পরীক্ষার ফলাফল

“ভালো” ব্যাপারটা আপেক্ষিক। কথাটার মর্ম প্রথম বুঝি ক্লাস সেভেনে ক্যাডেট
কলেজে ঢোকার পর প্রথম পাক্ষিক পরীক্ষার খাতা দেবার পর। ক্যাডেট
কলেজে ঢোকার আগে যে আমার ভালোর কোন শেষ ছিলো না, যে আমার রোল কখনো প্রথম তিনজনের বাইরে যায়নি, সেই আমিই এক লাফে শেষ তিনের মুখ দেখলাম। শুধু মুখ দেখাই না, শেষ তিনের এমন গভীর প্রেমে পড়েছিলাম যে বের হওয়াই মুশকিল হয়ে গেল।

এটা যে খুব একটা খারাপ ব্যাপার, তা কিন্তু না। কারণ পুরো সময় ফুর্তিই করতাম। সমস্যা আসতো রেজাল্টের সময়। লীডার গোছের কিছু ক্লাসমেট যখন রেজাল্ট নিয়ে এবং আমাদের রেজাল্ট খারাপ করা কিভাবে হাউসের চ্যাম্পিয়ন হওয়া না হওয়ার জন্য প্রভাব ফেলছে সে নিয়ে তীরষ্কারের বন্যায় ভেসে যেতাম।
ফলাফল, রেজাল্টের পর আমাদের লাড্ডুগুড্ডু পার্টির সবাই মসজিদ অভিমুখী। কেউ ডাকছে বুঝতে পারলেই ইকামাত দেয়া শুরু।

এভাবে কলেজের ধোলাইখানা এড়ানো গেলেও সমস্যা আসতো ছুটির সময়। আমাদের সময় প্রথম প্রথম নিয়ম ছিলো যাবার সময় হাতে করেই রেজাল্টশীট দিয়ে দিতো। যার ফলে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি কখনোই। ষাট টাকা দিয়ে কেনা ফ্লুইডের একমাত্র সদ্ব্যবহার হতো তখনই। 35 হয়ে যেত 85 আর 17 হয়ে যেত 47! সবকিছু ভালোই চলছিলো, হঠাৎ ব্যাপারটা ধরা পড়বার পর থেকে শুরু হয় ডাকযোগে চিঠি পাঠানো।

দুই মাস জেলখানায় থেকে ছুটিতে এসে কে চায় সামান্য রেজাল্টের জন্য
ছুটি মাটি করতে। আমরাও চাইতাম না। ছুটিতে এসে তাই এই রেজাল্ট লুকোবার চেষ্টার কারনে আমাদের অপরাধীর তকমা লাগিয়ে দেবার কোন যৌক্তিকতা নেই। ছুটি থেকে এসেই তাই শুরু হতো বাড়িতে ঢোকার মোড়ে বুড়ো পোস্টম্যান চাচার অপেক্ষা। চিঠিটা আসলেই বাগিয়ে নিতে হবে, নইলে মান ইজ্জত সব শেষ।

এরকম খারাপ করতে করতেই একবার ভাবলাম, আর কত? এবার একটু পড়াশুনা করি। বলেছিলাম আগেই, আমার ভালোর কোন শেষ নেই। সেবার রেজাল্টও ভালো হল। আহামরি কিছু না। তবে বাবা মার কাছ থেকে লুকানোর মতো না অন্তত!

মনের আনন্দে সেবারের মতো কমই ঘুরে বেড়িয়েছি। একদিন সুখের চোটে নিয়তই করে ফেললাম, এখন থেকে পড়াশুনা করব। মানসিক শান্তি আছে এইভাবে। সেদিন বাসায় ঢুকবার পরই দেখি আম্মু আর বাবা বসে আছে। তাদের দৃষ্টি স্বাভাবিক না। আমি অগ্রাহ্য করেই কম্পিউটার অন করলাম। তৎকালীন সুপার কম্পিউটারের চেয়েও দ্রুতগতির কম্পিউটারের অন হবার আগেই আমার ডাক পড়লো, আলভী এদিকে আসো।

বাবা আম্মু অসম্ভব রেগে আছেন। বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, “আলভী, তোমার রেজাল্ট কেমন হয়েছে? ”

