খুশকি – ৫

১। ক্লাস এইটের ঘটনা। আমাদের এক বিখ্যাত ষ্টাফ ছিল নাম- আইয়ুব ষ্টাফ। সাইজে খাটো এবং গাট্টাগোট্টা হবার কারনে আমরা তাকে ‘আইয়ুব গিট্টু’ বলে ডাকতাম। আইয়ুব ষ্টাফ সবসময় পিটি এবং গেমসে ছোট সাইজের হাফপ্যান্ট পরত। একবার কুরবানী ঈদের পর প্রথম গেমসের ফলিনে গিয়ে দেখি ষ্টাফ আরো মোটা হয়েছে এবং তাতে হাফপ্যান্ট ছিড়ে যাবার উপক্রম।
যাই হোক, ষ্টাফ আমাদেরকে সাবধান করে উলটা ঘুরে এ্যাডজুটেন্টকে রিপোর্ট দেয়ার সময় উনার পা বেশি তুলে চেক মারতে গিয়ে হাফপ্যান্টের সেলাই পিছন থেকে মাঝ বরাবর অনেকখানি ছুটে গেল। সেই সুযোগে ষ্টাফের লাল রঙের অন্তর্বাসের দিকে নজর যেতে দুষ্ট ক্যাডেটদের বিন্দুমাত্র দেরী হলোনা। আর নজর যাবেই না বা কেন? এমন নজর কাড়া টকটকে লাল রঙের অন্তর্বাস যে খুবই আনকমন!!! ক্যাডেটরা যে তা দেখে ফেলেছে ষ্টাফ সেটা বুঝতে পেরে পেছনে হাত দিয়ে সেই বিশাল ফাটা অংশটা ঢাকার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল এবং এ্যাডজুডেন্টকে রিপোর্ট না দিয়ে পেছনে দুই হাত রেখেই আরামে দাড়া পজিশনে কাচুমাচু করতে লাগল। আমরা পেছন থেকে ষ্টাফের ঐ অবস্থা দেখে আর হাসি ধরে রাখতে পারলাম না, অনেকেই হো হো করে হেসে উঠল। সামনে থেকে দেখা না যাওয়ায় ব্যাপারটা তখনো এ্যাডজুটেন্ট বুঝে উঠতে পারেনি। তাই তিনি চিৎকার দিয়ে প্রশ্ন করলেন- “হোয়াট ইজ দ্য ফান? হাউ ডেয়ার!!! ষ্টাফ কি ব্যাপার? ক্যাডেট আমার সামনে হাসে কেন?”
উত্তরে আইয়ুব ষ্টাফের চিৎকার করে উত্তর- “প্যান ফাডি গেছে স্যার”

২। বিএমএ তে থাকতে আমাদেরকে নিয়ে 1st টার্মে আমাদের সিনিয়ররা অদ্ভুত সব পানিশমেন্ট দিত এবং মজা করত । তারমধ্যে একটা ছিল শাউটিং ফলিন। আমাদেরকে আমাদের গলার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে শাউট করতে হতো এবং বিভিন্ন বাক্য বলতে হতো। তারই মধ্যে একটি বাক্য ছিল- “বিএমএ কেন আইলাম গো, (…) ভাবী বাঁচাও গো”।
দেখা গেল ভাবীর নাম শোনা মাত্রই আরেকজন সিনিয়র চিৎকার করে রুম থেকে বের হয়ে এসে আমাদেরকে থামিয়ে দিত এবং আগের ভাবীর নাম বদল করে নতুন আরেক ভাবীর নাম জুড়ে দিত। এভাবে আমাদের অনেক ভাবীর নামই বের হয়ে আসত, আর আমরাও মহা আনন্দে ভাবীদের নাম ধরে চিৎকার করে শাউটিং ফলিন করে যেতাম। প্রায়ই ভাবতাম আমাদের ঐ ভাবীরা যদি কখনো এসে এই দৃশ্য দেখতে/শুনতে পারতেন তাহলে কেমন হতো? ভাবীরা কি সত্যিই এই অদ্ভুত পানিশমেন্ট থেকে বাঁচানোর জন্যে এগিয়ে আসতেন?

