জমজ প্রেম

প্রেম সবার জীবনেই একবার না একবার আসেই। আজকে আরেকটা প্রেমের গল্প। গল্পের নায়ক আমার বন্ধু প্রথি। প্রথি ছোট বলা থেকেই পাড়ার সবচাইতে ভদ্র ছেলে। বাংলা সিনেমার নায়করা যেমন নম্র ভদ্র ক্লাসের ফার্স্ট বয় হয়, গল্পের নায়ক প্রথিও তাদের থেকে কম যায় না, উপরন্তু মাকে বলা ছাড়া বাসা থেকেও বের হয় না।

প্রথির মা এর আবার আমার উপর অগাধ বিশ্বাস যে, আমি একটা ভালো ছেলে। বলা ভালো, আমিও ফার্স্ট বয়ের কাছাকাছি। নায়কের মা ক্লাস টেন পর্যন্ত ছেলেকে নিয়ে প্রাইভেট পড়তে নিয়ে যাবার পর অবশেষে যখন সুবোধ বালক কলেজে উঠলো তখন তার মার বোধদয় হইলো যে, ছেলে তার বড় হয়েছে। তার ছেলেকে অবশেষে প্রাইভেট পড়তে যেতে দেয়া হল, তার বন্ধুর সাথে। যাবার আগে হাজার কথা আমাকে। কথা বলতে সতর্ক বানী , “বাবা, আমার ছেলেটাকে দেখে রাইখো, বুঝেনা কোন কিছু।” আমার মনে হইল, হঠাত করেই যেন আমি বড় হয়ে গেছি। আজকে আমি আমার বন্ধুর গারজিয়ান হয়ে গেছি! ভাব আমার দেখে কে!!

প্রথি কে নিয়ে গেলাম প্রাইভেটে। তার মা নাই সাথে। ছেলেতো বড় হয়েছে। এখন আর এদিক সেদিক তাকানোতে মানা নেই। যাকে ইচ্ছা তাকে চোখ টিপ দেয়া যায়। ইভটিজিং করার মতো সাহসের কাজও করে ফেলা যায় । অতদুর না গেলেও প্রাইভেট থেকে আসার পথে মোড়ের কোনার দোতালার মেয়েটাকে দেখতে ভুল হয় না নায়কের।

দুজনের দেখা হউয়াটাও একটু কেমন যেন! একজন বেল্কনিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আর অপরজন সরু গলির পিলার ধরে তার ই দিকে তাকিয়ে। কি সেই অপলক দৃষ্টি!! একে অপরের দিকে, হয়তোবা দুই সেকেন্ড আমার কাছে, কিন্তু ওদের কাছে তা যেন দুই যুগের সমান। হয়তো মনে মনে বাংলা সিনেমার একটা গানও হয়ে গেছে এর মাঝে। দুইজনের মাঝে এই দৃষ্টি বিনিময় অগোচর হইলোনা আমার।

এই দৃষ্টির বিনিময় চলতে থাকল পরপর তিন দিন। আমি চুপচাপ দেখি আর ভাবি, চিড়িয়াখানার বান্দরটা হয়তো আজ একটা জঙ্গল ভর্তি কলা গাছ পাইলো!!

লাভ এট ফার্স্ট সাইট দেখছি কিন্তু  এতো সহজে প্রেম তো জীবনে দেখি নাই! ছেলের মাথায় আর পড়াশুনা নাই। সে খালি চিন্তা করে কখন প্রাইভেট শেষ হবে আর বেলকনি তে দাঁড়িয়ে থাকবে সেই মেয়ে। টীচার আর আমাকে অবাক করে সে হঠাত করেই বাসায় পার্টি আছে বলে বললো যে যেতে হবে তার, অগত্যা আমিও রওনা হলাম তার সাথে। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা!!

