খুশকি – ৪

খুশকি -১
খুশকি -২
খুশকি -৩

১। বড় কমোড কেনার শানে নুযুল

আমার বাবা ১৯৯৩ সালে বাড়ি তৈরীর কাজে হাত দেন। ১৯৯৫ তে আমরা সেই বাড়িতে উঠলাম। দোতলায় দুই ইউনিট এর দুটি বাসা বানানো হলো। তারই একটিতে আমরা উঠলাম। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। ছুটিতে বাসায় গেলাম। ঐ বাসাটিতে রুমের সংখ্যা কম হওয়ায় এবং বাথরুমের সাইজ ছোট হওয়াতে সব মিলিয়ে কারোরই বাসাটা মনমতো হচ্ছিলনা। কিছুদিন পর তিন তলার কাজে হাত দেয়ার সময় বাবা ডিসিশন নিল যে তিন তলা সম্পূর্ণ এক ইউনিটের বাসা হবে, রুমের সংখ্যা বেশি এবং বাথরুম স্বভাবতই আগের চেয়ে বড় হবে।

তিনতলার কাজ একসময় শেষ পর্যায়ে পৌছালো। সবশেষে বাথরুম ফিটিংস আনা হলো। দোতলায় ছোট বাথরুমের কারনে সব ফিটিংসই একটু ছোট ছোট ছিল। এবারে সব ষ্ট্যান্ডার্ড সাইজের কেনা হলো। আমি তখন আরেক ছুটিতে বাসায় গেলাম। তিন তলার বাথরুমের জন্য বড় সাইজের কমোডটা যখন দেখলাম তখন আমার আপুদেরকে নতুন কমোডটা দেখিয়ে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললামঃ “এই যে দেখ, আমাদের জন্য এবার বড় কমোড কেনা হয়েছে, এতদিন ছোট কমোডের কারনে সবাই কম কম খেতে, এখন থেকে সবাই বেশি বেশি করে খাবে আর বেশি বেশি করে … (বুঝে নিন)”।

২। বিএমএ তে এক রাগী ষ্টাফ ছিলেন যিনি ড্রিল গ্রাউন্ডে খুব কড়া ছিলেন কিন্তু মজার মজার কথা বলতেন। আমাদের কোর্সের, আমাদের প্লাটুনের এক ক্যাডেট (নন ক্যাডেট কলেজ) ড্রিলে খুবই দূর্বল ছিল। কোনভাবেই স্যালুটিং পাশ করতে পারতনা। ঐ ষ্টাফ আমাদের প্লাটুন দেখাশোনা করতেন। তিনি সবসময় তাকে পাশ করানোর চেষ্টা করতেন। তাকে অনেক পানিশমেন্ট দিতেন, স্যালুটিং শেখানোর চেষ্টা করতেন, কিন্তু কোনভাবেই তার ড্রিলের উন্নতি না হওয়াতে তিনি হাল ছেড়ে দিলেন। শেষে রাগ করে একদিন ষ্টাফ তাকে বলে বসলেনঃ “আল্লায় তো আপনেরে পরথমে মহিলা বানাইছিল, পরে ডিসিশন চেইঞ্জ করছে আর আফনে একটা লাডি নিয়া দৌড়াইয়া এই বিএমএ তে চইলা আইছেন”।

৩। বিএমএ র স্পেশাল ব্যাচ এর ব্যাপারে তো আগেই বলেছি। এইসব ব্যাচের ক্যাডেটরা মাষ্টার্স পাস করে, তারপর ৬ মাসের শর্ট ট্রেনিং করার জন্য বিএমএ তে আসে। এদের মধ্যে অনেকে থাকে বিবাহিত। বিএমএ তে জয়েন করার পর পরই তাদেরকে একটা ফর্ম পূরণ করতে হয় যেখানে অনেক ডাটা ফিল আপ করতে হয়। তো এক বিবাহিত স্পেশাল ক্যাডেট তার ফর্ম ফিল আপ করে বেশ আলোচিত হয়েছিল। কারন তিনি ঐ ফর্ম ফিল আপ করতে গিয়ে “Sex” এর ঘরে “Male” না লিখে লিখেছিল “Twice in a day”

৪। আমার এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের এতটাই দুরবস্থা ছিল যে, এতদিন পাহাড়ের উপরে উঠে লাঠির মাথায় মোবাইল বেঁধে, সেই মোবাইলের সাথে হেডফোন লাগিয়ে কথা বলতে হতো। নেটওয়ার্ক সার্চ করার জন্য লাঠিটা নিয়ে কখনো ডানে বা কখনো বামে সরে গিয়ে চিৎকার করে কথা বলতে হতো। এমনি একটি ঘটনা নিয়ে কিছুদিন আগে আমাদের এক সৈনিক কালচারাল প্রোগ্রামে একটা ডেমো দিল। ডেমোর কথোপকথন গুলো ছিল এরকমঃ

ঃ হ্যালো, হ্যালো

ঃ জ্বী বঅঅলেন

ঃ হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো…

ঃ বলেন, হুনতেছি তো

ঃ হ্যালো, হ্যালো, হ্যালোওওওওওওওও

ঃ আরে হেলতে হেলতে তো মাডির লগে লাইগা যাইতেছি। কথা কন

ঃ ক্যামন আছ জান?

ঃ জ্বী ভাল, আফনে?

