নূতন বছরের স্বপ্ন

অনেকক্ষন ধরেই মুঠোফোন বাজছে। খালেদা জিয়া কিছুটা বিরক্ত। এই অবেলায় কারো
ফোন দেয়ার কথা নয়। তিনি বিরক্ত ভাব নিয়ে মুঠোফোন হাতে নিলেন।স্ক্রীনে শেখ
হাসিনা কলিং ভেসে ওঠায় কিছুটা অবাক হলেন। এই অসময়ে তাঁর ফোন দেয়ার কথা
নয়। তাছাড়া আজ বছরের প্রথম দিন। বছরের প্রথম দিন প্রধান মন্ত্রী দেশের
প্রধান প্রধান সমস্যা নিয়ে দেশের প্রধান ব্যক্তিবর্গদের সাথে আলাপ করবেন
এটাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে তিনি এখন দেশের প্রধান কেউ নয় যে ফোন দিয়ে খবর
নিতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের কাছে ক্ষমতাহীন প্রধান বিরোধী দলের কোন মূল্য
নেই,বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা অঘোষিত নিয়ম,অলিখিত সংবিধান। এছাড়া শেখ
হাসিনার ফোন কল ও অপ্রত্যাশিত। রাজনৈতিক কোন্দলে পরে অনেকদিন তাঁদের মন
খোলা কথা হয়না,সুখ দুঃখের কথা হয়না,হয়না ব্যক্তিগত আলাপ। যদিও মাঝেসাঝে
তাঁদের দেখা হয় তবে কোন একটা অদৃশ্য দেয়াল তাঁদের দুজনের মাঝে গড়ে ওঠেছে।
যা ভেদ করা গুরুতর অপরাধ। যদিও মাঝেমাঝে খালেদার ইচ্ছে করে হাসিনার সাথে
কথা বলতে। তবে চারপাশ বিবেচনা করে আর বলা হয়ে ওঠেনা। হাসিনার যে ইচ্ছে
করেনা তা নয়। এইতো সেদিন তাঁর স্বামী মারা যাবার পর কি কান্নাটাই না
করলো,তখন খালেদা জিয়াই তাঁকে স্বান্ত্বনা দিয়েছিলেন। এইতো সেদিনও
সেনাকুঞ্জে দুজনের মুখোমুখি কথা দেখা হল। দুজনের মনেই ইচ্ছে ছিল কথা
বলার,কুশলাদি জিজ্ঞেস করার তবে চারপাশের পরিবেশ বিবেচনা করে আর কথা বলা
হয়ে ওঠেনি। নারী মন কোথাও পরম মমত্বে বাঁধা যা অনেক নমনীয়। তবে দেশ আর দল
চালাতে গিয়ে দুজনকেই অনেক কঠিন হতে হয়,কঠোর হতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও অনেক
সময় ইচ্ছেটাকে সংবরণ করতে হয়। তবে আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। বছরের প্রথম
দিন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের কাজের বাইরেও টুকটাক ব্যক্তিগত কাজ
থাকতে পারে। বিদেশে ফোন দিয়ে ছেলেমেয়েদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন,
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাবেন,দেশের মন্ত্রীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়
করবেন কত কাজ তাঁর। সে কীনা আজ নিজ থেকে ফোন দিয়েছেন। খালেদা জিয়া আগ্রহ
নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে ভেসে এল,স্লামালিকুম
আপা,হ্যাপি নিউ ইয়ার কেমন আছেন? খালেদা মিষ্টি হেসে বললেন,আলহামদুলিল্লাহ
এইতো ভালো আছি,কতদিন পর তোমার ফোন,আমিতো বিশ্বাসই করতে পারছিনা। তারপর কি
খবর বল? তোমার দেশ কেমন চলছে? শেখ হাসিনা মৃদু হেসে বললেন, কি যে বলেন
আপা, শুধু আমার দেশ কেন হবে,দেশতো আমাদের সকলের,তা আপা দেশের যা অবস্থা
,কারেন্ট ইস্যু গুলো পুরোই টিস্যু বানিয়ে দিয়েছে।
-হুম তা ঠিক,তুমি বেশ চাপের মধ্যে আছো বোঝা যায়,পিঁপড়ার মত মানুষ মারা
যাচ্ছে দেশে,তাজরীনে আগুন লাগলো,গার্ডার ধ্বসে পড়লো,বিশ্বজিতকে তোমার
ছেলেপেলেরা রাস্তায় কুপিয়ে মেরে ফেলল,শুনেছি পদ্মা সেতু নিয়েও ঝামেলায়
পড়েছো, খালেদা জিয়া বললেন।
শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার কথা শুনে ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,তা ঠিক
আপা। আমার কষ্ট আপনিই বুঝবেন। নারী হয়ে একটা দেশ চালানো এম্নিতেই বেশ
কঠিন,তার ওপর যদি এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আর কি করার থাকে বলুন,তা
আপনার কি খবর?
– আমিও খুব একটা ভালো নেই। প্রেশার একটু বেড়েছে। এছাড়া তোমার পুলিশ গুলো
আমার নেতা কর্মীদের জেলে ঢুকিয়েছে। ছেলে দুটোও কাছে নেই। বুকটা ফাঁকা
ফাঁকা লাগে. . .তা হঠাত্‍ ফোন দিলে যে,কি কারণ?
-অনেক দিন ধরেই ফোন দেব দেব ভাবছি। অনেক তো হল আপা। আসুন না এবার একটা
সমঝোতায় আসি। কতদিন আপনি সংসদে আসেননা। আমার একা সংসদে যেতে মোটেও ভালো
লাগেনা।
শেখ হাসিনার কথা শুনে খালেদা জিয়া একটু হাসলেন। বললেন,দেখ হাসিনা,তুমি
আমার চেয়ে ছোট।
তোমার বাবা আমাকে অত্যধিক স্নেহ করতেন। একটা পর্যায়ে হঠাত্‍ করেই আমাদের
সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। এখন আমাদের মুখ দেখাও পাপ। এখন তুমি প্রশ্রয়
দিয়েছো স্বৈরাচারীকে আর আমি রাজাকার আজ জিয়া অথবা মুজিব আঙ্কেল বেঁচে
থাকলে. . . খালেদা জিয়ার কন্ঠ ভারী হয়ে এল। হাসিনা ওপাশ থেকে শান্ত কন্ঠে
বললেন,আপা ঠিকই ধরেছেন। আসলে এ কথা বলার জন্যেই ফোন দিয়েছি। মেঘে মেঘে
অনেক বেলা গড়িয়েছে। এখন আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি। তবুও একে অন্যের ওপর
কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছি। আমরা বুঝিনা ওপরের দিকে থুতু ছুঁড়লে তা নিজের
মুখেই পড়ে। খামোখা একে অন্যের নামে বদনাম করে বিশ্বের দরবারে দেশের
ভাবমূর্তি নষ্ট করছি। খালেদা জিয়া বললেন,ঠিক বলেছো। আমিও কিছু
যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় দিয়ে ভুল করেছি। তুমি দ্রুত এদের বিচারের ব্যবস্থা
নাও। অনেক প্রশয় দিয়েছি আর না। আর শোন তুমিও ঐসব স্বৈরাচারী টৈরাচারী কে
প্রশয় দিওনা।
শেখ হাসিনা উচ্ছ্বাসের কন্ঠে বললেন, আপা আমার মনের কথাটিই আপনিই বললেন।
আমরা দুজন চাইলেই মিলতে পারি। সেবার একসাথে যেমন স্বৈরাচারী সরকারের পতন
ঘটিয়েছি এবারো একসাথে আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারবো। আগামী নির্বাচন হবে
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আপনি আমি যেই ক্ষমতায় আসি আমরা একে অন্যকে সাহায্য
করবো। দেশের জরুরী অবস্থায় পাশে থাকবো। খালেদা জিয়া মিষ্টি হাসি দিয়ে
বললেন, অবশ্যই হাসিনা। আমি তোমার বোনের মত।
একটুও চিন্তা করোনা। আমি ক্ষমতায় এলে আগেই বলেছি দেশের চেহারা পাল্টে
দেব. . .দেখবা বাংলাদেশ হবে আমার মতই সুন্দর। শেখ হাসিনা অট্টহাসিতে ফেটে
পড়লেন. . . .

