আমার সকল প্রেমগাথাঃ২ (দ্বিতীয় প্রেম)

আমার দ্বিতীয় প্রেমের কাহিনীটা লেখা শুরু করে ছিলাম অনেক আগেই, কিন্তু আমার ল্যাপটপের মকরামির কারনে লেখাটি হারিয়ে যায় তারপর আর মনের দুঃখে আর লেখা শুরুও করিনাই । আর লেখা কয়েকবার শুরু করলেও প্রথম বার যেমন হয়েছিল তেমন টি আর হয় না যার ফলে দ্বিতীয় পর্ব আসায় এতো দীর্ঘ সময় নিল। যা হোক, আসল কথায় আসি এবার, সেই প্রথম প্রেমে ছেকা খাবার পর চলে গেলাম ক্যাডেট কলেজে। কলেজে গিয়ে তো পুরা ফাপরে পড়ে গেলাম। কারণ মেয়ে মানুষ বলতে খালি ম্যাডামরাই আছেন, আর বিব্রতকর পরিস্থিতি হয় তখন যখন সব চাইতে সুন্দরী ম্যাডামটি হইয় পঞ্চাশ বছর বয়সী খুরশীদা ম্যাডাম। তবে খুরশীদা ম্যাডামও কম ছিলেন না। হাজার বছর ধরে গল্পের আমেনা আর আম্বিয়ার মধ্য দিয়েই ক্লাসে ঝড় তুলতেন। অনেকে আবার খুব এডভান্স ছিল, চোখ বন্ধ করে ম্যাডামের ক্লাস করতো। আমি একবার আমার এক কতিপয় দোস্তকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কিরে তুই সব সময় ম্যাডামের ক্লাসে এমনে ঘুমাস কেন?” তার উত্তরটা ছিল, “মামা, আমি তো ঘুমাই না, আমি চোখ বন্ধ করে যৌবনের খুরশীদা আপু কে মনে করি।” ম্যাডামকে আবার আমরা তেলও দিতাম ওইরকমই। একদিন ডিউটি মাস্টার ছিলেন ম্যাডাম, এক হাউস প্রিফেক্ট তো বলেই বসল, “ম্যাডাম, আপনাকে তো পুরা ১৯ বছরের তরুণী লাগতেছে।” ব্যাস, কাজ হয়ে গেল, পরের বাংলা খাতা দিলে সেই তেলবাজটা হাইয়েস্ট পেয়ে গেলো।

এইরকমের এক খরার যুগে আমি দ্বিতীয় বারের মতো প্রেমে পরলাম। আমি তখন ক্লাস টেন এ পড়ি। আমার খালা খালু হজ করতে গেছেন আর রেখে গেছেন আমার খালাতো বোন মালিহাকে। তো, ওকে দেখার জন্যে আবার আমার আম্মু আর খালাও ঢাকায় খালা বাসায় ভর্তি, ছুটিতে আমিও সেই একই ঠিকানায় হাজির। খালা বাসা যেই ফ্ল্যাটে, ওই ফ্ল্যাটের নিচের ফ্ল্যাটেই থাকে, সেই মেয়ে যে আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য। প্রতিদিন বিকেলে খেলতে নামি, ক্রিকেট ফুটবল সব খেলাই হয়। আর ওইদিকে মেয়েরা খেলে ছোয়াছুয়ি। আমার সাবজেক্ট একদিন দোলনায় বসে আমাদের খেলা দেখছিল, এমন সময় আমার ছোট বোন গিয়ে সেই দোলনায় বসতে চাইল, আর সাবজেক্ট বলল, তোমার ভাইয়া যদি আমাকে নামতে বলে তাহলে নামব।

আজকালকার পিচ্চি-পাচ্চা, জন্ম হয় মায়ের পেটে স্টার প্লাসের কাহানি ঘার ঘার কি শুনে, যা হবার তাই, সেও এক ডিগ্রী বেশি বুঝে। ভাবল, তার বড় ভাইয়ের জন্যে ভাবী বুঝি পেয়ে গেছে। আমাকে এসে বলে, ভাইয়া, আপুতো বলছে তোমাকে পছন্দ করে।

