এলোমেলো ভাবনাগুলোর গন্তব্যহীন পথচলা

সেদিন মেসেঞ্জারে আমার ফ্রেন্ড ফারহানের সাথে কথা বলছিলাম। সে সিসিআর। কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ সে বলে উঠলো দোস্ত আমি আমার কলেজ লাইফটা খুব মিস করতেছি। কলেজের ফ্রেন্ড, অর্থহীন খুনসুটিগুলো আরো অনেক কিছু। আমার তখন একটা খুব সুন্দর কথা মনে পড়লো। কোথায় যেনো পড়েছিলাম “this life is too short to whine about how short the life is!!”. কথাটা আসলেই ভাবনার উদ্রেক জোগায়। আমরা কখনো পুরোনো জিনিসকে এতোটাই মিস করে থাকি যে মহামুল্যবান বর্তমানের মাঝে যে বিশাল মাহাত্ন্য লুকিয়ে আছে তার কথাটা বেমালুম ভুলে যাই। কেনো এসব কথা বলছি আমি? আমি যখন ক্যাডেট এ ছিলাম বিশেষকরে শেষ দুই বছরের দিকে তখন আমাদের ব্যাচের উপর দিয়ে অথরিটির কিছু ফালতু টাইপের কাজকর্মের কারনে কলেজের কলেজের প্রতি একধরনের বিতৃষ্ণা মনের মাঝে দানা বেধেছিলো। সামান্য একটা খেলা দেখতে পারতাম না কারো পারমিশন না পাবার কারনে। জরিমানা, এক্সট্রা ড্রিল, পেরেন্টস কল, ব্যাচের মধ্যে ইন্টার্নাল পলিটিক্স, হাউস চ্যাম্পিয়ন্সিপ করা নিয়ে হাউসে হাউসে কোন্দল সব কিছু মিলিয়ে শেষ কয়েকটা দিন অনেকটা পারতে না পারতে কাটাইছিলাম। তখন মনে হয়েছিলো জীবনের সেরা টাইম টীন লাইফটা আমি মনে হয় এসব ফালতু লেফট রাইট মার্কা কাজ কারবার করে কাটায়ে দিলাম। আমাদের মধ্যে অনেকেই তখন এতোটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলো যে ঘোষণা দিয়েছিলো কলেজ থেকে বের হবার পর আর ওই জেলখানার দিকে যাবে না। পোলাপান তখন বলত এস এস সি এক্সামিনী থাকাকালে কত মজা হয়েছিলো। তখন কলেজ অনেক লুজ ছিলো বিধায় আমরা মোটামোটি পুরো কলেজ মাথায় তুলে নিছিলাম। অথচ ক্লাস টুয়েল্ভে থাকাকালে ওই কাজকর্মের ৩০% ও করতে না পারার দুঃখে সবার কাছে এমনটা মনে হয়েছিলো। তারপর কলেজ থেকে বের হলাম। সবাই যে যার দিকে চলে গেলো। আমি ভার্সিটিতে ঢুকলাম। দুটা বছর পার হল। এখনো প্রায়ই গেট টুগেদার হয়। অনেকে আসে। সবার মুখে একটাই কথা। দোস্ত বাইরের লাইফ ভালো লাগতেছে না। কলেজে ইলেভেন টুয়েল্ভে কত মজায় ছিলাম। হাস্যকর তাই না? যখন ওই পজিসনে ছিলাম তখন কিন্তু তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেছিলাম। সব বাধা বিবেধ ভুলে গেলাম কত সহজে। দীর্ঘ বিচ্ছেদ নিজেদের মধ্যেকার পুরোনো মনোমালিন্যটাকেও কিভাবে যেনো এক ফুৎকারে নিভিয়ে দিয়েছে। আমার আজকে হঠাৎ তাই মনে হলো সেই ৬ টা বছরকে আমি আরো কতোটা অর্থপুর্ণ করে তুলতে পারতাম যদি পুরোনো সময়কে মিস না করে, তৎকালীন বাধাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে যা হাতের কাছে ছিলো তা দিয়েই সময়টাকে আরো বেশি করে উপভোগ্য করে তুলতাম । আরো মজার ব্যাপার হলো আমি সেই ভুলটাই আবার করছি। আমি আবারো পুরোনো ক্যাডেট জীবটাকে মিস করার জন্য হয়তো এই মুল্যবান ভার্সিটি লাইফটাকেও অগ্রাহ্য করে চলেছি। পরে হয়তো দেখা যাবে ভার্সিটি লাইফ শেষ করার পর আবারো সেই একইভাবে বলবো আহা ভার্সিটি লাইফটা এভাবে ছেলেখেলা করে পার করে দিলাম। কতকিছু করার ছিলো। কিছুই করতে পারলাম না। আমার এখন খুবি ইচ্ছে হয় জীবনখাতার সেই ফেলে আসা পাতাগুলোতে গিয়ে অনুতাপ আর নতুন কিছু অনুভবের ফ্লুইড দিয়ে মেমোরির লিখাগুলো মুছে আবার নতুনভাবে লিখার।

