অসি ও মসি……

অসির চেয়ে যে মসি শক্তিশালী এর দৃষ্টান্ত আমরা ক্লাস ৭ এই পেয়েছিলাম। শবে-বরাত এর রাতে মাগরিবের নামাজ শেষ করে সবেমাত্র রুমে ঢুকেছি। হঠাৎ একটা আর্ত-চিৎকার শুনে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসলাম। ঘটনা কী বুঝে ওঠার আগেই দেখি ২০৫ নম্বর রুমের রহমান ও মোকতাদির মিলে একজন কে ধরাধরি করে হাসপাতাল এ নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা কি হল বুঝতে না পেরে আমরা সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে ব্লক এ দাড়িয়ে আছি। একটু পর মোক্তাদির হাসপাতাল থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে আসলো। কি হয়েছে জানার জন্যে আমরা সবাই ওকে ঘিরে ধরলাম। ও বলল ” দোস্ত, জানিস না, প্রসেঞ্জিত এর চোখের সাদা অংশ গলগল করে গড়ায়ে পড়তেছে”। শুনে আমরা সবাই আক্ষেপ করতে লাগলাম, ” আহারে, বেচারার চোখটা বুঝি গেলো”একজন বলেই ফেলল ”চোখ নষ্ট হলে তো প্রসেঞ্জিত কলেজ আউট হয়ে যাবে”। একটু পর দেখি রহমান ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আসছে। ছুটে গেলাম ওর কাছে। “দোস্ত কি খবর?? ও কি আর কোনও দিন ই দেখতে পারবো না?” রহমান কাদতে কাদতে বলল ”দোস্ত, প্রসেঞ্জিত এইমাত্র মারা গেছে”(!!!!!!)। ঘটনা শুনে আমরা তো সবাই হতভম্ব। কেউ কেউ রহমানের সাথে কাঁদতে লাগলো। বেচারা এতো তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলো!!!

কিন্তু ডিনার এর পর দেখি, একি!!! চোখের কোনায় সামান্য একটা ব্যান্ডেজ নিয়ে গুটি গুটি পায়ে প্রসেঞ্জিত হাউসের দিকে এগিয়ে আসছে!!! তখন অনেক খুঁজেও রহমান, মোক্তাদিরের দেখা মিলল না।
(পরে শুনলাম মুহাইমিন এর সূক্ষ্ম কলমের খোঁচায় প্রসেঞ্জিত তার চোখের কোনায় সূক্ষ্ম একটু আঘাত পেয়েছিলো মাত্র…)
……………………………………………………

২,৩৬৫ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “অসি ও মসি……”

  1. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    পরের কাহিনী বলি...
    আমি ছিলাম ঘটনার উল্লেখিত প্রসেঞ্জিতের গাইড, হসপিটালে ওরে ধইর‍্যা নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের হাউস মাষ্টার হাসান স্যার আমাকে ডাক দিলো হাউস অফিসে, গম্ভীর গলায় বলল, আই মতিয়ার (হাউস বেয়ারা) স্টোর রুমটা খোলোতো, কিবরিয়ার ব্যাগটা নিয়ে আসো!!
    আমিতো পুরাই টাশকি, কাহিনী কি??
    স্যার আমারে না বলে পাশে থাকা মরহুম ইসহাক স্যারকে বলে, এ তো কলেজ আউট হবেই, ব্যাগটা গোছায় রাখতেই বলি!!

    এর পর শুরু হইলো মোটিভেশন আর র‍্যাবের মতন তদন্ত!! কি হইছে সত্যি করে বলো- কি দিয়া মাইর দিলা- বুকে কি দয়া/মায়া নাই নাকি- তোমাকে কলেজে রাখা যাবে না- এ্যাডজুটেন্ট আসতেছে, তার আগেই স্বীকার করো... ইত্যাদি ইত্যাদি!! 🙁

    পরে মতিয়ার ভাই হসপিটাল থেকে এসে বলে,"স্যার চোখের নিচে একটু আঘাত লাগছে- ব্যান্ডেজ করা হইছে", ছাড়া পাইলাম, এরপর শুরু হইলো আসল জিনিষ,

    ব্লকের সিনিয়ার ভাইয়েরা আমারে ধইর‍্যা নিয়া যায়া, জুনিয়র কেন চিল্লাইছে এই অপরাধে চরম একটা পাঙ্গানি দিলো।। (সম্পাদিত)


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইমরান (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।