শুনেতো আমার একূল ওকূল কেপে উঠল। পরলো তাহলে! এতোদিনে কেউ আমার প্রেমে পরলো!! আমি সার্থক!! এরপরে প্রতিদিন খেলতে যাই, তবে খেলার উদ্দ্যেশ্যে নয়, ওকে দেখার উদ্দ্যেশ্যে। গোলকীপার থাকলে গোল খাই আর স্ট্রাইকার থাকলে গোল মিস করি। করবইতো, আমার উদ্দ্যেশ্য তো আর এখন এই গোল পোস্ট। খেলা নয়, জীবনের গোলপোস্ট পেয়ে গেছি, তাও ওয়ান অন ওয়ান, গোল এইবার না দিলেই নয়। আমার এই অবস্থায় পোলাপানও আমার উপর খেপে গেছে আর খেলা থেকেও বাদ দিয়ে দিল। এখন কি করি, পেয়ে গেলাম উপায়। এক ঢিলে দুই পাখি, আমার সাবজেক্টদের সাথে ছোয়াছুয়ি আর লুকোচুরি খেলা স্টার্ট করলাম আর আবিস্কার করলাম, আমি একা নই। আমার মতো আরো দুইজন ছেলে গার্ল ফ্রেন্ডের কাছে আসার কারনে একই পন্থা অবলম্বন করেছে। আবিস্কার করলাম পৃথিবীর আরেক রূপ। মনে আছে যে, লুকোচুরি খেলার সময় ইচ্ছে করেই ওকে বার বার চোর বানাতাম এবং বার বার ওর কাছেই ধরা দিতাম। লুকোচুরিতে যতো না লুকানোর প্রয়াস ছিলো তার চাইতে বেশি প্রয়াস ছিলো ওকে নিয়ে কোন সংকীর্ণ স্থানে এক হবার। এতো কিছুর পরও সে যে কেনো বুঝতো না আমার মনের কথা আমি তা এখনো বুঝিনা। যা হোক, খুব তাড়াতাড়িই আমার ছুটি শেষ হয়ে গেলো। ক্যাডেট কলেজে ফিরে গেলাম, ফিরে গিয়ে বুঝলাম প্রতিটা মুহূর্তে আমি ওকে কিভাবে মিস করছি। প্রতিটা বই খাতার পাতায় পাতায় ওর নাম লেখা কমপ্লিট, ফিজিক্স ক্যামিস্ট্রি বায়োলোজি কোন গ্যালারীই বাদ যায়নি ওর নাম লিখতে। আমাদের আমিন আবার খুব সাহিত্য মারতো। ওকে দিয়ে চিঠিও লেখে ফেললাম একটা, ইচ্ছা পরবর্তী ছুটিতে দিব। লেখালাম ঠিকই কিন্তু ছুটি গিয়ে তো আর দেবার সাহস হয়না। উলটা চিঠি নিয়ে আম্মুর কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। মাইর দেন নাই আম্মু কিন্তু এমন সব কথা শুনাইলেন যে চিরদিনের মতো প্রেম করার ইচ্ছা চলে গেল।

সামনে এসএসসি। এর আগে টেস্টে খুব খারাপ করলাম। ফেইলের দশা। বাসায় চিঠি গেলো, বাবা আল্টিমেটাম দিল, যদি এ প্লাস না পাস বাসায় ঢুকবিনা। আমিও নিয়ত করলাম, একবারে এ প্লাস পেয়ে বউ নিয়াই বাসায় ঢুকব। আর বউকেও এ প্লাস পেয়েই প্রস্তাব দিব। যাই হোক পরীক্ষা দিলাম, রেজাল্ট দিলো, কাঙ্ক্ষিত ফলাফলও পেলাম, কিন্তু পাত্রী কে আর বলার সাহস বা শক্তি কোনটাই হয়না। এমন করতে করতে কবে যে এইচএসসিও এসে গেলো টের পেলাম না। আগের মতোই ঘটনার রিপিটেশন, টেস্টে খারাপ রেজাল্ট, বাবার থ্রেট, আমার দৃঢ় অঙ্গীকার অতঃপর ভালো ফলাফল, আবারো গোল্ডেন। খুশিতে মরে গেলাম, আমাকে এবার পায় কে!!

তার আগে বলে রাখা ভালো, আমার খালুর পোস্টিং হয়ে গেছে আগের যায়গা থেকে, পাত্রীর সাথে যোগাযোগ নেই ২ বছর। জানিনা সে আমায় ভুলে গেছে কিনা। তবে মনে অনেক আশা আর ভরসা, সে আমায় কখনো ভুলবেনা। ওর এক বান্ধবীর নাম মনে ছিল।

আর মনে ছিল ওর বাবার নাম। আর্মির লোকজনের নাম্বার যোগাড় করা সমস্যা নয়। ওর বাবার নাম্বারও পেয়ে গেলাম, সমস্যা হল এখন পাত্রী কে পাই কেমনে! কাজে লেগে গেলো ওর বান্ধবীর নামটাই। গলার ভয়েসটা একটু নামিয়ে আঙ্কেল কে ফোন দিলাম, “আঙ্কেল, আমি বুসরা। ওর নাম্বারটা তো চেঞ্জ হয়েছে, আমি ওকে খুজে পাচ্ছিনা” আমার শ্বাস বন্ধ হবার অবস্থা, কারন আমার যা ভয়েস হইছিল সেইটা আর যাই হোক, বিশ্বাসযোগ্য না। তবুও বিশ্বাস করলেন, না করে উপায় আছে, বুদ্ধিতো আমাদের সবারই হাটুতেই। মনের খুশিতে তিনটা উচ্চলম্ফ দিলাম।

এবার ফাইনাল মিশন। পাত্রীকে কল দিলাম, ওপাশ থেকে উত্তর এলো,

-হ্যালো

-হ্যালো!! আমি আলভী। আমাকে চিনতে পেরেছ?