৩। আমার ইউনিটে এক এস এম (সুবেদার মেজর/মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার) ছিলেন, যিনি ছিলেন খুব ধূর্ত বা চতুর স্বভাবের। সিওকে উনি ব্যাটালিয়নের সব খবর অত্যন্ত কৌশলের সাথে বলে দিতেন। এ কারনে তিনি সিও র খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন। আমার সিও গাড়ির এ্যাকসিডেন্ট এড়ানোর জন্যে জুনিয়র অফিসারদের ইউনিটের গাড়ী চালাতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সব অফিসাররাই নতুন অবস্থায় কোন না কোন ভাবে এই গাড়ী চালানো শিখে নেয়। তো আমাদের ইউনিটের এক জুনিয়র অফিসার একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে গাড়ি চালানো প্রাকটিস করছিল। রাতে যখন এস এম সিওকে রিপোর্ট দিচ্ছিল তখন তার রিপোর্টের একটি অংশ ছিল এমনঃ
“স্যার আজকে আমাদের (…) স্যার এত চমকার ভাবে জীপটাকে মোড় ঘুরাল যেটা ছিল দেখার মতো, অন্য কেউ হলে ঐ রকম স্পীডে গাড়ীই উলটে ফেলত। স্যারের কন্ট্রোল কিন্তু দারুন…”
অর্থাৎ সিও র বুঝতে আর বাকী রইলোনা যে ঐ অফিসার লুকিয়ে গাড়ী চালিয়েছে এবং ওভার স্পীডে গাড়ী চালিয়েছে।

৪। এমজিসিসির দুই ক্যাডেটের মধ্যে কথপোকথনঃ
ঃ আচ্ছা বল্‌তো, ছেলে ক্যাডেটরা নিজেদের মধ্যে সারাদিন কি এত আলোচনা করে?
ঃ কেন? আমরা যা করি তাই করে।
ঃ 😮 ছি! ছি! ছেলেরা এত খারাপ!!!???

( এমজিসিসিয়ান আপুরা, প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। এটা :just: ফান।

শিক্ষনীয় বিষয়ঃ ছেলে হোক মেয়ে হোক, সকল ক্যাডেটই দুষ্ট ;;) )

৫। সায়েদের ‘টুশকি-৩০’ এর ‘বেরা’ সম্পর্কিত ঘটনাটি পড়ে আমারও একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। এটা এ বছরের শুরুতে লাইবেরিয়াতে অবস্থানকালে আমাদের ইউনিটের একটি কালচারাল অনুষ্ঠানের ঘটনা। একটি কৌতুক পরিবেশন করতে গিয়ে নারী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য স্থানীয় এক দোকান থেকে তথাকথিত ‘বেরা’ আনা হলো। সেই বেরা বানানোর মেটারিয়েল হিসেবে ব্যবহৃত হলো দুটো টেনিস বল।

আমাদের দুজন সৈনিক অভিনয় করার জন্য ষ্টেজে উঠল। একজন নায়কের চরিত্র, আরেকজন শাড়ী, ব্লাউজ পড়ে নায়িকা সাজল। তো ষ্টেজে উঠে নায়ক নায়িকার কথপোকথন হচ্ছে। নায়কের অভিযোগ, তার নায়িকা অন্য কোন পুরুষের সাথে একাধিক প্রেমে জড়িত, কিন্তু নায়িকা তা অস্বীকার করছে। নায়ক চাচ্ছে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে কিন্তু নায়িকা নায়ককে হাত নেড়ে নেড়ে বিভিন্ন ভাবে বুঝাবোর চেষ্টা করছে। এভাবে কথপোকথনের এক পর্যায়ে হঠাৎ দেখা গেল ষ্টেজে একটি টেনিস বল পরে বাউন্স করতে লাগল। হঠাৎ টেনিস বল পড়ে যেতে দেখে নায়ক নায়িকা দুজনেই প্রথমে হকচকিয়ে গিয়ে পরবর্তী ডায়লগ ভুলে গেল। উপস্থিত দর্শক টেনিস বল দেখা মাত্র ঘটনা বুঝতে পেড়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। এ অবস্থা দেখে নায়ক চরিত্রের সৈনিকটি আরো হকচকিয়ে গিয়ে পরবর্তী ডায়লগ ভুলে গেল এবং দর্শকদের সামনে কি করবে তা ভেবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। নারী চরিত্রের সৈনিকটি ছিল বুদ্ধিমান ও অত্যন্ত প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন। সে তখন মাটি থেকে বলটি তুলে নিয়ে বললঃ “প্রিয়তম, তুমি আমার কাছে এই বলের মতো। তোমাকে আমি ঠিক এমনিভাবে সারা জীবন বুকে জড়িয়ে রাখব” (এই ডায়লগের সাথে সাথে নায়িকা বলটিকে ব্লাউজ এর ফাঁক দিয়ে পূর্বের স্থানে চালান করে দিল)

[বিঃদ্রঃ ৪ নং কৌতুকটি পূর্বে ‘এডিটেড সেলিনা আপু’র প্রথম লেখাতে মন্তব্য আকারে শেয়ার করেছিলাম।]

৪,৬৯৮ বার দেখা হয়েছে

৬৩ টি মন্তব্য : “খুশকি – ৫”

  1. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    :khekz: :just: :thumbup: :khekz:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জাবীর রিজভী (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।