শিরোনামহীন প্যাচাল…

ওমেকাতে কোচিং করবার সময় এক বড়ভাই বলেছিলেন বুয়েটে ঢোকো তারপর প্রতিদিনই নাকি ঈদের দিন। বড়ভাই যদি সত্যি কথা বলে থাকেন তাহলে আমার আজকে ১০১৮ তম ঈদের দিন। মাত্র ২ টা লেভেল গেছে। আল্লাহর রহমতে ঈদের দিন যে আরো হাজারটা আছে তা আর বলতে হবে না। কন্টিনিউয়াস ঈদের দিন পালন করতে করতে আমি ক্লান্ত। আমার যত নন-বুয়েটিয়ান বন্ধু আছে সবার মুখে এক কথা “বেটা বুয়েটে পড়িস ভাব এ বাচিস না..আর প্যাচাল পাড়িস না..তোরা বস ব্লা ব্লা ব্লা”। কেমনে বুঝাই এইটা আসলে একটা দিল্লিকা লাড্ডু। আমার বাকি ফ্রেন্ডগুলা যেখানে ৩ টা ইয়ার শেষ করে ফেলছে সেখানে আমরা এখনো সেকেন্ড ইয়ার সেকেন্ড সেমিষ্টারের এর রেজাল্ট পাই নাই। কষ্টের কথা কারে শোনাই।

তবে কিছু পজিটিভ জিনিষও আছে । ভার্সিটি লাইফটা অসাধারন স্বাধীনতার জিনিসটা দেখলে। যা ইচ্ছা তাই করতে পারি।
কাম কাজ নাই পুরাদিন ১০ টা মুভি দেখার রেকর্ড ও আছে। বাবা মা কেনো জানি আর পড়ালেখার কথা বলে না। আমার রেজাল্টও কখনো জানতে চায় নাই আমার আম্মা আব্বা যেটা আমার কোন ক্যাডেট ফ্রেন্ড বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। আমার আব্বা কেমন কড়া কেমন সিরিয়াস সেটা প্রত্যেক প্যারেন্টস ডে তে খালি আমি না..আমার সাথে কিছু পোলাপানও টের পাইতো। কেনো জানি নিজের মধ্যে একটা বড় বড় ভাব এসে গেছে। এমনকি আমার ছোটো ভাই ও আজকাল আমার কথা শোনে কোনো বিরোধিতা করে না যেখানে ইন্টার দেবার সময়ও আমি আর আমার ভাই মিলে রেস্লিং খেলতাম। কেনো জানি সবকিছু পালটে গেছে।

এইবারের ছুটির টাইমিং এতো বাজে পড়ছে যে কি বলবো। রোজা পুরা ছুটিটারই বারোটা বাজায় দিছে। তার উপর ডে লাইট সেভিংস সব কিছু মিলায়ে আমার দিনকাল রুটিন সব ছেড়াবেড়া হয়ে গেছে। উলটা উলটা টাইমে উলটা উলটা কাজ করি। ঘুম থেকে উঠি ১২ টায়। তারপর একটা টিউশনিতে যাই। টিউসনি থেকে আসার পর আমি জানি না কোনো একটা রহস্যময় প্রানশক্তির প্রভাবে আমার আবার ঘুম আসে। ১২ টায় ঘুম থেকে উঠার পরেও আমি আবার ৩ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত ঘুমাই..আল্লাহ ই জানে আমাকে কুম্ভকর্ন আছর করছে নাকি। তারপর ইফতার কইরে একটু পি সি ছাড়লেই শুরু হয় ইলেক্ট্রিসিটি এর খেলা। মাশাল্লাহ আগের চেয়ে তাদের লোডশেডিং এর সিষ্টেমের উন্নতি হইছে। আগে ১ ঘন্টা করে রাখতো কিন্তু এখন তারা নতুন সিষ্টেম চালু করছে যা কি না হইতেছে ইউনুসের মাইক্রোক্রেডিট এর মতো মাইক্রোলোডশেডিং। মানে এখন তারা ২০ মিনিট করে করে ৩ বার নিয়ে এক ঘন্টার কোর্স কমপ্লিট করবে। কিছুই ঠিকমতো করা হয় না। ফলে ভালমত একটা মুভি দেখে হাত পা খিলাতে বসলেই দেখি রাত বাজে ২ টা। আজিব। আবার ঘুমাও। এই ভাবে গত ১৫ দিন কাটাইতেছি। মাঝখানে পোলাপানসহ চিড়িয়াখানা গেছিলাম ঘুরতে। সেই ক্লাস টু না থ্রি এর পর আর চিড়িয়াখানায় যাই নাই। অনেকদিন পর গেলাম। ভালই মজা হইল মাগার কিছু কিছু প্রানীর খাচার কাছে গন্ধের ঠেলায় যাওয়া যায় নাই। এইটা কি ওই প্রানীর দোষ নাকি চিড়িয়াখানার ঢিলামি আল্লাহই জানে।

