একটি কাল্পনিক গল্প


বাম হাতের বৃদ্ধাংগুল দিয়ে টেনে কপালের ঘামটা মাটিতে ঝরাল মতি মিয়া। টপাটপ করে ঘামগুলো জমিতে পড়ল। সেইদিকে তাকিয়ে থাকল সে। মুহূর্তে জমির মাটি তা শুষে নিল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সে সেদিকে। এভাবে তার কত ঘাম যে এই মাটি শুষে নিয়েছে তার কি কোন হিসেব আছে? হিসেব মেলাতে পারেনা সে। লাংগলের ফলাটাও একদম ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। একটা নতুন ফলা কিনতে হবে। সামনের হাট বারে হাটে যেতে হবে তা কেনার জন্য। কিন্তু জিনিস পত্রের যা দাম, তার হলো নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। ফলা কেনার টাকা কি তার কাছে হবে? মনে হয়না। ক্ষেত থেকে উঠে এসে গাছের নিচে বসল সে। গামছা দিয়ে মুখটা মুছল।

দুবছর আগে সিডর আর বন্যায় তার সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল। হালের বলদ দুটা মারা গেল, ঘরের চালটাও উড়ে গেল, আর জমি তো আগেই নদীতে ভেঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। রেললাইনের ধারে তার বাবার একটা ভাল জমি ছিল সেটাও ঐ চেয়ারম্যান ইউনুস মোল্লার লোকজনেরা জোর দখল করে নিয়ে গিয়েছে। সরকারী ব্যবস্থায় রিলিফের চাউল, গম, আর বাকি সাহায্যগুলো না পেলে সে আর তার বউ নির্ঘাত না খেয়েই মারা যেত।

ইউনুস মোল্লা নাকি যুদ্ধের সময় রাজাকার ছিল। তার বাবাকে পাকিস্তানীদের হাতে ধরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ইউনুস মোল্লা আর ঐ ইমাম সাহেবের হাত ছিল। মতি তখন খুব ছোট ছিল। তার এখন কিছুই মনে নেই, সবই তার ফুপুর কাছ থেকে শোনা। যুদ্ধের পর তার বাবা আর ফিরে এল না। কেউ বলে তার বাবা নাকি মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে, আবার কেউ বলে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে মেরে ফেলেছে। তার মাকে নাকি পাকিস্তানী হানাদাররা নির্যাতন করেছিল। যুদ্ধের পরে তার একটা বোন হলো। তার বাবা আর ফিরে এলোনা, এদিকে মতির বোনের জন্ম নিয়ে সবাই তার মাকে অপবাদ দিতে থাকল। প্রচন্ড রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃনায় তার মা গলায় দড়ি দিল, বোনটাও না খেতে পেয়ে মারা গেল। সেই থেকে সে এতিম। ফুপুর কাছে মানুষ হয়েছে সে। তার ফুপার ছিল টানাটানির সংসার। লেখাপড়া শেখাতে পারেনি তাকে। তাই সবাই তাকে এখন ঠকায়। মতি সবই বোঝে। মন থেকে সে মোল্লা আর ইমাম সাহেবকে খুব ঘৃনা করে, কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। তার যে কিছুই করার ক্ষমতা নেই এখন। দুনিয়াটা কি কঠিন জায়গা, জীবনযুদ্ধে সে পরাজিত। এসব ভাবতে ভাবতেই হতাশা, ব্যর্থতা আর অপ্রাপ্তির একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে তার বুক চিরে।


সামনে নির্বাচন। চারদিকে এ নিয়ে খুব হইচই হচ্ছে। কিন্তু মতির তাতে কোন আগ্রহ নেই। কি লাভ? আবার সেই মোল্লাই জিতবে, আবার সবাইকে শুষে খাবে। সে মতি মিয়া, মতি মিয়াই থাকবে। তার ভাগ্যের তো আর কোন পরিবর্তন হবেনা। প্রতিবারই ভোটের আগে মোল্লা সহ অন্য প্রার্থীরা তার বাড়িতে আসে, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। ভোটের পরে আর চেহারাও দেখা যায়না। গতবার এই মোল্লাই মতির বাড়ি এসে হাত ধরে যুদ্ধের সময়ের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইল, ভোট ভিক্ষা চাইল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা সে। মোল্লার মতো বড়লোক তার হাত ধরে ক্ষমা চাইল, সে না করতে পারল না, ভেবেছিল মোল্লা বুঝি ভাল হয়ে গিয়েছে, অনেক বিশ্বাস করে তাই ভোটও দিয়েছিল মোল্লাকে। কিন্তু পরবর্তীতে মতি বুঝতে পারল ওসব ছিল মোল্লার অভিনয়। এই মোল্লাই পরে লোক পাঠিয়ে তার জমি দখল করল।

