ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০৫

ভালোবাসার বন্ধুত্ব- [১] [২] [৩] [৪]
২১।
অনীতাকে বসিয়ে রেখে নীল ছুটলো সেই মেয়ের পেছনে পেছনে। এই প্রথম সে মেয়েটিকে ভালো করে দেখার সুযোগ পেলো। অদ্ভুত এক মায়া যেনো মেয়েটির চেহারায়। নীল মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো। মেয়েটি এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যেতে থাকলো আর নীল শুধু পেছনে পেছনে হাটতে লাগলো। মনে হয় সারা জীবন যদি তাকে সামনে বসে থাকতো আর নীল চেয়ে থাকতে পারতো তার দিকে, তাহলে মনে হয় আর কিছু চাইতো না।
এভাবে কতোক্ষন কেটেছে বলতে পারবে না। হঠাত দেখলো মেয়েটির কিছু ফ্রেন্ড এসে ওকে ডাকতে লাগলো। ওরা গেটের দিয়ে বের হয়ে গেলো। যাবার আগে শুধু বলতে শুনলো কালকে আবার আসবে। আসলে নীল ভেবেছিলো মেয়েটির সাথে দেখা হলে অনেক কিছুই বলবে কিন্তু দেখা হবার পর সে কিছুই বলতে পারলো না।
সে ফিরে এলো অনীতার কাছে।
“কি ব্যাপার আমাকে বসিয়ে রেখে কই গেলেন?”
“আরে আমার এক পুরানো ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেলো, ওর সাথে কথা বলতে বলতে একটু দেরি হয়ে গেলো”
“হ্যা চলেন বাসায় যেতে হবে অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
“চলো”।
২২।
রাতের বেলায় নীল শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো মেয়েটির কথা। আসলে সে নিজেও জানে না কখন যেনো ওর চিন্তায় মেয়েটি এসে হাজির হয়েছে। ওর এমন লাগছে কেনো মেয়েটির কথা ভাবতেই। সে কি প্রেমে পড়ে গেছে? তা কেনো হবে? অনেক মেয়ের সাথেই তো দেখা হয় কথা হয়। কখনো তো এমন হয় না।আর এর সাথে কথা না হয়েই এমন কেনো?
চিন্তা করতে করতে শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্তে আসলো যে, সে ওকে পছন্দ করে ফেলেছে। আর সিদ্ধান্ত টা নেয়ার পর এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলো নীল।
সকাল বেলায় ঘুম ভাংতেই দেখে তমাল বসে আছে ওর রুম এ।
“কিরে তুই কখন এসেছিস?”
“এই তো কিছুখন। তোর ঘুম ভাংগার অপেক্ষা করতেছিলাম”
“তারপর খবর কি?”
“তোর খবর বল, ছুটিতে আসার পর থেকেই তো তুই হাওয়া। অনীতার সাথে খুব সময় কাটাচ্ছিস না?”
“যাক ভালোই হলো তুই এসেছিস।তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
“এনিথিং সিরিয়াস?তুই কি অনীতাকে প্রোপোজ করেছিস নাকি ও করেছে?”
“দোস্ত আমার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে”
“জানি তো, অনীতা।”
“না অনীতা না। অন্য কেউ”
“মানে কি কস? কে?নাম কি ? কোথায় পাইলি?”
“নাম জানি না। পাই নাই এখনো। ২/৩ বার দেখছি।”
“মানে?”
নীল আস্তে আস্তে খুলে বললো সব। সব শুনে তমাল বললো “জিনিষটা একটু বেশি পাগলামি হয়ে যাচ্ছেনা?”
নীলঃ হলেও কিছু করার নাই।আমি মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলেছি।
তমালঃ চিন্তা করে দেখ, তুই চিনিস না, কিছুই জানিস না।
নীলঃ চিন্তা করেই বলছি।
এই সময় হাসান আর সোহেল ও আসলো। সব শুনে ওরাও তমালের কথাটাই বললো।
