ইন্টার হাউস এথলেটিক্সে আমার বিশ্বরেকর্ড

আমরা নজরুল হাউসের ছেলেরা এথলেটিক্সে বরাবরই দুর্বল ছিলাম… দুই একটা ইভেন্ট বাদে থার্ড পজিশনেও কেউ থাকতো না আর কিছু কিছু ইভেন্টে তো কাভার করারই মানুষ ছিলো না! দুই একটা ইভেন্ট বলতে মাহবুবের শটপুট এর মেডেলটাই শিউর ছিলো আর বাকি আমার হাইজাম্প, আখলাকের ১৫০০ কিংবা ওয়াসিফ আর মোরসালিনের দৌড় নিয়ে ছিল ব্যাপক টানাটানি! এই কয়টা বাদে সব ইভেন্টেই আমরা ভাইবন্দী করে ছয়জনের মাঝে পঞ্চম-ষষ্ঠ কিংবা ভাগ্যদেবী সহায় হলে চতুর্থ আর ষষ্ঠ পজিশন নিয়েই হাউসের নামে গগনবিদারী চিয়ার্স দিতাম আর ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা ভেবে মুড়ি খাইতাম!

এই যখন ছিলো অবস্থা, তখন হঠাৎ শুনলাম যে আমার নাম নাকি পোলভোল্টে… এই ইভেন্টে আসলে আমাদের সিক্সথ হবার যোগ্যও কেউ ছিলোনা আর প্রতিবছরই উপায়ান্তর না দেখে সিরিয়াল অনুযায়ী পার্টিসিপেট করতাম…আর ভাগ্যের দোষ … এইবার আমার পালা!

বিকেলে গেলাম আমি পোলভোল্টে… মোরাল ভীষণ হাই কারণ সকালে আমার ফেভারিট হাইজাম্পে ৫ ফুট ১ ক্রস করে সেকেন্ড হইছি। আর ইভেন্টের পূর্বে, বাঁশ ছাড়াই পাঁচ ফুট… বাঁশ নিয়ে তো দশ ফুট পারবোই এ ধরনের আকাশকুসুম চাপাবাজি শুনে আসছি। উল্লেখ্য, তখন কলেজরেকর্ডও দশ ফুট কিনা আমি শিউর না, তবে এইটা শিউর যে আমি দশ ফুট পারবো… কারণ জাম্পিং ইভেন্টের জন্যে আমার বডি পার্ফেক্ট, এডজুটেন্টের বানী!

ইভেন্টে দেখি সাইফুল আলম স্যার… উনিই সকালে আমার হাইজাম্প নিয়েছিলেন। আমাকে দেখে তো স্যারও মোরাল হাই… “শাবাশ রাফায়েত! এবার পোলভোল্টেও চমক দেখাও…! ”
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমি প্রথমবারের মতো পোলটা হাতে নিলাম…আর গম্ভীর গলায় বললাম “চমক দেখাচ্ছি স্যার! ” আজ কিছু হতে চলেছে এমন আমার ভাবখানা!

স্যার বললেন যে, কতো ফিট থেকে শুরু করবা… বললাম,”স্যার, ওয়ার্মার তো, তিন ফুটেই দেখি..!” শুনে স্যারও হা… হাইজাম্প চার ফুটে শুরু আর পোলভোল্ট তিন ফুট? আমি একটু বুঝিয়ে বললাম… “স্যার, এটাতো আসলে বাশ…ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে পোল দিয়ে হয়, তাই ক্যালিব্রেশনের দরকার আছে!” এইরকম কঠোর যুক্তি শুনে অগত্যা মেনে নিলেন স্যার! আমার সিরিয়াল পাঁচে।

প্রথমে সবাই নিমিষেই পার হয়ে গেল, কিন্তু আমি দৌড়ে এসে জাম্প করবার মুহূর্তে বুঝলাম না, কেমনে কি! বাঁশ কই ফেলবো আর লাফ কই দিব..অতপর বাঁশ সহ ফিতা সহ ফোমে গড়াগড়ি। ফলাফল, পারলাম না! সেকেন্ড জাম্প দেবার আগে ভাব নিলাম ওইটা স্টেপিং এ সমস্যা ছিলো … তাই একটু ভাব-টাব নিয়ে চলে গেলাম জাম্প করতে..কিন্তু কাহিনী সেই একই! এবারও পারিনাই।

এদিকে জুনিয়র সিনিয়র ভাইয়েরা একত্র হয়ে গেছে… তিনফুটে তিন নাম্বার চান্স নিচ্ছে রাফায়েত, এই চাঞ্চল্যকর খবরে। কানে কানে এসে হাউসের বড়ভাই বলল… “বাঁশ ছাড়া পারবি না পার হইতে? ইজ্জতের ব্যাপার!” আমি মাথা কাইত করলাম,”হ্যা, পারব! ”

আমার থার্ড জাম্প…উসাইন বোল্টের ১০০ মিটারেও এমন উত্তেজনা থাকেনা! সবাই তাকায় আছে…আজ কিছু হতে চলেছে … কথা মতো বাঁশ রেখেও জাম্প করলাম আগমুহূর্তে, আর পারও হয়ে গেলাম! দেখি আনন্দে আমার ক্লাসমেটরা ছুটে আসতেছে ..আমিও আনন্দের আতিশয্যে গিয়ে কাঁধে উঠে পড়লাম সবার আর এমন সময় দেখলাম স্যারও দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে…মনে মনে ভাবলাম, আজ আমি বড়ই গর্বিত!

কিন্তু এ কি! স্যার এসে প্রথমেই বললেন, “নামায়োনা এরে উপর থেকে… চ্যাংদোলা কইরা ডিচে নিয়া ফালাও? মজাক করতে আসছ? পোল ছাড়া পোলভোল্ট? তুমি ফেল! ” আমি একটু বললাম, ওইটাতো বাঁশ…পোল না…
ফলাফল ভালো হলো না! অগত্যা হাউসের তাবুতে এসে ঘুম দিলাম…

কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলাম আমাকে মাহবুব ঘুম থেকে ডাকছে…”ওই রাফা? তুই নাকি পোলভোল্ট এ কলেজ রেকর্ড করছিস? ” ঘুমুঘুমু চোখে বললাম, কলেজ রেকর্ড করুম ক্যান? বিশ্ব রেকর্ড করছি..দেখাতো, দুনিয়ার কে পোলভোল্টে ৩ ফুট পার হইতে পারেনাই?

আসলেইতো… চিন্তার বিষয়!! 😛

৭৯৭ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “ইন্টার হাউস এথলেটিক্সে আমার বিশ্বরেকর্ড”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    =)) =)) :khekz: :khekz: :pira2:

    ব্যাপক ! আমি সারাজীবন হপ স্টেপ জাম্প আর জ্যাভলিন মাইরা গেছি .. কোনোবারই মেডেল পাই নাই... হায়েস্ট থার্ডে প্লেসে গিয়া আটকে যাইতাম .. এই কাহিনী কোন বছরের? দেখছি মনে হয়তাছে 😛 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  2. ফেরদৌস জামান রিফাত (ঝকক/২০০৪-২০১০)

    আমাদের কলেজেও পোল ভল্টের এমন কিছু পাবলিক ছিল। এই ইভেন্টের দিন তারা ছিল স্টার। ক্লাস/ হাউস নির্বিশেষে সবাই তাদের সাপোর্ট দিতো। বিনোদন কারে কয় =)) =)) =))


    যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।