সেবার মোল্লা সবাইকে গনহারে শাড়ী, লুংগী বিলি করল। এত টাকা কোথা থেকে পায় মোল্লা, মতির মাথায় তা ধরেনা। এখন পর্যন্ত অবশ্য কেউ শাড়ী লুংগী দিতে আসে নাই। এবার নাকি খুব কড়াকড়ি, ধরাধরি হচ্ছে। এবারো ইলেকশনে জিতলে মোল্লা তাকে অনেক কিছু দিবে বলেছে। প্রতিবারেই এরকম বলে মোল্লা, কিন্তু ইলেকশনে জেতার পরে সবই ভুলে যায়। কত তো দেখল ত্রানের টিন, রিলিফের চাউল, গম সব কিভাবে যেন গায়েব হয়ে যায়। মোল্লার গোয়ালঘরের টিনই বরং বছর বছর পাল্টাতে দেখল সে, এর সবই যে রিলিফের মাল তাও মতি জানে, মতির মতো অভাগাদের কাছ পর্যন্ত সেই টিন আর পৌছায়না। মুখেই শুধু যত বড় বড় কথা বলে এই মোল্লারা, ক্ষমতায় গেলে সবাই নিজেরটা বুঝে ষোলআনা। এসব ভাবতে ভাবতে তার মুখটা থুতুতে ভরে উঠে। ঘৃনা ভরে থু করে তা ফেলে দেয় সে।

গত দুই বছর ভালই দিন যাচ্ছিল, কোন ঝুট ঝামেলা ছিলনা, মারামারি, কাটাকাটি, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী এসব নিয়ে কারো কোন টেনশনই ছিলনা, একটা শান্তি শান্তি ভাব ছিল চারদিকে। মোল্লা আর তার চেলারা এতদিন লুকিয়ে ছিল। জরুরী অবস্থার কারনে মোল্লাও কোন বাড়াবাড়ি করতে সাহস পায়নি। এখন আবার তাদেরকে দেখা যাচ্ছে আশেপাশে। মতির তাই আবার টেনশন বাড়ছে। টেনশনের কারন ঐ ইউনুস মোল্লা আর তার চেলারা। এখন আবার মোল্লার লোকেরা তার উপর ছড়ি ঘুরাবে। গায়ের জোরে তাকে টাকা কম দিয়ে ঠকাবে। তার নিজের কোন জমি নাই এখন, মানুষের জমি বর্গা নিয়ে হাল চষে সে। পরগাছার মতো এভাবে বাঁচতে তার আর ভাল লাগে না। নিজের জমিতে চাষ করতে চায় সে। কিন্তু আর কোন উপায়ও নেই তার, মোল্লার কাছ থেকে তো জমি আর ছুটানো যাবেনা। মনটা খারাপ করেই তাই বাড়ির দিকে হাটা দেয় মতি।


