বিজ্ঞাপনচিত্র

সোজা কথায় আসি। নাটক বা সিনেমা বা খেলার মাঝে বিজ্ঞাপন বিরতি যে কি পরিমাণে বিরক্তিকর, তা অনেকেই বলবেন। ছোটবেলায় আলিফ লায়লা দেখার সময় দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন বিরতির ২য় ভাগ শুরু হলেই বুকের মাঝে দুরু করতো, এই বুঝি শেষ হয়ে গেলো পুরো সপ্তাহের অনেক অপেক্ষার আলিফ লায়লা। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। দিনবদল টার্মটা ইচ্ছা করেই ব্যবহার করলাম না। বোঝেনই তো। আগে একটা সময় ছিলো যখন বিজ্ঞাপন বিরতিতে বাথরুম করে আসতাম, বা বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসতাম। এখন আর তা হয় না। যদিও এখনো বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনচিত্রই অখাদ্য, তারপরেও ভালো কিছু দেখার জন্যে অপেক্ষা করা যেতেই পারে। আমি অত্যন্ত গর্বভরে বলতে পারি যে, আমার দেশের বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের মাঝে এমন প্রতিভাবান লোক রয়েছেন, যারা এই সামান্য ২০/৩০ সেকেন্ডের প্রদর্শনীর সৌকর্যে আমাদের হৃদয়ে অসাধারণ দাগ কাটতে পারেন। নাটক, চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম হয়তোবা অনেক বড় ব্যাপার, কিন্তু বিজ্ঞাপনচিত্রের এই সংক্ষিপ্ততম সময়ে যে নির্মাতা দর্শককে এতখানি নাড়া দিতে পারেন, আমি তাঁকেই বেশি ক্রেডিট দেবো। আমার বলতে আপত্তি নেই দেশে মানসম্পন্ন বিজ্ঞাপন নির্মান শুরুর পথিকৃত হলো মোবাইল কোম্পানিগুলো। এই ক্ষেত্র বাদে অন্য পণ্যের বিজ্ঞাপনে আমি অন্য কোথাও এতটা শৈল্পিক উৎকর্ষ দেখিনি। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে গ্রামীনের আ্যাড, “পথের ক্লান্তি ভুলে”। সামান্য একটা কথা, “মায়ের জন্যে এবার একটা মোবাইল নিয়ে যাচ্ছি………”, এর মাঝে যে আবেগের বহি:প্রকাশ, তা হয়তো আমি অনেক পুরষ্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রেও পাইনি। এখন বাসায় এসে দেখছি গ্রামীনের এ্যাড, “আশা যাবে বাড়ি…”; আমি সাহিত্যিক টাইপের না, কিন্তু এই অতি সাধারণ ভাষায় বলা কথাগুলোই আমাকে খুব নাড়া দেয়। অনেক ভারী ভারী বাংলা শব্দ দিয়ে যা হয়তোবা সম্ভব নয়। দেখি বাংলালিংকের এ্যাড, দিনবদলের আশায় সমাজের বিত্তশালী পরিবারের কয়েকটি ছেলেমেয়ে যখন বন্ধুবান্ধব মিলে কোনো এতিমখানায় যাচ্ছে একদিনের জন্য হলেও ওই অনাথ শিশুদের জন্যে ভালোমন্দ কিছু ইফতারী নিয়ে। সামাজিক মূল্যবোধ এবং দ্বায়িত্ববোধ জাগ্রত করার জন্যে এর থেকে ভালো প্রয়াস আর কি হতে পারে? বাংলালিংকের সেই এ্যাডটা কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়নি এমন কে আছে, যেখানে ছোট্ট একটি মেয়ে তার মায়ের কাছে কথা পৌছানোর জন্যে বেলুনে বেঁধে তার চিঠি উড়িয়ে দিত? অথবা সেই এ্যাডটা, “বাবুর বাবুটা কেমন হতো?……….” পণ্যের প্রচারের জন্য করা বিজ্ঞাপন এভাবেই নির্মাতাদের শৈল্পিক ছোঁয়ায় হৃদয়গ্রাহী একটুকরো দৃশ্যপটে পরিণত হয়। দেশে ডিস্কো বান্দর টাইপের অখাদ্য বিজ্ঞাপনের সংখ্যাই বেশি হলেও আমরা চাই এরকম অসাধারণ কিছু সৃষ্টি। হোক তা কোন পণ্যের প্রচার, কিন্তু আমরা চাই এই শিল্প বেঁচে থাকুক তার নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে, দোলা দিয়ে যাক আমাদের সবার মনে।

