অই থাম!!!!!!!!!

গতো কয়েকদিনে ব্লগের অনেকগুলো পোষ্ট পড়ে শেষ করলাম। কি যে নষ্টালজিক হয়ে পড়লাম কিছু লেখা পড়ে! ভাবতে অবাক লাগে যখন ক্লাস টুয়েলভে ছিলাম তখন কলেজের অথোরিটি এর ঠ্যালায় মনে হইতো কবে এই জেলখানা থেকে মুক্তি পাবো। আর এখন সেই জেলখানার জন্যই মনটা আনচান করে।

সবাই দেখি অনেক মজার কাহিনী শেয়ার করে। আমিও ভাবলাম একটা শেয়ার করি সব ভাইদের সাথে। তখন আমরা ক্লাশ টেন এ। প্রি টেষ্ট এক্সাম মাত্র শুরু হইছে। প্রথম এক্সাম ছিল ইংরেজী ১ম পত্র। ওই এক্সাম টা নিছিলেন সাঈদ আহমেদ স্যার। প্রশ্ন টা বড়ই কঠিন হয়েছিলো। তো যাই হোক এক্সাম শেষে অনেকের মুখ দেখেই মোটামোটি বুঝা যচ্ছিলো পোলাপান এর ভাগ্যে ফেল লেখা আছে।তো তারপর আফটারনুন প্রেপ এ আমি আইসে নিশ্চিন্ত মনে ঘুম ধরলাম কেননা পরের এক্সাম যাই হক আমি ত ফেইল ই। তো ঘুম এর মাঝখানে আমি খালি আবছা আবছা ভিপি স্যার, খাতা আর তালা এই রকম বেশ কয়েটা শব্দ শুনতে পেলাম। যখন গেমস এর বেল পড়লো তখন যাবার পথে দেখলাম শাকির, নাহিদ আর নাজমুল মিলে খুব নিচু গলায় কি সব আলোচনা করতেছে। আমি তখন পর্যন্ত অন্ধকারে আছি এরা কি করতাছে।বুঝতে পারলাম আমার ডেস্ক এর পাশে এরাই শলাপরামর্শ করতেছিলো।

গেমস শেষে হাউসে আসার পর কাহিনী জানা গেলো। তাহাদের প্লান অতিশয় দুধর্ষ। তারা ঠিক করছে রাতের বেলা তারা একাদেমী ব্লক এ গিয়ে ভিপি স্যার এর রুম এর তালা ভেঙ্গে সেখান থেকে আমাদের এক্সাম পেপার এনে হাউসে আনবে। তারপর সেখানে দরকারমতো কেরিকেচার করে নিজ নিজ পাস নিশ্চিত করবে। এহেন প্লান শুনিয়া আ্মি সাথে সাথে বলিলাম আমার খাতা তাও আনিস। তোরে একদিন ক্যান্টিন ফ্রী দিবো হেহে। তো এহেন প্লান এর টেনশনে তাদের সাথে সাথে আমারো বাকি ২ প্রেপ আর কাটে না। প্রেপ শেষ করে হাউসে গিয়ে আমরা কিছু চামবাজ পোলা মিলে ওদের এই সেই নানা টিপস দিতে লাগ্লাম। এখানে একটু বলে নেই এই ৩ জনের মধ্যে নাজমুল এর প্রসেসর তুলোনামুলকভাবে একটু স্লো।
তো রাত ১টার দিকে তারা বীরদর্পে বের হলো। আমরা তখন রাতে পড়ার পারমিশন পেয়েছিলাম তাই রুম এর লাইট অন করে আজাইরা পেচাল পারতেছি। এমন সময় একাদেমী এর শেড এর উপর ভারি কিছু পড়ার আওয়াজ আর সাথে সাথে”অইইইই থাআআআআআম” বলে কোনো একজনের গগনবিদারি আর্তনাদ। আমরা সাথে সাথে বুঝতে পারলাম কাহিনী বেগতিক। এর ৫ মিনিট পরে শাকির এসে পড়লো।তার প্রায় ১০ মিনিট পর নাজমুল। তবে সে একা না, তাকে প্রায় ঘাড় ধরে নিয়ে আসছে এক গার্ড।
পরের কাহিনীটা ছোট।তাদের সবার আনলিমিটেড ইডি+পেরেন্টস কল হইছিলো। কিন্তু আসল হাসির কাহিনীটা পরে জানা গেলো।
তারা যখন দেখলো কোনো চাবি দিয়েই তালা টা খুলা যাচ্ছে না তখন নিচ থেকে চোখা ইটের টুকরা দিয়ে গ্যাচ ঘ্যাচ আওয়াজ করে তালা খুলার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করলো। গার্ডের আসনে ছিলেন আমাদের নাজমুল ভাই। ত তিনি যখন গার্ড কে দেখিলেন তখন তাদের কে খালি পালা বলেই পলায়ন করিলেন। শাকির অন্যদিক দিয়ে পালাতে পারলেও নাহিদ অনেকটা ফাদে পড়ে যায়। তখন ছেলেটা একটা অসাধারন সাহসের কাজ করে ২ তালা থেকে শেডের উপর লাফ দেয়। গার্ড বেচারা ভাবতেও পারে নাই এই রকম কিছু একটা ঘটবে। তিনি নাকি চিল্লায় চিল্লায় বলছিলেনঃ(পরে শুনেছি)”এই ভাই এই ভাই কি করেন! অ ভাই লাফ দিয়েন না আপানে আমি ধরমু না…” হেহে
আমাদের নাজমুলকে আরেকটা গার্ড তাড়া করতেছিলো। পুরা একাডেমীটা তাড়া করে নাজমুল যখন প্রায় হাউস থেকে আর মাত্র ২০ না ৩০ গজ দূরে তখন গার্ড ভাই কি মনে করে জোরে চিল্লায় উঠে বললেন”অইইই থাম!!!” আমাদের নাজমুল ও তখন থেমে গেলেন।
এহেন কাজের ব্যাখা পরে তার কাছে জানতে চাইলে তার উত্তরঃ” আরে বেটা পুরা ক্যাডেট লাইফ থাম শুনে শুনে থেমে থেমে অভ্যাস হয়ে গেছে!! আমার কি দোষ!!”

১,৫০৫ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “অই থাম!!!!!!!!!”

  1. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    সেইরকমের ফানি হইসে ব্রাদার!

    পুরা ক্যাডেট লাইফ থাম শুনে শুনে থেমে থেমে অভ্যাস হয়ে গেছে!

    =))

    গার্ড ভাই কি মনে করে জোরে চিল্লায় উঠে বললেন”অইইই থাম!!!”

    গার্ড মিয়া তো সেইরকমের স্মার্ট!! 😮

    জবাব দিন
  2. নাজমুল (০২-০৮)
    আরে বেটা পুরা ক্যাডেট লাইফ থাম শুনে শুনে থেমে থেমে অভ্যাস হয়ে গেছে!! আমার কি দোষ!!”

    ওরে জোসসসস :)) :))

    এই ভাই এই ভাই কি করেন! অ ভাই লাফ দিয়েন না আপানে আমি ধরমু না…

    :boss: :boss:

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    সাইদ স্যারের ক্লাসে একদিন বলেছিলাম "স্যার আপনার উচ্চারন বুঝতে পারিনা", স্যার তো ক্ষেইপা লাল, আমারে কয় তুমি সবচেয়ে ডাল ছেলে এই ইনটেকের 😀

    সাইদ স্যার আর হাই স্যার দুই দোস্ত ছিল সেই সময়।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।