হাতপাখাটা দিয়ে মতিকে জোরে জোরে বাতাস করে মরিয়ম। স্বামীর ঘর্মাক্ত মুখটা মুছে দেয় সে শাড়ির আচল দিয়ে। এই মানুষটাকে সে বড়ই ভালবাসে। গরীব হলে কি হবে, মনটা অনেক বড়। এই যে ক বছর ধরে তার কোন সন্তান হয়না এটা নিয়ে কখনো মরিয়মের সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই মতি, কোন দোষারোপ ও সে করেনা তাকে। শুধু বলে “আল্লার যেইদিন ইচ্ছা হইব, হেইদিন এমনেই বাচ্চা আইব”। একদম ঠান্ডা একটা মানুষ। তার কাছে মতি যেন মানুষ না, ফেরেশ্‌তা। এবার মতি নিজেই তাকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবে বলেছে। জীবনে প্রথম ভোট দিতে যাবে সে। সে কি তার আনন্দ! নিজেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তার কাছে। দেশের প্রেসিডেন্ট একটা ভোট দিবে, সেও একটা ভোট দিবে। একটা আত্নতৃপ্তির ছাপ তাই তার চোখে মুখে। কিন্তু আগেরবার মসজিদের ইমাম সাহেব এসে মতিকে বলেছিল-
“মাইয়া মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওনের কাম নাই, অইখানে যাইতে হইলে বেপর্দা হওন লাগব, গুনাহ হইব, বেহেস্ত দূরে চইলা যাইব”। আরো কত কি।

গত কয়েক বছর ধরেই এই ইমাম সাহেব মরিয়মকে পানি পড়া দিচ্ছে বাচ্চা হওয়ার জন্য। মরিয়ম সরল বিশ্বাসে তা পান করে যাচ্ছে প্রতিবার, কিন্তু বাচ্চা তো তার আর হয় না। মতি ডাক্তার দেখানোর কথা জিজ্ঞাসা করলেই ইমাম সাহেব বলে-
“নাউজুবিল্লাহ, আল্লা-খোদার উপর বিশ্বাস নাই? পানি পড়ায় কাজ না হইলে আর ডাক্তারের কাছে গিয়া কি হইব, ডাক্তার কি বাচ্চা বানাই দিব? এইগুলা গুনার কাম, ডাক্তারের কাছে মাইয়া মানুষের যাওয়া বেদাতী কাজ কারবার”।
অথচ এইবার এই ইমাম সাহেবই এসে মতিকে বলে গেল বোরখা পড়িয়ে মরিয়মকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পাল্লায় ভোট দিয়ে আসতে, পাল্লায় ভোট দিলে নাকি বেহেস্ত পাওয়ার পাশাপাশি তার ঘরে বাচ্চাকাচ্চাও আসবে। যাবার আগে হাসতে হাসতে বলেও গেল- “ভোট দিলে পাল্লায়, বেহেস্ত দিব আল্লায়”। এইটা কেমন কথা? এক মুখে দুই রকম কথা! আর বেহেস্তে যাওয়া কি এতই সহজ?

বেহেস্ত আর বাচ্চা দেওয়ার মালিক যে আল্লাহ, কিন্তু ঐ পাল্লা না, এটা মরিয়ম ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছে।


দেখতে দেখতে ভোটের দিনটা চলে এল। ছেড়া বালিশের নিচ থেকে ভোটার আইডি কার্ড দুটো বের করে দেখতে থাকে মতি, তার আর মরিয়মের। দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায় তার। কি সুন্দর কার্ড। কার্ডে কি সব যেন লেখা, সে পড়তে পারে না, শুধু তার আর মরিয়মের ছবিদুটো দেখে আর মনে মনে খুশি হয়। এর আগের কোন নির্বাচনেই এমন কার্ড দেখে নাই সে। সবার কাছে শুনেছে এই কার্ডে নাকি অনেক সুবিধা আছে, ভোট দেয়া ছাড়াও অনেক রকমের কাজ করা যাবে এটা দিয়া। গামছা দিয়ে তাই যত্ন করে কার্ডগুলো মুছে হাতে নেয় সে।

নাহ, এইবার আর মতি ভুল করবে না। সে আর মরিয়ম মিলে ঠিক করেছে ভোটটা এবার তারা নতুন প্রাথী সানাউল্লাহ সাহেবকেই দিবে। সানা সাহেব বড়ই সৎ, উপকারী ও পরহেজগার মানুষ। গরীবের দুঃখ কষ্ট দেখেন, বিপদে সাহায্য করেন, সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলেন। মরিয়মকে শহরে নিয়ে ভাল ডাক্তার দেখানোর বুদ্ধিটাতো উনিই দিলেন। মতি আর মরিয়মের সন্তান নাই শুনে উনি মতিকে ডেকে বললেনঃ
“সন্তান দেয়ার মালিক অবশ্যই আল্লাহ, কিন্তু মানুষের তো তার সাধ্যমতো সব রকমের চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করে যাও, একই সাথে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে, ধৈর্য্য হারানো যাবে না, আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, মতি মিয়া, তোমার নিজেরও চেকআপ করাতে হবে। বাচ্চা না হওয়ার জন্য তুমি নিজেও দায়ী হতে পার, না জেনে তোমার বউকে দোষারোপ করা যাবে না। ভয় নাই, চিকিৎসা করলে যে কারো সমস্যা ভাল হয়ে যেতে পারে, তোমরা দুজনেই শহরে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাও।”