২,৫২৫ বার দেখা হয়েছে

৪০ টি মন্তব্য : “বিজ্ঞাপনচিত্র”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    হুম... এই আবেগী বিজ্ঞাপনগুলোর মাধ্যমে এরা খুব সফল ভাবে আমাদের দেশ প্রেম , মায়ের প্রতি ভালবাসা সহ অন্যান্য আবেগগুলোকে পুঁজি করে ব্যবসায় কাজে লাগাচ্ছে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এই ব্যাপারে ভারতীয়রা আমার মনে হয় অনেক দূর এগিয়েছে।"দাগ থেকে এক্যদি ভাল কিছু হয় তবে দাগ-ই সই" সার্ফ এক্সেলের এরকম একটা এ্যাডে দেখা যায় যে এর বৃদ্ধা শিক্ষিকার প্রিয় পোষা কুকুর মারা যাওয়ায় তিনি ক্লাস নিতে আসেননি।তখন তার এক দুষ্টু ছাত্র তাঁর বাসায় গিয়ে দেখে যে তিনি প্রচন্ড মন খারাপ করে কুকুরের গলার চেইন হাতে করে বসে আছেন।বাচ্চা ছেলেটি তখন সেই চেইন নিজের গলায় পড়ে ঠিক ওরকম অংগভঙ্গি করে এক সময় শিক্ষিকার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে।

    আমার নিজেরও পোষা কুকুর ছিল-এ্যাডটা দেখে কখন চখ ভিজে উঠেছে টেরই পাইনি।

    ব্লগটা ভাল লেগেছে।সেন সবাই সবার প্রিয় এ্যাডের কথা শেয়ার করি এখানে...

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    আমার বলতে আপত্তি নেই দেশে মানসম্পন্ন বিজ্ঞাপন নির্মান শুরুর পথিকৃত হলো মোবাইল কোম্পানিগুলো

    আমার একটু আপত্তি আছে...
    শাইন পুকুর অনেক আগেই মান সম্পন্ন এড শুরু করেছিল...
    এছাড়া 'রেড কাউ' এর একটি এডের কথা মনে পড়ছে...'মনে পড়ে, মনে পড়ে...হৃদয়ে মেলত পাখা...'-এই রকম লিরিক্স ছিল মনে হয়...এ রক্ম বেশ কিছু ভাল এড ছিল...এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না...

    তবে টেলি পার্টি আসার পর সংখ্যা অনেক বেড়েছে...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. এখন আগের সেই প্রোগ্রামগুলা দেখতে তেমন মজা পাওয়া যাবে না...কয়েকদিন আগে কোন চ্যানেলে জানি ম্যাকগাইভার দেখাইতেছিল, বইসা পরলাম দেখতে, ছোটবেলায় তো দিন-দুনিয়া আন্ধার কইরা দৌড়াইতাম দেখতে......তো কিছুক্ষন দেইখা আর ভাল লাগল না... 🙁 🙁 🙁 মনে হয় বুড়া হয়ে যাইতেছি রে..।...।

    ব্লগটা ভাল লাগল...।।কিন্তু, এখনো মাঝে মাঝে এমন সব বিজ্ঞাপন আসে, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়...... 😡 😡 😡

