আজ বাংলাদেশের ৩৯ তম বিজয় দিবস। বিজয়ের দিনে নানা মানুষের নানা রকমের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখলাম, যার সর্বাগ্রে আছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি অনেক জটিল একটি বিষয়, যা হুট করে করা সম্ভব নয়, এর জন্যে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছ থেকেও অনেক আইনি সাহায্য ও বিপুল তথ্যপ্রমাণের প্রয়োজন, যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করার মতো যথেষ্ট প্রজ্ঞা বাংলাদেশের আছে। আমাদের প্রবল ইচ্ছা এবং সামর্থ্যের সহযোগে এ দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে, আজ বা কাল।
আমাদের বর্তমান প্রজন্ম বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু আমাদের অনেকের বাবা চাচারাই ‘৭১ এ সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। ইতিহাস শোনার জন্যে আমাদেরকে দুই প্রজন্ম পরের তথ্যসূত্র ধারণ করতে হয়নি। সরাসরি বাবার কাছে বা বাবার সহকর্মী এবং বন্ধুদের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি উত্তাল দিনগুলোর ইতিহাস। আমরা সৌভাগ্যবান।
সেই সাথে অসভ্য কিছু বিকৃতির শিকার হতে হয়েছে আমাদের প্রজন্মকে। শিশু একাডেমিতে রচনা প্রতিযোগিতা দিতে গিয়ে আগে দেখতে হয়েছে কোন সরকার ক্ষমতায়, সেইভাবে ইতিহাস “সংশোধন” করে লিখতে হয়েছে। ৫ বছর পরে পরে বাংলা বই আর সমাজ বইয়ের কিছু অধ্যায় “সংশোধন” করা হতো, আর বদলে যেতো প্রতি শ্রেণীতে পঠিতব্য বীরশ্রেষ্ঠদের ইতিহাসের অধ্যায়টি। হ্যাঁ, আমাদের প্রজন্মই এইরকম ছাত্রজীবন কাটিয়েছে, যাদের “ইতিহাস” “সংশোধিত” হতো।
৯১-৯৬, স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছি, “I major jia__do hereby….” তারপরের ৫ বছর সেইটুকুও শোনা গেলো না, বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম আসল সত্য, বাবা বলেছিলেন, অপেক্ষা কর। এখন সেই রেডিও ঘোষণা শুনি–” I Major Jia, by order from the supreme commander of Bangladesh, Sheikh Mujibur Ranhman, do hereby proclaim the independence of Bangladesh” , সত্য গোপন থাকে না, আর তখনকার বাঙালি মেজর জিয়া তার নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে বিশ্বস্ততা বজায় রেখে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাকে গোপন করে ওরা কি জিয়ার সম্মান বাড়িয়েছিলো না-কি নেতার প্রতি এক সৈনিকের আনুগত্যের উদাহরণকে চাপা দিয়ে তার চরিত্রে কালিমা দিয়েছিলো ? বাংলাদেশই মনে হয় এমন এক জাতি যার স্বধীনতার ঘোষক কে, তা আদালতের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিতে হলো। জিয়া বেঁচে থাকলে কি বলতেন আমি জানি না।
হ্যাঁ, আমরাই দেখেছি স্বৈরাচার মুক্তির পরের তিনটি সরকার, এবারেরটা নিয়ে ৪র্থ। বিচার বিশ্লেষণের দায়িত্ব যার যার হাতে ছেড়ে দিলাম। শুধু বলতে পারি বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর এই সময়টায় আমাদের প্রজন্মকেই অগ্রগামী সেনানীর দায়িত্ব পালন করতে হবে যার যার অবস্থান থেকে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যেন আর “সংশোধিত” ইতিহাস পড়তে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্যে আমাদেরকে উদার মনোভাব নিয়ে সবটুকু জানতে হবে। আদর্শগত পার্থক্য না থাকলে আদর্শেরই অবমূল্যায়ন হয়, আর তাই সব আদর্শের মানুষের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে অন্যের দোষগুলো টেনে এনে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করি, কিন্তু ওই মহান নেতাদের ভালো আদর্শগুলোকে অনুসরণ করার কোন চেষ্টা করি না।
এসো সবাই, হাতে হাত রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। শহীদদের জন্যে মোমবাতি রাস্তাঘাটে না জ্বালিয়ে সে আলো, সেই উত্তাপ আমাদের রক্তে প্রবাহিত করি। আমাদের সব কাজেই বাংলাদেশের চেতনা, দেশকে এগিয়ে নেবার বাসনা জাগ্রত থাকুক, বিজয়ের এই মহান দিনে সবার কাছে আহ্বান।
🙂
খুব ভাল লেগেছে লেখাটা।
তোমাকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
ইংরেজী আসে না কেন? কেউ সাহায্য করবেন? কিছু লেখা আসেনি..
