“সাহিদ রাহিদ এসেছিস?” মিসেস রহমান রান্নাঘর থেকে চুলার ওপর থেকে চোখ না সরিয়েই জিগ্যেস করলেন। “হ্যা মামনি” রাহিদের জবাব আসল। “সাহিদ তোর সাথে এসেছে?”মিসেস রহমানের প্রশ্ন। “না”; ছেলে জবাব দিলো। “কোথায় সে?” জিগ্যেস করাতে ছেলের জবাব “কোথায় আবার..সব সময় যেখানে থাকে স্কুলের পর।” মামনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার বড়ো ছেলেটার ইদানিং ভিডিও গেম খেলার কি একটা নেশা হয়েছে। রাস্তার পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা খোপের মত দোকানগুলোতে বসে থাকে। তার এ ছেলেটাকে নিয়ে তিনি বড়ই চিন্তিত। কখন কার সাথে মেশে, কি করে, খারাপ ছেলেদের সাথে মিশছে কিনা এসব নানা চিন্তা তাকে ঘিরে ধরে। কেমন যেন হালকা বেয়াড়া হয়ে গেছে সে। কথা বললে কথাও শোনে না। তার স্বামীকে এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই তিনি জানেন। তার মত খামখেয়ালি মানুষ যে নিজের কাজ করতেই হিমশিম খায় তাকে এর কোনো বিহিত করতে বলা অর্থহীন।
আজ মিসেস রহমানের খুব খুশির দিন। তার ছেলে রাহিদ আমেরিকাতে স্কলারশিপ পেয়েছে। বেশ ভালই স্কলারশিপ। তার এই ছেলে অসাধারন মেধাবী। তিনি কারো সাথে দেখা হলে সুযোগ পেলেই রাহিদের কথা শোনান। আর শোনাবেন নাই না কেন? তার এই ছেলে পড়েছে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে.. দুটি বোর্ড পরীক্ষাতেই গোল্ডেন এ প্লাস। তারপর ভার্সিটিতে ঈর্ষনীয় ফলাফল। তারপর এ স্কলারশিপ। তার এ ছেলে তার সোনার টুকরো ছেলে। বাসায় মিলাদ দিলেন তিনি। ছেলের জন্য দোয়া চলছে। হুযুর তার গলার স্বরকে যথাসম্ভব উচুতে নিয়ে তার ছেলের জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য বিধাতের কাছে দোয়া চাচ্ছেন আর মেহমানরা ততোধিক উচ্চস্বরে আমিন আমিন বলছেন এমন সময় ঠাস করে একটা আওয়াজ। ঘরে একটা আগন্তুকের আবির্ভাব হলো। দেখে মনে হলো কোনো পাগল। পাগলটা সরাসরি মিসেস রহমানের কাছে গিয়ে বলল “মামনি আমার কিছু টাকা দরকার..খুব জরুরী।” মিসেস রহমান তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। “তোর এতো বড়ো সাহস।।তুই আবার এসেছিস??? আমার চোখের সামনে থেকে যা তুই..একটা পয়সাও তুই পাবি না আমার কাছ থেকে ।“ “কিন্তু মামনি আমার আসলেই খুব দরকার..বিশ্বাস করো আর চাইবো না”কাতরালো সাহিদ। “মিথ্যাবাদী কোথাকার…আমি কি কিছু বুঝি না ভেবেছিস..তুই আমার পেটের ছেলে এটা মানুষকে বলতেও আমার বিবেকে বাধে।তুই এখনই বাসা থেকে বের হয়ে যা। যা বলছি।“ চিৎকার করে উঠলেন মিসেস রহমান। “বেশ..ভাল থেকো..মামনি।।ভাল থাকিস রাহিদ..”বলে চলে গেলো সাহিদ। সবকিছু আবার আগের জায়গায় ফিরে গেলো। আবার সেই প্রার্থনা আর আমিন আমিন।
