সিসিবির পিকনিক এবং আমরা কয়েকটি প্রান

সানাউল্লাহ ভাইয়ের পল্লবীর বাসাটা খুঁজে পেতে একটু বেগ ই পেতে হল। যদিও সামিয়া আপু ম্যাপ দিয়েছিলেন কিন্তু যে কোন আগন্তুক এর কাছে বাসা খুঁজে পাওয়া এক প্রকার অসম্ভব কাজ। এ গলি ও গলি পার হয়ে যখন বাড়ীর গেটের সামনে পৌঁছালাম তখন পড়ন্ত বিকেল। বাসায় ঢুকতেই পিকনিক পিকনিক একটা গন্ধ পাওয়া গেলো। আমার পাওয়া ক্যাডেট কলেজ ব্লগের প্রথম পিকনিক। তাই উত্তেজনা একটু বেশিই ছিল। ব্লগে সবাইকে চিনলেও বাস্তবে অনেককেই চিনিনা তাই পাবন ভাইকে বলে রেখেছিলাম পিকনিকে আসতে। বেচারা আমেরিকা থেকে এসেছেন। আমার অনুরোধ রাখলেন। সিঁড়ি বেয়ে চারলতায় উঠতেই দেখা পেয়ে গেলাম পাবন ভাই এর। সাথে আন্নিছা আপু। সদা হাসোজ্জ্বল এই ক্যাডেট দম্পত্তিকে আমার বরাবর ই ভালোলাগে। কুশলাদি শেষ করে জাহিদ ভাইয়ের রুমে ঢুকলাম। ব্যাচেলরদের সেই চিরাচরিয়ত রুম। এরমাঝে ক্যাডেট বলে কথা। বলাবাহুল্য লাবলু ভাইয়ের বাসার চারতলায় কয়েকজন ক্যাডেট থাকেন। আমরা গিয়ে বসলাম জাহিদ ভাইয়ের রুমে। তখন সবাই কেবল আসা শুরু করেছে। জুনায়েদ ভাইকে পেয়ে গেলাম সহজেই। শুরু হয়ে গেল ক্যাডেটদের চিরাচরিয়ত আড্ডা জোকস আর কলেজের নানা স্মৃতি।

