ভালোবাসার বন্ধুত্ব- ১৫

ভালোবাসার বন্ধুত্ব- [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬] [৭] [৮] [৯] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪]

৬২।
পরের কয়েকদিন বেশ কয়েকবারই দেখা করলো নীল আর অনীতা। বেশ ঘুরাঘুরিও করলো।
-আচ্ছা তোর সাথে ওইদিন যে ছেলেটাকে দেখলাম, কেরে?
একদিন হটাত অনীতার এক ফ্রেন্ড ওকে বললো।
-কে ? ওইদিন লাইব্রেরীর সামনে যে ছিলো? উনি নীল ভাই। আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ডএর বড় ভাই।
-ও আজকাল ফ্রেন্ডদের বড় ভাইদের সাথে ভালোই ঘোরাঘুরি চলছে।
-তোর কোনো প্রব্লেম?
-নাহ, আমার আর কি প্রব্লেম? তোর মতো কপাল তো আর আমার নাই।
অনীতা ভাবতে লাগলো নীলের কথা। কতোদিন পর নীল ভাইএর সাথে দেখা। অথচ মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ওইযে বইমেলায় একসাথে গিয়েছিলো। ও এখনো জানে না, কিছুদিন পর হঠাত যেনো নীলের কি হয়েছিলো। ওকে এড়িয়ে চলতে লাগলো। তারপর তো ওরাও চলে আসলো এই শহরে। কিন্তু ও ভুলতে পারে নাই নীলকে। পারার কথাও না। প্রথম পছন্দ বলে কথা। কিন্তু নীল তখন যে কেনো বুঝতে পেরেও ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছিলো কে জানে। এমন তো না উনার এফ্যায়ার ছিলো। অনীতা যতোটুকু খবর নিয়েছিলো উনার এ ধরনের কিছু ছিলো না। এখনো আছে কি না কে জানে, কিন্তু থাকলে নিশ্চয় তার সাথে এইভাবে ঘুরতো না।যাক, খারাপ কি? ঘুরতেছে, আড্ডা দিচ্ছে, সময় পার হচ্ছে, লাভ কি বেশি চিন্তা করে?
৬৩।
আচ্ছা নীল ভাই এর মাঝে কি তুমি কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছো?
হঠাত করে অয়নকে ফারিয়া বললো।
-কি রকম?
-ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবো না। কিন্তু কিছু একটা।
-হুমম, আমিও লক্ষ্য করেছি। ইদানিং ও বেশি রকম বাস্তববাদী হবার চেষ্টা করছে।
-কি রকম?
– যেমন জীবন নিয়ে সিরিয়াস রকমের চিন্তা ভাবনা, কিভাবে খুব দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় সেই উপায় খোজা, নিজের একটা ফার্ম শুরু করার প্ল্যান রেডি করা এইসব আর কি।
-তা ঠিক আছে। এইগুলা সবারই চিন্তা করতে হবে। কিন্তু এইগুলা চিন্তা করতে গিয়ে নিজেকে বদলিয়ে ফেলা তো উচিত না। আর ইদানিং মনে হয় উনি নীলিমাকেও তেমন সময় দিচ্ছে না। নীলিমাকে কেমন জানি মনমরা মনে হয়।
-হ্যা এটা আমিও খেয়াল করেছি। কি জানি, হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর প্রথম পছন্দ বলে কথা।
-ঠিক হলেই ভালো। না হলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে।
-দেখা যাক।

