মাসুদ ভাইয়ের উপন্যাস

আমাদের কলেজের মাসুদ ভাই (৮৬-৯২) বইমেলায় একটা বই বের করছেন। উনার বই এর কথাটা সিসিবি এর জনগন কে জানানোর জন্য উনার কথা গুলা শেয়ার করতে অনুরোধ করেছেন। তাই নিচের কথাগুলা শেয়ার করা।

বাংলাদেশের প্রচলিত সামাজিক স্তর বিন্যাসের অনেকটা বাইরে হাওরাঞ্চলের সামাজিক স্তর বিন্যাস। সমাজ কাঠামোটাও অনেকটাই ভিন্ন। ভিন্ন মানুষের সুখ-দুঃখ , আনন্দ-বেদনা, আশা-ভরসা আর স্বপ্নের প্রেক্ষাপট। একবিংশ শতাব্দিতে এসেও থমকে যাই; যখন দেখি, হাওরে এখনও এমন মানুষ আছে যারা কখনও ট্রেন দেখেনি, উচুঁ দালান দেখেনি, যাদের দেহ কখনও কোন এমবিবিএস পাশ ডাক্তারের স্পর্শ পায়নি। কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাস আর নিয়ন্ত্রণহীন আদিম প্রবৃত্তি তাদের পরিচালিত করে মধ্যযুগের ধরনে।

হেলাফেলায় ছিটিয়ে দেয়া বীজ ফুরে মণের পর মণ ধানের জন্ম আর নৌকায় মাছেদের লাফিয়ে ওঠা দেখে একসময় কিশোরগঞ্জ কুমিল্লা জামালপুর টাঙ্গাইল থেকে এসে বসত গড়া মানুষেরা আজ তিন প্রজন্ম পার করেও হাওরের আদি অধিবাসীদের চোখে শুধুই ’আবাদি’। তাদের মধ্যকার মানসিক দূরত্বের অবসান কবে হবে কেউ জানে না। পেশা বদল করে মাছ ধরা পেশায় ঝুঁকে পড়া মুসলমানদের ’মাইমল’ নামের নতুন পরিচয় কিংবা নৌকার যাযাবর জীবন ত্যাগ করে ডাঙ্গায় বাস করতে আসা মানুষদের ’গাইন’ উপাধি দিয়ে সমাজ কতৃক অগ্রাহ্য করার প্রবণতা প্রতিনিয়ত তৈরী করছে নতুন নতুন দ্বন্দ্ব আর সামাজিক মেরুকরণ। সুখের আশায় এক সমাজ ছেড়ে অন্য সমাজে ছুটে চলা মানুষেরা সুখের নাগাল কি সত্যিই পায়? না-কি হাহাকার নিয়ে কাটিয়ে দিতে হয় জীবন?

জমিদারি প্রথার অবসান হলেও সে ব্যবস্থার ছায়া হয়ে যেন এখনও হাওরের ওয়াটার লর্ডরা বেঁচে আছে। বাংলাদেশের অজ পাঁড়া গাঁয়ের ছেলে মেয়েরাও যখন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শিখে ফেলেছে; তখন হাওরাঞ্চলের বালকেরা স্বপ্ন দেখে ওয়াটার লর্ড হয়ে বিল থেকে বিলে দাপিয়ে বেড়াবার যে স্বপ্নের বেশিরভাগেরই পরিসমাপ্তি ঘটে মাটি পাথরের সাথে বস্তাবন্দি হয়ে হাওরে ডুবে মরায় কিংবা বর্শা বা বল্লমের মত আদিম কোন অস্ত্রের ক্ষত শরীরে বয়ে বেড়াবার মধ্য দিয়ে। যে মৎস্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে সারা হাওর জুড়ে বছরের পর বছর চলে নিষ্ঠুরতা আর রক্তের খেলাÑ সেই মাছেদের আধার হওয়াই যেন হাওরের মানুষের নিয়তি।

বাংলাদেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ জুড়ে যে হাওরাঞ্চল; কেমন তার শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা; কেমন করে সেখানে জন্ম নেয় ওয়াটার লর্ড, কেমন করে অপমৃত্যু ঘটে মানুষের এক একটি স্বপ্নের তা আজো আমাদের কাছে এক অজানা অধ্যায়। পত্রিকার পাতায় রামসার সাইট হয়ে যওয়া টাঙ্গুয়ার হাওরের খবরে আমরা উদ্বেলিত হই বটে কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের মানুষদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন থেকে অধিকারহীনতা পরবর্তি খবর আমরা রাখি না। রাখতে চাই না। অথবা আমদের জানতে দেয়া হয় না। খন্ডিত খবর শহুরে মানুষদের অলীক ভাবনায় ডুবিয়ে রাখে মাত্র। প্রকৃতির গলায় স্বেচ্ছায় এবং নিজ দায়িত্বে ঝুলে থাকা হাওরের এইসব মানুষদের বেঁচে থাকার কলা-কৌশল লেখক তুলে এনেছেন সুনিপুনভাবে।

লেখক হাওরাঞ্চলে দীর্ঘদিন সশরীরে অবস্থান করেছেন। দিনের পর দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন হাওরের এপ্র্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। প্রত্যন্ত এবং দুর্গম অঞ্চলের মানুষদের সাথে মিশেছেন একাকার হয়ে। মানুষের জীবনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিঢ়ভাবে। কৌতুহল থেকে চেষ্টা করেছেন জানতে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নতুন-পুরাতন বই ঘেটেছেন বিস্তর। প্রায় চার বছর ধরে বুকে লালন করা খন্ড খন্ড অভিজ্ঞতা আর সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে লিখেছেন তার প্রথম উপন্যাস ’দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে’।

৭৫১ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “মাসুদ ভাইয়ের উপন্যাস”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মাসউদ ভাইকে অভিনন্দন এবং 'দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে' এর জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা... :clap:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাশেদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।