হাসানঃ এখন তাহলে খুজে বের করবি কিভাবে?
নীলঃ আজকে আমি আবার যাবো বই মেলায় দেখি পাই কি না।
হাসানঃ তোর কি মনে হয় এভাবে তুই খুজে পাবি। এটা তো কোনো ওয়ে না।
নীলঃ এছাড়া আর কোনো বুদ্ধি দিতে পারবি?
হাসানঃ না নাই। কিন্তু আজকে কিভাবে যাবি? বিকালে তো আমাদের খেলা।
নীলঃ দোস্ত আমি খেলবোনা। আমাকে যেতেই হবে।
সোহেলঃ ঠিক আছে যা। এই ব্যাপারে জোর করবো না।
নীলঃ মাইন্ড করিস না তোরা। বুঝতেই পারতেছিস।
তমালঃ ঠিক আছে এখন আমরা যাই।
২৩।
বিকালে নীল আবার গেলো বই মেলায় অনেকক্ষন ঘুরতে ঘুরতে বোর হয়ে গেলো। তাও কোথাও পেলো না।অনেকখন পর হতাশ হয়ে যখন বের হয়ে আসছিলো তখন দেখলো ওকে।আরেকটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ইস আজকে মনে হয় আরো সুন্দর লাগছে। নীল অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো। যত দেখলো ততই আরো দেখার শাধ জাগে। কি সুন্দর করে কথার ফাকে দুই আংগুল দিয়ে চোখের সাম্নের কয়েকটি চুলকে গুজে দিলো কানের পিছনে।
নীলের যখন এই মুগ্ধতা ভাংলো ততখনে মেয়েটি রিক্সায় উঠে গিয়েছে চলে যাবার জন্য।
ইস মিস হয়ে যাচ্ছে। আবার কই পাবে তাকে? কি করবে নীল?
মেয়েটি চলে যেতে যেতে নীল হঠাত ছুটে গেলো সেই মেয়েটির দিকে যে কথা বলছিলো।
“আচ্ছা আপনার সাথে যেই মেয়েটি কথা বলছিলো সে কি প্রিয়া, ওমেন্স কলেজে পড়ে?”
“কেনো বলুন ত?”
“না ওকে আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ডের মতো লাগলো। ঠিক বুজে উঠার আগেই চলে গেলো।”
“না ওর নাম নীলিমা, সিটি কলেজের”
“ওহ সরি তাহলে আমার ভুল হয়েছে। ধন্যবাদ”
যাক, নাম আর কলেজের নাম তো জানা গেলো। বাকি টাও বের করে ফেলা যাবে।
২৪।
“কি বললি মেয়েটির নাম নীলিমা?” সন্ধার পর সোহেলের বাসায় এসে ওকে খুলে বলতেই নাম শুনে ও চমকিয়ে উঠলো।
নীলঃ কেন তোর কোনো প্রব্লেম আছে এই নাম এ?
সোহেলঃ আমার না। একটি জিনিষ যেনো না হয় সেই দোয়া করছি।
নীলঃ কি জিনিষ?
সোহেলঃ দোস্ত, হাসান যাকে পছন্দ করে ওর নামও কিন্তু নীলিমা।
নীলঃ কি বলিস? (আর কিছু বলার মতো খুজে পেলো না)
সোহেলঃ দোয়া করি এই মেয়ে যেনো সেই মেয়ে না হয়।
নীল কি বলবে খুজে পাচ্ছে না। অবশেষে বললোঃ “তুই কালকে আমার সাথে যাবি”
সোহেলঃ কোথায়?
নীলঃ সিটি কলেজে। দেখে বলবি এই মেয়ে হাসানের সেই মেয়ে কি না। আর এখনি হাসান কে কিছু বলার দরকার নাই।
সোহেলঃ দোয়া করি তাই যেনো হয়। নিলীমা যেনো দুই জন থাকে এই শহরে।
২৫।
পরদিন নীল আর সোহেল সকাল থেকে এসে দাড়ালো সিটি কলেজের সামনে। কিন্তু যাকে খুজতেছে তাকে পাচ্ছে না।শেষ পর্যন্ত হঠাত নীলের চোখ পড়লো নিলীমার উপর।
নীলঃ সোহেল ওইযে দেখ
সোহেল দেখে অনেখন কিছু বলার ভাষা পেলো না।
শেষ পর্যন্ত আস্তে করে বললো” দোস্ত এই মেয়েকেই হাসান পছন্দ করে”
নীলের মনে হলো পায়ের নীচে থেকে মাটি সরে গেলো। এখন সে কি করবে? একদিকে তার প্রানপ্রিয় বন্ধু হাসান আরেকদিকে তার পছন্দ যাকে সে আসলেই অনেক পছন্দ করে ফেলেছে।
নীলের চিন্তা শক্তি ঘোলা হয়ে আসে।
(চলবে…)