@ জেরিনাপ্পু, ধন্যবাদ
রাহাত আমি কিন্তু তোমার ব্যচমেট
তাই আপু ডাকিয়া লজ্জা দিবেন না। :shy:
x-( সব ভাবীরাই আপু কিন্তু সব আপুরা ভাবী না-এইটা সিসিবির অন্যতম মূলনীতি,জানোনা উড-বি-মিসেস-টান্টু?
এই মহান ডায়লগটারে সিসিবির রেডবুকে উডান যায় না ?
যা দিলাম না, ভাবীই সই...
এক খালে পানি খাওয়া কিছু জুনিয়র ছেমড়িরেও ভাবী ডাকতে হইতাছে নানা কাহিনীর চিপায় পইড়া x-( ...তরে ভাবীই কমুনে যা
রাহাত,
লেখাটি খুবই সুন্দর হয়েছে।
তোমাকে :salute: এই লাইনটির জন্য।
:thumbup:
কথাটা ভাল্লাগছে। এইটাই আমি কইতে চাইতেছিলাম।
ভাই একটা ভুল (সম্ভবত তাড়াহুড়ার কারণে) চোখে পড়ল-আজ ৩৮ নয়,৩৯ তম বিজয় দিবস।ঠিক করার পর মন্তব্য মুছে দিও।
~x( ~x( আমি এইটা লেখার পরেই খবরে শুনছিলাম এটা ৩৯ তম, এক জায়গায় ঠিক করছি কিন্তু ভুলে এখানে করা হয়নাই। মাসরুফ ভাই, ধন্যবাদ ভুলটা ধরায়ে দেবার জন্যে... 🙂 🙂 ঠিক করে দিলাম।
এইবারের নির্বাচনের একটা বড়ো ভোটার অংশ ছিলো বয়সে তরুণ জনগণ, যারা কেউই মুক্তিযুদ্ধ দেখে নি। তাদের ভোট জামাত-বিএনপি'র চারদলকে ত্যাগ করে আওয়ামীলীগের দিকে যাবার মূল কারণটাই ছিলো যুদ্ধাপরাধী বিচারের ইস্যু।
আমি এখনও আশা করে আছি, সব রাজনৈতিক দূর্নীতি আর নেতিবাচকতার মাঝেও এই একটা ইস্যু সরকার বাস্তবায়ন করবে। যদি না করে তাহলে এই তরুণ প্রজন্মও তাদের মুখ ঘুরিয়ে নিবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া তো দূরে থাক, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রক্ষা করাই কঠিন হয়ে যাবে।
যে দেশের স্বপ্ন দেখে ৩৯ বছর আগে আমাদের মতোন তরুণেরা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ এই প্রজন্মকেই নিতে হবে! তোমার লেখাটা খুব ভালো লাগলো রাহাত। আর আগের পোস্টটাও অসাধারণ লেগেছে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
🙂 🙂 🙂
রাহাত,
লেখাটা ভাল লেগেছে।তোমার বয়সে আমার এতটা প্রজ্ঞা ছিলনা। :clap: তবে মহামতি মাহমুদ ভাইয়ের মত আমারো বিশ্বাস ইতিহাস নিরপেক্ষ হবার বস্তু নয়। যেহেতু সেটা কেউ না কেউ লেখে। সেটা কোন না কোন মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হবেই। আমাদের দেশে মূল্যবোধ শব্দটার সংজ্ঞা সুবিধাবোধের সাথে গুলিয়ে গেছে ইতিহাসের শুরুতেই। জানিনা কে ঠিক করে দেবে। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে "তেল একটি স্নেহ জাতিয় পদার্থ, যেখানে প্রয়োগ করবে, স্নেহের উদ্রেক হবে।" রাজনীতিতে এটি এখন মূলনীতি।হয়তো আমরা, না পারি ত তোমাদের মুখ চেয়ে থাকব। আবেগ ধরে রেখ। শুভ কামনা।
:thumbup: :thumbup:
ব্যক্তিগতভাবে আমি ভয়ানক আশাবাদী প্রকৃতির মানুষ। শেষ না দেখা পর্যন্ত হাল ছাড়তে রাজি নই। আর হয়তো তাই এখনো মানি এবং বিশ্বাস করি বাংলাদেশ বদলে যাবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।
রাহাত ভাইকে ধন্যবাদ চমৎকার পোষ্টটার জন্য।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..