সেদিন রাতে বাসায় ফিরে অয়ন দেখে নীল যেনো কি নিয়ে খুব ব্যস্ত।
-কিরে কি করিস?
-দোস্ত, অনেক চিন্তা করে দেখলাম, এখন থেকেই কিছু শুরু না করলে পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
-কি করতে চাস?
-আমার ইচ্ছা একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম দেয়ার। এখন থেকে যদি শুরু করি আমার মনে হয় কয়েক বছরের মাঝে আমরা একটা পজিশনে চলে আস্তে পারবো। আমার এক বড় ভাই আছেন মিডিয়া লাইনে। উনিও বলেছেন যা হেল্প লাগে করবেন।
-আইডিয়া খারাপ না। তবে এটা করতে গেলে এখন অনেক সময় দিতে হবে? তুই কি পারবি এই শেষের দিকে এসে?
-দোস্ত, রিস্ক নিতেই হবে।
-হুমম। নীলিমার খবর কি?
-খবর আর কি? আছে।
-দেখা সাক্ষাত কি কম হয় নাকি ইদানিং?
-আমি এইটাই বুঝি না সবাই কেনো আশা করে মানুষের সারা জীবন এক রকম যাবে? সব সময় তো আর আবেগ দিয়ে চলবে না।
-তুই মনে হয় একটু বেশি রিএক্ট করতেছিস। আমি তো এমনি বললাম।
-আমিও এমনি বললাম।
-ঠিক আছে। তোর ফার্মে কিন্তু আমাকে একটা পোষ্টে রাখিস।
-শালা, আমি কি একা পারবো নাকি? সবাই মিলেই তো করতে হবে।
-ঠিক আছে। তুই কাজ কর। আমি আমার এসাইনমেন্ট করি গিয়ে।
ঠিক তখনি ফোন আসে অনীতার। নীল বের হয়ে যায় ফোন নিয়ে। আর অয়ন তাকিয়ে থাকে ওর যাওয়ার দিকে।
৬৪।
-আচ্ছা নীল ভাই, আপনি পড়ালেখার পর কি করবেন বলে চিন্তা করছেন?
পরদিন দেখা হতেই অনীতার প্রশ্ন।
-কি ব্যাপার অনীতা হঠাত এই কথা?
-আরে এমনি বললাম আর কি।
-শেষ করার আগেই কিছু একটা করার চিন্তা করতেছি। কিছুদিনের মাঝেই শুরু করবো।
-হুম সেটাই ভালো হবে।
সেদিনও ওরা অনেকক্ষন বসে আড্ডা দিলো। নীল বুঝতে পারলো অনীতা ওকে এখনো ভুলতে পারে নাই। আগের মতোই পছন্দ করে। তাকে কিছুটা চিন্তিত দেখা গেলো।

সেদিন রাতে নীলিমার ফোন এ একটা কল এলো। অপিরিচিত নাম্বার। রিসিভ করে জানতে চাইলো কে? অপর প্রান্ত থেকে জানানো হলো পরিচয় দেয়া হবে না। শুধু কিছু তথ্য দিতে চায় নীলের ব্যাপারে।
নীলিমা জানতে চাইলো কি ধরনের তথ্য?
-অপর প্রান্ত থেকে নীলের সাথে অনীতার সেই আগের কথা থেকে শুরু করে বর্তমানের আপডেট সহ সবই বর্ননা করা হলো।নীলিমা আবার জানতে চাইলো “আপনি কে বলছেন?”
-সেটা জানার চেয়ে জরুরি ছিলো এই কথা গুলো আপনার জানা। ভালো থাকবেন।
এই বলে ফোন রেখে দিলো। নীলিমা চেষ্টা করলো আবার ফোন করতে। কিন্তু ফোন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নীলিমা অনেকখন ধরে চিন্তা করতে থাকলো শোনা কথা গুলো। তার চেহারায় চিন্তার রেখা দেখা গেলো।

(চলবে…)

২,৯২২ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার বন্ধুত্ব- ১৫”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আগেরগুলো তো পড়া নেই - তবে এই লেখাটা পড়ে দেখলাম একলাইন থেকে আরেক লাইন সহজেই ভাঙ্গতে পারছি। উপন্যাস বাহ! চালিয়ে যাও।সুনিলের প্রথম উপন্যাস বোধহয় বেড়িয়েছিল ৩২ এ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রবিন (৯৪-০০/ককক)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।