আকাইমা লেখা

সংজ্ঞাহীনতার সংজ্ঞা
জীবনে অনেক জিনিস আছে যাকে আসলে সংজ্ঞায়িত করার কোন কারণ নেই। আবার আমরা এমন কিছু জিনিস নিয়ে বসবাস করি যাকে আসলে আমরা সংজ্ঞায়িত করতে চাই না। এমন কিছু জিনিস আছে যাকে আবার আমরা আমাদের নিজেদের মতো করে সংজ্ঞায়িত করতে পছন্দ করি।
যদি আমি কাউকে জিজ্ঞাসা করি, আপনে নিজেকে কি বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসবেন, বাংলাদেশি না বাঙালি; তো ইনি উত্তর দেবার আগে বোঝার চেষ্টা করবেন আমি কোন দল করি, আওয়ামী না বিএনপি। নিজের পছন্দমতো আমরা যেখানে আমাদের জাতিগত সংজ্ঞা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হই, সেখানে অন্য আলোচনা প্রশ্নাতীত। আসলে এটাই হওয়া উচিত যে, আমরা এ দু’টি জিনিসকে সুস্পষ্টভাবে বলার সাহস অর্জন করতাম। কারণ কোনটাই যেখানে মিথ্যা নয়, সেখানে সামান্য মতাদর্শিক পার্থক্যের কারণে সত্যকে জোরগলায় উপস্থাপনা না করার কোন কারণ নেই। ভুল হবে সেটাই, যদি আমরা এ ধরণের জিনিসকে নিজেদের মতো করে সংজ্ঞা দিতে যাই।
এবার আসা যাক কি জিনিসকে আমরা সংজ্ঞায়িত করতে চাই না সে বিষয়ে। কোন জিনিসকে সংজ্ঞায়িত করার অর্থ হলো তাকে কিছু নির্দিষ্ট শর্তের মাঝে বন্দি করে ফেলা। একারণেই যে জিনিসকে আমরা নিজেদের মতো করে মুক্ত বিচরণের স্বাধীনতা দিতে চাই, তাকে আমরা সংজ্ঞায়িত করি না বা করতে চাই না। বহুল আলোচিত সমালোচিত “ভালোবাসা” নামক বিষয়টি এখানে প্রথম স্থানে থাকবে এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আদিকাল থেকে শুরু করে আজ অব্দি এ জিনিসকে এতো বেশি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে, তাতে প্রতীয়মান হয় আমরা আসলেই একে সংজ্ঞায়িত করতে চাই না।
সার্বজনীন বিষয়গুলো থাকুক সংজ্ঞার ঊর্দ্ধে। সংজ্ঞায়িত করে তাকে ছোট করার কোন স্পর্ধা কেউ না দেখাক। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা বা সর্বোপরি মানবিকতার মূল্যবোধগুলো আমাদের মানুষ পরিচয়ের মূল স্তম্ভ। এগুলোকে অস্বীকার করে থাকা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষের বিবেকের মাঝে এগুলো দেয়া আছে। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
তারপরেও কথা থেকে যায়। এই জন্যেই কবিগুরু বলেছেন, “শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ”। আর তাই আমরা অবোধেরা অসংজ্ঞায়িতদের সংজ্ঞা খুঁজতে থাকি। এবং এভাবেই না জানা অনেক উত্তর নিয়ে আমাদেরকে চলে যেতে হয়। শুরু হয় নতুনদের পথচলা, নতুন করে নতুন সংজ্ঞার খোঁজে।

৮৬০ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “আকাইমা লেখা”

  1. সামিয়া (৯৯-০৫)
    আপনে নিজেকে কি বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসবেন, বাংলাদেশি না বাঙালি; তো ইনি উত্তর দেবার আগে বোঝার চেষ্টা করবেন আমি কোন দল করি, আওয়ামী না বিএনপি

    চরম বলসো ভাইয়া কথাটা।

    জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)
    আদিকাল থেকে শুরু করে আজ অব্দি এ জিনিসকে এতো বেশি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে, তাতে প্রতীয়মান হয় আমরা আসলেই একে সংজ্ঞায়িত করতে চাই না।

    এই কথাটা আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

    জবাব দিন
  3. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভালো বলছো। কিন্তু লেখাটা অল্পতেই শেষ হয়ে গেলো। আরো কিছু বলার পট তৈরি হয় এখানে। তবে সংজ্ঞাতে সবকিছু বেধে ফেলা ঠিক নয়। আমার নিজের ব্যাক্তিগত বোধ হচ্ছে কোন কিছুকেই আসলে ঠিক নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় পুরো উপস্থাপন করা যায় না কিংবা সার্বজনীন কোন সংজ্ঞা দেয়াও সম্ভব না যা সবার কাছে এক হয়ে ধরা দেবে। আমাদের নিজেদের জিনিসগুলোকে আমরা নিজেদের মত করেই ভেবে শেয়ার করি, জানি বুঝি ভুল হলে শুধরে নেই --- এই মানসিকতাই আমাদের থাকা উচিত নেহায়েত কোন ডগমার মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলা উচিত না। সমস্যা হইতেসে এইখানে আমরা সবকিছুকে সরলীকীকরণ করি এবং কোন কথা নিজের মত বলতে চাই না সরলীকীকরণের দ্বারা তার অর্থ মানুষের কাছে বদলে যাবে এই ভয়ে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : দিহান ইসলাম

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।