কথাগুলো মতির খুব পছন্দ হয়েছে। আসলেই তো চেষ্টা করতে তো দোষ নাই। ওদিকে ইমাম সাহেব অবশ্য মতিকে অন্য একটা বুদ্ধি দিয়েছিল। বুদ্ধিটা হলো, এবার পানিপড়া খেয়ে যদি বাচ্চা না হয়, তাহলে মরিয়মের নাকি আর বাচ্চা হবেনা, তখন মতি যেন আরেকটা বিয়ে করে। মতি কি করবে বুঝতে পারছিলনা। এমনিতেই তার এই সংসার চলেনা, আরেকটা বিয়ে করলে কিভাবে চালাবে সে? কিন্তু সানা সাহেবের এই কথায় তার চোখ খুলল। তাইতো, চিকিৎসা করলে যদি সমস্যা ভাল হয়ে যায় তাহলে কেনই বা সে আরেকটা বিয়ে করতে যাবে? আর তার নিজেরও ডাক্তার দেখানো উচিত। এটা তো তার মাথায় আসেনি কখনো। তার নিজেরই যদি সমস্যা থাকে তাহলে আরেকটা বিয়ে করেই বা কি লাভ হবে? মতি স্বপ্ন দেখতে থাকল একদিন তার অনেক টাকা হবে, সে আর মরিয়ম শহরে গিয়ে গিয়ে বড় ডাক্তার দেখাবে। নামাজ পড়ে তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে মতি, তার যেন অনেক টাকা হয়, সে আর মরিয়ম যেন ভাল চিকিৎসা করাতে পারে, তাদের ঘরে যেন সন্তান আসে।


নির্বাচন হয়ে গেল। মরিয়মকে নিয়ে মতি গিয়েছিল ভোট দিতে। এবারের মতো শান্তিতে আগে কখনো ভোট হতে দেখে নাই সে। কি সুন্দর লাইন ধরে সবাই ভোট দিল। সে আর মরিয়ম সানা সাহেবকেই ভোট দিল। একটা আত্নতৃপ্তি নিয়ে দুজনে ঘরে ফিরল। পছন্দের মানুষকেতো এবার ভোটটা দিতে পারল।

(পরের দিনের ঘটনা)
মোল্লা সাহেব হার্ট এ্যাটাক করেছেন। ইলেকশনের ফলাফল পেয়েছেন একটু আগে। বিপুল ব্যবধানে সানা সাহেবের কাছে হেরে গিয়েছেন। সানা সাহেবের ধারে কাছেও মোল্লা যেতে পারেনি। তার সব প্ল্যান ভেস্তে গিয়েছে এবার। তার সাঙ্গপাঙ্গরা এবার আর ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারেনি। খুব কড়া ডিউটি হয়েছে এবার চারদিকে। জামানতের টাকাটাও এবার বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মোল্লার তিন বউ তিন দিক থেকে বাতাস করছে আর মাথায় পানি ঢালছে। ডাক্তার এসেছে ক্লিনিক থেকে। জ্ঞান ফেরার পর মোল্লা শুনতে পেল চারদিকে গ্রামের মানুষেরা সানা সাহেবের বিজয়ের আনন্দে বিজয়মিছিল বের করেছে।

