একটি দুঃসংবাদ- এডিসন ভাই গুরুতর আহত

গত ৩ দিন ধরে বাহিরে ছিলাম। আজ আমার ক্যাম্পে ফিরলাম। আইভরিকোষ্ট সংলগ্ন আমাদের একটা ক্যাম্পে গিয়েছিলাম, একটা কনফারেন্সে এ্যাটেন্ড করার জন্য। তাই গত কয়দিন সিসিবিতে ঢোকা হয়নি। এর মধ্যে ঘটে গেল একটি বড় দূর্ঘটনা। গত ২৮ শে জানুয়ারী লাইবেরিয়াতে আমাদের বাংলাদেশী (ব্যানইঞ্জিনিয়ার-৯ এর) একটি জীপ পাহাড়ী রাস্তা থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। আরোহীদের মধ্যে একজন এম ই এস (মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) এর কমকর্তা ঘটনাস্থলেই ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহে … রাজেউন)। বাকি আরোহীদের মধ্যে মেজর ফাত্তাহ, মেজর সরোয়ার সহ গুরুতর ভাবে আহত আরো ৪ জন সৈনিক। মেজর ফাত্তাহ এর মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর ৪ জন সৈনিকের মধ্যে ২ জনের অবস্থা খুবই আশংকাজনক।

গতকাল রাতে আমি ছিলাম গান্তা ক্যাম্পে। ওখানে ক্যাপ্টেন মুসা (সকক, ৯২-৯৮ ব্যাচ) এর কাছ থেকে জানতে পারলাম এই সরোয়ার স্যার হচ্ছে আমাদের সিসিবির এডিসন ভাই, রকক, ৭৯-৮৫ ব্যাচ (এতদিন জানতাম না)। আহতদের সবাইকে হেলিকপ্টার যোগে রাজধানী মনরোভিয়ায় ইউ এন এর লেভেল-৩ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুনেছি গুরুতর আহত ২ জন সৈনিকের মধ্যে একজনকে জরুরী ফ্লাইট যোগে ঘানাতে ইউ এন এর লেভেল-৪ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, আরেকজনকে নাকি ঘানাতে পাঠানোর মতো অবস্থায় নাই।

আপনারা সবাই আহতদের সবার দ্রুত সুস্থ্যতার জন্য দোয়া করবেন বিশেষ করে মেজর ফাত্তাহ ও আমাদের সরোয়ার (এডিসন ভাই) স্যারের জন্য এবং নিহতের আত্নার মাগফেরাত কামনা করবেন। সায়েদ এখনো মনরোভিয়াতে আছে। আশা করি সবাইকে দেখে সায়েদ আমাদেরকে আপডেট খবর জানাতে পারবে।

২,৮৩৩ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “একটি দুঃসংবাদ- এডিসন ভাই গুরুতর আহত”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    ইয়া আল্লাহ! 🙁
    স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন উনাদের দ্রুত সুস্থ করে তুলেন 🙁
    নিহতদের জন্য দোয়া করছি।
    রহমান, সায়েদ যেই পারিস কষ্ট করে আপডেট দিস


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আল্লাহ আমাদের ভাইদের তাড়াতাড়ি সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। আর যিনি চলে গেছেন তার আত্নার শান্তি দিন, তার পরিবারের ধৈর্য্য দিন, এই বিপদে তারা যেন দিশেহারা না হন।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. সামিয়া (৯৯-০৫)
    আল্লাহ আমাদের ভাইদের তাড়াতাড়ি সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। আর যিনি চলে গেছেন তার আত্নার শান্তি দিন, তার পরিবারের ধৈর্য্য দিন, এই বিপদে তারা যেন দিশেহারা না হন।
    জবাব দিন
  4. নাজমুল (০২-০৮)

    আল্লাহ আমাদের ভাইদের তাড়াতাড়ি সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। আর যিনি চলে গেছেন তার আত্নার শান্তি দিন, তার পরিবারের ধৈর্য্য দিন, এই বিপদে তারা যেন দিশেহারা না হন।