জাহিদ ভাইদের রুমটা সুন্দর। বারান্দার বাইরে একটুকরো আকাশের হাতছানি আর নির্ভেজাল বাতাস এসে যখন গায়ে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে এমন সময় লাবলু ভাই ঢুঁ মারলেন। মনে হল হঠাত্‍ করেই হাউসে প্রিন্সিপাল স্যারের আগমন। আমরা উঠে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি বেশ কিছু জোকস করে বয়সের ব্যবধানের দেয়ালটা ভেঙে দিলেন। এরপর তিনি রুমে মোটামুটি একটা ইন্সপেকশন শুরু করে দিলেন। আমরা বেশ মজাই পাচ্ছিলাম। বিকেল যখন আরো ঘনীভূত হল তখন জানতে পারলাম রায়হান ভাই আর সামিয়া আপু বাজার করে ফিরছেন। সামিয়া আপুকে প্রথম দেখলাম। বলা যায় এই পিকনিকের সফল উদ্যোক্তা এবং একনিষ্ঠ একজন কর্মী। বেচারী বাজার করে এসে হাঁপাচ্ছিলেন। এরপর নিজেই জিনিসপত্র গুলো ওপরে ওঠানোর শুরু করলেন। আমি জুনিয়র ক্যাডেট সত্ত্বেও তিনি কাজ করতে দিলেননা। যখন একপ্রকার জোর করে কাজ শুরু করলাম তখন বুঝলাম আপুটা মহত্‍ বটে। লাবলু ভাইয়ের ছাদ তখন ক্যাডেটদের আগমনে মুখরিত। শেষ বিকেলের চুইরে পড়া হলদে আলো বিদায় নেয়ার পর নেমে এলো আঁধার। ছাদে আলো জ্বানালো হলো। ততক্ষনে আমাদের মাঝে যোগ দিয়ে মাশরুফ ভাই। বলিউডী দেহের গড়ন আর হাসোজ্জ্বল ভাই পুলিশে আছেন। অতি অল্পসময় থাকলেও তাঁর উপস্থিতি বেশ মজার ছিল।
আমার নিজের কাছ থেকে তিনি আসি আসি করে পাঁচবার বিদায় নিয়েজেন। বোঝাই যাচ্ছিল যেতে মন টানছেনা। এরমাঝে যোগ দিলেন ফয়েজ ভাই ও তাঁর মেয়ে। ফয়েজ ভাই আমাদের পিকনিকের একজন স্পন্সর। চিন্তিত চেহারার রায়েদ ভাই, সবসময়ের ভালোমানুষ শাওন ভাই, অজানা ইকবাল ভাই(ভাইয়ের সাথে কথা খুবই কম হয়েছে তাই জানা হয়নি তিনি কোথায় আছেন),কলেজ মেট এবং একসময়ের তারকা ব্লগার বিজ্ঞাপন নির্মাতা টিটো ভাই, সিসিবির বিখ্যাত ব্লগার রবিন ভাই, এবং আরো কিছু ভাই যাঁদের নাম মনে পড়ছেনা। একদিকে আড্ডা চলছে অন্য দিকে সামিয়াপু ব্যস্ত তরমুজ আর আনারস পরিবেশন করতে। খাওয়া দাওয়া জমে উঠল। ক্যাডেট বলে কথা। পেটপুরে তরমুজ আর আনারস খাওয়ার পর সবাই একটা করে ডাব খেল। এরমাঝে পরিবেশন করা হল জুনায়েদ ভাইয়ের সৌজন্যে দেয়া চকোলেট। আলসেমির কারনে যখন কেউই আম ছিলে খেতে অপারগ তখন নিজ থেকেই আম কাটার উদ্যোগ নিলাম। এরমধ্যে এল পিকনিকের সবচেয়ে আতঙ্কিত,উচ্ছসিত এবং সারাক্ষন নানা পাগলামীতে সময় টাকে ভরিয়ে রাখা আশিক। আশিক সম্পর্কে আলাদা একটা ব্লগ লেখা যাবে। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা বুঝবেন। যাহোক মীরাক্কেল এর মজা লুটলাম সবাই। এরকিছুক্ষন পর শুরু হল লাবলু ভাইয়ের ছেলে উদয় এবং ওর বন্ধুদের গীটার বাজিয়ে গাওয়া গান। বেশ ভালো গায় ছেলেটা। বোঝা যাচ্ছে একসময় তারকা খ্যাতি পেয়ে যাবে। উদয়ের গান শেষ হবার পরেই এলেন ক্যাডেট পরিবারের বিখ্যাত গায়ক মিফতাহ ভাই। আমরা সবাই তখন একটু বেশীই খুশী। রাতের আলো আঁধারের অপূর্ব পরিবেশে পল্লবীর আকাশে তখন ভাসছে চির অধরা, ভ্রান্তি আর প্রাপ্তি শুন্যের মত অপূর্ব কিছু সুর। সবাই কিছুক্ষনের জন্য এক অজানা জগতে চলে গিয়েছিল। গানের শেষে ভোজন পর্ব। এই পর্বের বর্ননা দেবোনা। তাহলে ফরেনার ভাই ব্রাদার ও যাঁরা আসতে পারেনি তাঁরা কষ্ট পাবেন। খাওয়াদাওয়া শেষ হল। কেক কাটা হল। এরপর ফিরবার পালা। লাবলু ভাইয়ের মহানুভবতা তখন আবার জেগে উঠলো। হাতে ধরিয়ে দিলেন পিকনিকের বেঁচে যাওয়া আম এবং খাবারের প্যাকেট। ক্যাডেট বলে কথা। সুযোগ হাতছাড়া করিনি। খেলাম নিয়েও এলাম। ভাবী এবং লাবলু ভাইয়ের মা এর আতিথেয়তা মুগ্ধই করলো আমাদের। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন গন্তব্যে যাত্রা শুরু করলাম তখন রাত এগারোটা। হঠাত্‍ মনে হল সবার মোবাইল নম্বর নিলেও বেখেয়ালে সামিয়াপুর নম্বরটাই নেয়া হয়নি। যাঁকে আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে দেখেছি। সবমিলিয়ে একটি সফল পিকনিক পেলাম। আরেকটা কথা বলতেই হয় এবারের পিকনিকের স্পন্সর ছিলেন ফয়েজ ভাই এবং লাবলু ভাই। আমাদের সবার পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য হাততালি :clap: :clap:

১,৯২৪ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “সিসিবির পিকনিক এবং আমরা কয়েকটি প্রান”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    জাহিদ ভাই কেডা ? বিশটা ফ্রন্ট রোল, হারি আপ  x-(

    থাকতে না পারে এমনিতেই মন খারাপ . নাহ থাক ব্লগ লেখার জন্য ফ্রন্ট রোল মাফ করে দিলাম  B-)


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. রায়েদ (২০০২-২০০৮)

    আমার মনে হই তুমি জামান ভাইয়ের রুমের কথা বলছিলে।
    আর মাশরুর ভাই না :just: মাশরুফ ভাই।

    আমাকে চিন্তিত দেখলা কখন। আমিতো খোশমেজাজেই ছিলাম।

    আনারসটা খুবই ভাল ছিল। ভাগ্যিস আনারসে বিচি থাকেনা নাইলেতো খাইতেই পারতাম না।

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    বারান্দার বাইরে একটুকরো আকাশের হাতছানি আর নির্ভেজাল বাতাস এসে যখন গায়ে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে...