(৭ দিন পরের ঘটনা)
গতরাতে ইউনুস মোল্লা এবং ইমাম সাহেবকে পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছে। দুজনকেই শহরে চালান করে দেয়া হয়েছে এর মধ্যেই। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা দুজনেই যুদ্ধের সময় রাজাকার ছিল। সবাই বলত এদের বিচার হবে, বিচার হবে, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কোন বিচার হয়নি। এবার সারাদেশে একযোগে রাজাকারদের ধরা হচ্ছে। একসাথে সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। কথাটা শুনে মতির বিশ্বাস হচ্ছিলনা। স্বপ্ন দেখছে নাতো সে? সত্যি কি ইউনুস মোল্লার ফাঁসি হবে? আর তাহলে ইউনুস মোল্লা মানুষের জমি দখল করতে পারবে না। তার জমিগুলোও সে ফেরত পাবে।

ছেড়া বালিশে মাথা রেখে ভাংগা জানালা দিয়ে আকাশটাকে দেখে মতি। আজকের আকাশটাকে কেন যেন অনেক বেশি রঙ্গিন লাগছে। নতুন বছরের সূর্যটা তার কাছে আজ খুবই নতুন লাগছে। না, এইবার সত্যি সত্যি মনে হয় একটা কিছু পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, সত্যিই কি রাজাকারদের বিচার হবে, ফাঁসি হবে, তার বাবার হত্যাকারীদের দোসরদের বিচার হবে, তার অভিমানী মায়ের আত্না শান্তি পাবে? চোখদুটো খুশিতে চিক চিক করে উঠে মতির, তার ভাগ্যের চাকাও এবার হয়তো সত্যি সত্যিই ঘুরবে, তার জমিগুলো সে ফেরত পাবে, টাকা পয়সা আসবে, নতুন লাঙ্গল কিনবে, হালের বলদ কিনবে, সে আর মরিয়ম শহরে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাবে, তাদের ঘরে ফুটফুটে সন্তান আসবে, সুখ-শান্তি আসবে আরো কত কিছু…। আশা করতে তো দোষ নাই, মানুষ তো আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। এসব ভাবতে ভাবতেই আরেকটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে মতির বুক থেকে। কিন্তু এবারের শ্বাসটা হতাশার নয়, বরং অনেক অনেক আশা, ভরসা আর প্রত্যাশার…

২,৮০৮ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “একটি কাল্পনিক গল্প”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    অসাধারণ ভাইয়া। সাহিত্যিক বিশ্লেষণে যাব না, কারণ তা করার যোগ্যতা আমার নেই।
    গল্পের থিমটা দারুণ ,শেষটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

    পুনশ্চ: সানা ভাইরে এম পি বানায়া দিলেন। 😀 😀 😀

    জবাব দিন
  2. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    রহমান ভাই,
    আপনার স্বপ্নের প্রকাশগুলো খুব সুন্দর লাগসে...

    এবারের শ্বাসটা হতাশার নয়, বরং অনেক অনেক আশা, ভরসা আর প্রত্যাশার…

    আমাদের ও... :hatsoff:

    অফটপিকঃ আপনার গল্পের এমপি হিসাবে আমাদের সিসিবি এমপি সানাউল্লাহ ভাইয়ের নাম ব্যবহার করার জন্য ধন্যবাদ... :thumbup:
    পরবর্তী গল্পের নায়কের নাম ঠিক করার আগে আমাদেরকেও মনে রাখতে পারেন 😉


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      ধন্যবাদ সাকেব 🙂 । আমি ভাবছিলাম আবার তুমি ছিদ্রান্বেসী টাইপ কোন কমেন্ট করবা 😉

      মন্তব্যের অনটপিকঃ নায়ক হওয়ার ইচ্ছা আছে যেনে খুশি হলাম, মাথায় রাখব। কিন্তু তোমার সিরিয়াল আসতে তো অনেক দেরী 🙁 । আপাতত নায়কের সাঙ্গপাঙ্গ বা ভিলেন এর চরিত্রে... আপত্তি নাই তো ? 😉

      জবাব দিন
  3. রাফি (০২-০৭)

    এই গল্পের একটা জিনিস খুবই ভাল লাগসে যে এইটা দুই তিনটা পর্বে ভাগ করে নাই। একবারেই শেষ করসে। ভাই আমার খুবই ভাল লাগসে, অনেক নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতেসি নতুন সরকার নিয়া :dreamy: :dreamy: :dreamy:

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      তোমার এই কমেন্টটাও আমার খুব ভাল লাগসে 🙂 😀
      কিন্তু তুমি যে না পইড়া আমার পোষ্টে ফাষ্ট হইলা এইটা ভাল লাগে নাই 😛