এইবার আগে থেকেই শুনতেছিলাম বুয়েটে নাকি সিট বাড়াবে। আমি ভাবছিলাম হয়তো নতুন কোনো ডিপার্টমেন্ট করবে। কেউ কেউ ভাবছিল সি এস ই তে সিট বাড়াবে। আমিও তাই ভাবছিলাম। বুয়েটের নতুন বিল্ডিং টা দেখলে মনে হবে এইখানে না জানি কয় জন ক্লাস করে। আমি বুঝি না। কেবল আমরা সি এস ই আর ইলেক্ট্রিক্যাল এই দুইটা ডিপার্টমেন্ট এর জন্য ১০+ তালা বিল্ডিং করে রাখছে। এতো বড় দালান এর মাহাত্ন্য কি আমি এখনো বুঝি নাই। আমাদের সময়ে ইইই তে ৬০ টা সিট বাড়াইছিল। ভালই করছিলো এই কারনেই সি এস ই পাইছি হেহে। কিন্তু এইবার শুনলাম তারা নাকি আবারো ইইই তে আরো ১৫ টা সিট বাড়াইতেছে। আজিব অবস্থা। অথচ আমি যা জানি ইইই এর বাজার দর নিম্নগামী।বাকি বাড়াইছে মেকানিক্যাল এ ৫০ টা। সি এস ই যা ছিল তাই আছে। অবস্য সি এস ই তে সিট না বাড়ানোর কারন আছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের টিচার এর সংকট আছে। আমি জানি না আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা টিচার ও থাকে না। সবগুলা ব্রাইট টিচার বাইরে চলে যায়। এবার চলে গেছে ২ টা বস টিচার।এদের মধ্যে একজন হল আতিফ স্যার যিনি জি আর ই তে পাইছেন ১৫৭৫. ভাবা যায়?? এসব বস বস পাবলিক চলে গিয়ে ডিপার্টমেন্ট টাকে পুরাই কাহ্লি করে দিচ্ছে।

সেদিন ব্লগে দেখলাম আমার কলেজমেট মাহবুব আসছে ব্লগে। ওকে যে কতবার ব্লগ লিখা শুরু করতে বলছি। যাক খুব খুশি হলাম ওকে ব্লগ এ পেয়ে। আমার প্রেপ টাইমের অলস সময় কাটানোর সেরা উপাদান ছিলো ওর ডায়রী পড়া। গল্প; কবিতা সব মিলায়ে জোশ লিখে আমার বন্ধুটা।

দিনকাল ভাল কাটতেছে না। আর্সেনাল এর জন্য তো নয়ই। পিচ্চিগুলা আবারো হারছে। তাও অই বেয়াদ্দপ আদেবায়ের এর
টীম এর কাছে। হারামখোর এর ব্যবহার দেখে মনে হইতেছিলো একটা জুতা নিয়ে..নাহ…রোজার মাস থাক।ভয় লাগতেছে এইবার কিছু না পাইলে ফেব্রেগাস কে হারাতে হবে। ওয়েঙ্গার এর মনে কি আছে সে ছাড়া আর কেউ জানে না।

আগামী ২৯ তারিখ আমরা বুয়েটের বন্ধুগুলা মিলে সুন্দরবন যাইতেছি।সবাই দোয়া কইরেন যাতে বেচে ফিরে আসতে পারি। ওই জায়গায় নাকি প্রায়ই পাবলিক পটল তুলে। যাই হোক অনেক কষ্টে বাবা মা রে রাজি করাইছি…প্রমিজ করছি কোনো অবস্থাতেই পানিতে নামতেছি না..সেদিন নাকি কয়েকটা বুয়েটিয়ান পানিতে ডুবে মারা গেছে….আরো অনেক কিছু।
বেচে ফিরে আসতে পারলে কিছু ছবি শেয়ার করবো ইনশাল্লাহ!!

আর সবার শেষে একটা গান শেয়ার করলাম। জার্মানটাউনের আমরা স্বাধীন লিরিক্স ওতোটা ভাল না বাট গানটা catchy.
আশা করি সবার ভাল লাগবে!!

