম। ও আর আমাদের তাইফ মারাত্নক সব কমেন্ট করে। দুজনেরই ‘সেন্স অফ হিউমার’ অসাধারণ। ওদের কমেন্ট পড়ার জন্যই আমি নিয়মিত সিসিবিতে ঢুকি। (এই ঘটনা অবশ্য শওকত ভাই সিসিবিতে আসার আগের ঘটনা, নয়তো এই লিষ্টে শওকত ভাইয়ের নামও থাকত 😀 )
– তাই নাকি? হ্যাঁ, কবীর লেখে ভাল, আর খুব মজা করে কথাও বলতে পারে
– তুমি লেখনা কেন?
– আমাকে দিয়ে এখন এই কাজ হবেনা স্যার। জানেনই তো, এখানে আসার আগে এঙ্গেজমেন্ট করে আসছি। সো, নেটে ঢুকলে সারাদিন…
– বুঝছি, সারাদিন ইয়াহু মেসেঞ্জারে ভাবীর সাথে কানেক্টেড
– (লাজুক হাসি দিয়ে :shy: ) এইতো স্যার, বুঝে গিয়েছেন

[ আমার এই সাক্ষাৎকারগুলো সব গত দুই মাসের মেমরি থেকে লেখা, কোন রেকর্ডিং করা সাক্ষাৎকার নয়, তাই ১০০% হুবহু নাও মিলতে পারে। তবুও আমি চেষ্টা করেছি মূল বিষয়টা অপরিবর্তিত রাখার জন্য। তারপরও কোন ভুল হয়ে গেলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি উপরের ৫ জন আমার উপরে রাগ করবেন না/ করবি না/ করবা না। সবাইকে ধন্যবাদ]

৫০ টি মন্তব্য : “কিছু এক্স ক্যাডেট এর সাক্ষাৎকার”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    রহমান ভাই, দারুন লাগল আপনার সাক্ষাৎকার পর্ব।

    তারেক-তিথির পরিচয় কিন্তু সচলে না। সচলে লেখালেখির অনেক আগে থেকেই ওরা পরস্পরকে ভালভাবে চিনত।

    আমার ভাইটাকে এখনও সিসিবির মেম্বার বানাতে পারলাম না! 🙁

    জবাব দিন
  2. তারেক (৯৪ - ০০)

    রহমান ভাই দারুণ কাজ করছেন। আমি অবশ্য প্রথমে ভেবেছিলাম কাল্পনিক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হয়তো, পরে দেখি এটা আসল। 🙂
    *
    আমার আর বউয়ের পরিচয় নিয়ে অনেক আগে আরেকবার এমন হয়েছিলো। 🙂
    না বস, আমাদের পরিচয় কার্জন হলে, ফিজিক্স ল্যাবে, আমরা গ্রুপমেট ছিলাম।
    আপনার জন্যে দুটা লিংক রেখে যাই। টাইম পাইলে দেইখেন।
    ১। যাযাদি বিষয়ে
    ২। অনেক আগের লেখা


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  3. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ভীন্ন রকম একটা পোস্ট। দারুণ :boss: :boss:
    তিথি তারেক(তিতা)কাহীনি সচলে না হলেও এমনিতেই অনেক ইন্টারেস্টিং। বেশ মিঠা ;;;


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  4. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    কবি ভাই,
    আপনি দেখি সাংবাদিক হিসাবেও ডেব্যু করে ফেললেন 😮
    একই অঙ্গে কত রূপ! :hatsoff:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      😛 😀 😛

      সাকেব, তুমি আমাকে এত জ্বালাও কেন বলতো :-/ ? সেই যে আমার প্রথম লেখার "ছিদ্রান্বেষী কমেন্টক" হিসেবে তোমাকে পেয়েছি, এখনো মনে হচ্ছে আমার লেখায় এবং কাজে ছিদ্রের অন্বেষনই তুমি করে যাচ্ছ শুধু 😉

      আসলে তোমার কমেন্ট পড়তেও আমার খুব মজা এবং ভাল লাগে ;;) । অনেক ধন্যবাদ সাকেব 🙂 🙂

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।