“বাবা,অসাধারণ হয়েছে। ”
বলা মাত্রই আম্মু আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিল। বাবা বললেন পড়।

আমি চিঠি পড়ছি আর চীরচেনা কথাগুলো পড়েও গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে।

“সম্মানিত অভিভাবক
আপনার পুত্র/পোষ্য ক্যাডেট কলেজের সকল সুবিধাদি পাওয়া সত্যেও তার পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত নিম্নমানের। সে সকলের সাথে একই পরিমান সুখাদ্য পাবার পরেও তার শৃংখলার মান অত্যন্ত নিম্ন।
আপনাদের এতো ত্যাগের পরেও আপনার পুত্র নিম্নোক্ত বিষয়/ বিষয়গুলোতে অকৃতকার্য হয়েছে।

১. সাধারণ জ্ঞান

কতৃপক্ষ আশা করে ছুটিকালীন সময়ে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রেষনা প্রদান করা হবে। ”

সাধারণ জ্ঞান? Are you serious Man? যেই পরীক্ষায় ফাজলামো করে ভারতের প্রেসিডেন্টের নাম সেসময় লিখেছিলাম মারিয়া শারাপোভা আর এখন থাকলে হয়তো লিখতাম সানি লিওন, সেই মূল্যহীন সাধারণ জ্ঞান?

ছুটির বাকিটুকু খালি প্রেষনাই খেলাম আর চিন্তা করলাম,
বাবা মা কে আমি কি করে বুঝাই
সাধারণ জ্ঞানের মতো valueless পরীক্ষা
এই দুনিয়ায় নাই!

১,০১৫ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “পরীক্ষার ফলাফল”

  1. শাহীন (৯৬-০২)

    ছুটির ২২ দিন সবসময় কষ্ট দিত। সারাসময় কলেজের বাদরামির, রেজাল্ট খারাপ, স্যারদের হুশিয়ারিতে ছুটি অার ছুটি থাকতো না। কিন্তু খালি এই স্বান্তনাটুকু ছিল যে মাত্ত্রতাে কয়টাদিন। তারপর আবার, আমরা সবাই রাজা।


    The Bond Cadet

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র কি? সানিয়াত লিখেছিল :gulli: ওসামা বিন লাদেন। :gulli: ফখর উদ্দিন স্যারকে কোন দিন ছাত্র পিটাতে দেখি নাই। ঐদিন বোর্ডে আঁকার রুলার দিয়ে যেই মাইরটা দিলেন ফর্ম ক্লাসে। আহ সাধারণ জ্ঞান! (সম্পাদিত)


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ঐ লিডারগোছের ক্লাসমেটরা গন ধোলাইয়ের হাত থেকে বাচতো কিভাবে? 😮 জীবনে কখনোই ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলাম না, তাই তেমন কোন টেনশন করতে হয় নাই। আমাদের রিপোর্ট কার্ড সব সময়ই পোস্টে যেত তবে ভাল বিষয় ছিল খামের উপরে ঠিকানা আমাদের দিয়েই লেখানো হত, সুতরাং বুঝতেই পারছো... 😛

    সাধারন জ্ঞান ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় পরীক্ষা, এর কারনে আতেল হিসেবে বেশ পরিচিতিও পেয়েছিলাম :bash:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    ছুটির বাকিটুকু খালি প্রেষনাই খেলাম আর চিন্তা করলাম,
    বাবা মা কে আমি কি করে বুঝাই
    সাধারণ জ্ঞানের মতো valueless পরীক্ষা
    এই দুনিয়ায় নাই!

    :pira:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    স্কুলের প্রথম পরীক্ষায় ফেল করছিলাম।
    এরপর ক্লাস ফোরে ২০ এর পরে গেছিলাম এক স্যারের অংক খাতা দেখার পলিটিক্সের জন্য। সে বিরাট কাহিনী।
    ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার পর ফেল করাটাই নিয়তি হয়ে দাঁড়ালো।
    ক্যাডেট কলেজ থেকে আসা সেই চিঠি ছিলো অভিশাপ।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমাদের ফর্মের সবাই সাঃ জ্ঞানে পাশ করতাম। সেটার কারন অবশ্য ঐতিহাসিক।
    কলেজের খুব সম্ভবত আমাদের ফরম ই সবসময় সাঃ জ্ঞানে পাশ করতো। :tuski:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।