পিসিসি’র লিজেন্ডসমূহঃপর্ব ১

ফজলু ভাই(হসপিটাল অ্যাটেন্ডেন্ট)

উনার মত চাপাবাজ লোক আমি জীবনে খুব কমই  দেখেছি,তার কয়েকটা নমুনাঃ

চাপা  ১-“জানো,ক্যাডেট কলেজ হওয়ার আগে এইখানে বিশাল জঙ্গল ছিলো।বাঘ,সিংহ,ডাইনোসর,আরো অনেক কিছু ছিলো এইখানে।ধরে ধরে নিয়ে আফ্রিকায় ছেড়ে দিয়ে আসত এলাকার লোকজন।”

চাপা ২-মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবার কপালে গুলি করেছিলো পাকিস্তানিরা,উনি টের পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলেছিলেন,তাই ভিতরে না ঢুকে চামড়ার পাশ দিয়ে চলে গেছে।ওই জায়গায় এখন আর চুল গজায় না।আরেকটা গুলি খেয়েছিলেন পেটে।ডাক্তার অপারেশান করেও বের করতে পারেনি,পরে পায়খানার সাথে বের হয়ে গিয়েছিলো।

পুস্পাঃ

ক্লাস এইটে থাকতে রুমে বসে প্ল্যানচেট করার চেষ্টা করছিলাম কয়েকজন।এক ভাই এসে ঢুকলেন।ঝাড়ির বদলে নিজেও আমাদের সাথে প্ল্যানচেটে অংশ নিলেন,আর শোনালেন এক মৃত মহিলার কথা।তার নাম পুস্পা।৭১এ নাকি আমাদের কলেজে(তৎকালীন রেসিডেনশিয়াল স্কুলে) ক্যাম্প করেছিলো পাকিস্তানিরা।তারাই পুস্পাকে ধরে এনে রেপ ও হত্যা করেছিলো।এখনো নাকি তার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় কলেজে।৬ বছরে যদিও তার নাম-নিশানা খুঁজে পাইনি একবারও।এরপরেও প্রথম দুই বছর গভীর রাতে টয়লেটে যাওয়ার সময় বারবার এই রমণীর ভয়ে কেঁপে উঠেছি।

হাউজ বেয়ারা,হাসমত আলিঃ

ইনি একজন বিখ্যাত কবি,তবে তার খ্যাতি ভাসানী হাউজেই সীমাবদ্ধ।ভাই যেকোনো বিষয়ে,অল্প কিছু জানা থাকলেও তা নিয়ে দ্রুত কবিতা লিখে ফেলতে পারতেন।হাউজ চ্যাম্পিয়নশীপ,বিভিন্ন ব্যাচের ফেয়ারওয়েল,ইত্যাদি অনুষ্ঠানে তার কবিতা সবসময়ই জায়গা করে নিত।এখনো কানে ভাসে তার লাজুক গলা,

রূপের বড়াই

হাসমত(বাকিটুকু ভুলে গেছি)

অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরীয়ান,ইদ্রিস আলিঃ

ইনি শুধু পাবনারই নন,ক্যাডেট কলেজসমূহেরই একজন লিজেন্ড।উনাকে নিয়ে সেনাবার্তাতে একটা আর্টিকেল লেখা হয়েছিলো।ইনি পিসিসি’র ১ম ব্যাচ থেকে শেষ ব্যাচ পর্যন্ত সবার নাম,এবং প্রথম ২৫ ব্যাচের সবার কর্মস্থল কোথায়,এটা মুখস্ত করেছেন।কলেজ থেকে এনটিভির একটা প্রোগ্রামে একবার ঢাকা এসেছিলাম।সাথে উনাকেও পাঠানো হয়েছিলো।কোন অফিসের সামনে আসলেই উনি বলে দিতেন,কোথায় কোন ব্যাচের কে কাজ করে।এর বাইরে ইনি মাসিক “ফোল্ডার” পত্রিকার একজন সম্পাদক,মালিক,প্রকাশক।এই পত্রিকার বেশিরভাগ লেখকই পিসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারী-ক্যাডেট।কলেজ লাইব্রেরীতে প্রথম কম্পিউটার দেওয়ার পরে আমরা লাইব্রেরী ক্লাসে দৌড়ে কম্পিউটারের উদ্দেশ্যে ছুটতাম,লুকায়ে আনা নীল ছবি দেখার জন্য,অথবা “মোস্তফা” খেলার জন্য।এরকম একটা দিনে,উনি একটা এপিক উক্তি করেছিলেন।

“কম্পিউটারে বসার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসো,নাহলে ভাইরাস ঢুকে যাবে।”

(চলবে)

 

১,৩৬৮ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “পিসিসি’র লিজেন্ডসমূহঃপর্ব ১”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    “কম্পিউটারে বসার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসো,নাহলে ভাইরাস ঢুকে যাবে।”

    :boss: :boss: :boss:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. ইমরান (১৯৯৯-২০০৫)

    হা হা হা, হাশমত ভাই আমাদের সময়ে সিরাজী হাউসে ছিলো, উনার কবিতা লেখার প্রতিভা আমাদের ক্লাস সেভান এইটে অনেক পেইন দিয়েছে... আর ফজলু ভাইয়ের কথাতো আলাদা। বস আমাদের সকল নিষিদ্ধ বস্তুর সাপ্লাইয়ার ছিলো।


    রঞ্জনা আমি আর আসবো না...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইমরান (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।