    তুই কবেকার পিকনিকের কথা কস? কালকে তো গরমে জান ভাজা ভাজা হয়ে যাচ্ছিল... 🙁
    তোর উদাসীগিরি আর গেল না... 😡

    তবে অনেক দিন পর অনেকের সাথে দেখা হল। 😀
    যারা সময়-সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আসলেন না, তাদের প্রতি 'ছিঃ' ছুড়ে দিলাম... x-(


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. ফরিদ (৯৫-০১)

    আমার কপালের সাথে সিসিবি'র আজীবন শত্রুতা। :bash: :bash:
    GTG এর ২/৩ দিন আগেই কেন জানি অফিসের ঢাকার বাইরে কাজ পড়ে যায় আর আমাকে জানানো হইয় যে আপনি n সংখ্যক দিন ঢাকার বাইরে থাকছেন। :chup: :chup:
    যাইহোক সবার আনন্দ দেখে আমিও আনন্দিত 😀 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  5. সামিয়া (৯৯-০৫)

    গরু...জাহিদ ভাই কি?? লঙ্গাপ। আর জাহিদ ভাইয়ের রুম সুন্দর?? লাবলু ভাই শুনলে উল্টায়া দৌড় দেয়াবে...
    আর পিকনিক পোস্টের প্রথম নম্বরটাই আমার।আর আমার সম্বন্ধে ভালু ভালু কথা লিখাতে অনেক ধন্যবাদ 😀 । যদিও আসলে কাজ তোর ভাইয়া করসে, আমি শুধু কষ্ট করে ঘামসি 😀

    জবাব দিন
  6. শাওন (৯৫-০১)

    রাব্বি,

    ইমগুর এর লিঙ্ক ডাউন থাকায় ছুবি আপ করতে পারছিনা...তুই আমার ফেসবুক থেকে ছুবি নিয়ে আপ কর...।


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  7. আশিক (২০০৭-২০১১)

    এইডা কি রাব্বি ভাই...
    আমার বাক্সো ফাটান কানো মিয়া???
    জাস্ট :gulli2: :gulli2: :gulli: :gulli: :gulli2: :gulli2: করুম কিন্তু।।
    :gulti:
    আর হমমমমম অ্যাযেকটিভ গুলোর মধধে জাদুকর :ahem: :ahem: :ahem: :hatsoff: :hatsoff: আশিকো তো বলতে পারতেন পাগলা না বইলা মিয়া...। :(( :(( :(( :((
    আর সামিয়া ম্যাডাম যে এতো ভালো আসলেই ভাবি না ...।
    আন্নিসা আপুর জ্ঞান সরি গান শুনার ইছসা আছিল ।।
    অইল না 🙁
    সামিয়া আপুর অটোগ্রাফ নিতেও ভুলে গেছিলাম ।
    আর আগে যদি জানতাম বাসা খুজতে এত লাতে হবে তাইলে তো আমি আমার উড়োসাইকেল খানা নিয়ে আসতাম ...।
    পুরাই অচাম পাইলট আমি ওটার ।
    লাস্টে সেকা খাওয়া আসিফের একটা গান এডিট করে শোনাই...।।
    "বুকের জমাআআআআনো বেতা ,
    কান্নার নোনা জলে...
    রাব্বি ভাই ফাটাল আমার বওওওঅক্স...।।
    অন্নের প্রশাংশা করে...
    লিখে দিলো ব্লওওওওওগ......।।
    আমার মাথায় ফাটালো বাআআআআশ...।।
    ও রাব্বি ভাই,
    ও রাব্বি ভাআআই
    তুমি পওওওওচা...
    ও রাব্বি ভাই,
    ও রাব্বি ভাআআই
    তুমি পওওওওচা...
    ও রাব্বি ভাই,
    ও রাব্বি ভাআআই
    তুমি পওওওওচা...
    :awesome: :awesome: :awesome: :awesome:
    :gulli: :gulli2:
    :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
    পানিশমেন্ট আগেই ক্যারি করতেছি ...
    দেয়ার চাঞ্চ দিতাম না...। 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।