বিডিআর বিদ্রোহে হারিয়ে যাওয়া পথিকৃৎ

ফোনবুক ঘাটছিলাম, হঠাৎই একটা নামে এসে বুকটা কেপে উঠল,

কর্নেল লুৎফর …
বিডিআর বিদ্রোহের মাঝে হারিয়ে যাওয়া আমার পথের পথিকৃৎ।

বাবার কাছে গল্প শুনতাম, এক সাধারণ গ্রামের ছেলে হয়ে তিনি কিভাবে পাগলের মতো বই পড়তেন, যার গরুর পেছনে রাখাল হয়ে ঘুরবার কথা, কিভাবে তিনি ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়ে সেখানে কলেজ প্রিফেক্ট হন। তার প্রতিটি চলার ছন্দে কিভাবে তিনি আদর্শ, প্রতিভা আর যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতেন। শুনতাম আর স্বপ্ন দেখতাম, আমিও তার মত হব! তার পায়ে পা রেখে হাতে হাত ধরে এগুব!

হ্যাঁ, তিনি আমার চাচা! যার কথায় আমি ক্যাডেট কলেজে পড়ার স্বপ্ন দেখি! যার উৎসাহে আমি আমার পথচলা শুরু করি।উনি অনেক আশা করেছিলেন আমি তার মত কলেজ প্রিফেক্ট হব, আমি পারিনি। বুঝেছিলেন আমি হয়তো তার মতো নই।হয়তোবা কষ্ট দিয়েছিলাম তাকে অনেক!

এইচএসসি শেষ করে যখন পীলখানায় গিয়ে তার কাছে বলেছিলাম, চাচা আমি আর্মিতে যাব, উনি হেসেছিলেন। বলেছিলেন, আর্মিতে অনেক পরিশ্রম! তুমি পারবানা!
তবু নাছোড়বান্দা আমি পথ থেকে সরিনি! পথ থেকে সরে গেলে তুমি! কোন এক কালো মুখোশ ধারী জওয়ানের কাছে, কারও অজানা স্বার্থের কাছে কোরবানি হয়ে গেছে তোমার জীবন, সমাপ্তি এসেছে আমার পথের।

চাচা, আজ তুমি নেই! আমাকে দেখবার ও কেউ নেই! জানি তুমি শুনছ না, তবুও বলি, আমি তোমার পথেই আছি! আমি এগুচ্ছি, আমি এগুব! তুমি তোমার পথ শেষ করনি।আমি আমার হয়েই তোমার পথ শেষ করব! আমি আমার মাঝেই তোমাকে দেখতে চাই। তুমিই তো আমার পথিকৃৎ!

আবারো চোখের সামনে নাম্বার টা। ডায়াল করলাম, not in use.
আবার ডায়াল করলাম, আবার,আবার,আবার! জানি দেশে আজ অনেক কিছু হচ্ছে, সবাই ব্যাস্ত। সবাই বিডিআর বিদ্রোহ কে আর দশটা ঘটনার মতোই ভুলে গেছে। কিন্তু আমি তো পারিনা! তাইতো আজও কোন সাফল্যে, কোন ব্যর্থতায় সেই নাম্বারটা তে রিডায়াল চেপে বসে থাকি। একটি বার এসে দেখে যেতে আমাকে!!

১,১৬৯ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “বিডিআর বিদ্রোহে হারিয়ে যাওয়া পথিকৃৎ”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আর দশটা ঘটনার মতোই ভুলে গেছে সবাই। তাঁদের স্বজনেরা কেমন আছেন - আর জানতেও চাইনা।বিস্মৃতিপ্রবণ এই জাতি কবে এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাবে, কে জানে। মানুষগুলো আর ফিরবেনা, কিন্তু সুবিচার পেলে তাঁদের আত্মা, তাঁদের স্বজনেরা, বাংলাদেশ শান্তি পাবে।

    তোমার শূন্যতাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার নেই।

    জবাব দিন
  2. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    প্রিয় রাফায়েত,
    বিডিআর বিদ্রোহ কে সবাই ভোলেনি। অনেকের হৃদয়েই এখনো ক্ষত হয়ে জ্বলছে। আমি আশাবাদি, জাতি এই নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাবে। কেবল সময়ের অপেক্ষা।

    তোমার চাচা কর্নেল লুৎফর-এর কথা আমাকে রফিক কায়সার স্যার বলেছিলেন। উনার প্রিয় ছাত্র ছিলেন।

    কর্নেল লুৎফর আমাদের কলেজের এ্যাডজুটেন্ট ছিলেন। উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।