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    কাল যখন এক্সিডেন্টের খবর শুনলাম তখন খুব টেনশন নিয়ে নাম গুলো জানতে চাইলাম...
    আমাকে সবাই খারাপ ভাবতে পারেন, তবুও যখন শুনলাম পরিচিত কেউ নেই- তখন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলাম...কিন্তু, মেজর সরোয়ারই যে আমাদের এডিসন ভাই...তা তখন বুঝি নাই...
    আমি যতদূর শুনেছি ওনার সাতটি রিব বোন ভেঙ্গে গেছে...
    আল্লাহ্‌ ওনাকে দ্রুত সুস্থ করে দিন...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. তাইফুর (৯২-৯৮)

    রহমান, গ্রুপ মেইল-এ ঘটনাটা পড়ার পর থেকে খুব মনোকষ্টে আছি। এডিসন ভাই তো শুনলাম সুস্থ্য হয়ে লেভেল-টু তে আছেন। আপডেট জানাইস।
    আর ভাল লাগে না ... মিশন ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      দোস্ত, অনেক ধন্যবাদ। বিস্তারিত জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি জানা। সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারছে না। সবাই আন্দাজের উপর ভর করে ভয়ঙ্কর সব তথ্য দিচ্ছে। রিব বোন ভাঙ্গার খবর আমিও শুনেছি, তবে আমি শুনেছি একজন সৈনিকের বুকের বেশ কটি হাড় ভেঙ্গে গিয়েছে। মেজর ফাত্তাহ স্যারের কি অবস্থা? ইন্টারনাল কোন হেমারেজ কি সত্যিই হয়েছে? ৭২ ঘন্টার অবজারভেশন টাইম তো শেষ, কথা বলতে পারছে এখন? সরোয়ার স্যারের প্রকৃত অবস্থা এখন কেমন? কোন সমস্যা নেই তো? তুই হাসপাতাল থেকে ফিরে বিস্তারিত জানা। খুব টেনশনে আছি।

      জবাব দিন
  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    আলহামদুলিল্লাহ...
    সায়েদ ভাই,
    উনার সাতটা রিব বোন ভাঙ্গার খবরটা কি সত্যি? আল্লাহ, যেন মিথ্যা হয়...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  8. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আপডেট:

    এডিসন ভাই যে এইখানে মানে লাইবেরিয়াতে আছেন তা জানলাম সকালে এই আর্টিকেলটা পড়ে। ২৮ তারিখ বিকালে দূর্ঘটনাটা ঘটার পর ছয়জনকে প্রায় পুরো লাইবেরিয়ার এমাথা থেকে ওমাথা করে মনরোভিয়াতে ইভাকুয়েট করা হয়। আমার পক্ষে আহতদের দেখার সুযোগ হয় পরদিন দুপুরের পর। ততক্ষণে একজনকে ঘানায় স্থানান্তর করা হয়েছে (সেই বেচারার অবস্থা এখনও খুব আনস্টেবল)।

    আরোহী সাতজনের মধ্যে একমাত্র এডিসন ভাইই এক মুহূর্তের জন্যেও জ্ঞান হারাননি। বাকি সবাই অচেতন ছিলেন এবং এক এক করে জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। এডিসন ভাই বাম হাতে আঘাত পেয়েছেন। দুটো আঙ্গুলে ফ্রাকচার আর বেশ খানিকটা থেতলে গিয়েছে মাত্র। আর সিটবেল্টের হ্যাচকা টানের জন্য এখনও বাম কাঁধ থেকে আশেপাশের অংশ জুড়ে অনেক ব্যথা অনুভব করছেন। একমাত্র এই সিটবেল্টই তাকে হাতে ধরে বাঁচিয়ে দিয়েছে। তার ক্ষেত্রে পাঁজরের হাড় ভাঙ্গার ব্যাপারটা নিরেট গুজব।