      যাষ্ট ফান 😀 । ধন্যবাদ রাফি 🙂 । বেশি বেশি স্বপ্ন দেখ :dreamy: :dreamy: :dreamy:
      কিন্তু খুব খিয়াল কইরা দেইখ কিন্তু, কোন ভুল-ত্রুটি :-B যেন না হয় 😉

      জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ১। তিন নম্বর প্যারায় কিছু অসংগতি আছে মনে হল। একবার বলেছ মতির বাবাকে রাজাকার ইউনুস মোল্লা পাকির হাতে তুলে দিয়েছে। তার কিছু লাইন পরেই বলেছ যুদ্ধে গিয়েছে অথবা পাকিরা ধরে নিয়ে গেছে। আমার বুঝার ভুল হতে পারে।

    ২। সানাউল্লাহ ভাই তাহলে শেষ পর্যন্ত এম পি হলেন।

    ৩। ৭ দিন পরের ঘটনা গুলো এখনও ঘটছে না, আশায় আছি অবশ্য।

    ৪। গল্পের বর্ননা ভাল হয়েছে। একটানে পড়েছি। প্লটটাও উপযোগী। তুমি এটাকে আরও বড় করে লিখতে পারবে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      ফয়েজ ভাই,
      অনেক ধন্যবাদ আমার এই ক্ষুদ্র লেখাতে এত গুরুত্ব সহকারে ও সময় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য। আপনার গঠনমূলক আলোচনা (সমালোচনা বলবনা কারন ঐ শব্দটা নেগেটিভ, আপনি যেটা করছেন সেটা হলো পজেটিভ) আমি সবসময়ই খুব সিরিয়াসলি নেই।

      ১। আমি আসলে বুঝাতে চেয়েছিলাম মতির বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, কিন্তু ইউনুস মোল্লা ষড়যন্ত্র করে তার বাবাকে পাকিস্তানীদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। আমি বোধ হয় এটা পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। সিসিবির আগে আমি কোথাও গল্প লিখিনি ভাইয়া। তাই ভুল ভ্রান্তি হওয়া এবং অপক্ক লেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂

      ২। 😀 , মনে হয় জেলাস ফিল করছেন?:P আপনাকেও বানাব ভবিষ্যতে 😉

      ৩। ৫ নং প্যারার শেষের দিকে তো বলেছিইঃ

      আশা করতে তো দোষ নাই, মানুষ তো আশা নিয়েই বেঁচে থাকে।

      ৪। অনেক ধন্যবাদ বস্‌। অনেক প্রেরণা পেলাম। এজন্যই তো লিখছি সিসিবিতে। আপনাদের মতো পাঠক পেলে যে কেউ লিখবে :guitar:

      পরিশেষে আপনাকে :hatsoff: এবং :salute:

      জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    রহমান ভাই, খুব ভাল লাগল... :clap:
    মতি আংকেলের মতন আমরাও আশায় বুক বেঁধে আছি... :dreamy:

    অফ টপিকঃ এমপি সাহেবের সাংগ-পাঙ্গের নাম দেন নাই কেন???? 🙁
    তাইলে আমগো নাম আইলেও আইতে পারত... :bash:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    এইখানে নেতাদের হাত নাড়ার মতো কুনু ইমো নাই কেন? আমার তো ভোটারদের দিকে হাসি হাসি মুখে চাইয়া হাত নাড়তে মন চাইতাছে। বাস্তবে তো কুনুদিন এমপি হবো না, তাই ভারচ্যুয়ালি এই সুযোগ করে দেয়ার জইন্য রহমান তুমারে :just: :salute: ।

    তবে তোমার-আমার মতো এদেশের লাখো মানুষ আশা আর স্বপ্নের বাসা বানিয়েছে। এবার যদি না হয়, তাহলে বাঙালির খবর আছে। ভালো লেগেছে। :hatsoff:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      😀 😀 😀

      সানা ভাই, আপনার কমেন্টের অপেক্ষায় বসে ছিলাম :dreamy: সারাদিন। বিশ্বাস করেন। শেষে ভাবলাম আবার মাইন্ড করলেন কিনা :-/ । ভয় লাগছিল 🙁 । এখন খুব শান্তি লাগছে 🙂