১,৮৩৯ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০৫”

  1. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    দোস্ত, হাসান যাকে পছন্দ করে ওর নামও কিন্তু নীলিমা।

    নাআআআআ... কেন আমার চিন্তার সাথে মিলে গেল?? :((
    যখন খেয়াল করসিলাম যে আপ্নে ঐ মেয়েটার নাম-ধাম কিছু দেন্নাই তখনি টের পাইসিলাম এরকম কিছু একটা। ধুর কেন ডিফারেন্ট হইলনা??? :bash:

    অফটপিকঃ ভাইয়া আপনার সাথে তো আমার মনের সেইরা'ম মিল!! :hug:

    জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    তার প্রানপ্রিয় বন্ধু হাসান আরেকদিকে তার পছন্দ যাকে সে আসলেই অনেক পছন্দ করে ফেলেছে।

    আমি হলে বন্ধুরে প্রেফার করতাম। পৃথিবীর সবচেয়ে ফাটাফাটি রাজকন্যা আইলেও আমি বন্ধুর স্বার্থে ছাইড়া দিতাম।

    আরো কারণ হইল সে আগে পছন্দ করসে। আমি লেট। আমারই তো 'ইডি' খাওয়া লাগবো।

    জবাব দিন
  3. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    ভাবছিলাম পরের পর্বটা পড়ে একেবারে কমেন্ট করবো। ৩ দিন ছুটি যাছে, পোলাপাইন লেখে ফাটায়ে ফেলবে ভাবছিলাম। তুমি পরের পর্বটা দিলে তখন কাহিনী সম্পর্কে কিছু আন্দাজ করার চেষ্টা করব। আপাতত -

    এই প্রথম সে মেয়েটিকে ভালো করে দেখার সুযোগ পেলো। অদ্ভুত এক মায়া যেনো মেয়েটির চেহারায়। নীল মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো। মেয়েটি এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যেতে থাকলো আর নীল শুধু পেছনে পেছনে হাটতে লাগলো।

    এইটাতে দেখ, তুমি "লো" দিয়ে শেষ হয় এই রকম পর পর অনেকগুলো বাক্য ব্যবহার করেছো। তুমি যদি এই উদ্ধৃতিটা সাধু ভাষাতে বদল করে কয়েক বার পড়ে দেখো, তোমার কাছে মনে হবে তুমি পুলিশের জবানবন্দি রিপোর্ট পড়ছ। আবার -

    বিকালে নীল আবার গেলো বই মেলায় অনেকক্ষন ঘুরতে ঘুরতে বোর হয়ে গেলো। তাও কোথাও পেলো না।অনেকখন পর হতাশ হয়ে যখন বের হয়ে আসছিলো তখন দেখলো ওকে।আরেকটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ইস আজকে মনে হয় আরো সুন্দর লাগছে। নীল অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো। যত দেখলো ততই আরো দেখার শাধ জাগে। কি সুন্দর করে কথার ফাকে দুই আংগুল দিয়ে চোখের সাম্নের কয়েকটি চুলকে গুজে দিলো কানের পিছনে।
    নীলের যখন এই মুগ্ধতা ভাংলো ততখনে মেয়েটি রিক্সায় উঠে গিয়েছে চলে যাবার জন্য।

    এখানে দেখো তুমি তোমার ক্রিয়াপদের স্টাইল বার বার বদল করেছো। তাই প্যারাটা পড়তে ওই মেয়েটার মতই কিউট হয়েছে।

    তাড়াতাড়ি পরের পর্ব লেখো। বেচারী নীল ...... অবশ্য আমি এখনও ঈর্ষা বোধ করছি।

    জবাব দিন
  4. সামি হক (৯০-৯৬)

    লিখাটায় একটু নাটকীয়তা আসতে পারে না? সবাই আগে থেকে যদি বুঝে ফেলে যে পরে কি হবে তো কাহিনীটা তখন অনেক ম্লান হয়ে যায়। তোমার পরীক্ষাগুলো ভালো হোক, ০৬ এর অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কুচ্ছিত হাঁসের ছানা (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।