খুশকি – ৬

১। ২০০৫ সালের শেষের দিকের ঘটনা। আমি তখন পিজিআর এ ছিলাম। একটা কোর্স উপলক্ষ্যে এস.এস.এফ. এ এটাচ ছিলাম প্রায় তিনমাস। কোর্সের নাম ডিপিসি (ডিগনিটরী প্রটেকশন কোর্স) বা ভি আই পি প্রটেকশন কোর্স। ঐ কোর্সে আর্মি, নেভী, এয়ারফোর্স ছাড়াও পুলিশ ও আনসারের অফিসাররা ট্রেনিং করে থাকে। কোর্স শেষে সব ষ্টুডেন্ট অফিসারদের বিভিন্ন ভিআইপি এসাসিনেশনের ঘটনার উপরে প্রেজেনটেশন দিতে হয়। ষ্টুডেন্ট অফিসাররা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই প্রেজেনটেশন দেয়। আমাদের গ্রুপে ছিল একজন পুলিশ অফিসার যার নাম এএসপি আহমার। বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ। উনি ছিলেন খুবই সহজ সরল একজন মানুষ। কিন্তু উচ্চারনে উনার কিছুটা দূর্বলতা ছিল। তিনি কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন এবং সব ‘স’ (শ, স, ষ) কে ‘শ’ বা ‘ষ’ এবং ‘র’ কে ‘ড়’ উচ্চারণ করতেন।

তো নিয়ম অনুযায়ী প্রেজেনটেশন দিতে হলে সবাইকেই ষ্টেজে উঠে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশনের মাধ্যমে কিছুক্ষন বক্তব্য দিতে হবে। এখন সমস্যা হলো উনি এর আগে কখনো প্রেজেনটেশন দেননি। তাই উনার মধ্যে প্রচন্ড টেনশন এবং জড়তা লক্ষ্য করলাম। নিজের রুমে বেশ কবার প্র্যাকটিস করেও উচ্চারনের জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ষ্টেজে উঠে কিছু বলতে গেলেই তার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। শেষে প্রেজেনটেশনের দিন সকালে আমাদের টিম লীডার মেজর গাফফার (এক্স ক্যাডেট, এসসিসি এবং এক্স এ্যাডজুটেন্ট, সিসিসি) কে বলে বসলেনঃ

“ ষাড়, আমি যে ‘শ’ কে ‘শ’ বুইলতে পারিনা, আমি কিভাবে প্রেজেন্টেষন দিব? শবাই তো আমার কোথা শুইনবে আর হাইশবে। এর থিকে আমি শিটে বইশে থিকে পাওয়ার পয়েন্ট শালাব, আর আইপনে আমার কোথা গুলো বুইলে দিয়েন ষাড় ”

২। এবারে আমার সেই বিখ্যাত কোর্সমেটের কাহিনী ( আমার আগের লেখাটায় ঘুম নিয়ে শেষ প্যারায় যার ঘটনা লিখছিলাম)। আমার এই কোর্সমেট/বন্ধু হলো খুবই শর্ট এবং খুব হালকা গড়নের। ইউনিফর্ম না পড়লে যে কেউ তাকে হাইস্কুল বা সদ্য কলেজে উঠা ষ্টুডেন্ট ভাবতে পারে। ২০০২ সালের ঘটনা। আমরা তখন লেফটেন্যান্ট। সাভার ক্যান্ট এ পোষ্টিং। আমার এই বন্ধু তার আরেক বন্ধুকে (ভার্সিটির বন্ধু) নিয়ে সাভার ক্যান্টের গেটে ঢোকার পথে ডিউটিরত এমপি (মিলিটারী পুলিশ) র সাথে তার সেদিনকার কথপোকথন ছিল এরকমঃ