প্রতিদিনের রুটিন! মেয়েটা এসে বেলকনিতে দাঁড়াবে আর ছেলেটা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে তার দিকে। মেয়েটা আসে।না কেন যেন আজকে আর। ছেলেতো পাগল পারা! আজ দেখা না করে যাবেনা সে। যার জন্যে প্রাইভেট বাদ দিয়ে ফার্স্ট বয় ছুটে আসলো সে আসলোনা। আজ সে বাসায় যাবে।

আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো হতবাক করে দিয়ে সে বাড়ির কলিংবেল টিপল। বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো বাড়ির কর্ত্রী। নায়ক একটু ভীত… কাপতে কাপতে বললো, “পানি খাব।”  শুকনা মতন ছেলেটাকে দেখে মায়া হলো কর্ত্রীর। ভেতরে গেলেন, যাবার সময় বললেন “বস বাবা।”

“বস বাবা” আহহহহহহ! কি সুমধুর সম্বোধন। বিয়ের আগেই বাবা, পরে না জানি কি হয়! কিছুক্ষনের মাঝে নায়িকা স্বয়ং উপস্থিত পানি নিয়ে। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি! প্রথি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার এই তাকিয়ে থাকা দেখে মেয়ে একটু বিব্রত… কিন্তু নায়ক তো আছে তার জগতে! তার সামনে এখন নায়িকা! পাশের আমি আর অন্য ঘরের মা তো কবেই অদৃশ্য হয়ে গেছে!

জানিনা সে কি ভাবছিল… আর কি করেই বা এতো সাহস হলো তার, নায়িকাকে সটাং করে বলে দিল, “আই লাভ ইউ!!” চারিদিকে নিস্তব্ধতা। আমার গা শিরশির করছে। নায়কের হাত পা কাপছে। নায়িকার চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়।

চোখ মুখ যে লজ্জাতেই খালি লাল হয় না, রেগে গেলেও হয় এই বোধোদয় হল আমার আর দু সেকেন্ড পরে যখন থপাস করে একটা থাপ্পর লাগলো নায়কের গালে। বুঝলাম, প্রথম প্রেমে ছেকা খালি আমি একা না, আমার ফার্স্ট বয় বন্ধুটাও খেয়ে গেল। একেই না বলে দোস্তি!!

 

সেদিন থেকে দু বছর পরের কাহিনী। আমার বন্ধু আমাকে এক বিকেলে দাওয়াত করল এক পার্কে। খুশি মনেই গেলাম। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার গা আবারো শির শির করে উঠলো। আমার এক বন্ধু আর তার পাশে দুই নায়িকা। একই চেহারা একই ড্রেস। এবং সেই দোতলার সেই মেয়েটাই! এতোক্ষনে বুঝলাম কাহিনী, জমজ বোনের পাল্লায় তুমি!!

দু বছর পরে বুঝলাম, কোন ভাগ্যের দোষে সে থাপ্পরটা খাইছিল আর আমিও মনে একটু কষ্ট পেলাম। পাবই তো! প্রথম প্রেমের ছেকা তো একমাত্র আমিই খাইলাম। আমার বন্ধুটা খাইতে খাইতেও খাইলোনা।

বন্ধু ছেকা খাইলে খারাপ লাগে, কিন্তু বন্ধু যদি চোখের সামনে শহরের সেরা দুই সুন্দরির মাঝে বইসা থাকে তাহলে আরো বেশী খারাপ লাগে…… :bash:

বিঃ দ্রঃ গল্পের কিছু অংশ সত্য আর কিছু অংশ বানোয়াট।

 

১,১২২ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “জমজ প্রেম”

  1. শেখ সাদী (০৬-১২)

    "বন্ধু ছেকা খাইলে খারাপ লাগে, কিন্তু বন্ধু চোখের সামনে শহরের সেরা দুই সুন্দরির মাঝে বইসা থাকলে আরো বেশী খারাপ লাগে…… :bash: " :boss: :boss:


    \"why does the weasel go pop? does it matter?
    if life is enjoyable, does it have to make sense?\"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাফিস উজরাত(২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।