“মিসেস রহমান আপনার জন্য একটা দুঃসংবাদ আছে।”ডাক্তার এর একথা শুনেই মিসেস রহমানের বুকটা ধ্বক করে উঠলো।“আপনার দুটো কিডনিই অচল হয়ে গেছে।খুব তাড়াতাড়ি একজন ডোনার খুজে বের করুন before its too late!” মিসেস রহমানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তার স্বামী গতো হয়েছেন বছর দেড়েক হলো। তার ছোটো ছেলে এখন হাজারখানেক মাইল দূরে। তিনি কি করবেন?? তার একজন খালাতো বোন কেবল আছে তার পাশে। “বুবু তুমি চিন্তা করো না আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছি..টাকা থাকলে ডোনার পেতে কোনো সমস্যা হবে না।” তিনি হাল্কা স্বস্তি পান। রাহিদকে ফোন করে তিনি এ কথা বলতেই সে বলল মন্দার কারনে নাকি তার চাকরিতে বেশ সমস্যা যাচ্ছে। তবে সে মাকে আশ্বস্ত করলো চিকিৎসার খরচ সেই বহন করবে। তবে দেশে আসতে পারবে না।“ আসাটা কি খুব জরুরী মামনী” জিগ্যেস করাতে মিসেস রহমানের ত্বরিৎ জবাব “না বাবা তোর এতো কষ্ট করে আর আসার দরকার নেই..তুই থাক..আমার জন্য দোয়া করিস।”
“বুবু কেমন আছো? এখন তোমার কেমন লাগছে? “ভালো রে”, মিসেস রহমানের ক্লান্ত জবাব। পাশে হাস্যময় ডাক্তার। “congratulation মিসেস রহমান..আপনি এখন আল্লাহর রহমতে পুরোপুরি সুস্থ”। “আলহামদুলিল্লাহ..” বলে একটা নিঃশ্বাস নিলেন মিসেস রহমান। ডাক্তার চলে যাবার পর তিনি তার বোনকে বললেন “দোনার এর পেছনে কত গেছে রে?”।
“আরে বুবু মজার কাহিনী তো জানো না..তোমার ডোনোর এর পিছনে কোনো খরচই হয় নি। একজন ভলান্টিয়ার ছেলে তোমাকে কিডনী দান করেছে। সে কোনো টাকাই নেয় নি।“ “তাই নাকি? কে সে ছেলে??” জিগ্যেস করলেন মিসেস রহমান। “জানি না ..তবে ডাক্তার বলেছে সে নাকি তোমাকে একটা চিরকুট দিয়ে গেছে।” কোনো কারনে মিসেস রহমানের একটা আশ্চর্য অনুভূতি হলো। “কোথায় সে চিরকুট?? দে দেখি…” বললেন মিসেস রহমান। “ এই নাও”। কাপা কাপা হাতে চিরকুটটা চোখের সামনে মেলে ঢরলেন মিসেস রহমান।
“
প্রিয় মামনী;
অবাক হচ্ছ আমি জানি। তুমি জানো আমি আজ পর্যন্ত যা করেছি তার জন্য কখনই অনুতপ্ত হই নি। কিন্তু সেদিন পত্রিকায় তোমার খবর পড়ে আমি প্রথম বার নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলাম। কেনো তুমি জানো? কারন এই আমি তোমার ছেলে তোমাকে আমার দুটো কিডনীই দিয়ে দিতে পারলাম না। বহুদিন আগে ঋন গ্রস্ত হয়ে আমার একটা কিডনী বেচে দিতে হয়েছিলো। আমি সরি মামনি তোমাকে একটা কিডনীই দিতে পারলাম..আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর in case you are wondering আমার কিডনী টা ভালো কিডনী। তোমার ছেলে কখনই ড্রাগ নেয় নি। আমি সন্ত্রাসি হতে পারি কিন্তু তোমার ছেলে কখনোই মাদক নেয় নি মামনি।