ঘুম ভাঙলো আম্মার ডাকে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমাখা কন্ঠে বললেন,কতক্ষন
ধরে শেখ হাসিনা – খালেদা জিয়া করছিস। ভার্সিটিতে পড়ে তোকেও কি রাজনীতির
ভূতে ধরল? আমি আম্মাকে নতুন বছরের উইশ করে বললাম,না মা। খুব সুন্দর একটা
স্বপ্ন দেখলাম। দোয়া করো যেন স্বপ্নটা সত্যি হয়। আম্মা বললেন,কি দেখলি?
আমি আড়মোড়া ভেঙে মায়ের গালে চুমু খেয়ে বললাম,কিছু স্বপ্ন আছে যা পূরণ
হবার আগে বলতে হয়না। চাপা রেখে দিতে হয়।
আম্মা কিছুটা বিরক্তির কন্ঠে বললেন,বললে কি হয়?
আমি বললাম,স্বপ্ন সত্যি হয়না।
আমার কথা শুনে আম্মা স্বভাবতই বলে উঠলেন,তুই আসলেই একটা পাগল।
আমি মনেমনে প্রার্থনা করলাম,আল্লাহ অসম্ভবের পৃথিবীতে আমার স্বপ্নটাকে
সত্যি করে দিও। নূতন বছরে এটাই আমার চাওয়া।

রাব্বী আহমেদ

১,০০৬ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “নূতন বছরের স্বপ্ন”

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।