কল সেন্টার কড়চা-০১

(ভুমিকাঃ আমি যখন ২০০৫ সালে গ্রামীন ফোনে জয়েন করি ইন্টার্নি করার জন্য, আমার টাস্ক ছিলো কল সেন্টার এর জন্য একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরী করা। তখন কিছুদিন কল ও ধরতে হয়েছে। আর যেহেতু এখনো কল সেন্টার এর সার্ভার আমার দায়িত্তে এবং আমার আশে পাশে সবাই কল ধরে তাই অনেক ধরনের বিচিত্র কাহিনি শুনি এবং দেখি প্রতিদিন। সিরিয়াস, কল সেন্টার এ থাকলে মানুষ যে কতো বিচিত্র ধরনের হতে পারে তার ধারনা হয়। মানুষ যে কতো বিচিত্র। সেই সব ঘটনার কিছু এই লেখার মাধ্যমে বলার চেষ্টা থাকবে।)
ঘটনা-১
তখন ডিজুস এর রাত ১০ টার পর ফ্রি এই ধরনের কিছু একটা অফার চলছিলো। তো এক লোক কল সেন্টার এ ফোন করলো। একজন কাস্টোমার ম্যানেজার কল ধরলো।
কাস্টোমারঃ ভাই, আপনারা তো নতুন একটা অফার দিয়েছেন ডিজুস এর।
ম্যানেজারঃ জি স্যার।
কাস্টোমারঃভাই অফার টাতো রাত ১০ টা থেকে, তাই না?
ম্যানেজারঃজি
কাস্টোমারঃভাই আমার জন্য অফার টা কি একটু বদলানো যায়?
ম্যানেজারঃকেনো বলেন তো?
কাস্টোমারঃভাই একটু বিশেষ দরকার।
ম্যানেজারঃস্যার আপনি যদি ব্যাপারটা কি বলেন, তাহলে আমি আপনাকে হয়তো হেল্প করতে পারবো।
কাস্টোমারঃব্যাপারটা হলো, আমি বিবাহিত।
ম্যানেজারঃতাতে সমস্যা কোথায়?
কাস্টোমারঃভাই, আমি পরকীয়া প্রেম করি। আমার আবার ১০ টায় বাসায় ফিরতে হয়। তাই আমার জন্য যদি অফারটা ২ ঘন্টা আগিয়ে দিতেন, তাহলে সুবিধা হতো, এই আর কি।

ঘটনা-২
আমাদের কিছুদিন পর আমাদের এক ছোট ভাই জয়েন করলো। খুব ভালো ছেলে কিন্তু একটূ পাগলাটে ধরনের। সারাদিন দেখতাম কাজের ফাকে এক সেকেন্ড ফ্রি টাইম পেলেও গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা (আসলে শুনে মনে হয় ঝগড়া ) বলছে। ওকে একদিন বললাম, “কি তোমার গার্ল ফ্রেন্ড ও কি তোমার মতো পাগলাটে নাকি” ওর উত্তর “রবিন ভাই, আমি আর কি ও আমার চেয়েও”
তার প্রমান কিছুদিন পর পেলাম। একদিন রাতে আমি অফিসে গেলাম। রাতে থাকতে হবে। কারন সার্ভার এ একটা লোড টেস্ট করতে হবে। তো কাজ করতেছি। সেই ছেলে কে দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করতেছে। “কি ব্যাপার আজকে ফোন করো না গার্ল ফ্রেড কে”। “না রবিন ভাই, ঝগড়া হইসে, ফোন বন্ধ করে রাখছি”।
ভালো কথা। একটূ পরে শুনি এক মেয়ে হটলাইন এ কান্না কাটি করতেছে। বেশি কান দিলাম না। কারন ডেইলী এরকম বহুত কাহিনি শুনি।
আসল ঘটনা হলো, ওই ছেলের গার্ল ফ্রেন্ড ফোন বন্ধ পেয়ে হট লাইন এ ফোন দিয়ে কান্না কাটি করতেছে।
আহারে, কি প্রেম
ঘটনা-৩
সেদিন আমি কল ধরতেছি। তাও আমার ওইদিন পিএসটিএন এ ডিউটি। (কল সেন্টার এ ২ ধরনের কল আসে। যারা মোবাইল থেকে করে, আর যারা টিএনটি থেকে করে।পিএসটিএন হলো যারা টিএনটি বা অন্য অপারেটর থেকে করে। খুব এ পেইন। কারন টিএনটি থেকে কল করলে কাস্টোমার ফোন রাখতেই চায় না। আজাইরা প্যাচাল চলতে থাকে।)
সেদিন আমি আর অনেক সিনিয়র এক ভাইয়া পিএসটিএন এ। তো কল ধরতেছি। হঠাত সেই ভাইয়া ফ্লোর এ দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন “রবিন আপনি কোথায় বসছেন?” আমি দাঁড়িয়ে বললাম “কি হয়েছে ভাইয়া”।
ভাইয়াঃ (খুব সিরিয়াস হয়ে)“আপনি কি একটূ আগে একজন মেয়ের সাথে কথা বলছেন?”
আমিঃ ভাইয়া মনে নাই, অনেকের সাথেই তো বলেছি।
ভাইয়াঃ কিন্তু একজন তো আপনার নাম বল্লো। আপনি কি বলছেন?
আমিঃ ভাইয়া কি বলছে?
ভাইয়াঃ আগে আপনি বলেন কি বলছেন?
আমিঃ ভাইয়া মনে নাই। আপনাকে কি বলছে?
ভাইয়াঃ আমার সাথে কথাই বলে নাই। আপনার সাথেই কথা বলবে। আপনি একটা কল ব্যাক করেন।
তো আমি সেই মেয়েকে কল ব্যাক করলাম।
আমিঃ আপনি শুধু আমার সাথেই কথা বলতে চাছেন। কি ব্যাপার?
মেয়েঃ না ভাইয়া, আসলে আপনার কথা মতো আমার প্রব্লেম সল্ভ হইছে। তাই ভাব্লাম আপনাকে সরাসরি ধন্যবাদ জানাই।আপনার ফোন নং টা দিবেন।
আমিঃ সরি আপু অফিসের নিয়মে দিতে পারছিনা। (আহারে)

২,২৮১ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “কল সেন্টার কড়চা-০১”

মওন্তব্য করুন : শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।