ভালো থেকো।আমার জন্য দোয়া করো।
সাহিদ
”
“বুবু এই ছবিটা দেখেছ? আমির খানের নতুন মুভি..তারে যামীন পার”। মিসেস রহমান তাকালেন কেবিনের টেলিভিশনের দিকে। গান ভেসে আসল “ভীড় মে ইয়ু না ছোড়ো মুঝে..ঘার লাটকে ভি আনা পাউ মা…ভেজ না ইতনা দূর মুঝকো তু..ইয়াদ ভি তুঝকো আনা পাউ মা…কেয়া ইতনা বুরা হু ম্যায় মা.. ”। হঠাৎ মিসেস রহমান হাউ মাউ করে কেদে উঠলেন।তার খালাতো বোন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে…
…………………………………
অনেক দিন পর আসলাম সি সি বি তে। এই কয়দিন আমার উপর দিয়ে অনেক কিছু বয়ে গেছে..তাই হয়তো কিছু লিখার উৎসাহ পাই নি…আবার আস্লাম।।এবার মনে হয় আর ছেড়ে যাব না। আর গল্পটা মনে হয় খুব একটা ভালো হয় নাই….তবুও সাহস করে দিলাম…হাজার হোক আমার প্রথম গল্প ব্লগে…
🙁
:bash: :bash: :bash: :bash: ১ম হবার সুযোগটা মিস করলাম...
পড়ছি......খুবই ভালো লাগলো রাহাত!!
ধন্যবাদ ভাইয়া!!!
আহারে....
লেখাটা খুবই ভাল হইছে রে পিরোজপুরিয়ান।
এইডা পিরোজপুরের রাহাত না রে......এইডা রাজশাহীর।
লেখাটা পুরাই সিরাম হইছে :boss:
আমার মনটা কেমন যেন কইরা উঠলো।
আরসিসি পাথরায় দেখি 😛
(তোরে নতুন কইরা স্বাগতম জানাইতে একটু সাম্প্রদায়িক হইলাম 😀 )
ওয়েলকাম ব্যাক ডিয়ার 🙂
থেঙ্কু থেঙ্কু!! 😀
তাড়াতাড়ি রাজশাহী ট্যাগ লাগা।
অ.ট.-সিরাম লেখা। :hatsoff: :hatsoff:
এই ট্যাগ লাগানোটা আমি অল টাইম ভুইলা যাই!! লাগিয়ে দিলাম!!
সাম্প্রদায়িক...... 🙁 ......বড়ই সাম্প্রদায়িক :no: :no:
নারে মনটা খারাপ করে দিলি । গল্পটা ভাল লেগেছে ।
ধন্যবাদ ভাইয়া!!
রাহাত ভাই, শেষটা বেশ কষ্ট দিয়ে গেলো। ভালো লেগেছে । :thumbup: :thumbup:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সমস্যা নাই..পরের বার দেখি মজার কিছু লিখবো!!!
heart touching ১টা গল্প। :hatsoff: পড়ে খুবি ভালো লাগছে। আরো লেখা দাও।
ধন্যবাদ ভাইয়া!
মাস্তি লেখা দে 😀
লেখা তো দিতেই চাই but অফিসে avro সেট আপ করতে পারতেছিনা। শালা'র আ.টি. admin privilege তুলে নিছে। :bash:
আর বাসায় যাইয়া হয়ে উঠে না।
ভালো লাগল রাহাত। :thumbup:
আরো লিখবে ভবিষ্যতে এই আশা রাখি।
লেখা যখন মাকে নিয়ে তখন এর সাহিত্যগুণ বিবেচনা গৌণ।
লেখাটাকে :hatsoff: :hatsoff:
রাহাত ভাইয়া ভালো লেগেছে তোমার লেখাটা 🙂
লেখা ভালো লাগলো আরো লিখতে থাকো।
বহুদিন পর আসলা। জটিল লিখছ। এই পোলারে একসময় কত পিটাইছি, ভাবতেই আমার ভালো লাগতেছে। না পিটাইলে এখন তো্মারও কোনও কিডনি থাকত না 😛
:thumbup: :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