ঃ বালা নাই জান, ছুডিছাডা নাই, তোমারে দ্যাকতে মন চায়

ঃ ইস্‌সসস, মিত্যা কতা কইতাছেন, আফনে একটা রোবট, আফনের কোন মনই নাই।

ঃ হ্যালুউউ, হ্যালুউউ, কি কইলা? কাইটা কাইটা আইতেছে। আমার কি নাই?

ঃ আফনের মন নাই।

ঃ নাউজুবিল্লাহ, কি কও এইসব? তোমার দেহি মুখ খারাফ হইয়া গেছে।

ঃ খারাফ কি কইলাম? কইলাম আফনের মন নাই। এতে খারাফের কি আছে?

ঃ ও আইচ্ছা, আমি তাইলে ভুল হুনছি। আমি ভাবছিলাম… থাউক বাদ দও, এইহানে নেটওয়ার্কটা বড় ডিসটার্ব দেয়…। (এবার একটু সরে গিয়ে, নেটওয়ার্ক চেক করে নিয়ে) শোন, তোমারে যে ৫০০০ টাকা পাঠাইছি, ঐ টাকা পাইছ?

ঃ জ্বী, ৭০০০ টাকা পাইছি।

ঃ আরে ৭০০০ না, ৫০০০ কইছি।

ঃ ৭০০০ ই তো, আমি তো ৭০০০ টাকাই পাইলাম

ঃ আজব! পাঠাইলাম ৫০০০, আর পাইলা ৭০০০; মানে কি? (কিছুক্ষন চিন্তা করে…) যাউগগা, কম তো পাও নাই, বালাই অইল। শোন, আমাগো বাবু কেমুন আছে?

ঃ কোন বাবু? কার কথা কইতেছেন?

ঃ আরে! আমাগো বাবু, আমাগো পোলা “রতন”

ঃ ছি!ছি!ছ! এইসব কি বলতেছেন? বিয়া করলেন মাত্র ৬ মাস, আর বাবুর কথা জিগাইতেছেন! আফনের মাতা ঠিক আছে? আফনে কি আগে আরেকটা বিয়া করছিলেন? ঐ ঘরে নিশ্চই পোলা আছে আফনের। হায় হায়! এই ছিল আমার কপালে… এখন আমার কি হইব? (বিলাপ করে কান্নার শব্দ)

ঃ (সন্দেহ ভরা মনে) এচকিউজ মি, আপনে কে বলছেন পিলিজ?

ঃ ক্যান? এখন কি আগের বিয়ার খবর ঢাকবার চান? আর কত অভিনয় করবেন? পুরুষ মানুষ সব এক জাতের… (আবারো কান্না)

ঃ আপনার নামটা কি বলবেন পিলিজ? আফনে কি জরিনা না?

ঃ (অবাক হয়ে) আমি তো মর্জিনা, আফনে কেডা? আফনে সৈনিক হাফিজ না?

ঃ না, আমি তো সৈনিক মফিজ। (এবার রেগে গিয়ে) আফনে কেমন বেতমিজ মহিলা? এতক্ষন ধইরা পর পুরুষের সাথে কথা বললেন!!!

ঃ (ততোধিক রেগে গিয়ে) আর আফনে কেমন পুরুষ মানুষ যে নিজের বৌয়ের গলার স্বর চিনেন না? ছি!ছি!ছি! মাইয়্যা মানুষের গলা শুনলে কি সবাইরেই নিজের বৌ মনে হয়?

ঃ আমার এইখানে তো নেটওয়ার্ক ডিষ্টার্ব করে, গলা চিনা যায় নাকি? আফনে আমার কতগুলা টাকা নষ্ট করলেন… আসলে মাইয়্যা মানুষ সব একই জাতের… (বিড়বিড় করতে করতে লাইনটা কেটে দিল মফিজ)

সবশেষে রাগের মাথায় লাঠির মাথা থেকে মোবাইলটা খুলে একটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল মফিজ। ষ্টেজ থেকে যাবার সময় বলে গেলঃ
“ালার নেটওয়ার্ক, আর ফোনই করুম না কোনদিন এইখান থাইক্যা”

(বিঃদ্রঃ ৩ নম্বরটা মন্তব্য আকারে কোন এক পোষ্টে আগে একবার শেয়ার করেছিলাম)

৩,৯৯২ বার দেখা হয়েছে

৬৪ টি মন্তব্য : “খুশকি – ৪”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    অন্নেকদিন পর আমার দোস্ত কাম্ফ্রন্ট করছে :awesome: :awesome: [এতদিন পর যখন সামনে আইছে তখন এইটারে কাম্ব্যাক না কইয়া কাম্ফ্রন্টই কই 😀 ] :hug: :hug:
    দোস্ত কেমুন আছিসরে, বহুদ্দিন পর :hug:
    মেসেজ খান চেক করিস 😡
    আর খুশকিতে ফাকিবাজি ক্যান, শালা কলেজে থাকতে জুনিয়র দিয়া কাম করাইছিস আর এখন মফিজ স্টাফরে দিয়া পোস্টের অর্ধেকটা লেখাইছিস x-(


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আমিতো ভাবছিলাম আপনার বুঝি মন নাই...
    আমগোরে ভুইলাই গেছেন...
    অহন বুঝতাছি, আপনার মন তো আছেই...আর সেইটাও অনেক বড়... :hug:

    (বস আশা করি, নেটওয়ার্ক এর ঘাপলার কারনে আমার কমেন্ট এর অন্য কোন অর্থ হবে না... :-B )


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।