৪,৭৬৭ বার দেখা হয়েছে

৫৯ টি মন্তব্য : “শিরোনামহীন প্যাচাল…”

  1. সামি হক (৯০-৯৬)

    শিরোনামহীন প্যাচাল কে একটা সিরিজ বানাও, তোমার লেখার হাত আছে। ভালো লাগলো অনেক... আর সুন্দরবনে যেয়ে সাবধানে থেকো, কয়েক বছর আগে আমাদের কলেজেরই মোস্তাজী পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল।

    ভালো থেকো...

    জবাব দিন
  2. Tomader batch to tahole onek moja kore class korso...amra(02) to ekta class kortam exam buidling e to porer class kortam archi te...CIVIL buidling er tolae lab er pase poritakto jaega te o class koresi.

    Atif vai er GRE score 575 hobe naki 1575? amar jana mone highest silo amder batch er purujit er 1560 tao verbal e 800 e 800.
    (Ami 99 MCC er ekjon ex-cadet er wife and last 1 month dhore CCB er niomito pathika.Comment er jonno eita jothesto kina bujhte parsi na.....)

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    * সামি ভাইয়ের মত আমিও বলি- এটাকে সিরিজ বানিয়ে ফেল।
    * সুন্দরবনটা এখনও ঘোরা হল না, সুন্দরবন ঘুরার খুব শখ আমার। 🙁
    * হলে বন্ধুরা মিলে একটানা মুভি দেখে যাওয়ার ব্যাপারটা দারুণ! আমি আর মোকাদ্দেস একটানা FRIENDS দেখে যেতাম।
    * তোমাদের আতিফ স্যার কোন ব্যাচের?
    * আর্সেনাল নিয়ে আমিও কিঞ্চিৎ হতাশ। কিন্তু ওয়েঙ্গারের সাথেই আছি। 🙂

    জবাব দিন
    • রাহাত ইবনে রফিক (০০-০৬)

      ইনশাল্লাহ ভাই দেখি বানাবো।
      আর ভাই বাবা মা অনেক প্যাচাল পাড়তেছিল যেতে দিবে না। আমি আমার মোক্ষম যুক্তি ছাড়ছি। বলছি now or never. স্টুডেন্ট লাইফে না গেলে আর কখনোই যাওয়া হবে না ব্লা ব্লা এমনকি hunger strike(দিনে তো রোজা তাই রাতেও না খাবার হুমকি দিছিলাম) এর ভয় দেখায়ে রাজি করাইছি।
      মুভ দেখা আর বইলেন না..কাম কাজ এই একটাই আছে ছুটিতে।
      আতিফ স্যার ০১ ব্যাচের। খুবই সাদা মনের মানুষ। আমাদের সবার প্রিয় ছিল।
      আর্সেনালের কথা আর বইলেন না।আপ্নি কিঞ্চিত??আমি পুরাই হতাশ।

      জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    স্বাগতম আর্সেনালের সাপোর্টার... লেখা ভাল লাগল। নিয়মিত চালায়া যাও।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    কিরে ইবনে কেমন আছস?(রাহাত আর রফিক দুইটা নামই সিসিবিতে আছে তাই ঠিক করছি তোরে ইবনে বইলাই ডাকুম)
    লিখা পইড়া বিয়াপক মজা পাইলাম।এই লেখা সিরিজ না করলে তোর খবর আছে x-(

    জবাব দিন
  6. রাশেদ (৯৯-০৫)

    তোমার লেখার হাত দারুণ ঝরঝরে। এরকম ঝরঝরে দিনলিপি গুলো পড়তে খুব ভাল লাগে তাই এইটাও লাগল। উপরে অনেক সিনিয়র বলছে কিন্তু আমিও বলি এইটা একটা সিরিজ বানানোর চেষ্টা নাও পাঠক হিসেবে আমি নিয়মিত থাকব এইটা কিন্তু নিশ্চিত, ভাল থাইকও মিয়া 🙂


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  7. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    সানরাইজ, বুয়েট তারপর আমেরিকা, হাইটেক জব - পুরানো পথটা আবার মনে পরে গেল তোমার লেখায়। সেশন জট জিনিষটা আমাকে খুব জ্বালাতো। আমাদের সময় কোন দশতলা বিলডিং ছিল না। এসব বোধহয় নতুন সংযোজন। ব্যাচের মাসুদ (ইন্টার ৯১) শুনেছি কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে এখনও আছে। সেও একজন ক্যাডেট।
    আমাদের সময় বুয়েট লাইফটা একটু নিরস ছিল। তার মধ্যেও আমরা ফিল্ম ক্লাব করেছিলাম। ভালো ভালো ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করতাম।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মামুন (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।