    সদা হাস্যময় মানুষটাকে দেখতে যেয়ে অনেক্ষণ গল্প করলাম, বারান্দায় হাঁটাহাটিও করলাম। মজার মজার কথা বলে অনেক হাসালেন। মোবাইলের ব্রাউজারে রহমানের লেখা এই আর্টিকেলটা দেখানো মাত্র স্মিত হাসলেন। আমাকে বললেন তার মোবাইলে বাংলা দেখার ব্যবস্থা করে দিতে। দূর্ঘটনার পরপর কি কি হয়েছে না হয়েছে ডিটেল বললেন। ওবায়দুল্লাহ ভাই যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রিঅ্যাক্ট করে তাদেরকে ইভাকুয়েট করেছেন তা জানালেন (সিসিবিতে তার আগমনও ওবায়দুল্লাহ ভাইয়ের হাত ধরে)। একদিকে ওবায়দুল্লাহ ভাই আরেকদিকে পার্থ (রংপুর, ১৯৯৩-১৯৯৯) পুরো ব্যাপারটা নিয়ে খুব দৌঁড়াদৌঁড়ি করছেন। এডিসন ভাইকে খুব শিঘ্রই হাসপাতাল ছেড়ে দেবে বলে আশা করছি।

    বাকিদের ইনিশিয়াল ১০০ ঘন্টার মতোন কেটে গেছে বলে এখন অনেকটা বিপদমুক্ত। এক্সরে থেকে শুরু করে অন্যসব ডায়াগনসিস এখন পুরোদমে করা হচ্ছে। মেজর ফাত্তাহ স্যারের ব্যাপারটা অনেকটা মিরাকলের মতোন। শরীর থেকে প্রায় ৬০% রক্ত হারিয়েও ২৯ তারিখেই তিনি আমার সাথে সুস্থ মানুষের মতোন কথা বলেছেন। অসাধারণ মনের জোর উনার। মাথার আঘাতটা গুরুতর - সারতে সময় লাগবে। বাকিরা ঘাড়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন - সেরে উঠছেন ধিরে ধিরে।

    এখানের সমস্ত বাংলাদেশী (মিলিটারী, নন মিলিটারী, ইউএন কর্মচারী, এনজিও, ব্যবসায়ী) লোকজন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতোন তাদেরকে দেখতে এসেছেন - এখনও প্রতিদিন আসছেন।

    সবাই আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া করবেন।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  9. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    এই খবরটা পড়ে খুব টেনশন হচ্ছিল কিন্তু কমেন্ট পড়ে একটু আশ্বস্ত হলাম। সায়েদ ভাই ধন্যবাদ।আল্লাহর অশেষ রহমত। যিনি মারা গেছেন তার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। সবাই ভাইয়া একটু সাবধানে থাকেন। আমাদের সবার দোয়া আপনাদের সাথেই আছে।

    জবাব দিন
  10. আল্লাহ উনাদের সবাইকে দ্রুত সুস্থ করে তুলুন।

    গতকাল দিনটাই খারাপ ছিল। যেই মুহূর্তে এডিসন ভাইয়ের খবরটা দেখলাম সিসিবি তে, তখনই ইমন (এমসিসি ৯৯-০৫) এসে আমাকে ডাকল। তাওসিফ (সিসিআর-৯৯-০৫) এর বাবা স্ট্রোক করেছেন। তাড়াতাড়ি আমরা সবাই মিলে রংপুরে ওর বাসায় যাবার জন্য বেরিয়ে গেলাম। শেষ পর্যন্ত অবশ্য্ চন্দ্রা থেকে ওকে বাসে তুলে দিয়ে আমরা ফিরে আসি আইইউটিতে।
    সকালে শুনলাম, উনি ভাল আছেন।
    আল্লাহ উনাদের সবাইকে ভাল করে তুলুন এবং বাকিদেরও ভাল রাখুন।

    সায়েদ ভাই, Thanks for update and keep us posted.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জিহাদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।