অবশেষে…ঈদে ঢাকার বাইরে

নাহ, ঈদে ঢাকার বাইরে যাওয়া আর মনে হয় যুদ্ধ জয় করা সমান কথা। আমাদের দেশের এই সিস্টেম গুলা যে কবে ঠিক হবে। অপ্রতুল যানবাহন, লাখ লাখ মানুষের ভীড়, অসহনীয় যানযট ইত্যাদি ইত্যাদি।

ছাত্র জীবনে তাও ঈদের ২/৩ দিন আগে যেতাম। তাই এতো ভীড় পেতাম না। কিন্তু লাস্ট তিন বছর ধরে চাকুরিতে জয়েন করার পর থেকে ঈদের ছুটি তিন দিন। তাই প্রতি বারই যেতে হয় ইদের আগের দিন। আর এই শাস্তি প্রতি বারই পেতে হয়। এটা ইডি থেকে কোনো অংশে কম না। আজকের এক্সপেরিয়েন্স টাই শেয়ার করি। কালকে থেকেই যোগাযোগ করছিলাম কে কে বাকি আছে ময়মনসিংহ বাসী যাবার জন্য। দেখি মোটামোটি সবাই দুপুরের পর অফিস থেকে বের হয়ে চলে গেছে। শেষ পরযন্ত পাওয়া গেলো আমি, রনি (সিসিআর) আর ইরফান (পিসিসি)।ওদের কে বললাম তোরা ভোর এ বাস স্ট্যান্ড এ চলে আসিস। নাইলে লাখ লাখ মানুষ এর ভীড়ে খবর আছে। প্ল্যান মোতাবেক রনি সকাল সাড়ে ছয়টায় ফোন দিলো যে, ওরা রওয়ানা দিচ্ছে। আমার বাসা থেকে ৫ মিনিটের পথ। ওরা আসতে আসতে আটটা বেজে গেলো। বাস স্ট্যান্ড এ গিয়ে যথারীতি বিরাট লম্বা লাইন। লাইন এ যে লোক প্রায় ৬০ নং এ তাকে বললাম, “ভাই কয়টায় আসছেন? “ সে বল্লো ভাই “সাড়ে ৫ টায়”। অসাধারন। সে টিকেট পাবে আরো ঘন্টা দুয়েক পর। বাস আসবে আরো ঘন্টা দুয়েক পর। যেতে লাগবে জ্যাম পার হয়ে মোটামোটি চার ঘন্টা। (রাস্তা হলো ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের)।
ইরফান বললো “চল, আগে নাস্তা করি পরে চিন্তা করবো।” থিক হ্যায়। মায়ের দোয়া নামক হোটেল এ গিয়ে পরোটা আর ভাজি। নাস্তার পর আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিন্তা। হঠাত দেখি ২ টা ডাবল ডেকার বাস ময়মন্সিংহ যাবে ইরফান বললো “চল আল্লার নামে উঠে পড়ি”। সামনের ডাবল ডেকারটা ছিল লাল রঙের মুড়ির টিন। পেছনের টা ভলভো। আমরা পিছনের টা উঠতেই ড্রাইভার বল্লো ভাই সাম্নের টা আগে যাবে। আমরা বললাম, ভাই আমরা আগে যাবো না। পরে যাবো। এই দিনে, এই অবস্তায় কেউ আগের বাস ছেড়ে পরের টায় যাবে শুনে সে অনেক্ষন তাকিয়ে রইলো। কি করবে? সে আর আগে ক্যাডেট দের পাল্লায় মনে হয় পড়ে নাই।
তো আমাদের যাত্রা শুরু হল ৯টায়। গাজিপুর চার রাস্তা পেরুতেই লাগল ১২ টা। বসে থাকতে থাকতে জান শেষ। সিগারেটও খাইতে পারি না। শেষে আর থাকতে না পেরে জানালা দিয়ে মাথা বের করে ১ জন ১ জন করে সিগারেট খেলাম।রাস্তায় অসহ্য যানযট। ঢাকার ভিতরের যত সার্ভিস আছে (আবাবিল, আব্রার, মাই ওয়ান ইত্যাদি)। আবার ভালুকা পার হয়ে পুরা রাস্তা বন্ধ। মোটামোটি এক্টা যুদ্ধ করে দোতালা এর একদম সামনে থেকে নিচে নাম্লাম একটু নাড়া চাড়া করার জন্য। শেষে এই রকম যানযট পার করে বিকাল চার টায় এসে নাম্লাম।
এতো কষ্টের পরো ভালো লাগবে একটু পরেই আমাদের ক্যাডেট গ্রুপ এর আড্ডা জমবে নদীর পাড়ে। যেটা চলবে রাত প্রায় ১১টা পরযন্ত। থাকবে রনি (সিসিআর), ইরফান (পিসিসি), কেকুল(সিসিআর), রাসেল (বিসিসি), হীরা (এমসিসি), সাজ্জাদুল (এমসিসি)। আরো কয়েক জন নিয়মিত ময়মন্সিংহ বাসী যাদের মিস করবো তানভীর (এমসিসি-সিংগাপুর এ মেরিন কোর্স এ আছে),পল (পিসিসি-মেরিন সিপে), আদনান (সিসিসি-আমেরিকা), জুবায়েদ (সিসিসি-ঢাকায়), আমজাদ(সিসিসি-কোর্স এ সম্ভবত সুদান),আসাদুল (এমসিসি-আমেরিকা), মাহমুদ (এমসিসি-জার্মানী),রাইন(জেসিসি-কেঊ খবর জানে না ওর)।
এই আড্ডায় বসলেই সব কষ্ট ভুলে যাবো। আগামী তিন দিন আবার আমরা কলেজের আড্ডায় থাকবো। জোস।
সিসিবি এর সবাইকে ঈদ মোবারক।

১,৯৭৯ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “অবশেষে…ঈদে ঢাকার বাইরে”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আপনারা তো অনেকে আছেন দেখা যায়। আমিও মৈমনসিংবাসী। ঈদ শহরেই করছি। কিন্তু আমাদের ব্যাচের কেউ নাই। সত্যি কথা, কেউ নাই। ইলেভেন-টুয়েলভে ১০-১৫ জনের নিয়মিত আড্ডা চলতো। আর এখন জনসংখ্যা শূন্যের কোঠায়। আর্মিতে যারা ছিল তাদের কেউ আসে নাই। দুই জনের বাসা ময়মনসিং হলেও বাড়ি অন্য কোন উপজেলায়। তারা ঈদে বাড়িতে গেছে। তাই একা একা ঈদ করতে হচ্ছে। ঈদ অবশ্য করা হবে না, বাকি দিনগুলার মতই কাটবে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।