ঃ স্লামালিকুম, আপনার পরিচয়?
ঃ ওয়ালাইকুম সালাম। লেফটেন্যান্ট সোহেল [কাল্পনিক নাম দিলাম]
ঃ বুঝলাম, তা লেফটেন্যান্ট সোহেল স্যার আপনার কি হয়?
ঃ কেউ হয় না, আমি নিজেই
ঃ ফাজলামো করছেন? বললাম সোহেল স্যারের সাথে আপনার সম্পর্ক কি?
(এবার আমার বন্ধু রেগে গিয়ে)
ঃ তুমি আমার সাথে ফাজলামো করছো? বললাম না, আমিই লেফটেন্যান্ট সোহেল, আমি … ফিল্ড আর্টিলারীতে আছি (ইউনিটের নাম)
এবারে এমপি ভড়কে গেল, অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে হা করে আমার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকল।
এবারে আমার বন্ধুর পালটা প্রশ্নঃ
ঃ হা করে তাকিয়ে কি দেখছ? স্যালুট দাও

হতবম্ব এমপি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাড়াতাড়ি চেক মেরে স্যালুট দিল :salute:

[আমার এই বন্ধুটি কিন্তু এক্স ক্যাডেট, তার আসল নাম এবং কলেজ বলা যাবেনা। কারন, তাহলে ইমিডিয়েট সিনিয়র, জুনিয়রদের অনেকেই তাকে চিনে ফেলবে]

৩। এবারের ঘটনা বলার আগে নন-মিলিটারী পারসোনালদের জন্য প্রথমে একটু ভুমিকা দিয়ে নেই। আমরা যখন ফায়ারিং রেঞ্জে ফায়ারিং প্র্যাকটিস করি তার আগে চিঠি লিখে রেঞ্জ বরাদ্দ বা রেঞ্জ এলটমেন্ট চাইতে হয়। সাধারনত ব্রিগেড বা ডিভ হেডকোয়ার্টার থেকে এই রেঞ্জ এলটমেন্ট দেয়া হয়। ফায়ার করতে গিয়ে ট্রিগার টানার সাথে সাথে ফায়ার না হলে তাকে মিসফায়ার বলা হয়। বিভিন্ন কারনে মিসফায়ার হতে পারে।

আমার ইউনিটে এক সিনিয়র ছিলেন যিনি ছিলেন আমাদের সাথে খুবই ফ্রী। আমরা এত ফ্রী ছিলাম যে, দুষ্টামী করে স্যারকে অনেকসময় ‘স্যার’ না ডেকে ‘বড়ভাই’ ডাকতাম। আমরা স্যারের সাথে প্রায়ই দুষ্টামী করতাম এবং স্যারও খুব মজার মজার কথা বলতেন। যদিও স্যার বাসা নিয়ে থাকতেন কিন্তু ভাবী ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যালের ষ্টুডেন্ট। মাঝে মাঝে ছুটি পেলে বাসায় আসতেন। ভাবী না থাকলে আমরা ব্যাচেলররা (তখন ব্যাচেলর ছিলাম) স্যারের বাসায় যেতাম এবং ওখানে খুব আড্ডা দিতাম। একদিন স্যারের বাসায় গিয়ে কথাপ্রসঙ্গে জানতে পারলাম, স্যারের বিয়ের বয়স তখন তিন বছরেরও বেশি। এটা শুনে আমাদের একজন স্যারকে প্রশ্ন করে বসল
ঃ ‘বড়ভাই, আমরা কবে আংকেল হবো?’
উত্তরে স্যারের নির্বিকার জবাব
ঃ‘রেঞ্জ এলটমেন্ট পাচ্ছি না’

এর প্রায় কয়েকমাস পর ভাবী ইন্টার্নী শেষ করে বাসায় চলে এল। আরো কয়েকমাস পরে কথা প্রসঙ্গে একই ব্যক্তি স্যারকে একই প্রশ্ন করল। এবারে স্যারের আফসোস জড়ানো কন্ঠে উত্তরঃ

ঃ ‘এলটমেন্ট তো নিয়মিত পাচ্ছি কিন্তু সবই তো মিসফায়ার হচ্ছে”

৪। এবারের ঘটনাট খুশকি সংক্রান্ত। আর এটা পড়তে গিয়ে কিন্তু আরো বেশি ঝাল লাগতে পারে। তাই সাবধান! যেহেতু এটা একটি স্কুল লেবেলের ঘটনা, তাই এই ঘটনার মাঝে অনেক ছেলেমানুষী (মেয়েমানুষী নয় কিন্তু) রয়েছে। আপু এবং ভাবী গ্রুপকে না পড়ার জন্য উপদেশ দেয়া হলো। আর যারা পড়বেন, তারা নিজ দায়িত্বে পড়বেন। সমস্ত দায় পাঠকের উপর ন্যস্ত করা হলো, ঘটনা বর্ণনাকারী এর জন্য দায়ী থাকবেনা কিন্তু

স্ক্রল করে ঠিকই নিচে নামা হচ্ছে। তাই না?

নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি আকর্ষণ??? কুব কারাপ, কুব কারাপ

সবাই কি পড়তে চাচ্ছেন?

ঠিক আছে, কি আর করা? সবাই যখন পড়তে চায়… থাক বলেই ফেলিঃ

সম্ভবত ক্লাস টেন/ক্যান্ডিডেটস আমলের ঘটনা। হঠা করে সবাই খেয়াল করলো আমাদের এক ক্লাসমেট প্রায় প্রতিদিনই শ্যাম্পু নিয়ে বাথরুমে ঢুকে এবং অনেক সময় নিয়ে শাওয়ার নেয়। সে বাথরুমে ঢুকলে বাহিরে লম্বা সিরিয়াল পড়ে যায়। হাজার দরজা ধাক্কাধাক্কিতেও কাজ হয়না। এ নিয়ে একদিন তার সাথে আমাদের আরেক ক্লাসমেটের মোটামুটি এক ঝগড়া হয়ে গেল। দুজনের কথপোকথন টা ছিল এরকমঃ
ঃ ঐ শালা, তুই প্রতিদিন বাথরুমে শ্যাম্পু নিয়া কি করস?
ঃ মাথায় খুব খুশকি, তাই ঘনঘন শ্যাম্পু করি
ঃ মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস না? প্রতিদিন কেউ শ্যাম্পু করে?
ঃ আমি করি, তোর কোন প্রবলেম?
ঃ তোর তো চুল কম, কোন মাথায় শ্যাম্পু করস? উপরেরটা নাকি … ?
ঃ (রেগে গিয়ে) দুইটাতেই। তোর কোন সমস্যা? কি করবি?
ঃ হুম, সমস্যা তো আছেই। দেখিস আজকে কি করি

ঐদিন গোসলের সময় আমার অপর বন্ধুটি চুরি করে বাথরুমের উপর দিয়ে যেই না উকি দিল অমনি প্রথমজন তা টের পেয়ে তার মুখের মধ্যে একগাদা শ্যাম্পুর ফেনা ছুড়ে মাড়ল। আর বের হয়ে খুব ক্রেডিট নিয়ে সবাইকে বলতে লাগল যে, শ্যাম্পুর ফেনার সাথে নাকি অন্য কিছুর মিশ্রণও ছিল।

২,৪৫০ বার দেখা হয়েছে

৫০ টি মন্তব্য : “খুশকি – ৬”

  1. আন্দালিব (৯৬-০২)

    শেষেরটা মারাত্মক, অত্যন্ত ঝাঁঝালো। শিশুদের ও বুড়োদের নাগালের বাইরে রাখুন। সতর্ক ব্যবহার বাঞ্ছনীয় টাইপের খুশকি। ;;;

    মজার হইছে লেখা রহমান ভাই! চালায়ে (চুলকায়ে) যান খুশকি! :clap: :clap:

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    সাধারনত ব্রিগেড বা ডিভ হেডকোয়ার্টার থেকে এই রেঞ্জ এলটমেন্ট দেয়া হয়।

    ইয়ে দোস্ত, এই পুরা ব্রিগেড বা ডিভ হেডকোয়ার্টারটা এলটমেন্ট করার সিস্টেম কি :grr: :grr:

    ফাটায়া লিখসোস মামা। জট্টিল হইসে। মিরা যিবার অবস্থা পুরা :)) :))


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    যখন পড়ছিলাম কমেন্ট বন্ধ ছিল।

    ঃ ‘এলটমেন্ট তো নিয়মিত পাচ্ছি কিন্তু সবই তো মিসফায়ার হচ্ছে”

    দূর থেকে ফায়ার করলে হইব না ভাই, ওনারে পয়েন্ট ব্লাংকে ফায়ার করতে বইলেন। 😉 :grr: :grr:

    শেষেরটা।...। হে হে :))

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : টিটো রহমান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।