      দোয়া করি আপনি এমপি না, তার চেয়ে অনেক বড় কিছু হন। আমরা আরো গর্ব করে সবাইকে বলতে পারব, ঐ দেখ আমাদের বড় ভাই, সানা ভাই :party:

      তোমার-আমার মতো এদেশের লাখো মানুষ আশা আর স্বপ্নের বাসা বানিয়েছে। এবার যদি না হয়, তাহলে বাঙালির খবর আছে।

      ঠিক বলেছেন। তাইতো এই ম্যাসেজটুকু তাদের কানে পৌছানোর জন্য আমার এই অতি ক্ষুদ্র প্রয়াস।

      আপনার ভাল লেগেছে শুনে খুবই ভাল লাগছে। অনেক অনেক উৎসাহ পেলাম বস্‌।

      এই খুশিতে আপনাকে :salute: :salute: :salute:

      জবাব দিন
  7. তানভীর (৯৪-০০)

    রহমান ভাই, দারুন হয়েছে। খুব ভালো লাগল পড়ে।

    কিন্তু এবারের শ্বাসটা হতাশার নয়, বরং অনেক অনেক আশা, ভরসা আর প্রত্যাশার…

    আশায় রইলাম।

    লাবলু ভাইয়ের সাংগ-পাঙ্গের নাম না দেয়ায় আপনার ব্যাঞ্চাই। :-B :-B

    জবাব দিন
  8. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    রহমান দোস্ত,
    তোর গল্পটা আবার পড়লাম।
    আজকে দিনে পড়লাম প্রথমবার। কমেন্ট করতে গিয়াও করি নাই
    এই ফক্স কলিং রাইতে শুনশান নীরবতায় আবার পড়লাম সময় নিয়ে। শার্লী উপরে এক কথায় দারুন করে বলছে। বর্তমান প্রেক্ষিত নিয়ে চমৎকার গল্প। লাবলু ভাই একটা সিম্বলিক গল্প লিখেছিলেন ইন্টেরিম আমলটা নিয়ে। চমৎকার করে প্রায় সবগুলো ঘটনা উনি দেখিয়েছিলেন। তুই যেন তার রেশটা অনাগত ভবিষ্যতের আশা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলি দেশের আপামর মানুষের। সাথে সাথে আমাদের সাধারণ মানুষগুলোর চিন্তা মুক্তির কয়েকটা রাস্তাও যেন উঠে আসলো বিভিন্ন বাস্তবতার সাথে। :boss: :boss:
    দোস্ত এই চমৎকার লেখাটার জন্য তোকে :salute:
    আর লাবলু ভাইয়ের একান্ত অনুসারী হিসাবে গল্পে আমাদের নাম না আসায় সমসাময়িক সিসিবি ধারায় তোর ব্যাঞ্চাই :grr: :grr:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
    • রহমান (৯২-৯৮)

      হুমম, মামা তুই তো তোর লাষ্ট পোষ্টে যা দেখাইলি... 😛 শুধু কমেন্টই না, লেখাতেও যে তুই সমান পারদশী তার প্রমাণ তো কইরাই দিলি। তাইফুরের সেই টামটা তোর জন্য আবার মনে পইরা যাইতেছে 😀

      এইবার একটু সিরিয়াস কথা কই B-) । মন্তব্যতে বিশ্লেষণ ভাল হয়েছে। মন্তব্যটি পড়ে এই কাল্পনিক গল্পের লেখক অত্যন্ত খুশি হয়েছেন, গর্বিত হয়েছেনন, আকাশে উড়ছেন এবং অনেক ফুলেছেন... অর্থাৎ তিনি এই বায়ু (পাম-অন্য কিছু ভাবিস না আবার :-B )টুকু সানন্দে গ্রহণ করেছেন 🙂 । ভবিষ্যতে তার আতলামী বেড়ে গেলে তার জন্য কিন্তু তুই দায়ী থাকবি 😉

      :salute: এর জবাবে :salute:

      আর আমার ব্যাঞ্চাইতে থাক 😛

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফৌজিয়ান (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।