-Umm….Alvee, I am sorry I cant recognize you

– আমি তোমাদের বাসার পাশে থাকতাম, একসাথে লুকোচুরি খেলেছি, ছোয়াছুয়ি খেলেছি…(হৃদয়টা অর্ধভঙ্গ। ভেবেছিলাম বলা মাত্রই আমাকে দশ বারোটা চুম্মা দিয়ে গান গেয়ে উঠবে এতোদিন কোথায় ছিলে!! আর এখন আমাকে চিনতেই পারছে না!!)

-Well, I have played with many……

কি!! তার মানে আমি অনেকের মাঝেই একজন! আলাদা কেউ না! তোমার স্পেশাল কেউ না!! আর আমি তোমায় কোথায় রেখেছি আমার মনের মাঝখানের। তবুউ শেষ প্রচেষ্টা চালালাম,

-আমি মালিহার ভাই……

-ওহ!! ভাইয়া!! কেমন আছেন? ভালো আছেন? কোন দরকারে ফোন দিয়েছিলেন??

– না, তেমন কোন দরকার নেই, মানে ছিলোনা। (বলা উচিত কিনা বুঝছিনা, মনে হচ্ছে এই আমার শেষ সুযোগ বলার, এবার নয়তো কখনোই নয়)

সব কিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে বলেই ফেললাম, “ লামিসা(নামটা এই পর্যায়ে লুকানো সমিচীন নয়) আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

–     What the hell are you talking about!! I don’t know you even! And I have someone who is the best for me….

আমার আর বলার কিছু ছিলোনা। শুধু চোখ ভিজে যাচ্ছে। এর জন্যেই আমি তিন বছর ধরে অপেক্ষা করেছি!! ওকে পাবো ভেবেই এতো পড়ালেখা করেছি। কার জন্যে এতো দৌড়ালাম! যে আমার সাথে বাংলায় কথা বলতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না!! এতো মরিচিকা, আর কিছু নয়।

মাথায় আর কিছু আসছেনা। সোজা দৌড়ালাম রেললাইনে। কালকে পেপারে আসুক, গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করলেন মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষা হোক এইসব মেয়েদের।

রেললাইনে শুয়ে আছি। কোন জনমানুষ নেই। জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে আজ আমি। ট্রেন আসছে, লাইটটার দিকে তাকিয়ে আছি। আর বেশী হলে বিশ সেকেন্ড। পুউউউউউউউউউউউ!! ঝিকঝিক ঝিকঝিক ঝিকঝিক। ট্রেন যাচ্ছে আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি, আর চিন্তা করছি, নাহ যারা আত্মহত্যা করে তাদের বাহবা দিতে হবে। সাহস আছে বৈকি!! ট্রেন দেখে কোন ফাকে যে আমি পাশে দাঁড়িয়ে গেছি তা টেরই পাইনি! আর ততোক্ষনে নিয়তও করে ফেলেছি, এক আলভীকে নিয়ে খেললি, আমি এবার তিরিশটা লামিসা কে নিয়ে খেলব!! হুহাহাহাহা!!(এমএ জলিল অনন্তের হাসি!)

 

৪,৫৮৭ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “আমার সকল প্রেমগাথাঃ২ (দ্বিতীয় প্রেম)”

  1. :clap: :boss: ভাই পরের লেখার তা দিয়া দেন। অছাম হইসে। :boss: আপ্নি নাকি শারলক হোমস লেখা শুরু করছিলেন ? ঐটা র অগ্রগতি কি? কবির আহমেদ সার ১ বার ক্লাস এ বলছিল...আপনার প্রেমিক সত্তা র পরিচয় পেয়ে আনন্দিত 😛 :)) .. পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ....

    জবাব দিন
    • রাফায়েত (২০০২-২০০৮)

      ভালো জিনিস মনে করায় দিছিস তো! শারলক হোমস একটা লেইখাই থাইমা গেছিলাম, দেখলাম যে আমার শারলক হোমসের চাইতে পোলাপাইন তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানা পইরাই বেশী মজা পায়। পরের পর্ব গুলো আরো বেশী ইন্টারেস্টিং হবার কথা এই সিরিজের। দেখা যাক কেমন সময় পাই লেখার জন্যে। 😉

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাফায়েত (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।