একটা মানুষের জীবনটা কি দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়?তার সফলতা নাকি তার ভুলগুলো? The Curious Case Of Benjamin Button মুভিটাতে একটা খুব সুন্দর কথা ছিলো। “ a man’s life is defined by the opportunities. even by those he missed”। আসলে ভুলগুলো আমাদের লজ্জা নয়। এটা আসলে আমাদের একধরনের opportunity. অন্য একটা পথের তরে আরো একটা নতুন জানালা । হয়তো?নাকি?কি জানি? হয়তো জীবনে এতো ভুল করেছি যে এসব কথা বলে মনটাকে প্রবোধ দিচ্ছি!

টি ভি তে প্রায়ই একটা এড দেখি। safari dicor এর। এডটা খুবি টাচি। ওখানে একটা প্রশ্ন করা হয়। আপনি যদি আপনার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকান তাহলে কোন জিনিসটা আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে? আমি ভাবলাম আমি কি দেখবো?? কি করলাম আমি এই ২১ টা বছরের জীবনে? নিজের জীবনের বা নিজের হৃদয়ের সকল ইচ্ছেঘুড়িকে কি উড়াতে পেরেছি? স্বার্থহীনভাবে কি কোনো একজনের একটা উপকার করতে পেরেছি? কখনো একটা নিস্পাপ হাসির কারন হতে পেরেছি? নিজেকে আর নিজের অস্তিত্বকে এই বিশাল জগতে হঠাৎই খাপছাড়া লাগতে লাগল। কি দেখব? দেখবো কি আমার বাবা মার সাথে কাটানো কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত? নাকি দেখবো সেই মুহূর্তটা যেদিন খবর পেলাম আমি ক্যাডেটে চান্স পেলাম?নাকি আমার ২ টা পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের ছবি? নাকি ফ্রেন্ডদের সাথে কাটানো হাসি কান্না সুখ দুঃখ মেশানো ক্ষণগুলো? নাকি জীবনে প্রথমবারের মতো যাকে পছন্দ করেছিলাম তার ছবি? নাকি এগুলো আসলে অনেক বিস্তারিত স্মৃতি । আমি যা বলছি কোন পার্টিকুলার স্মৃতিটা চোখের সামনে দেখবো? উফফ….আসলেই আজাইরা প্যাচাল পাড়তেছি মনে হয়।
একটা গান শেয়ার করলাম। ব্র্যাড পেইজলির লেটার টু মি.country song. অসাধারন লিরিক্স গানটার। একটা প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ভাবছে সে যদি একটা চিঠি দিতে পারত তাকেই যখন সে ছিলো ১৭ বছর তখন সে বলতো নিজেকে হতাশ না হতে কারন ওই সময়ের সকল সমস্যাই সে পার করে এসেছে কত সুন্দরভাবে।বেশি কিছু বলবো না। গানটাই শুনলেই বুঝবেন।ভাল লাগবে আশা করি।

লেখাটা আমারব্লগস্পটে আগেও লিখেছি। এখানে আজকে দিলাম।

১,৮০২ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “এলোমেলো ভাবনাগুলোর গন্তব্যহীন পথচলা”

  1. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    মনটা বড় খারাপ, তোমার লেখাটা পড়ে কিছুটা ভালো হলো। মনে হলো একসময় এই হার্ড টাইমকেও খুব সুন্দর মনে হবে। তাই ভেবে মনটাকে একটু স্বান্তনা দিলাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।