    জবাব দিন
    • এটা হয়ে যায়।পাঠকের,দর্শকের মৃত্যু হয়।ছোট থাকতে ম্যাকগাইভার,ফল গাই,টাইম ট্র্যাক্স দেখার জন্য নাউয়া খাওয়া বাদ হয়ে যেত।
      এমনকি আগে ODI গুলি যে উন্মাদনা নিয়ে দেখতাম,সেই উন্মাদনা এখন আর পাই না।কারন খেলাগুলিও কেমন জানি মরে গিয়েছে।
      তবে আমি এইটা স্বীকার করবই,এই সিরিয়ালগুলি এখন ভাল না লাগলেও এইগুলিই মূলত সুস্থ্য ধারার সিরিয়াল,সুস্থ্য ধারার রুচি।

      জবাব দিন
  5. দিহান আহসান

    বিজ্ঞাপন থেকে কি প্রিয় অনুষ্ঠানে চলে গেলো নাকি টপিক??? 😕

    কতদিন বিজ্ঞাপন দেখিনা 🙁 ভুলে গেছি আগের দেখাগুলোও ...
    " বাবা, আমার একটা ময়না পাখি আছে না?? " দিঘী'র ঐটা মনে আছে ... 😀

    রাহাত ভাইয়া তোমাকে ঈদ শুভেচ্ছা রইলো 🙂

    জবাব দিন
    • রাহাত (২০০০-২০০৬)

      অসংখ্য ধন্যবাদ ভাবী। আমার পক্ষ থেকে আপাতত এট্টা সালাম রইলো, সালামী পরে লমুনে। 🙂

      বাবা, আমার একটা ময়না পাখি আছে না?? ” দিঘী’র ঐটা মনে আছে …

      এইটায় ভুলে একটা নাম্বার দেখাইয়া ফেলছিলো, পরে পাবলিকে ওই নাম্বারে ফোন দিয়া ফালাফালা কইরা ফেলছিলো 😀 😀

      জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কলেজে থাকতে এরোমেটিক বিউটি সোপ এর 'অনন্যা তুমি ভালবাসা তুমি' ভাল হিট করছিল... মডেল ছিল রোমানা।

    আর তার আগে মৌসুমির সুন্দরী প্রিন্ট শাড়ীও ভালছিল।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  7. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    অনেক দিন টিভি দেখা হয় না... তাই বিজ্ঞাপনও দেখতে পারছি না... তবে কিছু কিছু বিজ্ঞাপন মনে দাগ কেটে রেখেছে।

    আর সিরিয়াল এর মধ্য ম্যাগগাইভার, ডার্ক জাস্টিস, দ্যা এ টিম, ফল গাই, টিপু সুলতান, অ্যারাবিয়ান নাইটস এই গুলা দেখার জন্য সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম। তখন শুধু বিটিভি ছিল বলেই আমার মনে হয় এই প্রোগামগুলো আমরা সবাই দেখেছি।

    জবাব দিন
  8. রাহাত (২০০০-২০০৬)
    তখন শুধু বিটিভি ছিল বলেই আমার মনে হয় এই প্রোগামগুলো আমরা সবাই দেখেছি

    এক্কেরে ঠিক বলছেন ভাই। বাড়িতে ডিস লাগাবার পরে ভুলেও আর বিটিভি ধরি না। :duel:

    জবাব দিন
  9. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    প্রসংগ টা আমার প্রিয়।
    কিছু কথা বার্তাও হয়েছে কারো কারো নির্মাতার সাথে।
    তারা ক্লাইন্টের বাজেটের কথাওই জোর দিয়ে বলেছেন।
    আমি সহমত হয়েছি সাথে বলেছি নির্মাণশৈলী আর কন্সেপ্ট এ পরিবর্তনের কথা।
    ভাল কিছু হলে দররোকরা অবশ্যই সাদরে গ্রহন করে - করবে।
    আরো এগিয়ে যাই - সবাই মিলে।
    এই প্রত্যাশা করি।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।